কিছু সংখ্যক জাহিল ও গুমরাহ লোক কিল্লতে ইলম ও কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, “পবিত্র ক্বিয়াম শরীফ এর সময় ‘ইয়া নবী সালামু আলাইকা,ইয়া রসূল সালামু আলাইকা, ইয়া হাবীব সালামু আলাইকা, ছলাওয়াতুল্লাহ আলাইকা’- এভাবে পবিত্র সালাম শরীফ পেশ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানহানী হয়। তাই এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয়।”
তাদের আপত্তিকর বিষয়গুলো হচ্ছে-
(ক) نبى-رسول- حبيب এ শব্দলো نكرة(নাকিরাহ) বা অপরিচিত তাই এগুলোকেيا (ইয়া) হরফে নিদা দ্বারা ডাকলে معرفة(মা’রিফাহ) বা পরিচিত হয়ে যায় বটে, তবে ডাকার পূর্বে অপরিচিত থেকে যায়। তাই يا نبى ‘ইয়া নবী’ এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয়। বরংيا ايها النبى ও يا ايها الرسول ইত্যাদি নিয়মে সালাম পেশ করাই সঠিক বা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত।
(খ) يا ইয়া হরফে নিদা শুধু নিকটবর্তী আহ্বানের জন্য আসে। দূরবর্তীর জন্য আসে না। তাই يا نبى বলে সালাম দেয়া ঠিক হবে না। কারণ, তিনি তো আমাদের দেশ থেকে অনেক দূরে আছেন।
(গ) سلام এক পেশ দিয়ে পড়া শুদ্ধ হবে না।
(ঘ) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র সালাম শরীফ পাঠের পূর্বে পবিত্র ছলাত শরীফ বা বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পড়া যাবে না। প্রথমে পবিত্র সালাম শরীফ দিতে হবে। তারপর পবিত্র ছলাত বা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।
(ঙ) ছন্দ আকারে মিলযুক্ত বাক্যের মাধ্যমে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা ঠিক নয়। কারণ,পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে এভাবে উল্লেখ নেই। নাউযুবিল্লাহ!
জাহিল বাতিল লোকদের আপত্তির কারণে কেউ সুওয়াল করতে পারে, يا نبى سلام عليك (ইয়া নবী সালামু আলাইকা) এভাবে সালাম পেশ করা শুদ্ধ হবে কিনা? শুদ্ধ হলে তার দলীল-আদীল্লাহ কি রয়েছে?
এদের জবাবে বলতে হয়, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ان الله وملئكته يصلون على النبى يايها الذين امنواصلوا عليه وسلموا تسليما
অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস্ সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ করেন। হে মু’মিনগণ! আপনারাও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ তথা পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম শরীফ প্রেরণ করো প্রেরণ করার মতো।”(পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ-৫৬)
এ পবিত্র আয়াত শরীফের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করতে নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন। তবে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে পাঠ করতে হবে তা সরাসরি নির্ধারিত করে দেননি। আর এককভাবেও এমন কোনো নিয়ম নির্ধারণ করে দেননি যে, কেবলমাত্র সে নিয়মেই পাঠ করতে হবে, তার বাইরে অন্য কোনো নিয়মে পাঠ করা যাবে না। তাই হযরত ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করেছেন ও করেন। তন্মধ্যে পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মজলিসে পবিত্র ছলাত শরীফ ও পবিত্র তাওয়াল্লুদ শরীফ পাঠ করার পর দাঁড়িয়ে যে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা হয় তা ছন্দ,কবিতা বা ক্বাছীদা শরীফ আকারে। যেহেতু ছন্দ,কবিতা বা ক্বাছীদা শরীফ তৈরি করা, পাঠ করা এবং লেখা সবগুলোই সুন্নত মুবারক।
নিম্নে বাতিল ও গুমরাহ ফিরক্বার আপত্তিকর বক্তব্যগুলো নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ উনাদের ভিত্তিতে খন্ডন করে সঠিক বক্তব্য পেশ করা হলো-
বাতিল ও গুমরাহ ফিরক্বার লোকেরা বলে থাকে যে,
نبى-رسول- حبيب
এ লফযগুলো نكره (নাকিরাহ) বা অপরিচিত তাই এগুলোকে يا (ইয়া) হরফে নিদা দ্বারা ডাকলে معرفه ‘মা’রিফাহ’ বা পরিচিত হয়ে যায় বটে, তবে ডাকার পূর্বে অপরিচিত থেকে যায়। তাই يا نبى (ইয়া নবী) এভাবে সালাম পেশ করা ঠিক নয়। বরং يايها النبى ইয়া আইয়্যুহান নবী),يايها الرسول (ইয়া আইয়্যুহার রসূল) ওيايهاالحبيب (ইয়া আইয়্যুহাল হাবীব) ইত্যাদি নিয়মে সালাম পেশ করাই সঠিক বা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত।”
এর জবাবে বলতে হয় যে- হ্যাঁ,
يايها النبى থ يايها الرسول- يايها الحبيب
এ পদ্ধতিতে সালাম পেশ করা ক্বাওয়ায়িদ সম্মত। তবে
يا نبى يا رسول يا حبيب
এভাবে সালাম পেশ করা যাবে না- একথাও শুদ্ধ নয়; বরং সম্পূর্ণ ভুল ও অজ্ঞতামূলক।
ক্বাওয়ায়িদবিদগণ القواعد العربية বা আরবী ব্যাকরণকে চারভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা- ১.علم الاملاء বা বর্ণ প্রকরণ, ২. علم الصرف বা শব্দ প্রকরণ, ৩. علم النحو বা বাক্য প্রকরণ, ৪.علم العروض বা ছন্দ প্রকরণ।
স্মরণীয় যে, আরবী ক্বাওয়ায়িদ সম্পর্কে যাদের মোটামুটি ধারণা আছে তারা অবশ্যই اعراب(ই’রাব) এবং محل اعراب (মহলে ই’রাব) সম্পর্কে জ্ঞাত। অর্থাৎ اعراب হচ্ছে স্বরচিহ্ন আর محلاعراب হচ্ছে اعراب দেয়ার স্থান। তা হচ্ছে كلمة বা শব্দের শেষ বর্ণ।
اعراب (ই’রাব) বা স্বরচিহ্ন দু’প্রকার। যথা- ১.اعراب ابالحروف ই’রাব বিল হুরূফ যথা- واو (ওয়াও), الف (আলিফ), يا (ইয়া)।
২. اعراب بالحركات ই’রাব বিল হারাকাত। যথা-ضمة (দাম্মাহ) পেশ,فتحة (ফাতহাহ) যবর, كسرة(কাসরাহ) যের, ساكن (সাকিন) জযম।
ক্বাওয়ায়িদের নিয়মানুসারে এ উভয় প্রকার ই’রাবের পরিবর্তন সাধিত হয়। যেমন, اعراببالحروف-এর উদাহরণ :
جاء ابوهথ رأيت اباهথ مررت بابيه.
অর্থ: “তার পিতা এসেছে, আমি তার পিতাকে দেখেছি, আমি তার পিতার সাথে চলেছি।”
আলোচ্য উদাহরণে প্রথম বাক্যে اب -এর সাথেواو, দ্বিতীয় বাকে اب -এর সাথে الف এবং তৃতীয় বাক্যেاب এর সাথেياء রয়েছে: যা ই’রাব বিল হুরূফের পরিবর্তনের মেছাল।
অনুরূপ اعراب بالحركات-এর উদাহরণ:
جاء زيد থ شربت الماء থ كتبت بالقلم থ لم اذهب
অর্থ: “যায়িদ এসেছে, আমি পানি পান করেছি,আমি কলম দ্বারা লিখেছি, আমি যাইনি।”
এ উদাহরণে প্রথম বাক্যে زيد-এর ‘দাল’ বর্ণে পেশ, দ্বিতীয় বাক্যে ماء-এর ‘হামযাহ’ বর্ণে যবর,তৃতীয় বাক্যে القلم -এর ‘মীম’ বর্ণে যের এবং চতুর্থ বাক্যে اذهب-এর ‘বা’ বর্ণে জযম বা সাকিন হয়েছে; যা ই’রাব বিল হারাকাতের পরিবর্তনের মেছাল।
উল্লেখ্য, كلمة বা শব্দ তিন প্রকার। যথা-اسم (ইসম) বিশেষ্য,فعل (ফি’ল) ক্রিয়াحرف (হরফ) অব্যয়।
اسم-এর ই’রাব তিন প্রকার। পেশ, যবর ও যের। কিন্তু ওয়াক্ফের অবস্থায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে জযম পড়তে হয়। আরفعل -এর ই’রাবও তিন প্রকার। পেশ, যবর ও জযম। কিন্তু সন্ধি বিচ্ছেদ বা তা’লীলকৃত কতক শব্দে যেরও হয়ে থাকে।
আর حرف-এর ই’রাব বা হরকত অপরিবর্তিত। যে হরফ যেভাবে বর্ণিত রয়েছে সেভাবেই ব্যবহার করার নিয়ম।
মনে রাখতে হবে, পবিত্র মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে যে পদ্ধতিতে পবিত্র সালাম শরীফ পাঠ করা হয় তা শুদ্ধই রয়েছে। যথা-
يا نبى سلام عليك + يا رسول سلام عليك
يا حبيب سلام عليك + صلوت الله عليك
অর্থ: “হে নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম। হে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম। হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রতি সালাম। মহান আল্লাহ পাক উনার অসংখ্য পবিত্র ছলাত শরীফ আপনার উপর বর্ষিত হোক।”
পঠিত ইবারতের বিশ্লেষণ:
يا نبى পড়া ক্বাওয়ায়িদ علم العروض (ইলমুল আরূদ্ব) বা ছন্দ প্রকরণের ভিত্তিতে শুদ্ধ। তবে যদি কেউيايها النبى পড়তে চায় তা পড়তে পারবে। ক্বাওয়ায়িদ বিশারদগণের মতে نكرة (নাকিরাহ) বা অনির্দিষ্টকে معرفة (মা’রিফাহ) বা নির্দিষ্ট করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। তন্মধ্যে একটি নিয়ম হচ্ছে نكرة (নাকিরাহ) বা অনির্দিষ্টকে حرف نداء (হরফে নিদা) বা আহবান সূচক শব্দ দ্বারা মা’রিফাহ (নির্দিষ্ট) করা।
যেমন, আল্লামা হযরত সিরাজুদ্দীন উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ‘হিদায়াতুন্ নাহু’ নামক আরবী ক্বাওয়ায়িদের কিতাবে লিখেছেন,
والمعروف باللام والمضاف الى احدهما اضافة معنويةوالمعرف بالنداء
অর্থ: “(معرفة ছয় প্রকারের মধ্যে) চতুর্থ প্রকার হলো: আলিফ-লাম যোগে মা’রিফাহ। পঞ্চম প্রকার: ضمير বা সর্বনাম, اعلام বা নামবাচক বিশেষ্য, মুবহামাত বা ইসমে ইশারা, ইসমে মাওছূলা-এর দিকেاضافة معنوية দ্বারা সম্বন্ধকৃতের মাধ্যমে নির্দিষ্টতা বা মা’রিফাহ। ষষ্ঠ প্রকার: حرف ندا (হরফে নিদা) দ্বারা মা’রিফাহ।”
আল্লামা হযরত ইবনু হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখা “কাফিয়া’ কিতাবের মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
ما عرف باللام او النداء والـمضاف الى احدها معنى
অর্থ: “(معرفة ছয় প্রকারের মধ্যে) চতুর্থ প্রকার: যা আলিফ-লাম যোগ করে নির্দিষ্ট করা হয়।পঞ্চম প্রকার: হরফে নিদা দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয় এবং ষষ্ঠ প্রকার: যমীর, আলম, ইসমে ইশারা, মাউছূলা ও আলিফ-লাম যোগে মা’রিফার দিকে اضافة معنوية -এর মাধ্যমে নির্দিষ্টতা বা মা’রিফাহ।”
অনুরূপ ‘মাবাদিউল আরাবিয়া’, ‘নাহুমীর’ ও অন্যান্য ক্বাওয়ায়িদের কিতাবগুলোতে উল্লেখ আছে।
উল্লিখিত ইবারত থেকে স্পষ্ট হলো যে,
يا نبى، يارسول، يا حبيب এর মধ্যে نبى، رسول،حبيب নাকিরাহ শব্দগুলোকে يا (ইয়া) হরফে নিদা দ্বারা معرفة (মা’রিফাহ) বা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। যা আমাদের প্রিয় নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। অন্যান্য কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়নি। কেননা,পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠ করা হয় একমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্যই। এতে খাছভাবে সালাম প্রেরণ করা হয় উনারই প্রতি।
বাতিল ও গুমরাহদের ভ্রান্ত কথা
يا نبى (ইয়া নবী) বলে ডাকলে, ডাকার সময় তিনি পরিচিত হন কিন্তু এর পূর্বে তিনি পরিচিত ছিলেন না বুঝা যায়। কেননা,نكرة (নাকিরাহ) কে নিদা দ্বারা معرفة (মা’রিফাহ) মা’রিফা’ করা হয়েছে। তাই الف لام (আলিফ-লাম) যোগ করেمعرفة (মা’রিফাহ) করার পর নিদা করলে ডাকার পূর্বে অপরিচিত থাকার সম্ভাবনা থাকে না।
এর জবাব হচ্ছে, يا نبى (ইয়া নবী) বললে যদি ডাকার পূর্বে অপরিচিত হন, তবে النبى (আন্ নাবী) শব্দে আলিফ-লাম যোগ করার পূর্বেও তিনি অপরিচিত ছিলেন বুঝা যায়। তেমনিভাবেيايها النبى، النبى، يا نبى، نبى শব্দগুলো লিখা ও উচ্চারণ করার পূর্বেও তিনি অপরিচিত থেকে যান। নাউযুবিল্লাহ!
আরো বলতে হয়, বোবা ব্যক্তি ও লেখা পড়া জানেন না এমন মু’মিন ব্যক্তির কাছে কি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিচিত নন?অবশ্যই পরিচিত।
মূলকথা হলো- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসেবে যারা যেভাবে ‘ইয়া নবী’, ‘ইয়া রসূল’, ইয়া হাবীব বলে খেয়াল করে উনাকে ডাকবে তাই শুদ্ধ হবে। শুধু ‘ইয়া’ ‘হরফে নিদা’যোগ করার দ্বারাও পূর্বাপর সমস্ত সময়ের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই নির্দিষ্ট ও পরিচিত¬হন।
আধুনিক আরবী সাহিত্য বিশারদগণের সম্রাট অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রখ্যাত কবি আহমদ শাওকী বেক উনার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ “আশ শাওকিয়াত” এর الهمزية النبوية শীর্ষক কবিতায় শুধু يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা উল্লেখ করে رسول কে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেছেন। যেমন,
يا من له عز الشفاعة وحده + وهو المنزه ماله شفعاء
অর্থ:- “ইয়া (হে) রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিই সেই মহান রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যার রয়েছে পরকালে শাফায়াত করার একক মর্যাদা। জাত ও ছিফাতগতভাবে তিনি পূত-পবিত্র ও কলুষমুক্ত। উনার নিজের জন্য কোনো শুপারিশকারীর প্রয়োজন নেই।”
لى فى مديحك يا رسول عرائس+ تيمن فيك وشاقهنجلاء.
অর্থ: “ইয়া রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার প্রশংসা করার ব্যাপারে আমার রয়েছে প্রেমাস্পদের সাথে সাক্ষাতের আকাঙ্খার মতো অফুরন্ত বাসনা। যা আমাকে পূন্য-ধন্য করবেই। আর ওই বাসনাকে আপনার দিবালোকের মতো উজ্জ্বল সুন্দরতম চরিত্র মুবারক আরো উৎসাহিত করে তুলেছে।
অত্র কবিতায় يا رسول আলিফ-লাম যোগ করা ছাড়াই লিখা হয়েছে। এটা ক্বাওয়ায়িদ ও কবিতার নিয়মসম্মত। এভাবে ব্যবহার করায় সম্মানহানী হয়না। বরং এতে সম্মান প্রকাশ হয়েছে।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাপারে। যেমন কবিগণ يا نبى، يا رسول (ইয়া নবী, ইয়া রসূল) বলে নিদা করেছেন। তেমনি উনার বংশধর তথা আওলাদে রসূল উনাদেরকেও সাহিত্যিক ও কবিগণ يا ‘ইয়া’হরফে নিদা দ্বারা আহ্বান করেছেন।
“দুরূসুল্ বালাগাহ” উনার ‘মুহাস্সানাতুল মা’নুবিয়্যাহ’র আলোচনায় জনৈক কবির কবিতায় উল্লেখ আছে-
يا سيد احاز لطفا+ له البرايا عبيد
انت الحسين ولكن + جفاك فينا يزيد
অর্থ: “হে ইমাম, সাইয়্যিদ আলাইহিস সালাম! যিনি প্রত্যেক প্রকারের গুণ ও পবিত্রতা নিজের মধ্যে একত্রিত করে রেখেছেন, সমস্ত সৃষ্ট যার গোলাম। আপনি হলেন হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম। কিন্তু কি করা যাবে যে,আমাদের মধ্যে আপনার অমনোযোগ দৈনন্দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
কবি অত্র শ্লোকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে يا سيد বলে আহ্বান করেছেন। এতে একমাত্র হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। অথচ পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ সাইয়্যিদ বা আওলাদে রসূল রয়েছেন। অর্থাৎ এখানে سيد শব্দটি যদিও নাকিরাহ, এর পূর্বে يا ‘ইয়া’ হরফে নিদা যুক্ত করার সাথে সাথে তা معرفة (মা’রিফাহ) বা নির্দিষ্ট হয়েছে। যা পূর্বাপর সব সময়ের জন্য হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বুঝাচ্ছে।
তেমনিভাবে يا حبيب، يا نبى، يا رسول দ্বারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই আহ্বান করা হয়েছে বুঝতে হবে। তাই আলিফ-লাম ছাড়া শুধুيا ‘ইয়া’ হরফে নিদা দ্বারা সম্মান ও মর্যাদাই প্রকাশ পায়।
বাতিল ও গুমরাহদের বক্তব্য হলো-معرفة অর্থ পরিচিত ও نكرة অর্থ অপরিচিত
এর জবাবে বলতে হয়- আরবী ক্বাওয়ায়িদ অনুযায়ী বাতিলদের প্রদত্ত অর্থ ভুল,ধোঁকাপ্রসূত, মনগড়া ও ফিতনামূলক। কারণ,معرفة ও نكرة আরবী নাহু শাস্ত্রের দুটি অন্যতম পরিভাষা, যার অর্থ হলোمعرفة (নির্দিষ্ট) ও نكرة (অনির্দিষ্ট)। যদিও লুগাত বিশারদগণ বিভিন্ন অর্থ নিয়েছেন। তবে লুগাতে হাজারো অর্থ থাকলেই যে সব অর্থ সবক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে তা নয়। বরং পরিভাষা অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হবে। যেমন, আল্লামা হযরত সিরাজুদ্দীন উছমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার“হিদায়াতুন্ নাহু” কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
المعرفة اسم وضع لشىء معين ... والنكرة ما وضعلشىء غير معين كرجل
অর্থ: “معرفة (মারিফাহ) এমন একটি اسم (ইস্ম) বা বিশেষ্য যাকে কোনো নির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। .... نكرة (নাকিরাহ) এমন একটি اسم বা বিশেষ্য যাকে কোনো অনির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। যেমন, رجل (রজুলুন) বা এক ব্যক্তি।
হযরত আল্লামা ইবনে হাজিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “কাফিয়া” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
المعرفة ما وضع لشىء بعينه ... النكرة ما وضع لشىءلا بعينه
অর্থ: “معرفة (মারিফাহ) এমন একটি اسم (বিশেষ্য) যাকে কোনো নির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে। ... نكرة (নাকিরাহ) এমন একটিاسم (বিশেষ্য) যাকে কোনো অনির্দিষ্ট কিছুর জন্য প্রনয়ণ করা হয়েছে।”
অনুরূপ নাহুমীর, মাবাদিউল আরাবিয়া ও অন্যান্য ক্বাওয়ায়িদের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে। তাই প্রমাণিত হলো যে, গুমরাহ ও বেআক্বলদের বক্তব্য অশুদ্ধ; যা ক্বাওয়ায়িদের খিলাফ।
অতএব, প্রমাণিত হলো- يا نبى، يارسول، يا حبيب এভাবে সালাম পেশ করা সম্মান প্রকাশক,ক্বাওয়ায়িদ হিসেবে শুদ্ধ এবং গ্রহণযোগ্য।