▆ সাইনবোর্ড মার্কা আহলে হাদীসদের আল্লাহ তা’আলা সম্পর্কে শিরকী আকীদাঃ সহিহ্ আক্বিদার ভণ্ডামীতে ভূঁয়া সালাফীদের নিজেদের মধ্যেই মোরগ লড়াই ▆
স্রষ্টাকে সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য প্রদানে ইহুদী ধর্মঃ
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাহ এর আকিদা হল আল্লাহর সাথে কারো কোন তুলনা নেই। আল্লাহর আকার-আকৃতি কেমন তা মানুষের কল্পনার বাইরে তিনি গায়েব (অদৃশ্য) মানুষের মত তার হাত, পা, দেহ এসব কল্পনা করা মারাত্মক পথভ্রষ্টতা। প্রভুর সাথে যেমন কারো শরিক নেই প্রভুর সাথে কারো তুলনা বা সাদৃশ্যও স্থাপন করা বাতিলের কাজ, মুর্খের কাজ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
وجاوزنا ببني إسرائيل البحر فأتوا على قوم يعكفون على أصنام لهم قالوا يا موسى اجعل لنا إلها كما لهم آلهة
অর্থাৎঃ আর আমি বনী ইসরাইলকে সাগর পার করে দিয়েছি, তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌঁছলো, যারা নিজেদের বানানো কতোগুলো প্রতিমার পূজায় রত ছিলো। বনী ইসরাইল বলল, হে মুসা, আমাদের জন্য এরূপ একটি উপাস্য নির্ধারণ করে দেন, যেরূপ এদের উপাস্য রয়েছে।
[সূরা আ’রাফ, আয়াত নং ১৩৮।]
পবিত্র কুরআনে আরও স্পষ্টভাবে বনী ইসরাইলের এই মানসিকতা উল্লেখ করা হয়েছে। তারা মহান আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি, বরং রীতিমত মূর্তি বানিয়ে তার পূজা শুরু করেছে। তারা সর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টির সদৃশ একটি সত্ত্বা বলেই বিশ্বাস করতো।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
واتخذ قوم موسى من بعده من حيلهم عجلاً جسداً له خوار
অর্থাৎঃ আর মুসার সম্প্রদায় তাঁর অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার সমূহ দিয়ে একটি গো-বৎসের আকৃতি বানালো, যার আওয়াজ ছিলো।
[সূরা আ’রাফ, আয়াত নং ১৩৮।]
তাদের এই বাছুর পূজা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা সূরা অন্য আয়াতে বলেন,
فَأَخْرَجَ لَهُمْ عِجْلًا جَسَدًا لَهُ خُوَارٌ فَقَالُوا هَٰذَا إِلَٰهُكُمْ وَإِلَٰهُ مُوسَىٰ فَنَسِيَ
অর্থাৎঃ “এরপর সে তাদের জন্য একটি বাছুর বানালো, যা একটি দেহ ছিলো, যাতে গরুর আওয়াজ ছিলো। তখন তারা বলতে লাগল, তোমাদের এবং মুসার মাবুদ তো এটাই, মূসা তো ভুলে গেছে।”
[সূরা ত্বহা, আয়াত নং ৮৮।]
বাইবেলের বুক অব এক্সোডাসে রয়েছে,
Now when the people saw that Moses delayed to come down from the mountain, the people assembled about Aaron and said to him, “Come, make us a god who will go before us”
অর্থাৎঃ যখন লোকেরা দেখল মুসা আ. পাহাড় থেকে অবতরণ করতে বিলম্ব করছে, তারা হারুন আ. এর নিকট একত্রিত হয়ে বলল, “আমাদের জন্য এমন একটা প্রভূ তৈরি করো, যে আমাদের সামনে চলা-ফেরা করবে”
[সূত্রঃ বুক অব এক্সোডাস, পরিচ্ছেদ, ৩২, শ্লোক, ১।]
একই বইয়ে রয়েছে,
After leaving Sukkoth they camped at Etham on the edge of the desert. By day the LORD went ahead of them in a pillar of cloud to guide them on their way and by night in a pillar of fire to give them light, so that they could travel by day or night.
অর্থাৎঃ তারা সুকুত থেকে যাত্রা করলো এবং মরুভূমির প্রান্তে ইছাম নামক স্থানে শিবির স্থাপন করলো। দিনের বেলায় প্রভূ তাদের সামনে মেঘের স্তম্ভ হয়ে চলছিলো এবং রাতে আগুনের স্তম্ভ হয়ে তাদেরকে আলো দিচ্ছিল , যেন তারা দিনে ও রাতে ভ্রমণ করতে পারে।
[সূত্রঃ বুক অফ এক্সোডাস, পরিচ্ছেদ, ১৩, শ্লোক, ২০-২১।]
বাইবেলে রয়েছে,
Moses and Aaron, Nadab and Abihu, and the seventy elders of Israel went up. and they saw the God of Israel. There was under his feet as it were a pavement of sapphire stone, like the very heaven for clearness. But God did not raise his hand against these leaders of the Israelites; they saw God, and they ate and drank.
অর্থাৎঃ মুসা, হারুন, নাদাব, আবিহু এবং বনী ইসরাইলের সত্তরজন বয়স্ক লোক পাহাড়ে আরোহণ করল। তারা ইসরাইলের প্রভূকে দেখল। প্রভূর পায়ের নিচে যেন নীলকান্ত মণি পাথর ছিলো, যা ছিলো আকাশের মতো স্বচ্ছ। প্রভূ ইসরাইলের নেতাদের দিকে তার হাত প্রসারিত করলেন না। তারা প্রভূকে দেখল, আহার করল এবং পান করলো।
[সূত্রঃ বুক অব এক্সোডাস, পরিচ্ছেদ, ২৩, শ্লোক, ৯-১১।]
বুক অব জেনেসিসে রয়েছে,
Whoever sheds the blood of man, by man shall his blood be shed, for God made man in his own image.
অর্থাৎঃ যে মানুষের রক্ত ঝরাবে, তার রক্তের বিনিময়ে হত্যাকারীর রক্ত ঝরানো হবে। কেননা প্রভূ মানুষকে নিজের আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।
[সূত্রঃ বুক অব জেনেসিস, পরিচ্ছেদ, ৯, শ্লোক, ৬।]
The LORD said to Moses, “Behold, I will come to you in a thick cloud, so that the people may hear when I speak with you and may also believe in you forever.” Then Moses told the words of the people to the LORD. The LORD also said to Moses, “Go to the people and consecrate them today and tomorrow, and let them wash their garments; and let them be ready for the third day, for on the third day the LORD will come down on Mount Sinai in the sight of all the people.
অর্থাৎঃ প্রভূ মুসাকে বললেন, মনে রেখো, আমি তোমার নিকট পাতলা মেঘের আবরণে আগমণ করবো। আমি যখন তোমার সঙ্গে কথা বলব, মানুষ যেন শুনতে পায়। সম্ভবত: তারা তোমার উপর স্থায়ী বিশ্বাস স্থাপন করবে। অত:পর মুসা আ. প্রভূর বাণী লোকদেরকে শোনাল। প্রভূ মুসাকে আরও বলল, মানুষের কাছে যাও। আজ ও আগামীকাল তাদেরকে পবিত্র করো এবং তারা যেন তাদের কাপড় পবিত্র করে। তারা যেন তৃতীয় দিনের জন্য প্রস্তুত হয়। তৃতীয় দিন সব মানুষের চোখের সামনে প্রভূ সিনাই পর্বতে নেমে আসবে।
[সূত্রঃ বুক অব এক্সোডাস, পরিচ্ছেদ,১৯, শ্লোক, ৯-১১।]
অল্ড টেস্টামেন্টের দি বুক অব সামে রয়েছে,
you have sat on the throne, giving righteous judgment.
অর্থাৎঃ আপনি ন্যায়-পরায়ণ হিসেবে কুরসীতে উপবেশন করেছেন।
[সূত্রঃ বুক অব সাম, পরিচ্ছেদ,৯, শ্লোক, ৪।]
বাইবেলের পুরাতন নিয়মে রয়েছে,
In my distress I called upon the LORD, and cried unto my God: he heard my voice out of his temple, and my cry came before him, even into his ears. Then the earth shook and trembled; the foundations also of the hills moved and were shaken, because he was wroth. There went up a smoke out of his nostrils, and fire out of his mouth devoured: coals were kindled by it.
আমার বিপদের মুহূর্তে আমি প্রভূকে ডাকলাম এবং আমার প্রভূর নিকট ক্রন্দন করলাম। তিনি তার উপাসনালয়ের বাইরে থেকে আমার আওয়াজ শুনলেন। আমার ক্রন্দন তাঁর নিকট পৌছল। এমনকি তার কর্ণকুহরে প্রবেশ করল। অত:পর ভূমি প্রকম্পিত হলো এবং ঝাকুনি দিল। পাহাড়ের ভিত নড়ে উঠল। কেননা প্রভূ রাগান্বিত ছিলেন। তার নাক থেকে ধুয়া বের হলো এবং তার মুখ থেকে আগুন বের হলো, সেই আগুনে কয়লা জ্বলে উঠল।
[সূত্রঃ বুক অব সাম, পরিচ্ছেদ, ১৮, শ্লোক, ৬,৭,৮।]
আল্লাহ সম্পর্কে ভ্রান্ত দেহবাদী আকিদার স্বরুপ বিশ্লেষণ : মুগিরিয়া, ইউনুসিয়া,জাওয়ারিবি, শয়তানিয়া ফির্কা :
স্রষ্টাকে সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য প্রদানে বাতিল ফেরকাসমূহ আসমানী ধর্মসমূহের মধ্যে স্রষ্টাকে সৃষ্টির স্তরে নামিয়েছে ইহুদীরা। খ্রিষ্টানরা স্বয়ং সৃষ্টিকে স্রষ্টা বানিয়েছে। এভাবে মূল তাউহীদের আক্বিদায় মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে কুফুর-শিরকে নিপতিত হয়েছে।
পরবর্তীতে মুসলমানদের অনেক বাতিল ফেরকা ইহুদী-খ্রিষ্টানদের এসব কুফুরী-শিরকী আক্বিদা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন সময়ে ইহুদী-খ্রিষ্টানদের কুফুরী আক্বিদাগুলো মুসলমানদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে।
ইহুদী বর্ণনার দ্বারা প্রভাবিত মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম শিয়ারা এসব কুফুরী আক্বিদা প্রচার করে।
এদের পাশাপাশি একদল অজ্ঞ মুহাদ্দিস কুরআন-সুন্নাহের বাহ্যিক শব্দ অনুসরণের নামে ইহুদীদের এসব কুফুরী আক্বিদা প্রচার করতে থাকে।
এবাবে সাধারণ মুসলমানদের মাঝে ইহুদী-খ্রিষ্টানদের কুফুরী আক্বিদাগুলো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। মুসলমানদেরও অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এবং কুরআন সুন্নাহের অনুসরণের ধুঁয়ো তুলে তারা অনেক সাধারণ মানুষকেও এসব কুফুরী আক্বিদার দিকে পরিচালিত করে।
আল্লাহ তায়ালার নাম ও গুণাবলী বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে এসব বাতিল ফেরকাসমূহের পরিচিতি স্পষ্ট হওয়া আবশ্যক।
শিয়াদের মুজাসসিমা ও মুশাববিহা ফেরকা:
[মুজাসসিমা: যারা আল্লাহর শরীর, দেহ ও অঙ্গ-প্রতঙ্গ সাব্যস্ত করে তাদেরকে মুজাসসিমা বলে।
মুশাববিহা: যারা আল্লাহর জন্য সৃষ্টির গুণাবলী সাব্যস্ত করে তাদেরকে মুশাববিহা বলে।]
ইহুদী-খ্রিষ্টানদের কুফুরী আক্বিদা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনেক শিয়া-রাফেযী আল্লাহ তায়ালার জন্য সৃষ্টির গুণাবলী সাব্যস্ত করেছে। আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টির স্তরে নামিয়েছে। মানুষের মতো রক্ত-মাংসের প্রভূ হিেেসব গ্রহণ করেছে। বাস্তবে এরা মুসলমান দাবী করলেও এরা হিন্দুদেরই সমগোত্রীয়।
এদের নিজেদের মধ্যে অনেক দল রয়েছে। প্রত্যেক দলের এক একজন নেতা রয়েছে। এদের মতাদর্শের মধ্যে সামান্য কিছু বাহ্যিক পার্থক্য দেখা গেলেও আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য দেয়ার ক্ষেত্রে সব মতবাদই অভিন্ন।
শিয়াদের মধ্যে প্রসিদ্ধ মুজাসসিমাদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি আলোচনাঃ
হিশামিয়া: বাতিল ফেরকা বিষয়ে অভিজ্ঞ ইমাম ও ঐতিহাসিকগণ হিশামিয়া দ্বারা দু’টি বাতিল ফেরকা উদ্দেশ্য নেন।
বাতিল ফেরকা দু'টির একটি ফেরকার জনক হলো, হিশাম ইবনে হাকাম (মৃত: ১৯০ হি.)।
অপর বাতিল ফেরকার জনক হলো, হিশাম ইবনে সালিম আল-জুয়ালিকি।
[সূত্রঃ আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ., ৪৭।]
ইমাম বাগদাদী রহ. এঁর মতে ফেরকাটি শিয়াদের ইমামের ধ্যান-ধারণা, আল্লাহর শরীর সাব্যস্তরণের ভ্রষ্টতা এবং আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য প্রদানের ক্ষেত্রে অভিন্ন। ইমাম ইসফারাইনী রহ. বলেন,وهم الأصل في التشبيهঅর্থাৎঃ আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য প্রদানে এই দলটি হলো মূল।
[সূত্রঃ আত-তাবসীর ফিদ দিন, পৃ., ২৫।]
ইমাম শাহরাস্তানীর মতে হিশামিয়া মূলত: একটি ফেরকা, দুই ব্যক্তির দিকে সম্পৃক্ত করা হয়। এদের মতাদর্শও এক। এরা মূলত: একজন আরেকজনের অনুগামী ছিলো। তিনি (ইমাম শাহরাস্তানী রহঃ) বলেন, আল্লাহ তায়ালাকে সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য প্রদানে অগ্রগামী ছিলো হিশাব ইবনে হাকাম। হিশাব ইবনে সালেম আল-জুয়ালিকি ছিলো তার অনুগামী এবং তারা উভয়ে একই পথে হেঁটেছিলো।
[সূত্রঃ আল-মিলালু ওয়ান নিহাল, পৃ., ১৮৪।]
হিশাম ইবনে হাকাম এর উপনাম ছিলো আবু মুহাম্মাদ। সে বনী শাইবান এর আযাদকৃত গোলাম ছিলো। বাগদাদ থেকে কুফায় স্থানান্তরিত হয় এবং সেখানেই বসবাস করে। সে শিয়াদের অন্যতম একজন বক্তা ছিলো। খলিফা মা’মুনের সময় সে ইন্তেকাল করে।
[সূত্রঃ আল-ফিহরিস্ত, ইবনে নাদীম, খ., ১, পৃ., ১৪১। সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খ., ৪, পৃ., ৫৪৪।]
ইমাম আবুল হাসান আশআরী রহ. হিশাম ইবনে হাকাম ও তাঁর অনুসারীদের আক্বিদা বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন,
الهشامية أصحاب هشام بن الحكم الرافضي، يزعمون أن معبودهم جسم له نهاية وحد طويل عريض طوله مثل عرضه، وعرضه مثل عمقه لا يوفي بعضه على بعضه. ولم يعينوا له طولاً غير الطويل. وإنما قالوا: طوله مثل عرضه على المجاز دون التحقيق، وزعموا أنه نور ساطع، له قدر من الأقدار. في مكان دون مكان. كالسبيكة الصافية كاللؤلؤة المستديرة من جميع جوانبها.ذو لون وطعم ورائحة. لونه هو طعمه، هو رائحته، ورائحته هي محسته. وهو نفسه لونه. ولم يعينوا لوناً ولا طمعاً هو غيره. وزعموا أنه هو اللون وهو الطعم، وأنه قد كان لا في مكان، ثم حدث المكان بأن تحرك الباري فحدث المكان بحركته فكان فيه. وزعم أن المكان هو العرش.وذكر أبو الهذيل في بعض كتبه أن هشام بن الحكم قال إن ربه جسم ذاهب جاء، فيتحرك تارة ويسكن أخرى، ويعقد مرة ويقوم أخرى، وإنه طويل عريض عميق، لأن ما لم يكن كذلك دخل في حد التلاشي. قال: فقلت له: فأيهما أعظم إلهك أو هذا الجبل وأومأت إلى جبل أبي قبيس قال: فقال هذا الجبل يوفي عليه، أي هو أعظم منه. وذكر ابن الراوندي أن هشام بن الحكم كان يقول: إن بين إلهه وبين الأجسام المشاهدة تشابهاً من جهة من الجهات، لولا ذلك ما دلت عليه.وحكي عنه خلاف هذا وأنه كان يقول إنه جسم ذو أبعاض لا يشبهها ولا تشبهه، وحكى عنه الجاحظ أنه قال في ربه في عام واحد خمسة أقاويل، مرة رغم أنه كالبلورة وزعم مرة أنه كالسبيكة. وزعم مرة أنه غير ذي صورة، وزعم مرة أنه بشبر نفسه سبعة أشبار، ثم رجع عن ذلك وقال هو جسم لا كالأجسام.وزعم الوراق أن بعض أصحاب هشام أجابه مرة إلى أن الله عز وجل على العرش مماس له وأنه لا يفضل عن العرش ولا يفضل العرش عنه
অর্থাৎঃ হিশাম ইবনে হাকাম শিয়া'-র অনুসারীদেরকে হিশামিয়া বলা হয়। তাদের আক্বিদা-বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তায়ালার শরীর রয়েছে। শরীরের সমাপ্তি ও সীমা-পরিসীমা রয়েছে। এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ রয়েছে। আল্লাহর শরীরের দৈর্ঘ্য প্রস্থের সমান। শরীরের প্রস্থ এর গভীরতার সমান। আল্লাহর শরীরের কোন অংশ একে-অপরের পরিপূরক নয়। তারা আল্লাহর জন্য দৈর্ঘ্য সাব্যস্ত করেছে কিন্তু এই দৈর্ঘ্যরে সুনিদিষ্ট কোন পরিমাণ উল্লেখ করেনি। আল্লাহর দৈর্ঘ্য তার প্রস্থের সমান এজাতীয় কথা তারা অনেক সময় রূপক অর্থে ব্যবহার করে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালা হলেন, একটি উজ্জ্বল আলো। এই উজ্জ্বল আলোর সুনির্দিষ্ট একটা পরিমাপ রয়েছে। এটি কোন স্থানে রয়েছে, তবে তা সুনির্দিষ্ট নয়। তিনি উজ্জ্বল ধাতু-মিশ্রণের মতো। চতুর্দিক থেকে গোলাকার মণি-মুক্তার উজ্জ্বল। আল্লাহর রঙ, স্বাদ ও ঘ্রাণ রয়েছে। আল্লাহর রঙ তাঁর স্বাদের অনুরূপ। আল্লাহর রঙ তাঁর ঘ্রাণেরও অনুরূপ। আল্লাহর ঘ্রাণ তাঁর স্পর্শ অনুভূতির প্রকাশ। সেটিই আবার তাঁর রঙ। তারা আল্লাহর সত্তার অতিরিক্ত কোন রঙ বা ঘ্রাণ সাব্যস্ত করেনি। বরং তাদের নিকট স্বয়ং এই রঙ ও ঘ্রাণই আল্লাহ। তাদের বিশ্বাস হলো, আদিতে আল্লাহ তায়ালা কোন স্থানে ছিলেন না। অত:পর আল্লাহ তায়ালা নড়া-চড়া করেন, ফলে স্থান সৃষ্টি হয়। তিনি নতুন সৃষ্ট এই স্থানে থাকেন। তাদের বিশ্বাস হলো, নতুন সৃষ্ট এই স্থান হলো আরশ। আবুল হুজাইল তার একটি কিতাবে লিখেছে, হিশাম ইবনে হাকামকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই পাহাড় বড় না তোমার প্রভূ বড়। সে বলল, প্রভূ বড়। আমি তাকে আবু কুবাইস পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। ইবনে রাওয়ান্দী বলেন, হিশাম ইবনে হাকাম বলত, বাহ্যিক শরীর ও তার প্রভূর মাঝে একটি বিশেষ দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে। যদি এটি না থাকত, তাহলে আল্লাহর প্রমাণ পাওয়া যেত না। কেউ তার এই বক্তব্যের বিপরীত বক্তব্য তার থেকে বর্ণনা করেছে। সে বলত, আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিশিষ্ট সত্তা। তবে তার সঙ্গে তুলনীয় কিছু নেই এবং তিনিও কারও সাদৃশ্য রাখেন না। ইমাম জাহেয তার থেকে বর্ণনা করেন, সে একই বছরে আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে পাঁচ ধরনের মতবাদ তৈরি করতো। কখনও সে বলত, আল্লাহ তায়ালা উজ্জ্বল মণি-মুক্তার মতো। কখনও ধারণা করতো আল্লাহ তায়ালা মিশ্রধাতুর মতো। কখনও বিশ্বাস করতো আল্লাহ তায়ালা আকার-আকৃতি বিশিষ্ট নন। কখনও বলত, আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতের পরিমাপ হিসেবে সাত বিঘাত। অত:পর, এসব থেকে ফিরে এসে নতুন মতবাদ চালু করলো যে, আল্লাহ তায়ালার দেহ রয়েছে, তবে অন্যান্য দেহ এর মতো নয়। ওয়াররাক বলেন, হিশামের কিছু অনুসারী তাকে উত্তর দিয়েছিলো, আল্লাহ তায়লা আরশের উপর আরশ স্পর্শ করে আছেন। তিনি আরশ থেকে বড় নন এবং আরশও তার থেকে বড় নয়।
[সূত্রঃ মাকালাতুল ইসলামিয়্যিন, পৃ. ৩১-৩৪। তাদের মতবাদ সম্পর্কে অবগত হতে আরও দেখুন, আত-ম্বীহ ওয়ার রাদ, পৃ., ২৪। আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ., ২০, ৪৭। আল-বুদউ ওয়াত তা’রীখ, খ., ৫, পৃ., ১৩২। আত-তাবসীর ফিদ দীন, পৃ., ২৪, ৭০। আল-মিলালু ওয়ান নিহাল, পৃ., ১৮৪। সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, খ., ১০, পৃ., ৫৪৪।]
ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী রহ. হিশাম ইবনে হাকামের আক্বিদা সম্পর্কে বলেন,
وكان يزعم أن الله تعالى جسم. وغيَّر مذهبه في سنة واحدة عدة تغيرات. فزعم تارة أن الله تعالى كالسبيكة الصافية، وزعم مرة أخرى أنه كالشمع الذي من أي جانب نظرت إليه كان ذلك الجانب وجهه. واستقر رأيه عاقبة الأمر على أنه سبعة أشبار، لأن هذا المقدار أقرب إلى الاعتدال ليس بجسم، لكن صورته صورة الآدمي، وهو مركب من اليد والرجل والعين لأن أعضاءه ليست من لحم ولا دم
অর্থাৎঃ “সে বিশ্বাস করতো আল্লাহ তায়ালা দেহ ও শরীর বিশিষ্ট। একই বছরে সে তার মতাদর্শ কয়েকবার পরিবর্তন করতো। কখনও ধারণা করতো আল্লাহ তায়ালা উজ্জ্বল মিশ্র ধাতুর মতো। কখনও বিশ্বাস করতো আল্লাহ তায়ালা মোমবাতির আলোর মতো; যেদিক থেকে দেখা হয় সেদিকেই এর মুখ থাকে। সর্বশেষ সে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, আল্লাহ তায়ালা সাত বিঘাত বিশিষ্ট। কেননা এই পরিমাপ ভারসাম্যের অধিক নিকটবর্তী। সর্বশেষ সে বলতো, আল্লাহ তায়ালা দেহ বিশিষ্ট নন। তবে তিনি মানুষের আকৃতি বিশিষ্ট। তিনি হাত, পা, চোখ ইত্যাদি দ্বারা গঠিত। তবে তার অঙ্গ-প্রতঙ্গ রক্ত-মাংশের নয়।”
[সূত্রঃ ই’তেকাদু ফিরাকিল মুসলিমিন, পৃ., ৩৪ ও ২০৯।]
হিশাম ইবনে সালেম আল-জুয়ালেকী:
ইমাম আবুল হাসান আশআরী রহ. হিশাম ইবনে সালিম আল-জুয়ালেকী এর আক্বিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে বলেন,
الهشامية أصحاب هشام بن سالم الجواليقي يزعمون أن ربهم على صورة الإنسان، وينكرون أن يكون لحماً ودماً، ويقولون: هو نور ساطع يتلألأ بياضاً وأنه ذو حواس خمس بحواس الإنسان، له يد ورجل وأنف وأذن وعين وفم، وأنه يسمع بغير ما يبصر به، وكذلك سائر حواسه عندهم متغايرة
অর্থাৎঃ হিশাম ইবনে সালেম আল-জুয়ালেকীর অনুসারীদেরকেও হিশামিয়া বলা হয়। তাদের বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তায়ালা মানুষের আকৃতি বিশিষ্ট। তবে তারা আল্লাহর জন্য মানুষের মতো রক্ত-মাংশ সাব্যস্ত করে না। তারা বলে, আল্লাহ তায়ালা হলেন উজ্জ্বল আলো। যেটি উজ্জ্বল সাদা আলোয় জ্বল জ্বল করে। আল্লাহ তায়ালা মানুষের মতো পঞ্চ ইন্দ্রিয় বিশিষ্ট। আল্লাহ তায়ালার হাত, পা, নাক, কান, চোখ ও মুখ রয়েছে। তিনি যা দিয়ে শ্রবণ করেন সেটি তার দর্শনের অঙ্গ থেকে ভিন্ন। এভাবে আল্লাহ তায়ালার সকল ইন্দ্রিয় ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।”
[সূত্রঃ মাকালাতুল ইসলামিয়্যিন, পৃ.৩৪ ও ২০৯।]
ইমাম আবুল হাসান আশআরী রহ. বলেন,
وحكى أبو عيسى الوراق أن هشام بن سالم كان يزعم أن لربه وفرة سوداء وأن ذلك نور أسود
অর্থাৎঃ আবু ইসা আল-ওররাক বলেন, হিশাম ইবনে সালেম বিশ্বাস করতো যে, আল্লাহ তায়ালার কালো গোফ রয়েছে। আর এই কালো গোফ কালো আলো বিশিষ্ট।
[সূত্রঃ মাকালাতুল ইসলামিয়্যিন, পৃ., ২০৯।]
ইমাম শাহরাস্তানী রহ. বলেন,
قال إنه تعالى على صورة إنسان أعلاه مجوف وأسفله مصمت.. ليس بجسم لكن صورته صورة الآدمي وهو مركب من اليد والرجل والعين، لأن أعضاءه ليست من لحم ولا دم
অর্থাৎঃ হিশাম ইবনে সালেম এর আক্বিদা-বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তায়ালা মানুষের আকৃতি বিশিষ্ট। আল্লাহর শরীরের উপরের অংশ ফাঁকা গহ্বর বিশিষ্ট এবং নিচের অংশ নিশ্ছিদ্র। আল্লাহ তায়ালা দেহ বিশিষ্ট নয়। তবে আল্লাহর আকৃতি মানুষের আকৃতির মতো। তিনি হাত, পা, চোখ ইত্যাদি দ্বারা গঠিত। আল্লাহর অঙ্গ-প্রতঙ্গ রক্ত-মাংসের নয়।”
[সূত্রঃ আল-মিলালু ওয়ান নিহাল, পৃ., ২১০।]
মুগিরিয়া ফেরকা:
মুগিরা ইবনে সাইদ আল-ইজলি (মৃত:১১৯ হি:) ও তার অনুসারীদেরকে মুগিরিয়া বলা হয়।
ইমাম যাহাবী (রঃ) মুগিরা ইবনে সাইদ সম্পর্কে বলেন,
وكان هذا الرجل ساحراً فاجراً شيعياً خبيثاً
অর্থাৎঃ সে যাদুকর, পাপী, শিয়া ও নিকৃষ্ট প্রকৃতির লোক ছিলো।
মুগিরিয়া ফেরকার আক্বিদা সম্পর্কে ইমাম আব্দুল কাহের বাগদাদী রহ. বলেন,
ومنها إفراطه في التشبيه، وذلك أنه زعم أن معبوده رجل من نور على رأسه تاج من نور، وله أعضاء على صور حروف الهجاء، وأن الألف منها مثال قدميه والعين على صورة عينيه، …ومنها أنه تكلم في بدء الخلق فزعم أن الله تعالى لما أراد أن يخلق العالم تكلم باسمه الأعظم فطار ذلك الاسم ووقع تاجاً على رأسه. وتأول على ذلك قوله تعالى: (سبح اسم ربك الأعلى) وزعم أن الاسم الأعلى إنما هو ذلك التاج. ثم إنه بعد وقوع التاج على رأسه كتب بإصبعه على كفه أعمال عباده. ثم نظر فيها فغضب من معاصيهم فعرق، فاجتمع من عرقه بحران أحدهما مالح والآخر عذب. ثم اطلع في البحر فأبصر ظله فذهب ليأخذه فطار فانتزع عيني ظله فخلق منها الشمس والقمر، وأفنى باقي ظله وقال: لا ينبغي أن يكون معي ثم خلق الخلق من البحرين فخلق الشيعة من البحر العذب النير فهم المؤمنون وخلق الكفرة وهم أعداء الشيعة من البحر المظلم المالح
অর্থাৎঃ তার ভ্রান্ত বিষয়গুলোর একটি হলো সে আল্লাহ তায়ালাকে নিকৃষ্টভাবে সৃষ্টির সঙ্গে সাদৃশ্য প্রদান করতো। সে বিশ্বাস করতো, আল্লাহ তায়ালা আলোকময় এক ব্যক্তি, যার মাথায় নূরের মুকুট রয়েছে। আরবী বর্ণমালার আকৃতি অনুযায়ী আল্লাহর আকৃতি রয়েছে। আরবী বর্ণমালার আলিফ আল্লাহর পায়ের উদাহরণ। আরবী আইন অক্ষরটি আল্লাহর চোখের অনুরূপ। সে বিশ্বাস করতো, আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টির শুরুতে কথা বলেন। সে ধারণা করতো আল্লাহ তায়ালা যখন মহাবিশ্ব সৃষ্টির ইচ্ছা করেন তিনি তার ইসমে আ’জম উচ্চারণ করেন। এই ইসমে আজম উড়ে গিয়ে তার মাথায় বসে এবং এটি তার মুকুট হয়। সে তার বক্তব্যের প্রমাণ হিসেবে পবিত্র কুরআনের আয়াত উপস্থাপন করে এর বিকৃত ব্যাখ্যা করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আপনি আপনার প্রভূর নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন, যিনি মহান। সে এই আয়াতের বিকৃত ব্যাখ্যা করে বলেছে, এখানে সম্মানিত নাম দ্বারা আল্লাহর মুকুট উদ্দেশ্য। আল্লাহ তায়ালার মাথায় এই মুকুট আসার পর তিনি তার দুই আঙ্গুল দ্বারা হাতের তালুর উপরে বান্দার আমল লিপিবদ্ধ করেছেন। অত:পর তিনি এই আমলগুলোর দিকে দৃষ্টি বুলান। বান্দার গোনাহ দেখে তিনি রাগান্বিত হয়ে যান। এই রাগের কারণে তিনি ঘর্মাক্ত হয়ে যান। তার ঘাম থেকে দু’টি সমুদ্র প্রবাহিত হয়। একটি লবণাক্ত, অপরটি সুমিষ্ট। এরপর তিনি সমুদ্রের দিকে উঁকি দেন। সেখানে তিনি নিজের ছায়া দেখতে পান। তিনি সেটা ধরতে যান। কিন্তু ছায়া উড়ে যায়। এরপর তিনি তার নিজ ছায়া থেকে চন্দ্র ও সূর্য সৃষ্টি করেন। অবশিষ্ট ছায়াকে তিনি নি:শেষ করে দেন। অত:পর তিনি বললেন, এগুলো আমার সাথে থাকা উচিৎ নয়। দুই সমুদ্র থেকে তিনি মাখলুককে সৃষ্টি করলেন। সুমিষ্ট পানির সমুদ্র থেকে শিয়াদেরকে সৃষ্টি করেন এবং লবণাক্ত ও অন্ধকার সমুদ্র থেকে শিয়াদের শত্রুদেরকে সৃষ্টি করেন।”
[সূত্রঃ আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, ২৩১-২৩৩। আরও দেখুন, আল-ফিসাল, ইবনে হাজাম, খ., ৪, পৃ., ১৪১। আত-তাবসীর, পৃ., ৭০, আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, শাহরাস্তানী, পৃ., ১৭৬, আল-কামেল, ইবনুল আসীর, খ., ৪, পৃ., ৪২৯।]
বয়ানিয়া ফেরকা:
বয়ান ইবনে সাময়ান (মৃত:১১৯) ও তার অনুসারীদেরকে বয়ানিয়া ফেরকা বলা হয়। সে কুফার অধিবাসী ছিলো। বয়ান ইবনে সাময়ানের আক্বিদা-বিশ্বাস ছিলো,
وكان يزعم أنه يعرف الاسم الأعظم، وأنه يهزم به العساكر ثم أنه زعم أن الإله الأزلي رجل من نور، وأنه يفنى كله غير وجهه. وتأول على ذلك قوله: (كل شيء هالك إلا وجهه) وقوله: (كل من عليها فان) وقوله (ويبقى وجه ربك) ورفِع خبر بيان هذا إلى خالد بن عبد الله القسري في زمان ولايته في العراق فاحتال عليه حتى ظفر به
অর্থাৎঃ সে বিশ্বাস করতো যে সে ইসমে আ’জম জানে। এর মাধ্যমে সে সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে বলে প্রচার করতো। তার আক্বিদা ছিলো, আল্লাহ তায়ালা নূরের তৈরি একজন লোক। আল্লাহর চেহারা ব্যতীত সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। তার এই মতের স্বপক্ষে সূরা কাসাস এর ৮৮ নং আয়াত, সূরা আর-রহমানের ২৬ ও ২৭ নং আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করতো। সূরা কাসাস এর ৮৮ নং আয়াতের অর্থ: আল্লাহর চেহারা ব্যতীত সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। সূরা আর-রহমানের ২৬ ও ২৭ নং আয়াতের অর্থ: ভূ-পৃষ্ঠের উপর যা কিছু রয়েছে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। কেবল আপনার প্রভূর চেহারা অবশিষ্ট থাকবে। বয়ান ইবনে সাময়ানের এসব ভ্রান্ত আক্বিদা সম্পর্কে ইরাকের গভর্ণর খালেদ ইবনে আব্দুল্লাহ কাসারী অবগত হন। তিনি তাকে গ্রেপ্তার করে শূলিতে চড়ান।
[সূত্রঃ আল-ফারকু বাইনাল ফিরাক, পৃ., ২২৭-২২৮। বিস্তারিত জানতে দেখুন, আল-ফিসাল, খ., ৪, পৃ., ১৪১। আল-মিলাল ওয়ান নিহাল, পৃ., ১৫৩।]
ইউনুসিয়া ফেরকা:
বিখ্যাত শিয়া ইউনুস ইবনে আব্দুর রহমান ও তার অনুসারীরা বয়ানিকা ফেরকা নামে পরিচিত। তার আক্বিদা ছিলো, ফেরেশতারা আল্লাহ তায়ালাকে বহন করে।
ইমাম শাহরাস্তানী রহ. বলেন,
زعم أن الملائكة تحمل العرش والعرش يحمل الرب تعالى
অর্থাৎঃ সে বিশ্বাস করতো যে ফেরেশতাগণ আরশ বহন করছে এবং আরশ আল্লাহ তায়ালাকে বহন করছে।
[সূত্রঃ আল-মিলালু ওয়ান নিহাল, পৃ., ১৮৮।]
জাওয়ারিবি ফেরকা:
দাউদ জাওয়ারিবি ও তার অনুসারীরা জাওয়ারিবি ফেরকা নামে পরিচিত।
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন,
رأس في الرافضة والتجسيم من مرامي جهنم
অর্থাৎঃ মুজাসসিমা ও শিয়াদের গুরু এক জাহান্নামী।
[সূত্রঃ লিসানুল মিজান, খ., ২, পৃ., ৪২৭।]
ইমাম শাহরাস্তানী রহ. তার আক্বিদা সম্পর্কে বলেন,
يحكى عن داود أنه قال: أعفوني عن الفرج واللحية، واسألوني عما وراء ذلك فإن في الأخبار ما يثبت ذلك. وقال: إن معبوده جسم ولحم ودم ومع ذلك جسم لا كالأجسام، ولحم كاللحوم ودم لا كالدماء، وكذلك سائر الصفات، وحكي أنه قال هو أجوف من أعلاه إلى صدره مصمت ما سوى ذلك وأن له وفرةً سوداء وله شعر قطط
অর্থাৎঃ দাউদ জাওয়ারিবি থেকে বর্ণিত, সে বলতো, আমাকে আল্লাহর গুপ্তাঙ্গ ও দাঁড়ি ছাড়া আর সব কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো। কেননা, হাদীসে এই দু’টো ছাড়া সব কিছু আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা হয়েছে। সে বিশ্বাস করতো, আল্লাহ তায়ালা শরীর, রক্ত, গোশত বিশিষ্ট। এগুলো থাকা সত্ত্বেও তার শরীর অন্য কোন শরীরের মতো নয। আল্লাহর গোশত অন্য কারও গোশতের মতো নয় এবং তার রক্ত অন্য কারও রক্তের মতো নয়। আল্লাহর অন্য সব গুণ সম্পর্কে একই কথা। তার থেকে বর্ণিত আছে, সে বলতো, আল্লাহ তায়ালা উপরের অংশ থেকে বুক পর্যন্ত ফাঁপা গহ্বর বিশিষ্ট এবং পরবর্তী অংশ ফাঁপা নয়। আল্লাহর কালো গোফ রয়েছে এবং কোকড়ানো চুল রয়েছে।
[সূত্রঃ আল-মিলালু ওয়ান নিহাল, পৃ., ১০৫। আল-ফিসাল, খ., ৪, পৃ., ১৩৯।]
শয়তানিয়া ফেরকা:
শয়তান আত-তাক ও তার অনুসারীদেরকে শয়তানিয়া ফেরকা বলা হয়।
শয়তান আত-তাক এর প্রকৃত নাম হলো, মুহাম্মাদ বিন আলী আল-কুফী। সে শিয়াদের বড় একজন ইমাম ছিলো। মুশাববিহা ও মুজাসসিমাদের আক্বিদা প্রচার করতো। সে হিশাম আল-জুয়ালেকীর অনেক মতাদর্শ গ্রহণ করেছিলো।
[সূত্রঃ আল-বুদউ ওয়াত তারিখ, খ., ৫, পৃ., ১৩২।]
তার আক্বিদা সম্পর্কে ইমাম আবুল হাসান আশআরী রহ. বলেন,
وقال إن الله تعالى على صورة إنسان رباني
অর্থাৎঃ সে বলতো, আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের আকৃতির অনুরূপ আকৃতি বিশিষ্ট।
[সূত্রঃ আল-মিলালু ওয়ান নিহাল, পৃ.১৮৭।]
ইমাম ফখরুদ্দিন রাজী রহ. শয়তান তাকের আক্বিদা সম্পর্কে বলেন,
الشيطانية أتباع شيطان الطاق وهم يزعمون أن الباري تعالى مستقر على العرش والملائكة يحملون العرش. وهم وإن كانوا ضعفاء بالنسبة إلى الله تعالى. لكن الضعيف قد يحمل القوي كرجل الديك التي تحمل مع دقتها جثة الديك
অর্থাৎঃ শয়তান তাকের অনুসারীদেরকে শয়তানিয়া বলা হয়। তাদের বিশ্বাস হলো, আল্লাহ তায়ালা আরশে অবস্থান করেন এবং ফেরেশতাগণ আরশ বহন করে। ফেরেশতারা যদিও আল্লাহর তুলনায় দুর্বল কিন্তু কখনও দুর্বল সবলকে বহন করতে পারে। যেমন, মোরগের পা দু’টি চিকন হওয়া সত্ত্বেও মোরগের শরীর বহন করে।
[সূত্রঃ ই’তেকাদু ফিরাকিল মুসলিমিন, পৃ.৬৩।]
আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে রাফেযী শিয়াদের কুফুরী আক্বিদা ও তাদের বিভিন্ন ফেরকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো।
এই আলোচনার মৌলিক একটি উদ্দেশ্য হলো, বর্তমানেও বিভিন্ন নামে এসব আক্বিদা আমাদের সমাজে প্রচার করা হচ্ছে সে বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত দেয়া।
ইসলামের তেরশ’ বছর আগে এসব কুফুরী আক্বিদার সূচনা হলেও এগুলো নি:শেষ হয়ে যায়নি। বরং বর্তমানে নতুনরূপ দিয়ে নতুন আঙ্গিকে মানুষকে এসব কুফুরীর দিকে দাওয়াত দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ পাক মুসলিম উম্মাহকে এধরণের ভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন, আমীন।