মাসালিকুল হুনাফা ফি ওয়ালিদাইল মোস্তাফা ﷺ ২য় পর্ব



♦মূলঃ ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী রহমাতাল্লাহি আলাইহি



দ্বিতীয়  মসলক  বা   অভিমত  হল  নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতার  প থেকে কোন শিরকি  কার্যকলাপ প্রমাণিত   হয়নি।  বরং তারা  ছিলেন হানিফ    সম্প্রদায়ের   অন্তর্ভুক্ত।   তারা     হযরত   ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম  এর  ধর্মের  উপর প্রতিষ্ঠিত    ছিলেন আরবদের মধ্যে এ রকম আরো অনেক লোক বিদ্যমান ছিলেন।     যেমন     যায়দ     বিন      আমর     বিন     নুফাইল,  ওয়ারাকা বিন নওফেল প্রমুখ।

মাসালিকুল হুনাফা ফি ওয়ালিদাইল মোস্তাফা ﷺ ২য় পর্ব

দ্বিতীয় মসলকের স্বপে ইমাম রাযী (রা.) এর বক্তব্য

==========

এ মসলক বা অভিমতের অন্যতম প্রবক্তা হলেন ইমাম ফখরুদ্দিন   রাযী   রাদিয়াল্লাহু   আনহু।   তিনি  স্বীয়  اسرار التنزيل   কিতাবে  দলিলভিত্তিক  আলোচনায়   বলেছেন- বলা হয়েছে আযর ইব্রাহিম আলাইহি সালাম এর পিতা ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন ইব্রাহিম আলাইহি সালাম এর   চাচা।   এ   ব্যাপারে    তারা   কয়েকটি   দলিল   পেশ  করেছেন।



প্রথম দলিল

=====

আম্বিয়ায়ে     কিরামদের     পিতৃপুরুষদের      মধ্যে      কোন কাফির ছিল   না। এর উপর কয়েকটি দলিল বিদ্যমান। যেমন আল্লাহর বাণী-



الذى يرك حين تقوم- وتقلبك فى السجدين



অর্থ:    যিনি   আপনাকে   দেখেন    যখন   আপনি   নামাযে দণ্ডায়মান     হন     এবং       নামাযীদের     মধ্যে       আপনার  চলাচল। (শুয়ারা- ২১৮-২১৯)



বলা হয়েছে এ আয়াতের অর্থ হল নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  এর   নূর    মোবারক  সিজদাকারী থেকে   সিজদাকারীর  মাধ্যমে   স্থানান্তরিত   হয়েছে।   এ  ব্যাখ্যা অনুযায়ী উক্ত আয়াত দ্বারা ইহাই প্রতীয়মান হয় যে,  মুহাম্মদ  সাল্লাল্লাহু   আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  এর   পূর্ব পুরুষদের মধ্যে প্রত্যেকেই মুসলমান ছিলেন। অতএব ইহা     অকাট্যভাবে     আবশ্যক    যে     ইব্রাহিম    আলাইহি সালাম এর পিতা কাফির ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন তাঁর চাচা। ইহাই উক্ত আয়াতের ভাবার্থ।



দ্বিতীয় দলিল

=====

রেওয়ায়ত         তথা         বর্ণনাসমূহ          যখন          কুল্লি         বা সমষ্টিগতভাবে     প্রয়োগ    হয়    এবং    এর    মধ্যে    কোন  নিষেধাজ্ঞা  পাওয়া না যায়   তখন আয়াতের অর্থ  ‘কুল্লি’ বা সমষ্টির উপর প্রয়োগ করা আবশ্যক।



এ    মূলনীতিটি   যখন   বিশুদ্ধ  বলে   প্রমাণিত  হল   তখন ইহাই  প্রতীয়মান  হল  যে,   ইব্রাহিম  আলাইহিস  সালাম  এর   পিতা মূর্তিপূজক  ছিলেন  না। অতঃপর ফখরুদ্দিন  রাযী  বলেন   মুহাম্মদ    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি  ওয়াসাল্লাম এর পিতৃপুরুষদের মধ্যে যে  কেহই মুশরিক ছিলেন না তার দলিল হল রাসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি    ওয়াসাল্লাম এর বাণী-



لم ازل انقل من اصلاب الطاهرين  الى   ارحام الطاهرات

অর্থ:   আমি   পবিত্র   পুরুষদের   পৃষ্ঠদেশ    থেকে   পবিত্র  রমণীগণের গর্ভের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছি



এবং আল্লাহ  বলেছেন-انما  المشركون  نجس অর্থ:  নিশ্চয় মুশরিকগণ অপবিত্র। (তাওবা- ২৮)



অতএব ইহা  আবশ্যক  যে,   রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম   এর   পিতৃপুরুষদের    মধ্যে    কেউ   মুশরিক হতে   পারবে   না।    ইহা   হচ্ছে   ইমাম   ফখরুদ্দিন   রাযী  রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হুবহু বক্তব্য।



তিনি     ছিলেন     তাঁর     যুগের      আহলে       সুন্নাত      ওয়াল জামায়াতের    ইমাম।  বেদআতী   মতবাদের  খণ্ডনকারী  এবং   আশআরী  জামাতের  সাহায্যকারী।  তিনি  হিজরি  ৬ষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে প্রেরিত হয়েছিলেন   উম্মতে মুহাম্মদী    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়াসাল্লাম     এর    দ্বীনি  সংস্কার      সাধন     করার    জন্য।    অর্থাৎ     তিনি     ছিলেন একজন মুজাদ্দিদ।



দু’টি মুকাদ্দামা

=====

ইমাম     সুয়ুতি     বলেন,      এ      মসলকের      স্বপে     ইমাম ফখরুদ্দিন   যে  বক্তব্যটি    পেশ  করেছেন    সে  ব্যাপারে  আমার নিকট কয়েকটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়েছে।



প্রথমত,   তিনি    যে    দলিল     পেশ    করেছেন   তা     দু’টি মুকাদ্দামা বা ভূমিকার সাথে যুক্ত।

প্রথম   মুকাদ্দামা:  নবীজীর  পিতৃপুরুষগণ   ছিলেন  স্ব-স্ব যুগে সর্বশ্রেষ্ঠ



বিশুদ্ধ    হাদিসসমূহ     দ্বারা     প্রমাণিত     যে,     নবীয়েপাক সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়াসাল্লাম    এর       পিতৃপুরুষগণ  আদম   আলাইহিস সালাম থেকে শুরু  করে  তাঁর  পিতা আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত সর্বযুগে তারা ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ।



দ্বিতীয়    মুকাদ্দামা:   পৃথিবীতে   সর্ব   যুগেই   এমন    কিছু লোক থাকেন যারা ফিতরাতের উপর বিশ্বাসী



অসংখ্য  হাদিস   ও   আছার   দ্বারা   প্রমাণিত    যে  হযরত  আদম   আলাইহিস   সালাম   থেকে   শুরু   করে    মুহাম্মদ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত    এ      পৃথিবীতে     সদাসর্বদা    এমন       কিছু    লোক বিদ্যমান     থাকবেন    যারা    হবেন    ফিতরাতের    উপর    বিশ্বাসী।   তারা  আল্লাহর  ইবাদত   করবেন   এবং  তারা হবেন একত্ববাদে বিশ্বাসী। তাদের মাধ্যমেই পৃথিবীকে হিফাজত  করা  হবে।  যদি   তারা  না   থাকতেন  তাহলে  পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত।



এখন    তুমি    যদি    উভয়     মুকাদ্দামাকে    একত্রিত    কর  তাহলে     অকাট্যভাবে    প্রমাণিত   হবে     যে   নবী   করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কোন     মুশরিক     ব্যক্তি      ছিলেন     না।     কারণ     তাদের  ব্যাপারে   প্রমাণিত    হয়েছে  যে,  তারা  প্রত্যেকেই  স্ব-স্ব যুগে সর্বোত্তম লোক ছিলেন।

এখন যদি  রাসূল  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়াসাল্লাম এর  পিতৃপুরুষগণ  তাদের  অন্তর্ভুক্ত    হন   যারা   ফিতরাতের  উপর    বিশ্বাসী   ছিলেন,   তাহলে    সেটাইতো   আমাদের দাবি। কিন্তু  যদি   তারা অন্যান্য লোকদের অন্তর্ভুক্ত হন যারা   ছিলেন   মুশরিক  তাহলে  দুটি  বিষয়ের  যে   কোন একটি অবশ্যক হয়।



হয়তো   মুশরিকগণ   মুসলমানদের   চেয়ে   উত্তম    হবে।  ইহা  সর্বসম্মতিক্রমে  বাতিল  বা  অগ্রহণযোগ্য।   অথবা  অন্যান্য   লোকগণ   তাদের   চেয়ে   উত্তম    হবে।   ইহাও  বাতিল।   কারণ   ইহা     সহিহ  হাদিসসমূহের  ব্যতিক্রম। অতএব  অকাট্যভাবে  ইহাই  প্রমাণিত  হয়  যে,  তাদের   মধ্যে কোন   মুশিরিক   ছিলেন না।  তাদের যুগে  তারাই ছিলেন উত্তম লোক।



প্রথম মুকাদ্দামার দলিলসমূহ

==========

ইমাম   বুখারী  হযরত  আবু  হুরায়রা  রাদিয়াল্লাহু  আনহু  থেকে বর্ণনা করেছেন-



قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بعثت  من خير قرون بنى ادم قرنا فقرنا حتى بعثت من القرن  الذى كنت فيه



অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আমি   আদম  সন্তানদের  মধ্যে   উত্তম  যুগ  থেকে  উত্তম যুগে প্রেরিত হয়েছি। সর্বশেষ  আমি বর্তমান যুগে এসে পৌঁছেছি।



ইমাম   বায়হাকী  دلائل  النبوة  কিতাবে  হযরত   আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-



ان   النبى  صلى    الله   عليه  وسلم    قال  ما  افترق   الناس فرقتين  الا جعلنى  الله   فى خيرهما-   فا   خرجت من  بين ابوى  فلم  يصبنى   شئ  من   عهد  الجاهلية-  وخرجت  من نكاح ولم اخرج من سفاح من لدن ادم  حتى   انتهيت الى ابى وامى فانا خيركم نفسا وخيركم أبا-



অর্থ:     নবী     করিম      সাল্লাল্লাহু     আলাইহি      ওয়াসাল্লাম ইরশাদ  করেন-  আল্লাহতায়ালা  মানবজাতিকে   দুভাগে  বিভক্ত     করে   আমাকে   তাদের    উত্তমভাগে   মনোনীত করেছেন।  আমি  আমার  পিতামাতার  মাধ্যমে  আগমন করেছি।  অতএব জাহিলিয়াতের কোন জিনিস আমাকে স্পর্শ    করেনি।      আমি    বৈবাহিক      সম্পর্কের     মাধ্যমে আগমন  করেছি। আদম আলাইহিস সালাম  থেকে শুরু করে  আমার   পিতামাতা  পর্যন্ত  কোন  অবৈধ   সূত্র  ছিল না।    অতএব    আমি      তোমাদের    মধ্যে    ব্যক্তিগত    ও বংশগত উভয় সূত্রেই উত্তম।



আবু  নাঈম  دلائل  النبوة  গ্রন্থে  হযরত   ইবনে  আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণনা করেছেন-



قال رسول الله صلى  الله  عليه وسلم- لم يزل الله ينقلنى من الاصلاب الطيبة الى الارحام الطاهرة مصنفا مهذبا- لا تنشعب شعبتان الا كنت فى خيرهما-



অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহতায়ালা পবিত্র পৃষ্ঠদেশসমূহ থেকে পবিত্র গর্ভের মাধ্যমে  আমাকে স্থানান্তর করেছেন। যখনই কোন  দুটি শাখা  তৈরি  হয়েছে  তখন   আমি   তাদের  উত্তম  শাখায় ছিলাম।



ইমাম    মুসলিম    এবং     ইমাম    তিরমিজি    সহিহ     সূত্রে  ওয়াসিলা বিন আসকা রাদিয়াল্লাহু  আনহু থেকে  বর্ণনা   করেছেন-



قال   رسول الله  صلى  الله عليه  وسلم ان  الله  اصطفى من ولد    ابراهيم  واسماعيل  واصطفى   من   ولد  اسماعيل    بنى كنانة- واصطفى من  بنى كنانة قريشا  واصطفى من   قريش بنى هاشم واصطفنى من بنى هاشم-



অর্থ:       রাসূলুল্লাহ       সাল্লাল্লাহু      আলাইহি       ওয়াসাল্লাম  বলেছেন-  আল্লাহতায়ালা    ইব্রাহিম  আলাইহিস   সালাম এর   বংশধর   থেকে   ইসমাইল   আলাইহিস    সালামকে  মনোনীত   করেছেন।   অতঃপর    ইসমাইল    আলাইহিস সালাম     এর   বংশ     থেকে    বনী   কেনানাকে   মনোনীত করেছেন।   অতঃপর    বনী   কেনানা    থেকে   কুরাইশকে মনোনীত    করেছেন।   কুরাইশ   থেকে    বনী    হাশিমকে নির্বাচন করেছেন। অতঃপর বনি হাশিম থেকে আমাকে মনোনীত করেছেন।



হাফিজ   আবুল   কাশিম   হামসাহ   বিন   ইউসুফ    সাহমী  হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ফজিলতসংক্রান্ত একটি হাদিস ওয়াসিলাহ থেকে বর্ণনা করেছেন-



ان    الله   اصطفى   من    ولد   ادم    ابراهيم   واتخذه     خليلا- واصطفى  من  ولد  ابراهيم   اسماعيل-   ثم  اصطفى  من  ولد اسماعيل نزار- ثم  اصطفى   من ولد   نزار مضر  ثم  اصطفى من مضر كنانة ثم اصطفى من كنانة قريشا ثم اصطفى من قريش   بنى  هاشم  ثم   اصطفى   من   بنى    هاشم  بنى   عبد المطلب ثم اصطفنى من عبد المطلب



অর্থ:   আল্লাহতায়ালা   আদম  সন্তানদের   মধ্যে  ইব্রাহিম আলাইহি  সালামকে    মনোনীত  করেছেন    এবং   তাকে খলিল    উপাধি     প্রদান    করেছেন।    অতঃপর     ইব্রাহিম আলাইহিস      সালাম      এর      বংশ      থেকে        ইসমাইল    আলাইহিস    সালামকে     নির্বাচন     করেছেন।    অতঃপর ইসমাইল  আলাইহিস সালাম  এর   বংশ  থেকে  নাজ্জার গোত্রকে     নির্বাচন  করেছেন।   অতঃপর  নাজ্জার  থেকে  মুদার   গোত্রকে    নির্বাচন    করেছেন।   অতঃপর      মুদার থেকে  কেনানা গোত্রকে  মনোনীত  করেছেন। অতঃপর কেনানা  থেকে  কুরাইশ,   কুরাইশ  থেকে   বনি    হাশিম, বনি      হাশিম    থেকে     বনি     আব্দুল    মুত্তালিব    গোত্রকে মনোনীত   করেছেন।     অতঃপর   আমাকে   বনী   আব্দুল মুত্তালিব গোত্র থেকে নির্বাচন করেছেন।



মুহিব  তাবারী-  ذخائر   العقبى   গ্রন্থে    এবং   ইবনে  সা’দ তাকাত গ্রন্থে  হযরত ইবনে আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণনা করেছেন-



قال رسول الله صلى الله عليه وسلم خير العرب مضر وخير مضر بنى عبد مناف (وخير بنى مناف) بنو هاشم وخير بنى هاشم   بنو عبد المطلب والله  ما افترق فرقتان منذ خلق الله ادم الا كنت فى خيرهما-



অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আরবদের   মধ্যে   মুদার  গোত্র   উত্তম।   মুদার   গোত্রের মধ্যে  আব্দে  মনাফ   শাখা  উত্তম।  বনী  মনাফের  মধ্যে  বনু  হাশিম  উত্তম।   হাশেমী  শাখার   মধ্যে   বনু   আব্দুল  মুত্তালিব উত্তম।



আল্লাহর   শপথ,  আদম    আলাইহিস   সালাম   এর  সৃষ্টি  থেকে শুরু  করে যখনই দুটি শাখা  তৈরি   হয়েছে  তখন তাদের উত্তম শাখায় ছিলাম।



ইমাম   তাবরানী,   বায়হাকী   এবং   আবু   নাঈম    হযরত  ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন- 



قال رسول الله صلى الله عليه  ان الله خلق الخلق فاختار من الخلق بنى ادم واختار من بنى ادم العرب واختار من العرب مضر واختار من  مضر قريشا واختار من قريش بنى   هاشم واختارنى من  بنى هاشم  فانا من خيار الى خيار-



অর্থ:      রাসূলুল্লাহ       সাল্লাল্লাহু       আলাইহি        ওয়াসাল্লাম বলেছেন-       আল্লাহতায়ালা      সৃষ্টিরাজীর      মধ্যে         বনী আদমকে     মনোনীত       করলেন।     বনী     আদম     থেকে আরবদেরকে   নির্বাচন  করলেন।   অতঃপর   আরবদের  মধ্যে মুদার গোত্র, মুদার থেকে কুরাইশ এবং   কুরাইশ থেকে বনি হাশিমকে মনোনীত করলেন। অতঃপর বনী হাশিম     থেকে   আমাকে   নির্বাচন     করলেন।    অতঃপর আমি উত্তম থেকে উত্তম গোত্রে মনোনীত হয়েছি।



ইমাম   তিরমিজি    হাসান   সূত্রে   এবং   ইমাম   বায়হাকী  হযরত ইবনে  আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে   বর্ণনা  করেন-



قال  رسول الله  صلى الله  عليه وسلم ان الله حين خلقنى جعلنى من خير خلقه ثم حين خلق  القبائل  جعلنى  من خيرهم قبيلة وحين خلق الانفس جعلنى من خير انفسهم ثم حين خلق  البيوت جعلنى  من خير بيوتهم  فاناخيرهم بيتا وخيرهم نفسا-



অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- আল্লাহতায়ালা    আমাকে    সৃষ্টির    মধ্যে    সর্বশ্রেষ্ঠ     সৃষ্টি  হিসেবে    মনোনীত    করলেন।      অতঃপর     যখন    গোত্র নির্ধারণ করলেন  তখন  আমাকে শ্রেষ্ঠ গোত্রে মনোনীত করলেন।     অতঃপর     ব্যক্তি      হিসেবে     আমাকে     শ্রেষ্ঠ  মনোনীত  করলেন।   অতঃপর   যখন  পরিবার  নির্ধারণ   করলেন    তখন     আমাকে     শ্রেষ্ঠ     পরিবারে     মনোনীত  করলেন।  অতএব  আমি  তাদের   মধ্যে  পারিবারিক  ও  ব্যক্তিগত উভয়ভাবে উত্তম।



ইমাম তাবরানী, ইমাম  বায়হাকী ও আবু নাঈম হযরত ইবনে      আব্বাস      রাদিয়াল্লাহু       আনহু      থেকে       বর্ণনা  করেছেন-



قال   رسول الله صلى الله عليه وسلم- ان الله  قسم الخلق  قسمين فجعلنى فى خيرهما قسما- ثم جعل القسمين اثلاثا فجعلنى فى خيرهما ثلثا ثم جعل الاثلاث قبائل فجعلنى فى خيرها- ثم   جعل القبائل بيوتا فجعلنى فى خيرها  بيتا-   



অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-     আল্লাহতায়ালা   সৃষ্টিরাজিকে   দু’ভাগে    বিভক্ত করলেন এবং আমাকে উত্তম ভাগে মনোনীত করলেন। অতঃপর উভয় দলকে তিনটি করে  ভাগ করলেন  এবং আমাকে   উত্তম    ভাগে   মনোনীত     করলেন।    অতঃপর তাদেরকে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত করলেন এবং আমাকে উত্তম          গোত্রে           মনোনীত           করলেন।           অতঃপর গোত্রসমূহকে  বিভিন্ন   পরিবারে  বিভক্ত    করলেন   এবং আমাকে তাদের উত্তম পরিবারে মনোনীত করলেন।



(এ  ব্যাপারে    আরো  কয়েকটি হাদিস রয়েছে। এখানে  সংপ্তি করা হয়েছে) অনুবাদক।



দ্বিতীয় মুকাদ্দামার দলিলসমূহ

===========

ইমাম   আব্দুর    রাজ্জাক   মুসান্নাফ   গ্রন্থে   মা’মার   ইবনে  জুরাইজ  থেকে   বর্ণনা    করেছেন।  তিনি  বলেন  ইবনুল মুসাইয়াব    বর্ণনা   করেছেন।    তিনি   আলী    রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।



لم    يزل   على    وجه   الدهر     فى     الارض    سبعة   مسلمون  فصاعدا- فلولا ذالك هلكت الارض ومن عليها



অর্থ:     আলী   রাদিয়াল্লাহু   আনহু   বলেন-   প্রতিটি    যুগে পৃথিবীর মধ্যে এমন সাতজন বা অধিক লোক বিদ্যমান থাকেন।  যদি  তারা  না  থাকতেন  তাহলে   পৃথিবী  তার  বাসিন্দাসহ ধ্বংস হয়ে যেত।



এ   হাদিসের   সনদ   বুখারী    ও   মুসলিমের    শর্তানুযায়ী সহিহ।



ইমাম  ইবনে  জারির    তদীয় তাফসির  গ্রন্থে শাহর  বিন হুসাব থেকে বর্ণনা করেছেন-



قال  لم   تبق الارض  الا   وفيها اربعة  عشر  يدفع الله بهم  عن اهل   الارض وتخرج بركتها الا زمن ابراهيم فانه كان  وحده-



অর্থ:     তিনি       বলেন-     পৃথিবীতে     সদা-সর্বদা      এমন   চৌদ্দজন     লোক      অবশিষ্ট      থাকেন     যাদের     মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা জগতবাসীর উপর থেকে বিপদ মুসিবত দূর করেন এবং  বরকত নাজিল করেন। তবে  ইব্রাহিম  আলাইহিস   সালাম   এর    যামানা    ব্যতিত।   কারণ   সে সময় তিনি একা ছিলেন।



ইমাম  মুনজির    স্বীয়  তাফসির   গ্রন্থে  হযরত   কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু           আনহু            থেকে           বর্ণনা            করেছেন, আল্লাহতায়ালার বাণী-



قلنا اهبطوا  منها جميعا- فاما يأتينكم منى  هدى فمن تبع هداى فلا خوف عليهم ولاهم يحزنون-



অর্থ:  আমি   বললাম তোমরা  সবাই  এখান থেকে  নিচে নেমে   যাও। অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার  প থেকে   কোন  হিদায়ত  পৌঁছে   তবে   যে     ব্যক্তি  আমার হিদায়ত  অনুসরণ করবে তাদের উপর   কোন ভয় নাই  এবং তারা চিন্তাগ্রস্তও হবে না। (বাকারা- ৩৮)



উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় কাতাদাহ বলেন-



فما زال الله فى الارض اولياء منذ هبط ادم ما اخلى الله الارض لابليس الا وفيها اولياء له يعملون لله بطاعته-



অর্থ:  হযরত   আদম   আলাইহিস   সালাম  এর    আগমন থেকে আল্লাহতায়ালা এই  পৃথিবীকে কখনো ইবলিসের জন্য আউলিয়া  শূন্য করেন নাই। অর্থাৎ সবসময় কিছু আউলিয়া বিদ্যমান থাকেন। তারা আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত করেন।



ইমাম   আহমদ   বিন  হাম্বল   রাদিয়াল্লাহু   আনহু  ‘যাহদ’  গ্রন্থে     এবং    খিলাল    রাদিয়াল্লাহু     আনহু      ‘কিরামাতুল আউলিয়া’   গ্রন্থে বুখারি ও মুসলিমের  শর্তানুযায়ী সহিহ সনদে  হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু  আনহু থেকে  বর্ণনা করেছেন-



قال ما خلت الارض من  بعد نوح من سبعة يدفع الله بهم عن اهل الارض



অর্থ: তিনি  বলেন- হযরত  নুহ  আলাইহিস সালাম  এর  পর  থেকে   পৃথিবীতে  সবসময়  এমন    সাতজন    লোক বিদ্যমান      থাকেন       যাদের     উসিলায়      আল্লাহতায়ালা জগতবাসীর উপর থেকে বালামুসিবত  দূর করেন। (এ হাদিসটি মরফু পর্যায়ের)



ইমাম    আরযুকী     ‘তারিখে    মক্কা’      গ্রন্থে    যুহাইর    বিন মুহাম্মদ থেকে বর্ণনা করেছেন-



قال لم يزل على وجه الارض سبعة مسلمون فصاعدا لولا ذلك لاهلكت الارض ومن عليها-



অর্থ:     তিনি    বলেন-    পৃথিবীতে     সদা-সর্বদা    সাতজন অথবা  তার   অধিক  মুসলমান  বিদ্যমান   থাকেন।  যদি তারা না থাকতেন তাহলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত।



ইবনে  মুনজির স্বীয়  তাফসির  গ্রন্থে সহিহ সনদে ইবনে জুরাইজ থেকে বর্ণনা করেছেন-



فى قوله رب    اجعلنى   مقيم  الصلوة ومن   ذريتى- قال فلن يزال من ذرية ابراهيم ناس على الفطرة يعبدون الله-



অর্থ:      আল্লাহর      বাণী-       হে      প্রভূ      আমাকে       নামায কায়েমকারী     করুন     এবং    আমার    সন্তানদের      মধ্যে থেকেও। (ইব্রাহিম-৪০)



এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন- ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম  এর বংশধরদের  মধ্যে  সদা-সর্বদা  এমন  কিছু  লোক   অবশিষ্ট    ছিল   যারা    ফিতরাতের   উপর   বিশ্বাস করত এবং আল্লাহর ইবাদত করত।



ইমাম বাযযার  তাঁর মুসনাদ  গ্রন্থে    এবং  ইবনে  জারির ইবনে  মুনজির ও ইবনে আবি  হাতিম প্রত্যেকে তাদের তাফসির গ্রন্থে এবং ইমাম হাকিম তাঁর মুস্তাদরিক গ্রন্থে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন এবং হাকিম ইহাকে সহিহ বলেছেন-



فى قوله  تعالى  كان الناس امة   واحدة  قال   كان   بين ادم ونوح   عشرة   قرون   كلهم  على   شريعة  من  الحق    فاختلفوا فبعث الله النبيين-



অর্থ:    আল্লাহর   বাণী   সকল   মানুষ   একই   জাতিসত্ত্বার  অন্তর্ভুক্ত      ছিল।      (বাকারা-      ২১৩)      ইবনে      আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু  আনহু   বলেন-   আদম   আলাইহিস  সালাম  থেকে  নুহ   আলাইহিস   সালাম   পর্যন্ত  দশটি  যুগ  ছিল। তারা     প্রত্যেকেই      সত্য     শরিয়তের     উপর      ছিলেন। অতঃপর    তারা  মতানৈক্য   তৈরি  করল,  তখন   আল্লাহ নবীদেরকে প্রেরণ করলেন।



ইবনে আবি হাতিম হযরত কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-



قال ذكر   لنا انه  كان بين ادم ونوح عشرة قرون كلهم على الهدى وعلى  شريعة  من الحق ثم اختلفوا بعد ذالك فبعث  الله نوحا وكان اول رسول الله ارسله الله الى اهل الارض-



অর্থ:  তিনি বলেন- বর্ণিত আছে   যে, আদম আলাইহিস সালাম থেকে  নুহ  আলাইহিস  সালাম  পর্যন্ত  দশটি স্তর  ছিল।      তারা       প্রত্যেকেই      সত্য        শরিয়তের      উপর   হিদায়তপ্রাপ্ত  ছিলেন। অতঃপর তারা বিভিন্ন মতানৈক্য তৈরি   করল।  তখন  আল্লাহ  নূহ  আলাইহিস  সালামকে  প্রেরণ    করলেন।     তিনি    ছিলেন    পৃথিবীতে     আল্লাহর  প্রেরিত সর্বপ্রথম রাসূল।



প্রথম বিষয়: আযর প্রসঙ্গ

==========

উপরে    বর্ণিত    সমস্ত    দলিল       আদিল্লাহ     দ্বারা     ইহাই  প্রমাণিত   হয়   যে,   হযরত   আদম    আলাইহিস   সালাম  থেকে  শুরু  করে  নমরুদের  যামানা  পর্যন্ত  রাসূলেপাক  সাল্লাল্লাহু     আলাইহি     ওয়াসাল্লাম     এর       পূর্বপুরুষগণ  প্রত্যেকে      অকাট্যভাবে     মু’মিন      ছিলেন।       নমরূদের যামানায়   ছিলেন   হযরত   ইব্রাহিম   আলাইহিস   সালাম  এবং আযর।



এখন যদি আযর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর পিতা হয় তাহলে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নসবনামার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটবে। কিন্তু  যদি আযর চাচা হয় তবে কোন বিচ্ছেদ ঘটবে না। ইহাই মূলকথা। অর্থাৎ  আযর   ইব্রাহিম   আলাইহিস   সালাম   এর   পিতা নন।



ইবনে  আবি   হাতিম   ইবনে আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে দুর্বল সনদে একটি বর্ণনা নকল করেছেন-



فى  قوله- واذ قال  ابراهيم  لا  بيه ازر-  قال  ان ابا ابراهيم لم يكن اسمه ازر وانما كان اسمه تارح



অর্থ: আল্লাহর বাণী (যখন ইব্রাহিম তাঁর পিতা আযরকে বললেন-)      এ      আয়াতের     ব্যাখ্যায়      ইবনে     আব্বাস রাদিয়াল্লাহু  আনহু  বলেন-   ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর পিতার নাম আযর ছিল না। তার নাম ছিল তারিহ।



ইবনে  আবি শাইবা,  ইবনুল মুনজির এবং ইবনে  আবি  হাতিম   বিভিন্ন   সনদে  বর্ণনা    করেছেন।   তার  কোনটি সহিহ পর্যায়ের।



عن مجاهد قال ليس ازر ابا ابراهيم

অর্থ:     মুজাহিদ     বলেন-     আযর    ইব্রাহিম    আলাইহিস  সালাম এর পিতা ছিলেন না।



ইবনুল মুনজির সহিহ সনদে ইবনে জুরাইজ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-



قال ليس ازر  بابيه انما هو ابراهيم بن تيرح  او تارح بن شاروخ بن ناحوربن فالخ



অর্থ:  তিনি  বলেন- আযর ইব্রাহিম   আলাইহিস   সালাম এর পিতা ছিলেন না। বরং বংশ  তালিকা  হল   এভাবে   ইব্রাহিম  বিন  তাইরিহ   অথবা  তারিহ  বিন  শারুখ   বিন নাহুর বিন ফালিখ।



ইবনে  আবি   হাতিম   সহিহ  সনদে    সুদ্দি   থেকে   বর্ণনা  করেছেন-



انه قيل له اسم ابى ابراهيم ازر فقال بل اسمه  تارح- وقد  وجه من حيث اللغة  بان العرب تطلق لفظ الاب على العم  اطلاقا شائعا وان كان مجازا



অর্থ:  কেউ  বললেন   ইব্রাহিম    আলাইহিস   সালাম   এর পিতার নাম হল আযর। তখন  সুদ্দি বললেন- বরং তাঁর নাম   হল   তারিহ।   ইহা     ভাষাগতভাবে    ব্যবহৃত   হয়। কারণ  আরবগণ  ‘আবুন’  তথা  বাবা  শব্দটিকে  ‘আম্মুন’  তথা চাচা শব্দের উপর প্রয়োগ করে থাকে। যদিও ইহা রূপক অর্থে ব্যবহার হয়।



‘তানযিল’   কিতাবে   নিুের    আয়াতের     ব্যাখ্যায়     বর্ণিত হয়েছে-



(ام  كنتم شهداء  اذ   حضر يعقوب الموت اذ قال   لبنيه ما تعبدون  من  بعدى-  قالوا  نعبد  الهك  واله  ابائك  ابراهيم  واسماعيل    واسحق-)    فاطلق    على     اسماعيل     لفظ    الاب وهوعم يعقوب- كما اطلق على ابراهيم وهو جده-



অর্থ:  আল্লাহর  বাণী  যখন  ইয়াকুবের   মৃত্যু    নিকটবর্তী হয়     তখন    তোমরা    কি    উপস্থিত     ছিলে?     যখন    সে  সন্তানদের    বলল    আমার     পর   তোমরা   কার   ইবাদত করবে?   তারা   বলল,  আমরা   ইবাদত  করব    তোমার  প্রভূর,  এবং   তোমার  পিতৃপুরুষ ইব্রাহিম, ইসমাইল ও ইসহাকের প্রভূর। (বাকারা- ১৩৩)



উক্ত  আয়াতে   ইসমাইল   আলাইহিস     সালামকে  পিতা বলা  হয়েছে।  অথচ    তিনি   হলেন  ইয়াকুব   আলাইহিস সালাম এর চাচা। ঠিক তেমনিভাবে ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকেও  পিতা সম্বোধন করা   হয়েছে।  অথচ   তিনি ছিলেন ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর দাদা।



ইবনে আবি   হাতিম হযরত  ইবনে  আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-



انه  كان   يقول-  الجد  اب-  ويتلو-  قالوا  نعبد   الهك   واله ابائك-



অর্থ:  ইবনে  আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু  আনহু  বলতেন-দাদা  পিতার     মত।  এবং  তিনি   উক্ত   আয়াতটি  তিলাওয়াত করতেন।



এ   আয়াতের   ব্যাখ্যায়      আবুল    আলিয়া   থেকে   বর্ণনা করেছেন-   قال  سمى العم أبا অর্থ: তিনি বলেন- চাচাকে  পিতা  বলা  হয়।  এমনিভাবে   মুহাম্মদ  বিন   কা’ব  আল কারজী থেকে বর্ণনা করেছেন-



قال- الخال والد والعم والد وتلا هذه الاية-

অর্থ:  তিনি  বলেন-  খালু পিতার  মত এবং চাচা পিতার মত।      অতঃপর     তিনি      উক্ত      আয়াতটি     তিলাওয়াত করলেন।



এ  হচ্ছে  উক্ত   বিষয়ের উপর সলফে সালেহীন  সাহাবি ও তাবেয়ীনদের বক্তব্য।



এ প্রসঙ্গে আরো  একটি স্পষ্ট বর্ণনা   রয়েছে যা   ইবনুল মুনযির স্বীয় তাফসির গ্রন্থে সহিহ সনদে সুলাইমান বিন সারদ    থেকে    বর্ণনা    করেছেন।    তিনি    বলেন-    যখন  লোকেরা  ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে  আগুনে নিপে  করতে চাইল তখন অসংখ্য জ্বালানী সংগ্রহ করে বিরাট অগ্নিকুণ্ড    তৈরি  করল।   অবশেষে  যখন  তাকে  আগুনে নিপে   করতে   চাইল  তখন   তিনি   বললেন-   حسبى  الله ونعم الوكيل  অর্থ: আমার আল্লাহ   আমার জন্য কতইনা উত্তম   অভিভাবক।   যখন     তারা     ইব্রাহিম   আলাইহিস সালামকে   আগুনে   নিপে   করল   তখন   আল্লাহতায়ালা  বললেন-



يا نار كونى بردا وسلاما على ابراهيم-

অর্থ: হে আগুন, তুমি ইব্রাহিমের উপর শীতল  ও  শান্তি  হয়ে যাও। (আম্বিয়া- ৬৯)



অতঃপর   ইব্রাহিমের    চাচা   বললেন।  আমার  কারণেই তার     উপর    থেকে     বিপদ     দূরিভূত      হয়েছে।     তখন আল্লাহতায়ালা  তার উপর অগ্নিপিণ্ড নিপে  করলেন। যা তার পায়ে আঘাত করল এবং জ্বালিয়ে দিল।



উক্ত বর্ণনার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বলা  হয়েছে যে, আযর  ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর চাচা ছিলেন।



এখানে   আরো   একটি   ল্যণীয়    বিষয়   হল    যে,   আযর নিহত   হয়েছিল   সে   সময়    যখন   ইব্রাহিম   আলাইহিস  সালামকে     আগুনে     নিেেপর     ঘটনা       ঘটেছিল     এবং  আল্লাহতায়ালা    কুরআনে   পাকে     বর্ণনা   করেছেন   যে, যখন   ইব্রাহিমের   নিকট  ব্যাপারটি  সুস্পষ্ট  হয়েছে  যে, আযর আল্লাহর শত্র“ তখন তিনি তার জন্য প্রার্থনা করা বন্ধ      করেছেন।    আবার     হাদিস      দ্বারা     প্রমাণিত    যে ইব্রাহিমের   নিকট    তখন   বিষয়টি    স্পষ্ট   হয়েছে   যখন আযর     মুশরিক     অবস্থায়    মৃত্যুবরণ    করছে।    এরপর ইব্রাহিম   আলাইহিস    সালাম      তার   জন্য   আর   দোয়া  করেননি।



ইবনে      আবি     হাতিম    সহিহ     সনদে    ইবনে     আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-



قال  ما  زال  ابراهيم   يستغفر  لابيه  حتى  مات  فلما   مات تبين له انه عدو لله فلم يستغفرله-



অর্থ:  তিনি  বলেন ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের  পিতা আযরের  জন্য   তার মৃত্যু  পর্যন্ত দোয়া করেছেন। যখন  আযর  মৃত্যুবরণ  করল   তখন  স্পষ্ট   হয়ে   গেল   যে  সে আল্লাহর দুশমন। অতঃপর আর দোয়া করেননি।



আরো একটি রেওয়ায়ত মুহাম্মদ বিন কা’ব, কাতাদাহ, মুজাহিদ,     হাসান     এবং     অন্যান্যদের     থেকে     বর্ণিত  হয়েছে।   তারা   বলেছেন-   আযর     জীবীত     থাকাবস্থায় ইব্রাহিম     আলাইহিস     সালাম      তার      জন্য     আকাঙ্খা  করতেন।  যখন  সে   মুশরিক  অবস্থায়   মৃত্যুবরণ  করল তখন তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। অতঃপর আগুনে নিক্ষেপের   ঘটনার   পর    ইব্রাহিম   আলাইহিস      সালাম  শ্যাম  দেশে চলে যান।   এব্যাপারে কুরআনুল  কারীমে  আল্লাহতায়ালা বর্ণনা করেছেন।



অতঃপর   কিছুদিন    পর    তিনি    মিশরে    গমন   করেন।  সেখানে সারা   রাদিয়াল্লাহু আনহা এর ব্যাপারে জালিম  বাদশার    সাথে    বাদানুবাদ    ঘটে।    অতঃপর    হাজেরা  রাদিয়াল্লাহু আনহাকে খাদিমা হিসেবে প্রদান করা হয়। অতঃপর    আবার    শ্যাম      দেশে     প্রত্যাবর্তন    করেন।   অতঃপর       আল্লাহতায়ালা       নির্দেশ       দেন       ইসমাইল  আলাইহিস  সালাম  ও    হাজেরা   রাদিয়াল্লাহু  আনহাকে  মক্কাশরীফে  নিয়ে যাবার জন্য এবং তিনি তাই করেন। অতঃপর দোয়া করেন এভাবে-



ربنا انى  اسكنت من ذريتى بواد غير ذى زرع  عند بيتك المحرم  الى   قوله ربنا  اغفر لى ولوالدى  وللمؤمنين  يوم يقوم الحساب-



অর্থ:   হে    আমাদের    প্রতিপালক,    আমি    আমার    এক সন্তানকে  তোমার  পবিত্র  গৃহের  সন্নিকটে  চাষাবাদহীন  উপত্যকায়    অবস্থান    করিয়েছি।    হে    আমাদের    প্রভু,  আমার    পিতা-মাতাকে   ও   সব   মু’মিনকে   মা   করুন।  যেদিন হিসেব কায়েম হবে। (ইব্রাহিম- ৩৭-৪১)



অতঃপর ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম পিতা-মাতার জন্য দোয়া করেছিলেন তাঁর  চাচার মৃত্যুর অনেকদিন পর। 



সুতরাং উক্ত   আলোচনা  থেকে ইহা  প্রতীয়মান হয় যে,  কুরআনুল   কারীমে   যে   কুফুরির   বর্ণনা   ও   ইস্তেগফার  থেকে     বারণ    করা     হয়েছে    তা    ইব্রাহিম    আলাইহিস সালাম  এর   চাচার   ব্যাপারে।   প্রকৃত  পিতার  ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা নয়। (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)



অতঃপর    ইব্রাহিম    আলাইহিস    সালাম    ও    ইসমাইল  আলাইহিস সালাম এর সন্তানদের  মধ্যে তাওহীদ তথা  আল্লাহর একত্ববাদ চলতে থাকে।



ইমাম     শাহরাস্তানী-     الملل      والنحل     গ্রন্থে      বলেছেন- আরবের   বুকে  দ্বীনে   ইব্রাহিম   ও  তাওহীদ  সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। সর্বপ্রথম  আমর  বিন  লুয়াই  ইহা  পরিবর্তন করে মূর্তিপূজা   চালু  করে।   আমি  বলব   এ  ব্যাপারটি  সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।  যেমন ইমাম বুখারী ও  মুসলিম  আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-



قال رسول الله صلى الله  عليه    وسلم رأيت  عمرو بن عامر  الخزاعى يجر قصبة فى  النار كان اول من  سيب السوائب-



অর্থ:      রাসূলুল্লাহ       সাল্লাল্লাহু       আলাইহি       ওয়াসাল্লাম  বলেছেন- আমি দেখেছি আমর  বিন  আমির  খাযায়িকে নাড়িভূঁড়ি        টেনে     জাহান্নামে     ফেলা       হয়েছে।     সেই সর্বপ্রথম   সাইয়্যিবা   তথা   দেবতার   নামে   উৎসর্গকৃত  পশুর উপাসনা শুরু করে।



ইমাম আহমদ  রাদিয়াল্লাহু  আনহু    মুসনাদ গ্রন্থে ইবনে মাসউদ  রাদিয়াল্লাহু  আনহু থেকে বর্ণনা  করেছেন  নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-



ان  اول  من   سيب   السوائب  وعبد  الاصنام  ابو   خزاعة عمرو بن عامر وانى رأيته يجر امعائه فى النار-



অর্থ:  নিশ্চয় আবু  খাযামা আমর বিন  আমির   সর্বপ্রথম  সাইয়্যিবার  প্রচলন   এবং  মূর্তিপূজা  চালু     করে।  আমি দেখেছি   তাকে  নাড়িভূঁড়ি  টেনে  জাহান্নামে  নিপে  করা  হচ্ছে।



فثبت    ان  اباء    النبى  صلى  الله     عليه  وسلم   من   عهد ابراهيم الى زمان عمرو المذكور كلهم مؤمنون بيقين-



অর্থ:  অতএব ইহা অকাট্যভাবে  প্রমাণিত  হল  যে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্বপুরুষগণ ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম থেকে   শুরু  করে  উল্লেখিত আমর এর যামানা পর্যন্ত প্রত্যেকেই মু’মিন ছিলেন।



উল্লেখিত মসলক বা মতানুসারীদের স্বপে অনেকগুলো  আয়াত       এবং       রেওয়ায়েত      রয়েছে,      যা         ইব্রাহিম আলাইহিস   সালাম   এর   বংশধরদের   ব্যাপারে   বর্ণিত  হয়েছে।



প্রথম আয়াত

=======

আল্লাহতায়ালা বলেন-

واذ   قال   ابرهيم   لابيه   وقومه   اننى  براء  مماتعبدون-  الا الذى فطرنى فانه سيهدين- وجعلها كلمة باقية فى عقبه لعلهم يرجعون-



অর্থ:   যখন ইব্রাহিম  তাঁর  পিতা    ও সম্প্রদায়কে বলল- তোমরা যাদের  পূজা   কর    তাদের  সাথে আমার কোন সম্পর্ক   নাই।    তবে    আমার   সম্পর্ক   তার   সাথে   যিনি আমাকে     সৃষ্টি     করেছেন।    অতএব    তিনিই     আমাকে সৎপথ     প্রদর্শন      করবেন।     এ     কথাটিকে     সে      অয় বাণীরূপে   তার  সন্তানদের  মধ্যে     রেখে   গেছে।   যাতে তারা প্রবত্যাবর্তন করে। (যুখরুফ- ২৬-২৮)



এ   আয়াতের   তাফসিরে   আব্দ   বিন   হুমাইদ   সনদসহ  ইবনে      আব্বাস       রাদিয়াল্লাহু      আনহু      থেকে        বর্ণনা করেছেন-



قال لا اله الا الله باقية فى عقب ابراهيم



অর্থ: ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর বংশধরদের মধ্যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ কালিমাটি অবশিষ্ট ছিল।



এমনিভাবে আব্দ বিন হুমাইদ ইবনে জারির এবং ইবনে মুনজির       প্রত্যেকে      হযরত     মুজাহিদ      থেকে      বর্ণনা করেছেন। এখানে    কালিমা  দ্বারা মুরাদ হল  ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’।



আব্দ    বিন    হুমাইদ     বলেন-     আমাদের    কাছে    বর্ণনা  করেছেন      ইউনুস।       তিনি      শাইবান      থেকে।      তিনি  কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে-



قال شهادة ان لا اله الا الله فا لتوحيد لا يزال فى  ذريته  من يقولها من بعده-



অর্থ:    কাতাদাহ   রাদিয়াল্লাহু    আনহু     বলেন-    ইব্রাহিম আলাইহিস  সালাম  এর  বংশধরদের  মধ্যে  ‘লা  ইলাহা  ইল্লাল্লাহ’ এর শাহাদত এবং  তাওহীদ   সর্বদা বিদ্যমান  ছিল।



ইমাম   আব্দুর   রাজ্জাক   তাঁর   তাফসির   গ্রন্থে   মা’য়মার  থেকে তিনি    কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে  বর্ণনা   করেছেন।



قال   الاخلاص والتوحيد لايزال   فى ذريته من  يوحد  الله ويعبده



অর্থ: কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- ইখলাস এবং তাওহীদ   ইব্রাহিম  আলাইহিস    সালাম    এর  সন্তানদের মধ্যে      সবসময়        বিদ্যমান      ছিল।       তারা       আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল এবং আল্লাহর ইবাদত করত।



দ্বিতীয় আয়াত

=====

আল্লাহ বলেন-

واذ قال  ابرهيم  رب اجعل  هذا البلد امنا واجنبنى وبنى ان نعبد الاصنام-



অর্থ: যখন ইব্রাহিম বলল- হে প্রভু  এ শহরকে নিরাপদ করে   দিন   এবং  আমাকে   ও   আমার   সন্তান   সন্ততিকে মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখুন। (ইব্রাহিম- ৩৫)



ইবনে জারির  স্বীয়  তাফসির গ্রন্থে মুজাহিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন-



قال فاسجاب  الله  لابراهيم  دعوته فى  ولده فلن  يعبد احد  من    ولده   صنما  بعد  دعوته-  واستجاب  الله  له  وجعل  هذا البلد أمنا ورزق اهله من الثمرات وجعله اماما وجعل من ذريته من يقيم الصلوة-



অর্থ: মুজাহিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- আল্লাহতায়ালা ইব্রাহিম      আলাইহিস      সালাম      এর      দোয়ার      জবাব  দিয়েছিলেন    তাঁর    সন্তানদের    মাধ্যমে।     এজন্য   তাঁর দোয়ার    পর     তাঁর     সন্তানদের     মধ্যে     কেউ      কখনো মূর্তিপূজা করেনি।  আল্লাহ   ইব্রাহিম আলাইহিস  সালাম এর  দোয়ার  কারণে   এ শহরকে  নিরাপদ রাখেন  এবং এর   অধিবাসীদেরকে   বিভিন্ন   ফলমূল   দ্বারা   খাবারের  ব্যবস্থা  করেন।  আল্লাহ  তাকে  ইমাম  মনোনীত  করেন  এবং তাঁর সন্তানদেরকে নামায প্রতিষ্ঠাকারী করেন।



এতে    কোন     সন্দেহ     নাই     যে    বাইতুল্লাহ      শরীফের অভিভাবকত্ব  শুধুমাত্র    নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম    এর  পিতৃপুরুষদের  মধ্যেই    নির্দিষ্ট  ছিল।  ইব্রাহিম আলাইহিসসালাম এর অন্যান্য বংশধরগণ  এ   দায়িত্ব পায়নি।



অবশেষে   আমর   আল  খাযায়ী  তাদের  কাছ   থেকে  এ দায়িত্ব     জোরপূর্বক    নিয়ে      যায়।    পরবর্তীতে    আবার তাদের কাছে এ দায়িত্ব ফিরে আসে-



فان   اولى الناس به سلسة الاجداد الشريفة   الذين   خصوا  بالاصطفاء وانتقل اليهم نور النبوة واحدا بعد واحد- فهم اولى  بان  يكونواهم  البعض   المشار  اليهم-  فى   قوله-    رب  اجعلنى مقيم الصلوة ومن ذريتى-



অর্থ:     অতএব    সর্বোত্তম      লোক     হলেন    রাসূলেপাক  সাল্লাল্লাহু     আলাইহি      ওয়াসাল্লাম     এর    পূর্বপুরুষদের নসবনামা।   তাদেরকেই নবীজীর   জন্য মনোনীত  করা হয়েছে। এবং তাদের মাধ্যমেই নবুয়তের নূর মোবারক ক্রমান্বয়ে  স্থানান্তরিত  হয়েছে।  সুতরাং  আল্লাহর  বাণীর  মধ্যে যে বংশধরদের  কথা  বলা হয়েছে তাদের অধিক হকদার   রাসূল    সাল্লাল্লাহু   আলাইহি    ওয়াসাল্লাম     এর পূর্বপুরুষগণ। আল্লাহর বাণী-  হে   প্রভু আমাকে   নামায প্রতিষ্ঠাকারী   কর   এবং      আমার     বংশধরদের   থেকে। (ইব্রাহিম-৪০)



ইবনে আবি হাতিম সুফিয়ান বিন  উয়াইনা থেকে বর্ণনা করেছেন-তাকে  প্রশ্ন   করা   হল   ‘ইসমাইল  আলাইহিস   সালাম      এর    সন্তানদের    মধ্যে     কি      কেউ    মূর্তিপূজা  করেছে? তিনি  বলেন-  ‘না’ তুমি   কি শুননাই    আল্লাহর বাণী- واجنبنى وبنى ان نعبد الاصنام অর্থ: আমাকে ও আমার    সন্তানদেরকে    মূর্তিপূজা    থেকে    দূরে    রাখুন।  (ইব্রাহিম- ৩৫)



প্রশ্ন    করা    হল   ‘ইসহাক   আলাইহিস   সালামের   সন্তান এবং ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর অন্যান্য সন্তানগণ কিভাবে এর অন্তর্ভুক্ত হলেন না?



তিনি    বললেন-      কারণ     ইব্রাহিম    আলাইহিস    সালাম শুধুমাত্র       এ      শহরের      অধিবাসীদের       জন্য         দোয়া করেছিলেন     তারা    যেন      মূর্তিপূজা     না     করে।    তিনি অন্যান্য      শহরের       জন্য      দোয়া        করেননি।       যেমন বলেছিলেন- আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তিপূজা থেকে      দূরে     রাখুন।     এখানে     তিনি      শুধুমাত্র      তাঁর  পরিবারকে নির্দিষ্ট করেছিলেন। যেমন  আল্লাহর বাণী-



ربنا  انى اسكنت من  ذريتى بواد غير ذى زرع عند بيتك المحرم ربنا ليقيموا الصلوة-



অর্থ:   হে  আমাদের  প্রভূ   আমি  আমার  এক    সন্তানকে  তোমার পবিত্র ঘরের সন্নিকটে চাষাবাদহীন উপত্যকায় অবস্থান করিয়েছি। তারা যেন নামায কায়েম করে।



ইমাম সূয়ুতি বলেন- সুফিয়ান ইবনে উয়াইনার জবাবটি ল্য করুন। তিনি ছিলেন একজন মুজতাহিদ ইমাম এবং আমাদের শায়খ ইমাম শাফেয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর  শায়খ বা উস্তাদ।



তৃতীয় আয়াত

=====

আল্লাহতায়ালা  ইব্রাহিম  আলাইহিস  সালাম  এর  ঘটনা  সম্পর্কে বলেন-

رب اجعلنى مقيم الصلوة ومن ذريتى-

অর্থাৎ হে প্রভূ আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। (ইব্রাহিম- ৪০)



এ   আয়াতের    ব্যাখ্যায়  ইবনুল   মুনযির    হযরত  ইবনে জুরাইজ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন-



قال فلن يزال من ذرية ابراهيم نا  س على الفطرة يعبدون الله-



অর্থ:   তিনি   বলেন-   ইব্রাহিম   আলাইহিস   সালাম   এর  সন্তানদের  মধ্যে সদাসর্বদা এমন কিছু  লোক বিদ্যমান ছিল যারা ফিতরাতের উপর বিশ্বাসী ছিল এবং আল্লাহর ইবাদত করত।



চতুর্থ আয়াত

=====

আবু   শায়খ   তদীয়   তাফসির   গ্রন্থে   যায়দ   বিন   আলী  রাদিয়াল্লাহু      আনহু      থেকে     বর্ণনা      করেছেন।     যখন সারাকে একজন ফেরেশতা সুসংবাদ দিয়েছিলেন তখন সারা বলেছিলেন-

يويلتى    ءالد  وانا  عجوز  وهذا  بعلى   شيخا-    ان  هذا  لشيئ عجيب-



অর্থ:     কি   দূর্ভাগ্য  আমার,    আমি   সন্তান  প্রসব  করব? অথচ আমি বার্ধক্যে এসে পৌঁছেছি আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ। এতো ভীষণ আশ্চর্য কথা। (হুদ- ৭২)



তখন সারার কথার জবাবে ফিরিশতা বললেন-

اتعجبين من امر الله رحمة الله وبركته عليكم اهل البيت انه حميد مجيد



অর্থ:    তুমি আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে  বিস্ময়বোধ করছ?   হে   গৃহবাসীরা   তোমাদের   উপর   আল্লাহর   রহমত     ও প্রভুর     বরকত       রয়েছে।      নিশ্চয়      আল্লাহ     প্রশংসিত  মহিমাময়। (হুদ- ৭৩)



বর্ণনাকারী বলেন- এ আয়াতটি আল্লাহর ঐ কথার মত- وجعلها كلمة باقية فىعقبه অর্থ: এবং এ কথাটিকে সে অয় বাণীরূপে তার সন্তানদের মধ্যে রেখে গেছে।



মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর বংশীয় পূর্বপুরুষগণ ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর সন্তানদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।



আবুল হাসান মাওরিদির বক্তব্য

=====

অতঃপর      দেখেছি     ইমাম      আবুল      হাসান      মওরিদি রাদিয়াল্লাহু আনহু সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন যা ইমাম ফখরুদ্দিন    রাযী   বর্ণনা   করেছেন।     তিনি   স্বীয়    اعلام النبوة   গ্রন্থে    বলেছেন-     আম্বিয়ায়ে   কিরামগণ   হচ্ছেন আল্লাহর    প্রিয়    বান্দা    ও     শ্রেষ্ঠ    মাখলুকাত।     আল্লাহ  তাদেরকে    তাঁর    হক   প্রতিষ্ঠা    করার   জন্য     প্রতিনিধি নির্ধারণ  করেছেন।  তিনি  তাদেরকে  সম্মানিত    বংশের মাধ্যমে        মনোনীত        করেছেন।          অতএব        তাদের নসবনামার কোন   দোষত্রুটি কিংবা অশ্লীলতা ছিল  না। যাতে   করে  মানুষের  হৃদয়,  প্রাণ   তাদের  প্রতি  আকৃষ্ট হয়। তাহলে তাদের আহ্বানে লোকজন দ্রুত সাঁড়া দিবে এবং তাদের  নির্দেশ মান্য করবে।  আল্লাহতায়ালা তাঁর প্রিয়  রাসূলকে  পবিত্র বৈবাহিকসূত্রে নির্বাচন  করেছেন   এবং    তাঁকে    বংশীয়    ত্রুটি    বিচ্যুতি    থেকে    হিফাজত  রেখেছেন    এবং   তাকে  পবিত্র পুরুষের পৃষ্ঠদেশ থেকে পবিত্র   রেহেমের মাধ্যমে  স্থানান্তরিত  করেছেন। যেমন  ইবনে    আব্বাস    রাদিয়াল্লাহু    আনহু        আল্লাহর     বাণী- وتقلبك فى السجدين আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন-



اى تقلبك من اصلاب طاهرة من اب بعد اب الى ان جعلك نبيا فكان نور النبوة ظاهرا فى أبائه-



অর্থ: পবিত্র নসবনামার মাধ্যমে আপনার স্থানান্তর তথা এক পিতা থেকে অন্য পিতার  মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে আপনি     নবী    হিসেবে      আগমন     করেছেন।     অতএব নবীজীর      নবুয়তের      নূর      মোবারক        তাঁর      প্রত্যেক পিতৃপুরুষদের মধ্যে প্রকাশিত ছিল।



অতঃপর    আল্লাহতায়ালা   নবীজীর   পিতা-মাতা    থেকে তাঁর অন্য  কোন ভাই-বোন  অংশিদার  করেননি। যাতে করে    তাদের    বিশুদ্ধতা      চুড়ান্তভাবে     নবীজীর     সাথে সম্পর্কযুক্ত হয় এবং তাঁর মাধ্যমে তাদের বংশ তালিকা সমাপ্তি ঘটে।



অতএব       আল্লাহতায়ালা     নবীর      সাথে      অন্যান্যদের অংশিদারত্ব ও সাদৃশ্যতাকে দূরীভূত করেছেন। এজন্য বাল্যকালেই তাঁর পিতা  মাতা  ইন্তেকাল  করেন।    তিনি মাতৃগর্ভে থাকাবস্থায়   তাঁর পিতা ইন্তেকাল  করেন এবং ছয় বছর বয়সে তার মাতা ইন্তেকাল করেন।



আপনি যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নসবনামা  সম্বন্ধে  অবগত  হলেন এবং তাঁর  পবিত্র মিলাদশরীফ   সম্বন্ধে   জানতে  পারলেন  তখন     আপনি তাঁর   সম্মানিত  পিতৃপুরুষদের   মর্যাদা  সম্বন্ধে  অবগত   হলেন।   তাদের   মধ্যে   কেউ   অসৎ   ও   মন্দ    চরিত্রের  লোক    ছিলেন    না।       বরং     তারা     প্রত্যেকেই     ছিলেন সম্মানিত    ও    নেতৃস্থানীয়   লোক।     তাঁর    নসবনামা   ও মিলাদশরীফ ছিল নবুয়তের শর্তানুযায়ী পূতঃপবিত্র। এ পর্যন্ত হচ্ছে ইমাম মাওরিদির হুবহু বক্তব্য।



এমনিভাবে আবু জাফর  আননুহাস- معانى القران গ্রন্থে- وتقلبك فى السجدين আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা করেছেন-



روى  عن   ابن   عباس  انه   قال  تقلبه   فى   الظهور    حتى اخرجه نبيا-



অর্থ: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- নবীজীর প্রকাশের  ব্যাপারে তাঁর স্থানান্তর। অবশেষে  তিনি  নবী হিসেবে প্রকাশিত হন।



হাফিজ শামসুদ্দিন দামেস্কীর কাসিদা

==========

এ  প্রসঙ্গে হাফিজ  শামসুদ্দিন  বিন নাসিরুদ্দিন দামেস্কী রাদিয়াল্লাহু আনহু চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন-



تنقل احمد نورا عظيما – تلأ لأ فى جباه الساجدينا

تقلب فيهم قرنا فقرنا – الى ان جاء خير المرسلينا

حفظ الاله كرامة لمحمد – أباءه الامجاد صونا لاسمه

تركوا  السفاح فلم يصبهم عاره- من  ادم حتى ابيه وأمه 



অর্থ: আহমদ   এর মহান  নূর   স্থানান্তরিত  হয়েছে। ইহা  সিজদাকারীদের  ললাটে চাকচিক্যময়  ছিল। যুগে  যুগে  তাদের  মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়েছে। অবশেষে  আগমন করেন       সর্বশ্রেষ্ঠ       রাসূল।       আল্লাহতায়ালা       মুহাম্মদ  সাল্লাল্লাহু    আলাইহি   ওয়াসাল্লাম  এর  নামের    বরকতে তাঁর মহান পিতৃপুরুষদেরকে মন্দ কাজ থেকে নিরাপদ রেখেছেন।     তারা     সবাই    অশ্লীল    কাজ     থেকে     মুক্ত ছিলেন।   আদম  আলাইহিস  সালাম   থেকে  শুরু     করে  তাঁর  পিতা-মাতা পর্যন্ত প্রত্যেকে  ছিলেন পুতঃপবিত্র।



ফায়দা

===

ইবনে আবি হাতিম স্বীয় তাফসির গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন-

عن   عثمان بن عطاء  عن   ابيه  قال بين  النبى صلى  الله   عليه وسلم وبين ادم تسعة واربعون أبا-



অর্থ:    উসমান    বিন   আত্বা      তাঁর    পিতা   থেকে    বর্ণনা করেছেন- তিনি বলেন আদম আলাইহিস সালাম থেকে নিয়ে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত ঊনপঞ্চাশ জন পিতৃপুরুষ ছিলেন।



আবু   নাঈম-  دلائل    النبوة  গ্রন্থে  জয়িফ   সনদে   ইমাম যুহরির     সূত্রে    বর্ণনা     করেছেন।   তিনি   উম্মে    সামায়া বিনতে আবি রাহম থেকে তিনি তাঁর মায়ের কাছ থেকে বর্ণনা    করেছেন।    তিনি    বলেন    রাসূলুল্লাহ    সাল্লাল্লাহু  আলাইহি    ওয়াসাল্লাম     এর    মা     আমেনা    রাদিয়াল্লাহু  আনহা   এর   মৃত্যুকালীন   অসুখের   সময়   আমি   তাকে  দেখতে    পেলাম।     তখন    পাঁচ     বৎসর      বয়সী    ছেলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর   শিয়রের পাশে ছিলেন। আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা তখন ছেলের চেহারার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন-



بارك فيك الله من غلام – يا ابن الذى من حومة الحمام

نجابعون الملك   المنعام    – فودى غداة الضرب بالسهام

بمائة من ابل سوام – ان صح ما ابصرت فى المنام

فانت     مبعوث      الى     الانام    –     من     عند     ذى    الجلال والاكرام

تبعث فى الحل وفى الحرام – تبعث بالتحقيق والاسلام

دين ابيك البر ابراهام – فا الله انهاك عن الاصنام

ان لا تواليها مع الاقوام



অর্থ:  হে   আমার  প্রাণপ্রিয়  সন্তান আল্লাহ  তোমার  প্রতি রহম করুক। মহান আল্লাহর অনুগ্রহে তোমাকে নাজাত দেয়া   হয়েছে।   হে   আমার   কলিজার     টুকরা,   লটারীর মাধ্যমে    একশত     উটের     বিনিময়ে।    আমি    যে     স্বপ্ন দেখেছি  তা  যদি  সত্য   হয়,  তাহলে   তুমিই   হচ্ছ    মহা  পরাক্রমশালীর পক্ষ থেকে মানবজাতীর  প্রতি প্রেরিত। তুমি ‘হিল্ল’ ও হারাম   তথা সমগ্র বিশ্বের জন্য সত্য  ধর্ম ইসলাম সহকারে প্রেরিত হয়েছ। যা ছিল তোমার পিতা ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম এর ধর্ম।  আল্লাহ তোমাকে মূর্তিপূজা  থেকে  বারণ  করেছেন।  যাতে  তুমি  তোমার  সম্প্রদায়সহ মূর্তিদেরকে প্রভূ না বানাও।



অতঃপর   আমিনা   রাদিয়াল্লাহু   আনহা   বলেন-   প্রতিটি  প্রাণী  মরণশীল,   প্রত্যেক  নতুন      জিনিস  পুরাতনশীল, প্রত্যেক  বড়  জিনিস  ধ্বংসশীল  এবং  আমি মরণশীল। কিন্তু   আমার   যিকর     অবশিষ্ট   থাকবে।    আমি   কল্যাণ রেখে যাচ্ছি। আমি পবিত্র সন্তান জন্ম দিয়েছি। অতঃপর তিনি ইন্তেকাল করেন।



বর্ণনাকারী বলেন-  আমরা  আমিনা  রাদিয়াল্লাহু   আনহা এর মৃত্যুতে জ্বিনদের আহাজারী শুনেছি। সেখান থেকে নিয়ে উল্লেখ করছি



نبكى الفتاة  البرة الامينة  – ذات  الجمال  العفة الرزينة 

زوجة عبد الله والقرينه – ام نبى الله ذى السكينة

وصاحب المنبر  بالمدينة – صارت  لدى  حفرتها  رهينه



অর্থ: আমরা পূণ্যময় রমনী আমিনার জন্য কাঁদছি।

যিনি হচ্ছেন পুতঃপবিত্র সৌন্দর্যের অধিকারী।

তিনি হচ্ছেন আব্দুল্লাহর পত্নী ও তার নিকটবর্তী।

তিনি হচ্ছেন আল্লাহর নবীর মাতা ও আশ্রয়স্থল।

যে নবী হচ্ছেন মদিনার মিম্বরের অধিপতি।

তাঁর নিকট সকল কিছু হয়েছে নিরাপদ।



অতএব তুমি দেখ আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর উক্ত বক্তব্যটিতে মূর্তিপূজা সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনি দ্বীনি ইব্রাহিম সম্বন্ধে পূর্ণ অবগত ছিলেন। তাছাড়া তাঁর  সন্তানটি  যে   আল্লাহর  প  থেকে ইসলাম  সহকারে প্রেরিত তাও তিনি জ্ঞাত ছিলেন। এ শব্দগুলীতে শিরক সম্বন্ধে সুস্পষ্ট অস্বীকৃতি রয়েছে।



ইমাম   সুয়ুতি    বলেন-    অতঃপর   আমি   সমস্ত    আম্বিয়া কেরামদের জননী সম্বন্ধে গবেষণা করেছি এবং তাদের সবাইকে মু’মিনাত হিসেবে পেয়েছি।



অতএব হযরত ইসহাক, হযরত মুসা,  হযরত হারুন ও হযরত  ঈসা আলাইহিস সালাম  তাদের  মাতাগণ  এবং শীষ  আলাইহিস  সালাম এর    মা হাওয়া তাদের সম্বন্ধে কুরআনে  বর্ণনা   রয়েছে।  বরং   কেউ    কেউ   তাদেরকে নবী বলেছেন।



আবার   ইসমাইল   আলাইহিস  সালাম এর মা হাজেরা.  ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর মা এবং তাঁর সন্তানদের মাতাগণ,   এবং  দাউদ   আলাইহিস   সালাম,  সুলাইমান আলাইহিস      সালাম,    যাকারিয়া      আলাইহিস    সালাম, ইয়াহইয়া   আলাইহিস    সালাম,    শামাভীল   আলাইহিস  সালাম,    শামাউন    আলাইহিস    সালাম    ও    যুলকিফল  আলাইহিমুস সালাম  তাদের মাতাগণের ঈমান    সম্বন্ধে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।



আবার   কোন     কোন   মুফসসিরীনগণ    হযরত     নূহ    ও ইব্রাহিম  আলাইহিস  সালাম  এর মায়ের   ঈমান  সম্বন্ধে দলিল     পেশ      করেছেন।    যেমন    আবু    হাইয়ান    স্বীয় তাফসিরগ্রন্থে     ইহাকে    প্রাধান্য   দিয়েছেন।   ইতোপূর্বে ইবনে  আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু  আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে  যে,     হযরত     আদম     আলাইহিস      সালাম    থেকে    নূহ আলাইহিস  সালাম  পর্যন্ত  কারো  পিতা  কাফির  ছিলেন  না। এজন্য নূহ আলাইহিস সালাম বলেছেন-



رب اغفرلى ولوالدى ولمن دخل بيتى مؤمنا-

অর্থ:   হে   প্রভূ   আমাকে,   আমার   পিতা-মাতাকে   এবং  যারা মুমিন  হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করেছে তাদেরকে মা কর। (নূহ- ২৮)



ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বলেছেন-

ربنا اغفرلى ولوالدى وللمؤمنين يوم يقوم الحساب-



অর্থ:     হে       আমাদের     পালনকর্তা      আমাকে,      আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল মু’মিনকে মা করুন, যেদিন  হিসাব কায়েম হবে। (ইব্রাহিম-৪১)



কুরআনুল     কারীমে     ইব্রাহিম     আলাইহিস     সালামকে  শুধুমাত্র   পিতার  জন্য  দোয়ার    ব্যাপারে   আপত্তি   করা  হয়েছে। মাতার জন্য আপত্তি করা হয় নাই। ইহা প্রমাণ করে যে তিনি মুমিনাহ ছিলেন।



ইমাম   হাকিম   মুস্তাদরাক   গ্রন্থে  হযরত  ইবনে  আব্বাস রাদিয়াল্লাহু   আনহু   থেকে     একটি   হাদিস   বর্ণনা   করে ইহাকে সহিহ বলেছেন-



قال كانت   الانبياء من بنى  اسرائيل الاعشرة- نوح    وهود وصالح      ولوط-     وشعيب      وابراهيم-    واسماعيل    واسحاق ويعقوب ومحمد عليهم السلام-



অর্থ: ইবনে আব্বাস  রাদিয়াল্লাহু  আনহু বলেন- দশজন নবী   ব্যতিত    অন্যান্য     সবাই   ছিলেন   বনী   ইসরাইল   বংশের। এ  দশজন  হলেন নূহ আলাইহিস সালাম, হুদ আলাইহিস   সালাম,   সালিহ    আলাইহিস   সালাম,   লুৎ  আলাইহিস      সালাম,       শুয়াইব       আলাইহিস       সালাম, ইব্রাহিম      আলাইহিস    সালাম,     ইসমাইল     আলাইহিস সালাম,         ইসহাক        আলাইহিস         সালাম,          ইয়াকুব আলাইহিস       সালাম     ও      হযরত     মুহাম্মদ      সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।



বনু     ইসরাইলের     প্রত্যেকেই     মু’মিন     ছিলেন।     ঈসা  আলাইহিস  সালাম  এর  আগমনের   পূর্ব   পর্যন্ত  তাদের  মধ্যে কেউ কাফির ছিল না। অতঃপর যে কুফুরি  করার সে    কুফুরি    করল।    অতএব      বনি    ইসরাইলী       সমস্ত নবীদের মাতাগণ মুমিনাহ ছিলেন।



তাছাড়া  বনী  ইসরাইলের  অধিকাংশ  নবীগণই  ছিলেন  কোন   নবীর  সন্তান  অথবা  তাদের   সন্তানদের    সন্তান। অতএব            নবুয়ত            তাদের            সন্তানদের            মধ্যে  ধারাবাহিকভাবে জারি ছিল, ইহাই প্রসিদ্ধ।



বনি     ইসরাইলের      বাহিরে    যে     দশজন    নবীর     কথা উল্লেখিত হয়েছে তাদের   মধ্যে হযরত  নূহ   আলাইহিস সালাম,   হযরত    ইব্রাহিম   আলাইহিস    সালাম,   হযরত ইসমাইল        আলাইহিস        সালাম,        হযরত        ইসহাক  আলাইহিস    সালাম    ও      হযরত     ইয়াকুব     আলাইহিস সালাম তাদের মাতাগণের ঈমান প্রমাণিত।



এখন অবশিষ্ট রইল হযরত হুদ, হযরত সালেহ, হযরত লুত  ও হযরত শুয়াইব  আলাইহিমুস  সালামগণ তাদের মাতাগণের   ব্যাপারটি।    এ   ব্যাপারে     দলিল   প্রমাণের প্রয়োজন। তবে প্রকাশ্য   অভিমত  হল তারা  ঈমানদার ছিলেন।



এমনিভাবে        নবী         মুহাম্মদ         সাল্লাল্লাহু          আলাইহি ওয়াসাল্লাম    এর     মায়ের    ব্যাপারটিও      প্রমাণিত।     এ ব্যাপারে  সুক্ষ  কথা  হল    তাঁকে   নবী    করিম  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি    ওয়াসাল্লাম     এর    নূর      মোবারক    দেখানো  হয়েছে।  এ  হাদিসটি   ইমাম    আহমদ,  ইমাম  বাযযার, তাবরানী, হাকিম, এবং ইমাম বায়হাকী হযরত ইরবাদ বিন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে  বর্ণনা করেছেন-



ان   رسول  الله   صلى  الله  عليه  وسلم  قال-  انى  عند  الله لخاتم النبيين وان ادم لمنجدل  فى طينة وسأخبركم  عن ذلك- دعوة ابى ابراهيم وبشارة عيسى ورؤيا امى التى رأت-



অর্থ:       রাসূলুল্লাহ        সাল্লাল্লাহু       আলাইহি      ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যখন আদম আলাইহিস সালাম  মাটির সাথে মিশ্রিত  ছিলেন  তখন    আমি  আল্লাহর     নিকট  খাতামুন নাবিয়্যিন মনোনীত ছিলাম। এ ব্যাপারে অচিরেই আমি তোমাদেরকে   সংবাদ  দেব।  আমি  হচ্ছি  আমার   পিতা ইব্রাহিম      আলাইহিস     সালাম     এর      দোয়া      ও     ঈসা আলাইহিস  সালাম  এর   সুসংবাদ এবং আমার  মায়ের  দর্শন, যখন  তিনি নূর দেখেছিলেন।   এমনিভাবে  সমস্ত নবীগণের   মাতাগণ    সে    নূর   দেখেছেন।    রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু      আলাইহি      ওয়াসাল্লাম      এর     মা      আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহা  বেলাদতের সময়  এমন একটি   নূর দেখতে   পেলেন    যার   রশ্মিতে   সিরিয়ার   প্রাসাদগুলো  আলোকিত হয়ে গেল।



এতে   কোন   সন্দেহ   নেই   যে,    নবী   করিম    সাল্লাল্লাহু আলাইহি       ওয়াসাল্লাম    এর     মা    আমিনা    রাদিয়াল্লাহু আনহা   গর্ভকালীন  সময়ে   এবং  বেলাদতের   সময়  সে কুদরতি    নিদর্শন    অবলোকন    করেছেন    তা    অন্যান্য  আম্বিয়ায়ে  কেরামদের   জননীর    দর্শনের  চেয়ে  অধিক  আশ্চর্যজনক ছিল। এ ব্যাপারে আমি অনেকগুলো বর্ণনা ‘মুজিজার’ কিতাবে উল্লেখ করেছি।



নবীজীর দুধমাতাগণ ইসলাম গ্রহণ করেছেন

==========

কোন   কোন   উলামায়ে   কেরাম   উল্লেখ   করেছেন-   যে  সমস্ত মাতাগণ নবীজীকে দুধপান করিয়েছিলেন তারাও ইসলাম গ্রহণ করেছেন-

قال ومرضعاته  اربع- امه  وحليمة السعدية   وثويبة- وام ايمن-



অর্থ:  চারজন মহিলা নবীজীকে দুধপান করিয়েছিলেন। মা      আমিনা       রাদিয়াল্লাহু       আনহা      হালিমা      সাদিয়া  রাদিয়াল্লাহু  আনহা,  সুয়াইবা  রাদিয়াল্লাহু  আনহা  এবং  উম্মে আয়মন রাদিয়াল্লাহু আনহা।



সওয়াল

====

যদি  তুমি    বল   ঐ   সমস্ত   হাদিসের  কি   জবাব  দেবেন  যেগুলো দ্বারা বুঝা যায়  যে  আমিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা   জাহান্নামী?    যেমন    একটি   হাদিসে   রাসূল      সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-



ليت شعرى  ما  فعل ابواى؟    فنزلت  (ولا   تسئل عن اصحب الجحيم)

অর্থ: হায়! আমার পিতামাতার কি হবে? তখন অবতীর্ণ হল আপনি দোযখবাসীদের সম্পর্কে   জিজ্ঞাসিত হবেন  না। (বাকারা- ১১৯)



অন্য     হাদিসে     রয়েছে     রাসূল      সাল্লাল্লাহু       আলাইহি  ওয়াসাল্লাম     তাঁর     মায়ের     জন্য     মা     প্রার্থনা     করলে  জিব্রাইল   আলাইহিস    সালাম   তাঁর    বে     আঘাত   করে বললেন   মুশরিক    অবস্থায়    মৃত্যুবরণকারীর   জন্য     মা প্রার্থনা করবেন না।



অন্য হাদিসে রয়েছে ‘আল্লাহতায়ালার বাণী-

ما كان للنبى والذين امنوا ان يستغفروا للمشركين-



অর্থ:       নবী    ও    মু’মিনদের      উচিত     নয়    মুশরিকদের মাগফিরাত কামনা করা। (তাওবা- ১১৩)



অন্য হাদিসের মধ্যে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মালিকার দু’সন্তানকে    বললেন-  তোমাদের মাতা  জাহান্নামী।  ইহা  শুনে   তারা  দুঃখিত   হল।  তখন নবীজী তাদেরকে ডেকে বললেন- আমার মা তোমাদের মায়ের সাথে আছেন।



জবাব

====

আমি      বলব      এ       ব্যাপারে       উল্লেখিত      বর্ণনাগুলোর অধিকাংশই   জয়িফ।    নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু   আলাইহি  ওয়াসাল্লাম    এর    মাতা    সম্পর্কে    বর্ণিত    কোন    সহিহ হাদিস নাই। শুধুমাত্র একটি ব্যতিত। তাহল, তিনি তাঁর জন্য    মা  প্রার্থনার   অনুমতি  চেয়েছিলেন।   কিন্তু   তাঁকে অনুমতি দেয়া হয়নি।



ঠিক তেমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর      পিতা       সম্বন্ধে    মুসলিমশরীফের    একটি    হাদিস ব্যতিত অন্য কোন সহিহ হাদিস নাই, এ দু’টি হাদিসের জবাব কিছুণ পরে আসবে।



অতএব   উল্লেখিত  হাদিসগুলোর  মধ্যে-   ليت  شعرى  ما فعل ابواى হাদিসটি কোন গ্রহণযোগ্য হাদিসের কিতাবে উল্লেখিত     হয়নি।   তবে    কোন   কোন   তাফসির      গ্রন্থে বিচ্ছিন্ন   সনদে   বর্ণিত  হয়েছে।   তাই   এর  দ্বারা   দলিল প্রদান করা যায় না।



এ হাদিসের বিপরীতে অন্য একটি হাদিস ইবনুল জুযি  হযরত    আলী  রাদিয়াল্লাহু   আনহু   থেকে   মরফু   সনদে বর্ণনা করেছেন-



هبط  جبريل  على   فقال  ان الله يقرئك السلام  ويقول انى  حرمت  النار على صلب انزلك وبطن حملك  وحجر   كفلك-  



অর্থ: রাসূল বলেন- জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আমার কাছে  এসে  বললেন-  আল্লাহ  আপনাকে  সালাম  দিয়ে  বলেছেন-    আমি    তাদের     জন্য       জাহান্নামকে    হারাম করেছি। যাদের    পৃষ্ঠদেশের  মাধ্যমে আপনাকে  প্রেরণ করা  হয়েছে, যে গর্ভ আপনাকে  বহন করেছে  এবং যে ঘর আপনাকে লালন পালন করেছে।



তাছাড়া উসূল, বালাগাত ও আসরারুল বয়ানের কায়দা অনুযায়ী ও  উল্লেখিত হাদিসের মর্মটি  প্রত্যাখ্যাত।  তা  হলো      উল্লেখিত      আয়াতটির      পূর্ববর্তী      ও      পরবর্তী  সবগুলো       আয়াত      ইহুদিদের      ব্যাপারে      আলোচিত  হয়েছে।



যেমন   সূরা   বাকারার    ৪০নং   আয়াত-   يبنى    اسرائيل   اذكروا  نعمتى  থেকে  ১২৪নং আয়াত-   واذ  ابتلى  ابراهيم ربه بكلمة পর্যন্ত ইহুদিদের আলোচনা করা হয়েছে।



অতএব বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেল যে- اصحب  الجحيم তথা দোযখবাসী  দ্বারা  আহলে  কিতাবদের  কুফফারদেরকে  বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারটি স্পষ্টভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।



যেমন    আব্দ    বিন   হুমাইদ   ইমাম     ফিরইয়াব,    ইবনে  জারির   এবং    ইবনে   মুনযির    তারা    প্রত্যেকে   তাদের তাফসির গ্রন্থে হযরত মুজাহিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন- সূরা বাকারার প্রথম চার আয়াত  মুমিনদের  প্রশংসাসংক্রান্ত  এবং  পরবর্তী  তের  আয়াত মুনাফিকদের    ব্যাপারে  অবতীর্ণ হয়েছে।  এবং চল্লিশ  আয়াত  থেকে  একশত  বিশ  আয়াত  পর্যন্ত  বনী  ইসরাইলের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। এ হাদিসের সনদ সহিহ।     তাছাড়া      এ      সুরাটি      হচ্ছে     মাদানি।        আর অধিকাংশ  মাদানী    সূরা   ইহুদিদের   ব্যাপারে  অবতীর্ণ  হয়েছে।



এ ব্যাপারটি  অভিধান ও হাদিস দ্বারা আরো স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে  ‘জাহিম’ শব্দটি জাহান্নামের ভয়াবহ  স্তরের নাম।



যেমন  ইবনে আবি হাতিম  হযরত  আবু  মালিক   থেকে  উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বর্ণনা   করেছেন। তিনি বলেন- ‘জাহিম’ হচ্ছে জাহান্নামের ভয়াবহ স্তর।



ইমাম     ইবনুল    জারির   এবং   ইবনুল   মুনজির   হযরত   ইবনে জুরাইজ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন আল্লাহর    বাণী-   لها    سبعة   ابواب   অর্থ:    (জাহান্নামের  সাতটি স্তর রয়েছে) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন- প্রথম    স্তর   হল   জাহান্নাম,    অতঃপর    লাযা,    অতঃপর হুমাযাহ,  অতঃপর  সাঈর.  অতঃপর  সাকার,  অতঃপর  জাহিম,  অতঃপর  হাবিয়া।  তিনি  বলেন-  জাহিম  হচ্ছে  ষষ্ঠ    স্তর।   আর   সেখানে    থাকবে   আবু    জেহেল।     এ   হাদিসটির সনদ সহিহ।



অতএব ‘জাহিম’  স্তরের   আযাবের  যোগ্য ঐ  ব্যক্তি যে   ভয়াবহ     কুফুরি      করেছে।      তাওহীদের       দাওয়াতকে অস্বীকার    করেছে এবং জেনে শুনে সত্যকে  পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও   গোপন  করেছে। এ শাস্তি  ঐ ব্যক্তির জন্য নয় যে এ রকম কুফুরি করেনি।



আবার  আবু  তালিবের   ব্যাপারে  সহিহ   হাদিস  রয়েছে যে, জাহান্নামের   মধ্যে সর্বনিম্ন  স্তরের  শাস্তি হবে তার। আর  ইহা  রাসূল   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি   ওয়াসাল্লাম   এর নিকটাত্মীয়  হবার দরুণ  লাভ করবে। অথচ   তিনি লম্বা হায়াত  পেয়েছিলেন।  তাওহীদের দাওয়াত  তার  কাছে পৌঁছেছিল    এবং    তিনি    সে     দাওয়াত     গ্রহণ    করতে  অস্বীকার করেছেন।



অতএব   রাসূলেপাক   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি   ওয়াসাল্লাম  এর পিতা-মাতা সম্পর্কে আপনি কি ধারণা করেন, যারা ছিলেন   তাঁর   অধিক   নিকটবর্তী,   প্রাণের   চেয়ে     প্রিয়। এবং     তাদের   গ্রহণযোগ্য  উযর   ছিল  তাছাড়া   তাদের হায়াত ছিল অতি সামান্য?



فمعاذ الله ان  يظن بهما انهما فى  طبقة الجحيم-  وان يشدد عليهما  العذاب   العظيم-  هذا  لا   يفهمه  من  له  ادنى  ذوق سليم-



অর্থ:  অতএব   আল্লাহর আশ্রয় চাই তাদের  থেকে যারা ধারণা  করে   যে,  নবীজীর  পিতা-মাতা   ‘জাহিম’  স্তরের জাহান্নামী   এবং তাদের উপর ভয়াবহ আযাব  রয়েছে।  যে       ব্যক্তির     সামান্যতম     বিবেক-বুদ্ধি     আছে      সেও  একথাটি মেনে নিতে পারবে না।



অতঃপর  ঐ হাদিস  জিব্রাইল আলাইহিস সালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি   ওয়াসাল্লাম  এর   বে   আঘাত  করে বলেছিলেন  মুশরিক    অবস্থায়   মৃত্যু   বরণকারী  ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন না।



ইমাম  বাযযার ইহা বর্ণনা করেছেন  যার সনদের  মধ্যে অজ্ঞাত বর্ণনাকারী রয়েছেন।



অতঃপর  ما  كان  للنبى  والذين  امنوا  আয়াতের  শানে  নুযুল    সংক্রান্ত     হাদিসটিও    জয়িফ।    বরং    বুখারী    ও   মুসলিম  দ্বারা  প্রমাণিত   যে   আয়াতটি   অবতীর্ণ  হয়েছে আবু     তালিবের     ব্যাপারে।     যেমন     রাসূল    সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম  তাকে বলেছিলেন  ‘আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব’।



অতঃপর  আমার    মা  তোমাদের  মায়ের  সাথে   রয়েছে  হাদিসটি    ইমাম   হাকিম   মুস্তাদরাক    গ্রন্থে   বর্ণনা   করে ইহাকে      সহিহ      বলেছেন।       মুস্তাদরাক       কিতাবটিতে স্বাভাবিকভাবে সহিহ বলার রীতিটি প্রসিদ্ধ।



অথচ       উসূলে       হাদিসের      কিতাবে        বর্ণিত      হয়েছে এককভাবে বর্ণিত হাদিস সহিহ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়।



অতঃপর    ইমাম    যাহাবী    مختصر    المستدرك      গ্রন্থে    এ হাদিসটি  বর্ণনা   করার   পর   ইমাম  হাকিম   রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উক্তি ‘সহিহ’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন।



উকবা বলেন- আমি  বলব ‘না’  আল্লাহর শপথ উসমান  বিন উমাইরকে  ইমাম দারে  কুতনী জয়িফ বলেছেন।  



অতঃপর  ইমাম  যাহাবী  হাদিসটির  জয়িফ  বা  দুর্বলতা  বর্ণনা করেছেন এবং এর উপর শরয়ি শপথ করেছেন।



অতএব এ মাসআলায় যখন কিছু জয়িফ হাদিস ব্যতিত অন্য    কোন   সহিহ   হাদিস   নাই   তখন     এর    বিপরীত  দিকেই দৃষ্টিপাত করতে হবে।



এ  মসলকের সাহায্যকারী আরো  একটি বিষয় হল যে, বড়  একটি জামাত  থেকে  প্রমাণিত যে- জাহিলিয়াতের যুগে    অনেক     হানিফ    লোক      ছিলেন    যারা     ইব্রাহিম  আলাইহিস  সালাম   এর  ধর্মের  অনুসারি  ছিলেন    এবং তারা  শিরক  থেকে  মুক্ত  ছিলেন।   তাহলে    নবী  করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর   পিতা-মাতাগণ এ  সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়াতে নিষেধ কোথায়?



হাফিজ     আবুল      ফারজ     বিন     জুযি    ‘তালকীহ’     গ্রন্থে বলেছেন   জাহিলিয়াতের   যুগে    যারা     মূর্তিপূজা   থেকে বিরত   ছিলেন, তাদের মধ্যে আবু বকর সিদ্দিক, যায়দ বিন   আমর   বিন    নুফাইল,   উবাইদুল্লাহ   বিন    জাহাশ, উসমান    বিন    হুওয়াইরিছ    ওয়ারাকা     বিন    নওফেল,  রুবাব বিন  বারা, আসাদ আবু কুরাইব    হুমাইনী,   ক্বিছ বিন  সাঈদ,  আল  ওয়াইদী,  আবু  কাইছ  বিন  সারমাহ  প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।



তাছাড়া যায়দ বিন আমর, ওয়ারাকাহ, এবং কায়ছ এর হানিফ হবার ব্যাপারে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে।



ইবনে ইসহাক  সহিহ   সূত্রে আসমা  বিনতে   আবু  বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন- আমি  যায়দ  বিন  আমর    বিন  নুফাইলকে   দেখেছি  সে কাবাশরীফে     পিঠ     ঠেকিয়ে     বলতেছে-     হে    কুরাইশ  সম্প্রদায়,  আজ  তোমাদের  মধ্যে   আমি    ব্যতিত  অন্য  কোন   লোক   ইব্রাহিমী   ধর্মের   উপর     বিদ্যমান   নেই।  অতঃপর  বলেন-  হে  আল্লাহ   যদি   আমি  জানতাম   কে তোমার অধিক প্রিয়পাত্র   তাহলে  তার মাধ্যমে তোমার ইবাদত করতাম। কিন্তু আমি তা জানি না।



ইমাম সুয়ুতি বলেন- উক্ত বর্ণনাটি পূর্বে উল্লেখিত প্রথম মসলকের   পক্ষে    সহযোগী    দলিল।   অর্থাৎ   সে   সময় এমন     কোন     লোক    ছিল    না     যার    নিকট    দাওয়াত  পৌঁছেছে এবং সে এর হাকিকত অনুধাবন করেছে।



আবু    নাঈম     ‘দালাইলুন    নবুয়ত’    গ্রন্থে      আমর     বিন  উসাবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন- জাহিলিয়াত যুগে আমার সম্প্রদায়ের ‘ইলাহ’ বা দেবতাদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ পায়। অতঃপর দেখতে পাই   ইহা   বাতিল   বা   অমূলক।   তারা   পাথরের   পূজা  করে।



ইমাম    বায়হাকী      ও    আবু    নাঈম    উভয়ে    ‘দালাইল’   কিতাবে   হযরত  শা’বীর   সূত্রে  বর্ণনা  করেছেন।  তিনি   জুহাইনার  শায়খ   থেকে   বর্ণনা   করেছেন  যে,   উমাইর  বিন হাবিব আল জুহানী জাহিলিয়াত যুগে  শিরক থেকে মুক্ত   ছিল  এবং  আল্লাহর  ইবাদত   করত।  সে  ইসলাম আগমন পর্যন্ত জীবীত ছিল।



আশআরী      জামাতের     ইমাম      শায়খ     আবুল     হাসান আশআরী    বলেছেন-    এবং    আবু     বকর     রাদিয়াল্লাহু   আনহুও তাদের অন্তর্ভুক্ত। ইমাম আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর    উক্তির ভাবার্থ সম্পর্কে মতানৈক্য পরিলতি  হয়।   কেউ  কেউ   বলেছেন-   এর   অর্থ   হল  আবু  বকর রাদিয়াল্লাহু  আনহু  ইসলাম  আগমনের    পূর্বেও   মু’মিন  ছিলেন।     অন্যান্যগণ     বলেন     বরং    ইমাম     আশআরী রাদিয়াল্লাহু  আনহু  এর    কথার  অর্থ   হলো-  আবু  বকর রাদিয়াল্লাহু   আনহু   সবসময়   তাদের   অন্তর্ভুক্ত   ছিলেন  যারা   অভিশপ্ত   নয়। আল্লাহতায়ালা জানতেন যে  তিনি  অচিরেই মু’মিন এবং পূণ্যশীলদের দলভুক্ত হবেন।



শায়খ   তকি   উদ্দিন    সুবুকি  রাদিয়াল্লাহু  আনহু  বলেন- ইমাম     আশআরীর    বক্তব্যের    ভাবার্থ    যদি    ইহা     হয় তাহলে     আবু    বকর    রাদিয়াল্লাহু    আনহু     ও    অন্যান্য সাহাবাগণ    এ    ব্যাপারে     বরাবর    হয়ে    যাবেন।   কিন্তু আশআরী   রাদিয়াল্লাহু   আনহু   আবু   বকর   রাদিয়াল্লাহু  আনহু     এর     ব্যাপারে     যে     কথা       বলেছেন     অন্যান্য সাহাবীদের ব্যাপারে এ রকম কথা বলা হয়নি।



অতএব  সঠিক কথা হল  আবু  বকর  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে   কোন   কুফুরি   প্রকাশ   হয়নি।   সুতরাং    ইসলাম  আগমন পূর্বে তিনি যায়দ বিন আমর বিন নুফাইল এবং এ   রকম   অন্যান্যদের   মত   ছিলেন।    এ    জন্য    ইমাম আশআরী    অন্যান্য    সাহাবি    ব্যতিত   শুধুমাত্র   সিদ্দিক  রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উল্লেখ করেছেন।



ইমাম সুয়ুতি বলেন- আমরা বলব নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  এর  মাতাপিতার  অবস্থা  ও  ঠিক  তদ্রুপ    ছিল।    তাদের    পক্ষে    থেকেও    কোন     কুফুরি  প্রমাণিত হয়নি। তাদের অবস্থা যায়দ বিন    আমর   বিন নুফাইল এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মত।



সওয়াল

====

তুমি   যদি   বল,   আরো   একটি   সমস্যা   রয়ে   গেল   যা  ইমাম     মুসলিম     রাদিয়াল্লাহু     আনহু     হযরত     আনাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন-



ان  رجلا قال  يا رسول الله- اين ابى؟ قال فى  النار-   فلما قفى دعاه فقال- ان ابى واباك فى النار-



অর্থ:  এক  ব্যক্তি  জিজ্ঞাসা  করল-  হে  আল্লাহর  রাসূল,  আমার    পিতা   কোথায়?   তিনি    বললেন-    জাহান্নামে। তখন   ইহা  তার   নিকট   কষ্টদায়ক  হল।  নবীজী  তাকে ঢেকে     বললেন-      আমার      পিতা     ও     তোমার     পিতা  জাহান্নামে।



এবং আরো একটি হাদিস ইমাম মুসলিম ও আবু দাউদ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।



انه صلى الله عليه  وسلم استأذن فى  الاستغفار لامه فلم يؤذن له



অর্থ:  নবী করিম   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম   তাঁর মায়ের      ইস্তেগফারের    জন্য     অনুমতি     চাইলে    তাঁকে অনুমতি   দেয়া  হয়নি।  অতএব  এ    সমস্যার   সমাধান  করুন।



জবাব

===

উল্লেখিত  ইবারতটি    ‘আমার   পিতা   ও  তোমার   পিতা  জাহান্নামী’ এর ব্যাপারে বর্ণনাকারীগণ ঐকমত্য পোষণ করেননি।   ইহা  বর্ণনা  করেছেন   হাম্মাদ  বিন    সালমা।  তিনি  ছাবিত  থেকে,  তিনি   হযরত   আনাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম মুসলিম এই সূত্রেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।      অথচ         মা’মার      হযরত      ছাবিত       থেকে ব্যতিক্রমভাবে বর্ণনা  করেছেন। তিনি  ‘আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামী’ বাক্যটি উল্লেখ করেননি। বরং নবীজী বলেছেন-  اذا مررت بقبر كافر  فبشره بالنار অর্থ: যখন  তুমি  কোন  কাফিরের  কবরের    পাশ  দিয়ে  গমন করবে তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দাও।



এই    ইবারতটি      কখনো    রাসূল    সাল্লাল্লাহু     আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  এর  পিতাকে  এর  অন্তর্ভুক্ত    করে   না।   এ   সনদটি      অধিক    শক্তিশালী।    কারণ    হাম্মাদের    চেয়ে মা’মার অধিক নির্ভরযোগ্য।



তাছাড়া  হাম্মাদের  স্মৃতিশক্তির  ব্যাপারে  বিভিন্ন  মন্তব্য  রয়েছে এবং  তাঁর বর্ণনার মধ্যে অনেক মুনকার  হাদিস রয়েছে।



বর্ণিত    আছে    যে,      রবিয়াহ    তার    কিতাবে    ভুলক্রমে  বিষয়টি   ছেড়ে   দিলেন।   কিন্তু   হাম্মাদ   বিষয়টি   সংরণ  রাখতে    পারেননি     এবং     এভাবেই     বর্ণনা     করলেন। সুতরাং    এ   ব্যাপারটি   ল্যণীয়।   তদুপরি  ইমাম  বুখারী হাম্মাদ   থেকে     কোন    হাদিস   বর্ণনা   করেননি।   ইমাম মুসলিমও প্রকৃতপে হাম্মাদ থেকে উক্ত ছাবিতের হাদিস ছাড়া অন্য কোন বর্ণনা করেননি।



যেমন ইমাম হাকিম ‘মুদখাল’ কিতাবে বলেছেন-



ما   خرج   مسلم   لحماد  فى   الاصول   الا   من   حديثه   عن ثابت-

অর্থ:  ইমাম  মুসলিম  হাম্মাদ      থেকে   ছাবিতের  হাদিস  ব্যতিত অন্য কোন হাদিস বর্ণনা করেননি।



কিন্তু   মা’মারের  স্মৃতিশক্তি  সম্বন্ধে  কেউ  কোন  আপত্তি  করেননি।  এবং     তাঁর   কোন   হাদিস  মুনকার  পর্যায়ের নেই।  তাছাড়া  শাইখান  তথা  বুখারী   ও   মুসলিম   তাঁর থেকে হাদিস গ্রহণের েেত্র ঐকমত্য পোষণ করেছেন। অতএব তাঁর বর্ণনা অধিক নির্ভরযোগ্য।



অতঃপর আরো  একটি  হাদিস  আমরা সা’দ  বিন  আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু  আনহু থেকে   পেয়েছি যা মা’মার  কর্তৃক ছাবিত থেকে বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ।



তাছাড়া    ইমাম    বাযযার,    ইমাম    তাবরানী     ও   ইমাম বায়হাকী   একটি  হাদিস  বর্ণনা  করেছেন  ইব্রাহিম   বিন সাদ  থেকে, তিনি যুহরি  থেকে,   তিনি আমির বিন সাদ থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন-



ان اعرابيا  قال لرسول الله صلى الله عليه وسلم اين ابى؟ قال فى  النار-  قال فاين ابوك؟ قال حيثما مررت  بقبر كافر فبشره بالنار-



অর্থ:     এক     বেদুইন    রাসূলুল্লাহ      সাল্লাল্লাহু    আলাইহি  ওয়াসাল্লামকে  বলল-  ‘আমার  পিতা  কোথায়?  নবীজী  বললেন  জাহান্নামে।  অতঃপর লোকটি  বলল  আপনার  পিতা   কোথায়?   নবীজী    বললেন-    যখন    তুমি    কোন কাফিরের কবরের পাশ দিয়ে গমন করবে তখন তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিবে।



এ  হাদিসটির  সনদ   বুখারী   ও  মুসলিমের   শর্তানুরূপ। তাই ইহা অন্যান্য বর্ণনার উপর প্রাধান্য পাবে।



ইমাম   তাবরানী  ও ইমাম  বায়হাকী এ  হাদিসের শেষে আরো একটু অতিরিক্ত শব্দ উল্লেখ  করেছেন- তা হলো পরবর্তীতে  এ  বেদুইন  লোকটি    ইসলাম   গ্রহণ    করল  এবং বলল-



لقد كلفنى رسول الله  صلى الله عليه  وسلم  تعبا ما مررت بقبر كافر الا بشرته با لنار-



অর্থ:       রাসূলুল্লাহ      সাল্লাল্লাহু       আলাইহি      ওয়াসাল্লাম   আমাকে   এমন   একটি      কঠিন   নির্দেশ   দিয়েছেন    যে   যখনই  আমি কোন কাফিরের কবরের পাশ দিয়ে গমন করেছি তখন তাকে জাহান্নামের সংবাদ দিয়েছি।



ইমাম     ইবনে     মাজাহ     আরো    একটি    হাদিস      বর্ণনা করেছেন।



ইব্রাহিম বিন সাদ থেকে তিনি যুহরি থেকে তিনি সালিম থেকে তিনি  তাঁর পিতা থেকে তিনি বলেন- নবী  করিম সাল্লাল্লাহু    আলাইহি   ওয়াসাল্লাম   এর    নিকট    একজন বেদুইন  এসে  প্রশ্ন  করল-  হে  আল্লাহর  রাসূল,  আমার  পিতা   আত্মীয়তার  সম্পর্ক    বজায়   রাখতেন।  বর্তমানে তিনি    কোথায়?      তিনি    বললেন-     জাহান্নামে।     এতে লোকটি কিছুটা মর্মাহত হল।



অতঃপর    বলল-    হে   আল্লাহর   রাসূল   আপনার   পিতা কোথায়?       তখন        রাসূলুল্লাহ       সাল্লাল্লাহু        আলাইহি  ওয়াসাল্লাম বলেন- তুমি যখন কোন মুশরিকের কবরের পাশ    দিয়ে     গমন    করবে    তখন    তাকে    জাহান্নামের  সুসংবাদ    দিবে।   পরবর্তীতে   লোকটি   মুসলমান    হয়ে গেল এবং বলল রাসূলুল্লাহ আমাকে এমন একটি কঠিন কাজের নির্দেশ দিয়েছেন যখনই আমি কোন কাফিরের কবরের      পাশ      দিয়ে      গমন     করেছি      তখন       তাকে জাহান্নামের সুসংবাদ দিয়েছি। এ অতিরিক্ত বর্ণনা দ্বারা একথাই    স্পষ্টভাবে      প্রমাণিত    হয়      যে,    রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু    আলাইহি    ওয়াসাল্লাম    থেকে     বর্ণিত    আম  শব্দটি      এবং    ঐ    বেদুইনের     ইসলাম    গ্রহণ    পরবর্তী অভিমতটি একটি উদাহরণমূলক বক্তব্য।



অতএব যদি প্রথমোক্ত জবাবটি গ্রহণ করা হয়  তাহলে এতে    কোন    সমস্যাই    থাকে    না।    অর্থাৎ    প্রথমোক্ত  ইবারতটি হচ্ছে বর্ণনাকারীর প  থেকে পরিবর্তন। তিনি তার    অনুধাবন    অনুযায়ী    অর্থ    বর্ণনা      করেছেন।    এ ধরণের  অনেক  বর্ণনা  বুখারী     ও   মুসলিমে  রয়েছে  যা রাবী  তার  অনুধাবন    অনুযায়ী   বর্ণনা  করেছেন।  অথচ অন্য রাবীগণ তার চেয়ে অধিক নির্ভরশীল।



যেমন মুসলিমশরীফে আনাস  রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে  নামাযে বিসমিল্লাহ  পড়তে বারণ করা    হয়েছে।   ইমাম   শাফেয়ী    রাদিয়াল্লাহু    আনহু   এ হাদিসটির ইল্লত বর্ণনা    করেছন এভাবে- তিনি বলেন- হযরত  ছাবিত  অন্য  একটি  সূত্রে  বিসমিল্লাহ’  শ্রবণকে  অস্বীকার      করেছেন।       এতে        বর্ণনাকারী      অনুধাবন  করেছেন বিসমিল্লাহ পড়তে নিষেধ  করা হয়েছে। তাই  তিনি       তার    ধারণা    অনুযায়ী     হাদিসটির    অর্থ    বর্ণনা করেছেন। সুতরাং তিনি ভুল করেছেন।



আমরা     এখানে     ইমাম     মুসলিমের    হাদিসের    জবাব এভাবেই    প্রদান    করব।    যেভাবে      আমাদের      ইমাম শাফেয়ী রাদিয়াল্লাহু আনহু ইমাম মুসলিমের বিসমিল্লাহ না পড়াসংক্রান্ত হাদিসের জবাব প্রদান করেছেন।



অতএব      যদি      প্রথমোক্ত      বর্ণনার      উপর      রাবীদের  ঐকমত্য   আবশ্যক   হয়   তাহলে   ইহা   পূর্বে   উল্লেখিত   অনেক দলিল ও    সহিহ হাদিসসমূহের সাথে সাংঘর্ষিক হবে।



যখন  কোন  সহিহ   হাদিসের  সাথে  অন্য    কোন  দলিল সাংঘর্ষিক   হয়  তখন    ক্ষেত্রে  সহিহ   হাদিসকে  প্রাধান্য  দেয়া আবশ্যক। ইহা উসুলের একটি নীতি।



এ   শেষোক্ত    জবাবটি  ঐ  হাদিসের  জবাবের   ক্ষেত্রেও  প্রযোজ্য      যে       হাদিস      রাসূল        সাল্লাল্লাহু      আলাইহি  ওয়াসাল্লামকে   মায়ের     ইস্তেগফারের    অনুমতি    প্রদান করা  হয়নি।   সম্ভবত     এতে  এমন  দোয়ার    কথা   বলা হয়েছে যা আবশ্যক নয়।



যেমন দলিলস্বরূপ  বলা যায় ইসলামের    প্রাথমিক যুগে এ     নিয়ম   ছিল।    যদি   কোন   মুসলমানের   ঋণ   থাকে  তাহলে তার উপর নামায পড়া নিষেধ।



সম্ভবত আমেনা  রাদিয়াল্লাহু   আনহা  এর  উপর  কুফুরি ব্যতিত অন্যান্য সমস্যাবলী ছিল। যার দরুণ তাঁর জন্য ইস্তেগফার   করতে    বারণ    করা    হয়েছে।    তবে   প্রথম জবাবটিই  অধিক শক্তিশালী  এবং ইহাই   গ্রহণযোগ্য।



অতঃপর  আমি ‘মা’য়মার’ কৃর্তৃক বর্ণিত হাদিসের মতো অন্য একটি হাদিস ভিন্ন সূত্রে পেয়েছি। ব্যাখ্যাস্বরূপ যে হাদিসটি    এখানে    উল্লেখ   করব।    সেখানে    স্পষ্টভাবে বর্ণিত   হয়েছে  যে   প্রশ্নকারী   ইচ্ছা  করেছিল  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  এর  পিতা সম্বন্ধে প্রশ্ন  করতে। কিন্তু  আদব ও সৌন্দর্য্য  রা   করতে সে  প্রশ্নের ধরণ পরিবর্তন করেছে। যেমন ইমাম হাকিম মুস্তাদরিক গ্রন্থে   লাকিত   বিন  আমির  থেকে  বর্ণনা    করে   ইহাকে  সহিহ বলেছেন।



একবার        তিনি         একটি       প্রতিনিধি       দলের        সাথে রাসূলেপাক       সাল্লাল্লাহু      আলাইহি      ওয়াসাল্লাম       এর দরবারে    আসলেন।      তার   সাথে   তখন    নুহাইক   বিন আসিম বিন মালিক বিন মুন্তাফিক ছিলেন। তিনি বলেন আমরা  রজব মাসে  মদিনাশরীফে পৌঁছলাম। অতঃপর নবীজীর সাথে নামায পড়লাম। নামায শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু    আলাইহি ওয়াসাল্লাম  লোকদের প্রতি ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন। (অতঃপর  বর্ণনাকারী হাদিসের বাকী  অংশ   বর্ণনা   করলেন)   অবশেষে   বলেন-   তখন  আমি  জিজ্ঞাসা করলাম,  ইয়া রাসূলাল্লাহ  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম   আমাদের   মধ্যে     যারা    জাহিলিয়াত    যুগে মৃত্যুবরণ করেছে তাদের মধ্যে কোন ভাল লোক আছে কি? তখন কুরাইশ  বংশীয় এক  ব্যক্তি  বলল। তোমার পিতা মুন্তাফিক জাহান্নামী।



উপস্থিত  জনতার  সামনে   আমার     পিতা  সম্বন্ধে   এমন মন্তব্য  করায়  আমার    চেহারায়   আগুন   ঝরতে  লাগল। তাই    আমি    জিজ্ঞাসা     করতে   চাইলাম-   হে     আল্লাহর রাসূল,   আপনার   পিতাও    কি   জাহান্নামী।   কিন্তু    যখন আমি    দৃষ্টিপাত    করলাম   তখন  অন্য  একটি   সৌন্দর্য্য আমাকে    মোহিত   করল।    তাই   আমি   অন্যভাবে   প্রশ্ন করলাম,   হে   আল্লাহর  রাসূল,  আপনার  পরিবারও   কি জাহান্নামী?  তখন   নবীজী  বললেন-   যখন    তুমি  কোন মুশরিকের   কবরের    পাশ   দিয়ে     গমন    করবে     তখন বলবে,        আমাকে           মুহাম্মদ         সাল্লাল্লাহু        আলাইহি ওয়াসাল্লাম   তোমার   প্রতি   প্রেরণ   করেছেন।   অতএব  তোমাকে তোমার মন্দ অবস্থার সুসংবাদ দিচ্ছি।



এ বর্ণনাটিতে কোন জটিলতা নাই।  ইহা  একটি সুস্পষ্ট বর্ণনা।



অন্য একটি ব্যাখ্যা

========

প্রশ্নকারী   ব্যক্তির   প্রশ্নটি   ‘আপনার    পিতা   কোথায়?’    এভাবে   বলতে  কি   সমস্যা  ছিল?  এমনিভাবে  আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর হাদিসে আমার পিতা ‘বাক্য দ্বারা আব্দুল্লাহ   রাদিয়াল্লাহু  আনহুকে  পিতা   মুরাদ  না   নিয়ে  চাচা আবু তালিবকে মুরাদ নিতে সমস্যা কোথায়?



যেমন       ইমাম      ফখরুদ্দিন     রাযী     রাদিয়াল্লাহু     আনহু ইব্রাহিম    আলাইহিস    সালাম    এর      পিতা      দ্বারা    তাঁর চাচাকে মুরাদ নিয়েছেন।  যা ইতোপূর্বে ইবনে  আব্বাস রাদিয়াল্লাহু   আনহু   মুজাহিদ  রাদিয়াল্লাহু   আনহু  ইবনে জুরাইজ ও সুদ্দি    রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে দলিল  পেশ করা     হয়েছে।    এখানে    বিষয়টি   দুটি   ব্যাখ্যার     সাথে সম্পর্কযুক্ত।



প্রথম ব্যাখ্যা

======

‘পিতা’  শব্দটি  আবু  তালিবের  উপর  প্রয়োগ  করা  নবী  করিম   সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম এর যামানায়ও  স্পষ্টভাবে    প্রমাণিত   ছিল।    এজন্য   মক্কাবাসীরা    আবু তালিবকে    বললো-     তোমার    পুত্রকে    বল     আমাদের  দেবদেবীদেরকে গালি না দিতে।



একবার  তারা   আবু   তালিবকে  বলল   তোমার  পুত্রকে  আমাদেরকে   দিয়ে   দাও।   আমরা   তাকে   হত্যা   করব  এবং  তুমি  তার  স্থলে   এই   ছেলেকে  গ্রহণ  কর।  তখন আবু তালিব তাদেরকে বলেছিলেন-



اعطيكم ابنى تقتلونه واخذ ابنكم اكفله لكم-



অর্থ:   আমার  পুত্রকে  তোমাদেরকে দিয়ে দেব  তোমরা তাকে হত্যা করবে আর  আমি তোমাদের  পুত্রকে গ্রহণ করে লালন পালন করব।



যখন    আবু   তালিব    নবী   করিম    সাল্লাল্লাহু    আলাইহি   ওয়াসাল্লামকে     নিয়ে   সিরিয়া  গমন  করেছিলেন   তখন একজন পাদ্রীর সাাত হলে সে আবু তালিবকে জিজ্ঞাসা করল  এ ছেলেটি  তোমার  কি   হয়?  তিনি  বললেন  সে আমার পুত্র।  তখন পাদ্রী বলল এটা কি করে সম্ভব  যে এ বালকের পিতা এখনোও জীবিত?



অতএব আবু তালিবকে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা সম্বোধন করা তাদের কাছে স্পষ্ট ছিল।  কারণ   তিনি    ছিলেন  নবীজীর   চাচা।   ছোটবেলা থেকেই                   তিনি                    নবীজীকে                  লালনপালন, সাহায্য-সহযোগিতা ও দেখাশোনা করেছেন।



দ্বিতীয় ব্যাখ্যা

======

ইমাম তাবরানী উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু  আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন, বিদায় হজ্জের সময় হারিছ বিন হিশাম নবী  করিম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর   নিকট এসে   বলল,   হে      আল্লাহর   রাসূল     আপনি   উৎসাহিত করেন  আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে।   প্রতিবেশির প্রতি   সদয়     ব্যবহার   করতে,     ইয়াতিমের   লালপালন করতে,      এবং   অতিথি     ও   গরিব   মিসকিনদের   খাদ্য প্রদান করতে। আর  হিশাম বিন মুগিরা এর সবগুলোই করতেন। অতএব তার সম্বন্ধে আপনার ধারণা কি ইয়া রাসূলাল্লাহ?     তখন      রাসূলুল্লাহ     সাল্লাল্লাহু      আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-



كل  قبر لا  يشهد صاحبه ان لا اله  الا الله فهو جذوة من النار   وقد  وجدت  عمى  ابا  طالب  فى  طمطام   من  النار- فاخرجه الله لمكانه   منى واحسانه  الى   فجعله فى  ضحضاح  من النار-



অর্থ: এমন  প্রত্যেক  কবরের  অধিবাসী যে   ‘লা  ইলাহা  ইল্লাল্লাহ’   এর   স্ব্যা  প্রদান করেনি সে জাহান্নামী। আমি আমার   চাচা   আবু  তালিবকে  জাহান্নামের   সর্বনিু  স্তরে  পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহতায়ালা আমার কারণে তাকে সেখান     থেকে     বের       করে      নিয়েছেন      এবং     তাকে জাহান্নামের শিখার মধ্যে রেখেছেন।



সতর্কবাণী

=====

একদল উলামায়ে কেরাম উল্লেখিত জবাবসমূহের সাথে ভিন্ন  একটি  মত  পোষণ  করেছেন।   তারা   রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতা  সম্বন্ধে বর্ণিত  হাদিসসমূহের  জবাবে  বলেছেন   এগুলো   রহিত হয়ে   গেছে।   যেমনিভাবে    রহিত  হয়ে   গেছে  ‘মুশরিক  শিশুরা জাহান্নামী’  সংক্রান্ত  হাদিসগুলো।  তারা  বলেন- মুশরিক        শিশুদের        ব্যাপারে        বর্ণিত        হাদিসগুলো  রহিতকারী আয়াত হল-



ولا تزر وازرة وزر اخرى



অর্থ: কেউ অপরের বোঝা  বহন করবে না। (আনআম- ১৬৪)



আর   নবী   করিম   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  এর পিতা-মাতা সম্পর্কে  বর্ণিত হাদিসগুলোকে   রহিতকারী  আয়াত  হল-  وما  كنا   معذبين    حتى  نبعث  رسولا   অর্থ: কোন   রাসূল   না   পাঠানো   পর্যন্ত   আমি   কাউকে   শাস্তি  প্রদান করি না। (বনি ইসরাইল- ১৫)



এখানে একটি সুক্ষ বিষয় হলো- উল্লেখিত দুটি  ফারিক বা দলের  জন্য দুটি  বাক্য  একই আয়াতে সংযুক্তভাবে ছন্দাকারে    বর্ণিত    হয়েছে।    এ    জবাবটি    সংপ্তি    কিন্তু  অত্যন্ত     অর্থবহ।   ইহা  অন্যান্য  সকল  জবাবের    মধ্যে উত্তম। তবে ইহা প্রথম মসলক বা অনুসারীদের স্বপরে দলিল। অতএব দ্বিতীয় মসলকের পক্ষে অন্যান্য দলিল প্রয়োগ করতে হবে।



সহিহ  হাদিস  দ্বারা   প্রমাণিত   যে    জাহান্নামীদের   মধ্যে সর্বনিু    আযাব     হলো        আবু    তালিবের।    সে    থাকবে  জাহান্নামের  আগুনের   শিখার   মধ্যে।   তার  পায়ে   দুটি জুতা   পরানো  হবে  এবং  এর   তাপে  তার   মগজ  গলে বের    হবে।  ইহা    দ্বারা  একথাই  প্রমাণিত   হয়  যে  নবী করিম সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিতা-মাতা জাহান্নামী নয়। কারণ যদি তারা জাহান্নামী হন  তাহলে আবু   তালিবের   চেয়ে   তাদের   শাস্তি   কম   হতে   হবে।  কেননা   তারা    হচ্ছেন   নবীজীর   সবচেয়ে    ঘনিষ্ঠ   এবং তাদের   রয়েছে    অনেক    উযর   বা   অপারগতা।   তারা   নবুয়ত প্রকাশ পর্যন্ত  অবকাশ পাননি  এবং এমন হয়নি যে,   তাদের  কাছে  ইসলাম  পেশ   করা  হয়েছে  তথাপি তারা অস্বীকার করেছেন। কিন্তু আবু তলিবের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।



অতএব      অধিক     সত্যবাদী     নবীর      হাদিস     অনুযায়ী সর্বনিম্ন    শাস্তি    হবে  আবু  তালিবের।  সুতরাং  নবীজীর পিতা-মাতা জাহান্নামী নন-

وهذا يسمى عند اهل الاصول دلالة الاشارة-

অর্থ:      আহলে     উসূলদের      ভাষায়     ইহাকে    বলা    হয় ইঙ্গিতসূচক দলিল।



ঝগড়ার ময়দান

=======

বর্তমান  যুগে ঝগড়াকারীর  অভাব  নেই।  বিশেষ   করে উল্লেখিত    মাসআলার    ব্যাপারে।   তাদের   অধিকাংশই দলিল   প্রমাণ   প্রয়োগের  ক্ষেত্রে  অজ্ঞ।  সুতরাং  তাদের সাথে    এ    ব্যাপারে    আলোচনা     করা    অনর্থক।     তবে তাদের  মধ্যে  কিছুসংখ্যক ব্যক্তি যারা  একটু   যুক্তিযুক্ত তর্ক করেন  তাদের অনেকেই শুধুমাত্র মুসলিমশরীফের ঐ   হাদিসটি    দলিল   হিসেবে  পেশ   করে   বলেন-   ইহা আপনার মতের ব্যতিক্রম।



অতএব     ঝগড়াকারী    ব্যক্তি   যদি   আমাদের     শাফেয়ী মাযহাবের    অনুসারী   হয়   তাহলে    তার     ক্ষেত্রে   আমি  বলব- সহিহ   মুসিলমশরীফে  বর্ণিত হয়েছে  যে,  রাসূল  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম   নামাযে   ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির   রাহীম’   পড়েন  নাই।  অথচ   আপনার   মতে ‘বিসমিল্লাহ’ ব্যতিত নামায সহিহ হয় না।



এমনিভাবে    বুখারী  ও  মুসলিমে  বর্ণিত  হয়েছে    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাকে অনুসরণ  করার জন্য। সুতরাং ইমামের ব্যতিক্রম  কর  না।  যখন  তিনি  রুকু  করেন    তোমরাও রুকু    কর।     যখন    মাথা    উত্তোলন     করেন    তোমরাও উত্তোলন   কর।   যখন   ‘সামি    আল্লাহু     লিমান   হামিদা’ বলেন তখন তোমরা ‘রাব্বানা লাকাল হাম্দ’ বল। যখন বসে নামায পড়েন   তখন তোমরাও সবাই বসে নামায পড়।



অথচ  আপনার  মত  হল-   ইমাম  যখন    ‘সামি    আল্লাহু   লিমান   হামিদা’   বলেন   তখন  আপনিও   ‘সামি  আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলেন।



আবার ইমাম যদি  উযরের কারণে বসে নামায পড়েন,  আর  আপনি  সুস্থ্য  ব্যক্তি  হন  তাহলে  আপনি  ইমামের  পিছনে    দাঁড়িয়ে    নামায     পড়েন,     বসে    পড়েন       না। এমনিভাবে    বুখারী    মুসলিমে   তাইয়াম্মুমের   ব্যাপারে   বর্ণিত   হয়েছে   ‘তোমাদের    জন্য     যথেষ্ট   যে   একবার   মাটিতে   হাত  দ্বারা আঘাত  করবে। অতঃপর বাম  হাত দ্বারা ডানহাতের তালুও চেহারা মাসেহ করবে।



অথচ    আপনি    তাইয়াম্মুমের    মধ্যে    একবার    আঘাত  করাকে যথেষ্ট মনে  করেন না এবং  হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করাকে যথেষ্ট মনে করেন না।



অতএব    বুখারী   ও   মুসলিম   উভয়টি    অথবা    একটির মাধ্যমে  প্রমাণিত  বিষয়ের  ব্যতিক্রম    আপনি   কিভাবে করেন?



যদি  তাঁর  নিকট  ইলমের একটু গন্ধ   থাকে তাহলে সে  বলবে এ ব্যাপারে অন্যান্য দলিল রয়েছে যা এর সাথে সাংঘর্ষিক।     তাই     আমি    অন্য    দলিলকে      এর    উপর প্রাধান্য দিয়েছি।



ইমাম     সুয়ুতি     বলেন-     তাহলে     আমি     তাকে     বলব  আলোচ্য ব্যাপারটিও  এরকম  একটি মাসআলাহ। এর   পে  শুধুমাত্র    মুসলিমের  ঐ  হাদিস  ব্যতিত  অন্য  কোন হাদিস নেই।



যদি ঝগড়াকারী ব্যক্তি মালিকি মাযহাবের অনুসারী হয় তবে তার ক্ষেত্রে বলব বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে ক্রেতা   ও   বিক্রেতার   কিয়ার   তথা    গ্রহণ   বা   বর্জনের  অধিকার   উভয়ে    পৃথক   হওয়া   পর্যন্ত    থাকবে।    অথচ আপনি খিয়ারে মজলিসকে গ্রহণ করেন না।



এমনিভাবে সহিহ মুসলিমশরীফে বর্ণিত হয়েছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু      আলাইহি   ওয়াসাল্লাম   অজুর    সময়   সম্পূর্ণ মাথা মাসাহ করতেন না। অথচ  আপনার মতে অজুতে সম্পূর্ণ    মাথা   মাসাহ   করা     ওয়াজিব।   অতএব   সহিহ  হাদিস    দ্বারা     প্রমাণিত      বিষয়ের     বিরোধিতা    আপনি কিভাবে     করেন?  তিনি  জবাবে  বলবেন-  এ   ব্যাপারে সাংঘর্ষিক অন্যান্য দলিল রয়েছে। তাই আমি অন্যটিকে প্রাধান্য দিয়েছি।



সুয়ুতি বলেন- আলোচ্য মাসআলাটিও এ ধরণের একটি বিষয়।    যদি     ঝগড়াকারী     ব্যক্তি    হানাফি    মাযহাবের অনুসারী হয়    তাহলে তার   েেত্র  বলব- সহিহ হাদিসে বর্ণিত  আছে  ‘যদি  কুকুর  তোমাদের  কারো  পাত্রে  মুখ  লাগায়   তাহলে   ইহাকে    সাতবার      ধৌত   কর।’   অথচ আপনি সাতবার ধৌত করা শর্তারোপ করেন না।



এমনিভাবে বুখারী   ও মুসলিমে  রয়েছে ‘যে ব্যক্তি  সূরা ফাতিহা   পড়বে   না   তার   নামায   শুদ্ধ   হবে   না’   অথচ  আপনি এ ক্ষেত্রে সূরা  ফাতিহা ব্যতিত নামায শুদ্ধ মনে করেন।’



এমনিভাবে বুখারী ও মুসলিমে ছাবিত হয়েছে ‘অতঃপর রুকু থেকে মাথা উত্তোলন কর এবং তাদিল তথা বিলম্ব সহকারে  দাঁড়াও  অথচ  আপনি   তাদিল ব্যতিত  নামায শুদ্ধ মনে করেন।



অনুরূপভাবে সহিহ হাদিসে বর্ণিত ‘পানি যখন দুই কুল্লা পর্যন্ত  পৌঁছবে  তখন   অপবিত্র  হবে  না।  অথচ   আপনি দুই কুল্লা ধর্তব্য করেন না।



এমনিভাবে   বুখারী   ও  মুসলিমে  বর্ণিত   হয়েছে   রাসূল সাল্লাল্লাহু      আলাইহি       ওয়াসাল্লাম      বাইয়ে      মুদাব্বির  করতেন। অথচ আপনি  ‘বাইয়ে মুদাব্বির’  গ্রহণ করেন না।



অতএব      কিভাবে      এ      সমস্ত      সহিহ      হাদিসসমূহের  বিরোধিতা করেন?



তিনি বলবেন, এ সমস্ত ব্যাপারে অন্যান্য দলিল রয়েছে যা এগুলোর  সাংঘর্ষিক।  তাই আমি   অন্যান্য দলিলকে এগুলোর উপর প্রাধান্য দিয়েছি।



সুয়ুতি       বলেন-       আমি      বলব      আমাদের        আলোচ্য মাসআলাটিও এ ধরণের একটি বিষয়।



যদি ঝগড়াকারী ব্যক্তি হাম্বলী  মাযহাবের  অনুসারী  হন তাহলে   তার     ক্ষেত্রে     বলব-    বুখারী   মুসলিমে    বর্ণিত হয়েছে-    যে   ব্যক্তি    সন্দেহের     দিন   রোযা   রাখল   সে আবুল কাশিম তথা নবীয়েপাকের অবাধ্যতা করল।



এমনিভাবে উভয় কিতাবে বর্ণিত হয়েছে- রোযা রাখার ক্ষেত্রে  রমজান  মাসকে  একদিন  বা    দুইদিন   অগ্রবর্তী করো  না। অথচ   আপনি  সন্দেহের  দিন রোযা  রাখতে  বলেন।     অতএব    সহিহাইন    দ্বারা    প্রমাণিত     বিষয়ের বিরোধিতা আপনি কিভাবে করেন?



তিনি   বলবেন  এ  ব্যাপারে  অন্যান্য   দলিল   রয়েছে  যা একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই আমি সেগুলোকে প্রাধান্য    দিয়েছি।   আমি   বলব-   আমাদের    আলোচিত বিষয়বস্তুটিও      এ      রকমই      একটি      মাসআলাহ।      এ  আলোচনাটি     বর্তমান      সময়ে     বিবেকবানদের      জন্য একটি চমৎকার। যদি ঝগড়াকারী ব্যক্তি এমন হয় যার নিকট  হাদিস  রয়েছে  কিন্তু  কোন  ফিকাহ  নাই  তাহলে  তার ক্ষেত্রে বলা হবে-



قد قالت الاقدمون- المحدث بلا   فقه كعطار  غير  طبيب- فالادوية حاصلة فى  دكانه ولا   يدرى لماذا تصلح- والفقيه بلا حديث كطبيب ليس بعطار يعرف ما تصلح له الادوية الا انها ليست عنده-



অর্থ:   পূর্ববর্তী  উলামায়ে  কেরামগণ  বলেছেন-   ফিকাহ ব্যতিত    মুহাদ্দিস    ঐ   আতর    ব্যবসায়ীর   মতো।   যার  নিকট   কোন ডাক্তার  নেই।  তার দোকানে ঔষধ  আছে কিন্তু সে জানে না এগুলো কোন রোগের নিরাময়ক।



আবার   হাদিস ব্যতিত ফকিহ ঐ ডাক্তারের মতো, যার কাছে কোন ঔষধ নাই। সে  জানে  কোন রোগের কোন প্রতিষেধক। কিন্তু তার নিকট সে   ঔষধ  মওজুদ নাই।



আল্লাহর    শোকরিয়া,   আমার   নিকট   হাদিস,     ফিকাহ, উসূল,   সমস্ত আরবি  ব্যাকরণ, মায়ানী,   বয়ান  ইত্যাদি মজুদ আছে। অতএব আমি জানি  কিভাবে কথা বলতে হবে। কিভাবে দলিল প্রদান করতে হবে। এবং কিভাবে কোনটিকে প্রাধান্য দিতে হবে।



কিন্তু ভাই  (আল্লাহ আমাকে ও  তোমাকে তৌফিক  দান করুক)  এ    বিষয়টি   তোমার  বুঝে   আসবে  না।  কারণ তুমি ফিকাহ, উসূল এমনি আরবি উপকরণের কোনটিই জান না। হাদিসশাস্ত্রে কথা বলা  এবং দলিল পেশ করা এত সহজ ব্যাপার নয়।



অতএব এ ব্যাপারে যিনি অগাধ জ্ঞানের অধিকারী কথা বলতে গিয়ে তার উপর অগ্রসর হওয়া উচিত নয়।



অতএব  আল্লাহ তোমাকে যতটুকু  জ্ঞান  দান   করেছেন তার  উপর  সীমাবদ্ধ  থাক।  অর্থাৎ  যখন  কোন  হাদিস  সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা  করা হয়   তখন  শুধুমাত্র  এ কথাই   বল   ইহা   বর্ণিত  আছে  অথবা  বর্ণিত  হয়  নাই। হাফিজে হাদিসগণ  ইহাকে সহিহ  হাসান  অথবা জয়িফ বলেছেন। এর চেয়ে অধিক কিছু ফতোয়া দেয়া তোমার জন্য জায়েয নয়। কবি বলেন-



لا  تحسب المجد تمرا انت اكله  – لن تبلغ المجد حتى تلعق الصبرا



অর্থ:   তুমি   খেজুরের   সম্মান   বুঝবে   না।   কারণ   তুমি  শুধুমাত্র একজন  ভণকারী।  ধৈর্য্য ধরে চেটে না খাওয়া  পর্যন্ত এর সম্মান তোমার কাছে পৌঁছবে না।



অতঃপর আমি অন্য একটি বিষয় চার মাযহাবের সকল অনুসারীদের উদ্দেশ্যে  বলব, তা  হলো  ইমাম   মুসলিম রাদিয়াল্লাহু   আনহু   স্বীয়    সহিহ   গ্রন্থে    ইবনে     আব্বাস রাদিয়াল্লাহু     আনহু     থেকে    একটি     রেওয়ায়ত    বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর   যুগ, আবু  বকর রাদিয়াল্লাহু  আনহু  এর যুগ   এবং  উমর রাদিয়াল্লাহু  আনহু   এর  প্রাথমিক  যুগ  পর্যন্ত তিন  তালাককে এক তালাক ধর্তব্য করা হত।



এখন আমি সকল জ্ঞান অন্বেষণকারীদের বলব- আপনি কি  উক্ত  হাদিসের মর্মার্থ গ্রহণ করেন? যদি কেউ  তার স্ত্রীকে   বলে    তোমাকে   তিন    তালাক    দিলাম,   তাহলে আপনি কি এক্ষেত্রে এক তালাক ধর্তব্য করবেন?



যদি    জবাবে  সে   বলে   ‘হ্যাঁ’  আমি   এক   তালাক   মনে করি। তবে তার থেকে আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম।



যদি  বলে না আমি   এক তালাক  মনে করি না। তাহলে আমি  তাকে  বলব,  কিভাবে   তার  বিরোধিতা   কর,   যা সহিহ   মুসলিম   দ্বারা   প্রমাণিত।  যদি   বলে    এব্যাপারে অন্যান্য  সাংঘর্ষিক দলিল   রয়েছে। তাহলে  আমি বলব আমাদের     আলোচ্য    মাসআলাটিকেও     সেরকম    মনে কর।



والمقصود  من  سياق هذا  كله انه ليس كل حديث فى صحيح مسلم يقال بمقتضاه لوجود المعارض له-



অর্থ:   পূর্বে   উল্লেখিত   আলোচনার    মকসুদ   হলো    যে, মুসলিমশরীফে       বর্ণিত     সকল     হাদিস       তার      মর্মার্থ অনুযায়ী গ্রহণ  করা  হয়  না। যখন এর  সাংঘর্ষিক অন্য কোন দলিল বিদ্যমান থাকে।



Top