ফতোয়ায়ে শামী কিতাবে পবিত্র ঈদে মীলাদেহাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামেরমর্যাদা শবে কদর, আরাফা, শবে বরাত, জুমুয়াসব রাতের চাইতে বেশি এই দলীল দেখানোরপর লা’মযাহাবী গ্রুপ একটা আপত্তি তুলেছে।তাদের বক্তব্য কুরআন শরীফে আছে, শবেক্বদরের রাতের মর্যাদা হাজার মাসের চাইতেউত্তম। এখানে তারা যে পয়েন্টটা বুঝতে ব্যর্থহয়েছে তা হচ্ছে, যদি বলা হয় এক খন্ড রুপাহাজার পাথরের চাইতে উত্তম। তারমানেআপনাকে বুঝতে হবে অন্যান্য সাধারন পাথরথেকে রূপা উত্তম। যদি বলা হয় এই রূপারখন্ডটা একখন্ড হীরার চাইতে উত্তম সেটা কিঠিক হবে?
এখানে তুলনা হচ্ছে সাধারন অন্যান্য হাজাররাত থেকে শবে ক্বদর উত্তম। কিন্তু হুযুর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারআগমনের রাতের চাইতে উত্তম নয়, যেমন হীরাথেকে রূপা উত্তম নয়।
পবিত্র শবে ক্বদরের রাতে হযরত ফিরিশতাআলাইহিমুস সালামগন নাযিল হওয়ার কারনেমর্যাদাবান। তাহলে যিনি হাবীবুল্লাহ হুযুর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনসে রাতের মর্যাদা কেমন হবে চিন্তা করুন।বিরোধীতাকারীদের কাছে কি ফিরিশতাদেরমর্যাদা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বেশি? নাউযুবিল্লাহ।
এরপর আসেন, বছরে মাত্র একটি রাত যেটাশবে বরাত সেখানে নিয়ামত নিয়ে ফিরিশতাআলাইহিমুস সালাম বিশেষ ভাবে নাযিল হয়।অথচ আমাদের প্রানের চাইতে প্রিয় রসূলহাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার পবিত্র রওজা মুবারকে প্রতিদিনদুই বেলা ৭০ হাজার করে ফিরিশতাআলাইহিমুস সালাম দরুদ শরীফ পাঠ করারজন্য আগমন করেন। আর এমন এক কুদরত যেফিরিশতাগন একবার আসেন তাদের আরদ্বিতীয়বার আগমন করার সুযোগই হয় না।প্রতিদিন নতুন নতুন ফিরিশতা আসেন। তাহলেহুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারশান কত বেমেছাল চিন্তা ও ফিকিরের বিষয়।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের কাছে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মান কেমন ছিলো সেটা বুঝলে উপরের পয়েন্টগুলো বুঝতে সুবিধা হবে। হযরত ইবনু সীরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবীদা রহমতুল্লাহি আলাইহি কে বললাম, আমাদের কাছে হযরত রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার কেশ মুবারক রয়েছে যা আমরা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর কাছ থেকে কিংবা হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর পরিবারের কাছ থেকে পেয়েছি। তিনি বললেন, উনার একটি কেশ মুবরাক আমার কাছে থাকাটা গোটা দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা পাওয়ার চাইতে বেশী পছন্দনীয়।” (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড ৫৫ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ১৭০)
এখান থেকে ফিকিরের বিষয় হচ্ছে, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চুল মুবারকের গুরুত্ব যদি গোটা দুনিয়ার চাইতে বেশি হয় তাহলে বুঝতে হবে সে গোটা দুনিয়ার মধ্যে কাবা শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাস, আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী সবই আছে। সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাদের কাছে, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ঠ হওয়ার কারনে গোটা দুনিয়ার চাইতেও একখান চুল মুবারকের মর্যাদা বেশি ছিলো।
তাহলে যে রাত হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আগমনের সাথে সংশ্লিষ্ঠ হয়েছে সেটার মর্যাদা যে শবে ক্বদর, শবে বরাত, আরাফা, জুমুয়া সব চাইতে বেশি হবে এটাইতো স্বাভাবিক। আর সেটা একজন মূর্খ লা’মাযহাবী বুঝবে না সেটাও স্বাভাবিক। বুঝেছেন যুগ শ্রেষ্ঠ আলেম উলামা মুস্তাহিদ উনারা। যে কারনে ৩য় তবকার মুজতাহিদ হযরত ইমাম তাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “রাত সমূহের মধ্যে উত্তম রাত হচ্ছে পবিত্র মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রাত, অতপর লাইলাতুল কদরের রাত, অতপর মিরাজ শরীফের রাত, অতপর আরাফার রাত, অতপর জুমুয়ার রাত, অতপর ১৫ শাবানের রাত,অতপর ঈদের রাত।” (রদ্দুল মুহতার আলাল দুররুল মুখতার ৩/৫৪৮)
সমগ্র মুসলিম উম্মার মাঝে ইজমা হয়েছে,বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘রদ্দুল মুহতার (শামী)’ এর বাবুয্ যিয়ারহ-তে বর্ণিত আছে,
ان التر بة التى اتصلت الى اعظم النبى صلى الله عليه وسلم افضل من الارض والسماء حتى العرش العظيم.
অর্থাৎঃ-নিশ্চয়ই রওযা শরীফের যে মাটি মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শরীর মুবারকের সাথে লেগে রয়েছে, তা যমীন ও আসমানের সমস্ত কিছু থেকে ফযীলতপূর্ণ। এমনকি সুমহান আরশে আযীমের থেকেও ফযীলতপূর্ণ।
সুবিখ্যাত দুররুল মুখতার কিতাবের মুছান্নেফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উক্ত কিতাবের ১ম জিলদ ১৮৪ পৃষ্ঠায় লিখেন,
فانه افضل مطلقا حتى من الكعبة والعرش والكرسى
রউফুর রহীম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, এমনকি কা’বা শরীফ, আরশে আ’যীম ও কুরসী হতেও শ্রেষ্ঠ।
এ বিষয়গুলো যুগশ্রেষ্ঠ আলেমগন অনুধাবন করেছেন বলেই স্ব স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন।আর তাই উনারা ফতোয়া দিয়ে গেছেন-
ইমামুল মুহাদ্দিছিন শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে রাতে নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিলাদত শরীফ গ্রহন করেছেন সে রাতটি শবে ক্বদরের রাত থেকেও তাৎপর্য মন্ডিত। কেননা হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফের রাতটি উনার আর্বিভাবের রাত আর কদরের রাত হচ্ছে উনার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত। যেটি মহাসত্তার আগমনের কারনে মাহাত্ম্যর্পর্ণ হয়েছে সেটিই অধিক তাৎপর্যমন্ডিত। আর একটি কারন হচ্ছে শবে কদরের রাতটি মর্যাদাপূর্ণ হয়েছে ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম অবতরনে, আর হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিলাদত শরীফের রাতটি মর্যাদাপূর্ণ হয়েছে স্বয়ং উনার আগমনের কারনে। (মা’ছাবাতা বিস সুন্নাহ ৭৮ পৃষ্ঠা)
হাফিজে হাদীস ইমাম কুস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাওয়াহেবু লাদুন্নিয়াহ ১ম খন্ড ২৬, ২৭ পৃষ্ঠাতেও বিলাদত শরীফের রাতকে শবে কদরের রাত অপেক্ষা উত্তম বলা হয়েছে।