পিতা-মাতার অবাধ্যতার পরিণাম ভয়াবহ। তাঁদের সন্তুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট।

তুমি আমার কাছে কৃতজ্ঞ হও এবং তোমার মাতা-পিতার কাছেও কৃতজ্ঞ হও। আমারই নিকট তোমাকে ফিরে আসতে হবে। (লোকমান-১৪) 

◾তোমার পালনকর্তা আদেশ করছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবনদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে উহ! শব্দটিও বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে নম্রভাবে মাথা নত করে দাও। (বনী ইসরাঈল-২৩-২৪)

◾তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সাথে কাউকে শরীক করোনা, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। (আন-নিসা-৩৬) 

◾আমি মানুষকে নিজেদের পিতা-মাতার সাথে উত্তম ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। (আল-আনকবূত-৮)

◾আর আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারন করেছে। তার দুধপান ত্যাগ করানো হয় দুই বছরে। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আমার কাছেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে। (লোকমান -১৪)

◾পিতা-মাতা যদি তোমাকে আমার সাথে এমন বিষয়কে শরীক স্থির করতে পীড়াপীড়ি করে. যার জ্ঞান তোমার কাছে নেই,তবে তুমি তাদের কথা মানবেনা এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সহ অবস্থান করবে। (লোকমান-১৫)

মাতা-পিতার সন্তুুষ্টিতে আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং মাতা-পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট। (তিরমিযী)

◾হযরত বশির (রাঃ) বলেন. রাসূল (ﷺ) বলেন, ” যে লোক মায়ের কাছে অবস্থান করে তার নির্দেশ মতো চলে, সে তরবারী নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। মায়ের দিকে ভক্তি সহকারে তাকানোর চেয়ে মহৎ কাজ আর নেই। (আল-হাদিস)

◾এক লোক রাসূল (ﷺ) এর কাছে এসে তার সাথে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ
তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত? সে জবাব দিলঃ জ্বি হ্যাঁ। রাসূল (ﷺ) বললেনঃ তাহলে তাদের সেবা করে জিহাদে শরীক হও। - (বুখারী. মুসলিম)

◾রাসূল (ﷺ) বলেনঃ আমি কি তোমাদের সবচাইতে বড় কবীরা গুনাহের কথা জানাব না? তা হচ্ছে, আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করা ও মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া।

◾রাসূল (ﷺ) বলেনঃ মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান, খোটাদানকারী এবং মদ্যপানকারী জান্নাতে যাবেনা। -(বুখারী, মুসলিম)

◾রাসূল (ﷺ) বলেনঃ উহ করার চেয়েও যদি কম কষ্টদায়ক শব্দ থাকতো, তবে আল্লাহ পাক তাও করতে নিষেধ করতেন। সুতরাং পিতা-মাতার অবাধ্যচারী যতই ভাল কাজ করুক না কেন, জান্নাতে যেতে পারবেনা, আর পিতা-মাতার সাথে সদাচারণকারী যাই করুক না কেন, জাহান্নামে যাবেনা। -(দায়লামী)

◾রাসূল (ﷺ) বলেনঃ মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তানের উপর আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।

◾রাসূল (ﷺ) বলেনঃ যে মা-বাবাকে গালি দেয় আল্লাহ তাকে লা’নত করেন। -(ইবনে হাব্বান)

◾রাসূল (ﷺ) বলেনঃ আল্লাহপাক সকল গুনাহের শাস্তি যত দিন ইচ্ছা বিলম্বে করেন, এমনকি তা কেয়ামত পযর্ন্ত বিলম্বিত করেন. কিন্তু মা-বাবার সাথে অবাধ্যতার শাস্তি মৃত্যুর পূর্বেই করে থাকেন। -(হাকেম)

◾রাসূল (ﷺ) বলেনঃ যে লোক পিতা-মাতার অবাধ্য কিংবা তাদের সাথে অসৎ ব্যবহার করে, তাকে দ্রুত শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহ তার হায়াত কমিয়ে দেন। আর যে ব্যক্তি পিতা-মাতার বাধ্য, আল্লাহ তার হায়াত বাড়িয়ে দেন, যেন সে বেশী বেশী ভাল কাজ করে অধিক সওয়াব ও মঙ্গল লাভ করতে পারে। মাতা-পিতার প্রতি এভাবেও ভাল আচরণ করা যায় যে, তারা যখন অক্ষম হয়ে পড়েন তখন তাদের চাহিদা অনুযায়ী অভাব পূরণ করে দেওয়া।-(ইবনে মাজা)

◾এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) এর কাছে এসে বললঃ হে রাসূল কোন ব্যক্তি আমার খেদমত পাওয়ার সবচেয়ে বেশী যোগ্য ও হকদার? তিনি বলেনঃ তোমার ’মা’। সে আরয করলোঃ তারপর কে? তিনি বললেন তোমার ’মা’। সে আবার আরয় করলো তারপর কে? তিনি বললেনঃ তোমার ’মা’। পুনঃ সে নিবেদন করলো তারপর কে? তিনি জবাব দিলেন তোমার ’পিতা’। তারপর পর্যায়ক্রমে তোমার আপনজ।-(বুখারী, মুসলিম)

◾হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে প্রশ্ন করা হল, আ’রাফ কি? সেখানে কারা বাস করবে? তিনি বললেনঃ আ’রাফ জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি পাহাড়। একে আ’রাফ নাম করন করা হয়েছে কারণ, এখান থেকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখা যাবে এবং এতে ফলবান গাছ, র্ঝনা সব কিছুই থাকবে। পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতিত যারা জিহাদে গিয়ে শহীদ হয়েছে, তারা সাময়িকভাবে এখানে থাকবে। জিহাদে গিয়ে শহীদ হওয়ার কারণে জাহান্নামের পথ আর পিতা-মাতার অবাধ্যতার কারণে জান্নাতের পথ বন্ধ থাকবে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহপাকের চুড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পযর্ন্ত তারা এখানে থাকে। -(ইবনে মাজা)

◾বাসূল (ﷺ) বলেনঃ মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।- (ইবনে মাজা, নাসায়ী)

◾রাসূল (ﷺ) বলেনঃ চার শ্রেণীর লোককে আল্লাহ বেহেশতে প্রবেশ করতে দিবেন না, 
(১) মদখোর 
(২) সুদখোর 
(৩) ইয়াতীমের মাল আত্মসাতকারী 
(৪) পিতা-মাতার অবাধ্যচারী। 
তবে তওবা করলে ভিন্ন কথা।-(হাকেম)

◾এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) এর কাছে এসে জানতে চাইলোঃ আমি এক মহিলাকে বিয়ে করেছি, অথচ আমার মা তাকে তালাক দিতে বলছেন”। রাসূল (ﷺ) বললেনঃ ”মা” জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। ইচ্ছা করলে তুমি তা নষ্ট করতে পারো আবার হেফাজতও করতে পারো। (ইবনে মাজা, তিরমিযী) 

◾রাসূল (ﷺ) বলেনঃ তিনজনের দোয়া অবশ্যই কবুল হয়, তাতে কোন সন্দেহ নেই। 
(১) মজলুমের 
(২) মুসাফিরের 
(৩) মাতা-পিতার। (তিরমিযী)

◾হযরত আমর বিন মুররা আলজুহানী (রাঃ) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-এর দরবারে এসে বলল,” হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আমি যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ি, রমযানের রোযা রাখি, যাকাত প্রদান করি এবং হজ্জ করি, তাহলে আমি কি পাবো ? তিনি বললেন, ”সঠিকভাবে এগুলো যে আদায় করবে, সে নবীগণ, সিদ্দীকগণ শহীদগণ ও সৎকর্মশীলদের সাথী হবে। তবে পিতা-মাতার অবাধ্যচারী এ প্রতিদান হতে বাদ পড়বে।- (আহমদ, তিবরানী)

Top