জুমার খুতবা

*************

২য় জুমা’ মুহাররম, ১৪৩৯হি, ২৯ সপ্টেম্বের- ২০১৭



পবিত্র আশূরা: তাৎপর্য ও শিক্ষা:

========================

সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী

(বিএ. অনার্স, আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো, মিশর। এম.এ. এম.ফিল. কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়, মিশর। পিএইচ.ডি গবেষক,চ.বি.)

সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ. খতীব, মুসাফির খানা জামে মসজিদ, নন্দন কানন, চট্টগ্রাম।

بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين, أما بعد!

আরবী বছরের প্রথম মাস মুহররম। আরবী বারটি মাসের মধ্যে যে চারটি মাসকে ‘আশহুরুল হুরুম’ তথা হারাম বা পরম সম্মানিত বলে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এ ঘোষণা করা হয়েছে, মুহররম মাস এ চতুষ্টয়ের অন্যতম। আশহুরে হুরুম সম্বদ্ধে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন :

إِنَّ عِدَّةَ الشُّهورِ عِندَ اللَّـهِ اثنا عَشَرَ شَهرًا في كِتابِ اللَّـهِ يَومَ خَلَقَ السَّماواتِ وَالأَرضَ مِنها أَربَعَةٌ حُرُمٌ ذلِكَ الدّينُ القَيِّمُ فَلا تَظلِموا فيهِنَّ أَنفُسَكُم وَقاتِلُوا المُشرِكينَ كافَّةً كَما يُقاتِلونَكُم كافَّةً وَاعلَموا أَنَّ اللَّـهَ مَعَ المُتَّقينَ ﴿التوبة-৩৬﴾

“নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ কর সমবেতভাবে, যেমন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখো, আল্লাহ মুত্তাকীনদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আল-তাওবাহঃ ৩৬)



সাহাবি হযরত আবু বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবীজী এরশাদ করেন,

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ , عَنْ أَبِيهِ , رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ , عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” أَلَا إِنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللَّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ , السَّنَةَ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا , مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ , ثَلاثٌ مُتَوَالِيَاتٌ ؛ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ ، وَرَجَبٌ شَهْرُ مُضَرَ بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ( ) ”

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বারো মাসে বছর, তার মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। তিনটি ধারাবাহিক: যিলক্বদ, যিলহজ্ব, মুহররম আর চতুর্থটি হল রজব, যা জুমাদাল উখরা ও শাবান মাসের মধ্যবর্তী মাস। ( – বোখারি: ২/৬৭২, হা- ২৯৫৮,৩১৭৯, মুসলিম:১৬৭৯ )



আসমান-যমীন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে। এ মাসের ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন: سيد الأشهر المحرم “মুহররমমাস হচ্ছে সমস্ত মাসের সরদার।” ( – দাইলামী শরীফ,মাসাবাতা বিস্ সুন্নাহ, কাশফুল খিফা-১/৪৫৯ )



এ মাসেরই দশ তারিখ অর্থাৎ ১০ই মুহররম ‘আশূরা’র দিন, মুহররম মাসের শ্রেষ্ঠতম দিন। দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। যেটি আরবী “আশারুন” শব্দ হতে উদগত, অর্থাৎ দশ, মুহররম মাসের দশম দিনটি আশূরা হিসেবে পরিচিত।



আশূরার নামকরণ:

============

আশূরার নামকরণের ব্যাপারে উলামায়ে কিরামগণ বিভিন্ন মত পোষণ করেন। তবে অধিকাংশ উলামায়ে কিরাম বলেন, এ দিনটি মুহররম মাসের ১০ তারিখ বলেই এটার নাম ‘আশূরা’ হয়েছে।

قال النووي رحمه الله : عَاشُورَاءُ وَتَاسُوعَاءُ اسْمَانِ مَمْدُودَانِ , هَذَا هُوَ الْمَشْهُورُ فِي كُتُبِ اللُّغَةِ قَالَ أَصْحَابُنَا: عَاشُورَاءُ هُوَ الْيَوْمُ الْعَاشِرُ مِنْ الْمُحَرَّمِ, وَتَاسُوعَاءُ هُوَ التَّاسِعُ مِنْهُ هَذَا مَذْهَبُنَا, وَبِهِ قَالَ جُمْهُورُ الْعُلَمَاءِ، .. وَهُوَ ظَاهِرُ الْأَحَادِيثِ وَمُقْتَضَى إطْلَاقِ اللَّفْظِ, وَهُوَ الْمَعْرُوفُ عِنْدَ أَهْلِ اللُّغَةِ . )المجموع (وهو اسم إسلامي لا يُعرف في الجاهلية ( )

“আ’শুরা ও তাসূয়া’ দুটি প্রশিদ্ধ নাম, আ’শুরা হলো মুর্হারমের দশম তারিখ আর তাসূয়া’ হলো- নবম তারিখ” (কাশ্শাফুল ক্বান্না ২/১৮ )

قال الزين بن المنير: الأكثر على أن عاشوراء هو اليوم العاشر من شهر الله المحرم وهو مقتضى الاشتقاق والتسمية ( )

কোন কোন আলিম বলেন, আল্লাহ পাক উম্মতকে যে দশটি বুযূর্গ দিন উপহার দিয়েছেন, তন্মধ্যে আশূরার দিনটি ১০ম স্থানীয়। এ কারণেই এটার নাম ‘আশূরা’ রাখা হয়েছে।



আবার কারো মতে, এই দিনটিতে যেহেতু আল্লাহ পাক স্বীয় দশজন নবীকে ১০টি ভিন্ন ভিন্ন রহমত দান করেছিলেন তাই এটার নাম আশূরা হয়েছে।



১০ই মুহররমবা আশূরার দিনের বরকতময় ঘটনাসমূহঃ

———————————————————-

সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয়।



প্রথম নবী হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পযর্ন্ত প্রায় সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামের উল্লেখযোগ্য কোনো না কোনো ঘটনা এ দিনে সংঘটিত হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এ দিনটি সবার জন্য এক মহান আনুষ্ঠানিকতার দিন, সাথে সাথে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত হাছিল করার দিনও।



এই আশূরার দিনে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়েছে- যা সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো:

————————————————————————————-

 মহান আল্লাহ পাক এই মুহররমের ১০ তারিখে সৃষ্টির সূচনা করেন।



 আশূরার দিন শুক্রবার ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে।



 এ দিনই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পবিত্র ওজুদ (সৃষ্টি) মুবারক হয় এবং ইছমত, সম্মান ও খুছূছিয়ত এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়।



 এই দিনে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামের দোয়া কবুল করা হয়।



 এই দিনে হযরত ইদ্রিস আলাইহিস্ সালামকে সম্মানিতস্থানে তথা আকাশে তুলে নেয়া হয়।



 এই দিনে হযরত নূহ আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর সঙ্গী সাথীদের আল্লাহ পাক মহাপ্লাবন থেকে মুক্তি দেন।



 আল্লাহ পাক এদিনে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালামের সাথে কথা বলেন এবং তাঁর উপর তাওরাত শরীফ নাযিল করেন।



 এদিনে বণী ইস্রাঈল সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ পাক সাগরের উপর দিয়ে রাস্তা করে দেন। যার উপর দিয়ে হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম এবং তাঁর সম্প্রদায় পার হয়ে যান। আর ফেরাউন দলবল ও সৈন্যসামন্তসহ পানিতে ডুবে মারা যায়।



 আল্লাহ পাক এদিনে হযরত ইউনূস আলাইহিস্ সালামকে মাছের পেট থেকে মুক্তি দেন।



 হযরত আইয়ুব আলাইহিস্ সালামকে দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর সুস্থতা দান করেন।



 এদিনে দীর্ঘ দিন বিচ্ছেদের পর হযরত ইউসূফ আলাইহিস্ সালামকে তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব আলাইহিস্ সালামের কাছে ফিরিয়ে দেন।



 আল্লাহ পাক এদিনে হযরত সোলায়মান আলাইহিস্ সালামকে তাঁর রাজত্ব বা কর্তৃত্ব দেয়ার ঘোষণা দেন।



 আল্লাহ পাক এ দিনে হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালামকে আসমানে তুলে নেন।



 এদিনে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বিলাদত শরীফ, খলীল উপাধি লাভ এবং নমরূদের অগ্নিকু- থেকে মুক্তিলাভ করেছিলেন।



 এ দিনে হযরত দাঊদ আলাইহিস সালামের দুয়া কবুল এবং তাঁর পুত্র হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ব প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।



 এ দিনেই মহান আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম যমীনে বৃষ্টি নাযিল করেন।



এই ১০ই মুহররম আল্লাহ পাকের হাবীব, নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয়তম দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কারবালার প্রান্তরে মর্মান্তিকভাবে শাহাদাত বরণ করেন, যে ঘটনা বিশ্ববাসীকে ব্যথিত ও মর্মাহত করে, তবে মুসলিম উম্মাহকে শিক্ষা দেয় ত্যাগের ও সত্যের।



সুতরাং এই পবিত্র মুহররম মাসটি সকলের জন্যই রহমত, বরকত, সাকীনা ও মাগফিরাত হাছিল করার মাস। সে জন্যই অতীতের সকল ইমাম-মুজতাহিদ ও ওলীআল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহিম এই পবিত্র মুহররম মাসকে সম্মান করেছেন।



আশূরার আমল:

————————

রোযা: আশূরার একটি অন্যতম আমল হচ্ছে আশূরার রোযা, তথা ১০ই মুহররম উপলক্ষে দুটি রোযা রাখা। অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ। শুধু ১০ তারিখ রোযা রাখা মাকরূহ। কারণ এদিন ইহুদীরাও রোযা রাখে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ :صُومُوا يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَخَالِفُوا فِيهِ الْيَهُودَ ، صُومُوا قَبْلَهُ يَوْمًا أَوْ بَعْدَهُ يَوْمًا ( )

“তোমরা আশূরা উপলক্ষে রোযা রাখো এবং ইহুদীদের খিলাফ করো। তোমরা আশূরার দিন এবং এর পূর্বে অথবা পরে আরেকটি রোযা রাখো।” অর্থাৎ ৯, ১০ অথবা ১০, ১১ তারিখ রোযা রাখো। (আহমদ-১/২৪১, ইবনু খোযাইমা-২০৯৫, বায়হাক্বী-৪/২৮৭)



এ প্রসঙ্গে বুখারী ও মুসলিম এ বর্ণিত হয়েছে:

ففي صحيح مسلم عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ، فَوَجَدَ الْيَهُودَ صِيَامًا يَوْمَ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “مَا هَذَا الْيَوْمُ الَّذِي تَصُومُونَهُ؟” فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، أَنْجَىَ اللهُ فِيهِ مُوسَىَ وَقَوْمَهُ، وَغَرَّقَ فِرْعَوْنَ وَقَوْمَهُ، فَصَامَهُ مُوسَىَ شُكْرًا، فَنَحْنُ نَصُومُهُ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “فَنَحْنُ أَحَقُّ وَأَوْلَىَ بِمُوسَىَ مِنْكُمْ”. فَصَامَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.اهـ ولفظ البخاري في صحيحه: عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَدِمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ فَرَأَى الْيَهُودَ تَصُومُ يَوْمَ عَاشُورَاءَ فَقَالَ: مَا هَذَا، قَالُوا: هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى، قَالَ: فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ، فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ. ( )

“হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় তাশরীফ নিয়ে এলেন তখন তিনি লক্ষ্য করলেন ইহুদীরা আশূরা’র দিনে রোযা পালন করছে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেনঃ এই দিনে রোযা রাখার তাৎপর্য কি? তারা বললোঃ এই দিনটির অনেক বড় তাৎপর্য রয়েছে, আল্লাহ মূসা আলাইহিস্ সাল্লাম ও তাঁর অনুসারীদের মুক্তি দিয়ে ছিলেন এবং ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে মেরে ছিলেন। হযরত মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই ঘটনার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোযা রাখতেন আর তাই আমরাও রাখি। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমাদের চেয়ে আমরা মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরো বেশি হক্বদার ও নিকটবর্তী, সুতরাং তোমাদের চেয়ে আমাদের রোযা রাখার অধিকার বেশি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশূরা’র রোযা রাখতেন এবং অন্যদেরকে এই রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন” (মুসলিম:৬/২৫২০. বুখারী:৫/৫৮:হাদিস-২৭৯ # বুখারী:৬/৬০:হাদিস২০২, বুখারী:হাদিস-১৮৬৫ )







হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

فقد خرّج مسلم من حديث أبي هريرة رضي الله عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: ” أَفْضَلُ الصَّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ، بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ”. ( )

“রমাদ্বান শরীফ-এর পর সবচেয়ে ফযীলতপূর্ণ রোযা হচ্ছে- মুহররম তথা আশূরার রোযা এবং ফরয নামাযের পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নামায হলো রাতের নামায বা তাহাজ্জুদ নামায (মুসলিম শরীফ-১১৬২ )



হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশূরার রোযার ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি ইরশাদ করেন,

” صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللَّهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ ” (মুসলিম শরীফ-১১৬২ )

“আরাফাহ দিনের রোযা বিগত এক বছর ও আগামী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেয় আর আশুরার রোযা বিগত এক বৎসরের গুনাহর মাফ করে দেয়।” ( )



পবিত্র আশূরার দিন পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো:

——————————————————

পবিত্র আশূরার দিন পরিবারবর্গকে ভাল খাওয়ানো সম্পর্কে হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে, সাইয়িদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ , أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , قَالَ : مَنْ وَسَّعَ عَلَى عِيَالِهِ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ سَائِرَ سَنَتِهِ ” .

“যে ব্যক্তি আশূরার দিন তার পরিবারবর্গকে ভালো খাদ্য খাওয়াবে ও ভালো পোষাক পরাবে আল্লাহ পাক সারা বছর তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।” (তাবারানী শরীফ, শুয়াবুল ঈমান লিল বাইহাক্বী, মাসাবা বিস্ সুন্নাহ, মু’মিনকে মাহ ওয়াসাল ও আ’মালী’ ) তাই পবিত্র আশূরার দিন ভালো খাদ্য খাওয়া, খাওয়ানো, পরিধান করা ও পরিধান করানো মুস্তাহাব।



পবিত্র আহলে বাইতদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন:

————————————————

মুসলমানদের ইতিহাসে যতগুলো হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হৃদয় বিদারক ঘটনা হলো ৬১ হিজরী সনের ১০ই মুহররমে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের নৃশংসতম ঘটনা, সাইয়িদুশ্ শুহাদা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালামের মুবারক শাহাদাতবরণ। এই হৃদয় বিদারক ঘটনার মধ্যে রয়েছে মুসলমানদের জন্য ইবরত ও নছীহত। মাতম করে এই ঘটনার বদলা শোধ করা যাবে না। এ ঘটনা আমাদের শিক্ষা দেয়- মুসলমান কোনো বাতিল শক্তির কাছে হার মেনে বশ্যতা শিকার করতে পারে না। মহিলা ও শিশুসহ মাত্র ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে কূফার পথে আক্রান্ত হন এক বিশাল বাহিনী দ্বারা। বীর বিক্রমে জিহাদ করে শাহাদাত বরণ করে শাহাদাতের মাক্বামকে সম্মানিত করেছেন। কিন্তু না হক্বকে স্বীকার করে নেননি।



তাই পবিত্র আশূরার একটি বিশেষ আমল হলো পবিত্র আহলে বাইতদের ছানা-ছিফত আলোচনা এবং তাঁদের খিদমত করা, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন:

ذَلِكَ الَّذِي يُبَشِّرُ اللَّـهُ عِبَادَهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى وَمَن يَقْتَرِفْ حَسَنَةً نَّزِدْ لَهُ فِيهَا حُسْنًا إِنَّ اللَّـهَ غَفُورٌ شَكُورٌ ﴿ الشورى-২৩﴾

“এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তার সেসব বান্দাকে, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে। হে আমার হাবীব! আপনি (উম্মতদেরকে) বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। তবে আমার নিকটজন তথা পবিত্র আহলে বাইতদের প্রতি তোমরা সদাচরণ করবে। যে কেউ উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্যে তাতে পুণ্য বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, উত্তম প্রতিদান দাতা।” (সূরা শূরা, আয়াত- ২৩)



হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্র আহলে বাইতদের উদ্দেশ্যে দোয়া করেছেন,

أَخْبَرَنِي أَبِي أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ ، قَالَ : طَرَقْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي بَعْضِ الْحَاجَةِ ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُشْتَمِلٌ عَلَى شَيْءٍ لَا أَدْرِي مَا هُوَ ، فَلَمَّا فَرَغْتُ مِنْ حَاجَتِي ، قُلْتُ : مَا هَذَا الَّذِي أَنْتَ مُشْتَمِلٌ عَلَيْهِ ؟ قَالَ : فَكَشَفَهُ فَإِذَا حَسَنٌ , وَحُسَيْنٌ عَلَى وَرِكَيْهِ , فَقَالَ : ” هَذَانِ ابْنَايَ وَابْنَا ابْنَتِيَ ، اللَّهُمَّ إِنِّي أُحِبُّهُمَا ، فَأَحِبَّهُمَا ، وَأَحِبَّ مَنْ يُحِبُّهُمَا “.

“হে মহান আল্লাহ! আমি হাসান, হুসাইন এবং তাদের আওলাদগণকে ভালোবাসি। আপনিও তাঁদেরকে ভালোবাসুন এবং যে ব্যক্তি তাঁদেরকে ভালোবাসবে তাকেও আপনি ভালোবাসুন।” ( তিরমিযী শরীফ৩/২২, হা-৩৭৩১,৩৮৫৮)



যাঁরা তাঁদের আলোচনা, ছানা-ছিফত বর্ণনা করবে, খিদমত করবে তাদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ পাক ও হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর খালিছ সন্তুষ্টি ও রেযামন্দি।

وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. والحمد لله رب العالمين.

Top