মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান
[নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি ওয়ানুসাল্লিমু আলা হাবীবিহিল করীম ওয়ালা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমায়ীন আম্মা বা’দ ]
বর্তমান সময়ে প্রচলিত ফিতনা সমূহের মধ্যে একটি হল ইয়াযিদকে লা’নতি(অভিশপ্ত) না মেনে তাকে নিরাপরাধ এমনকি আল্লাহর নিকট মাকবুল এবং জান্নাতী ঘোষণা দিয়ে এর প্রচার করা । ইয়াযিদের ব্যাপারে নানা ঠুনকো বর্ণনা এবং কারবালা ও তার পরবর্তী ঘটনায় তার সরাসরি সম্পৃক্ত না থাকা দিয়ে তাকে নিষ্পাপ প্রমাণের এক নির্লজ্জ অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে । এমনকি সহীহ আল বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদীসকে তার শানে সম্পৃক্ত করে তার পক্ষে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে । যেখানে এই হাদিসের অনুসারেও ইয়াযিদ এর হুকুমের অংশ নয় এটাই আহলে ইলমের মত এবং এটাই সত্য । সত্যনিষ্ঠ ঐতিহাসিক বর্ণনার মাধ্যমেই ইয়াযিদ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নিকট একজন পাপিষ্ঠ ও লাঞ্ছিত ব্যক্তি, তার উপর আল্লাহর লা’নত(অভিশম্পাত) । পরিতাপের বিষয়, নবীজাদা ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত ও তাঁর পরবর্তীতে পবিত্র শহর মক্কা মদীনায় নৃশংস হামলার পরও এর হুকুমদাতা ইয়াযিদ কিভাবে নিরাপরাধ হয় । একজন মু’মিনের পক্ষে কিভাবে তা চিন্তা করা বা বলা সম্ভব ?
হাদীসে কুসতুনতুনিয়া
حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ بْنُ يَزِيدَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ حَمْزَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي ثَوْرُ بْنُ يَزِيدَ، عَنْ خَالِدِ بْنِ مَعْدَانَ، أَنَّ عُمَيْرَ بْنَ الأَسْوَدِ العَنْسِيَّ، حَدَّثَهُ – أَنَّهُ أَتَى عُبَادَةَ بْنَ الصَّامِتِ وَهُوَ نَازِلٌ فِي سَاحَةِ حِمْصَ وَهُوَ فِي بِنَاءٍ لَهُ، وَمَعَهُ أُمُّ حَرَامٍ – قَالَ: عُمَيْرٌ، فَحَدَّثَتْنَا أُمُّ حَرَامٍ: أَنَّهَا سَمِعَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ البَحْرَ قَدْ أَوْجَبُوا، قَالَتْ أُمُّ حَرَامٍ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَنَا فِيهِمْ؟ قَالَ: أَنْتِ فِيهِمْ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَوَّلُ جَيْشٍ مِنْ أُمَّتِي يَغْزُونَ مَدِينَةَ قَيْصَرَ مَغْفُورٌ لَهُمْ، فَقُلْتُ: أَنَا فِيهِمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: لا
অর্থাৎ হযরত উমাইর ইবনে আসওয়াদ আনসী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি উবাদা ইবনে সামিত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কাছে আসলেন । তখন উবাদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হিমস উপকূলে তার একটি ঘরে অবস্থান করছিলেন এবং তার সঙ্গে ছিলেন উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা । উমাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে প্রথম যে দলটি নৌ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য জান্নাত অনিবার্য । উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা আরজ করলেন, আমি কি তাদের মধ্যে হব ? হুযুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, তুমি তাদের মধ্যে হবে । উম্মে হারাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, তারপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, আমার উম্মতের প্রথম যে দলটি কায়সার [রোমক সম্রাট] এর রাজধানী [কুসতুনতুনিয়া তথা কনস্টানটিনোপোল] আক্রমণ করবে তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত । তারপর আমি [উম্মে হারাম] বললাম ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমি কি তাদের মধ্যে হব ? নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, না । [১]
ইয়াযিদ প্রেমীদের বক্তব্য হল- কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমণকারী প্রথম সৈন্যবাহিনীকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে । আর ইয়াযিদ এ বাহিনীতে ছিল এতে করে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত ।
কিন্তু এরূপ দাবী নিয়ে আগ্রাসনকারী ব্যক্তিরা এই হাদীসের বক্তব্যটুকু ভালভাবে পড়ে নেয়া জরুরী মনে করেননি বোধহয় । নইলে তারা ইয়াযিদকে ক্ষমাপ্রাপ্ত হিসেবে দাবী করে কিভাবে । হাদিস শরীফের বক্তব্য অনুসারে কায়সারের শহর বা কুসতুনতুনিয়ায় হামলাকারী প্রথম বাহিনীকে ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে; এমন বলা হয়নি যে, এ জিহাদে অংশ নেয়া সকলেই ক্ষমাপ্রাপ্ত । এমন কথা কোথাও বর্ণিত আছে কি ? এ সম্পর্কিত দলীলগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হল ।
কায়সারের শহর
আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহ তার বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করেন-
وَجَوَّزَ بَعْضُهُمْ أَنَّ الْمُرَادَ بِمَدِينَةِ قَيْصَرَ الْمَدِينَةُ الَّتِي كَانَ بِهَا يَوْمَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ الْمَقَالَةَ وَهِيَ حِمْصُ وَكَانَتْ دَارَ مَمْلَكَتِهِ إِذْ ذَاكَ
অর্থাৎ কোন কোন উলামার মতে কায়সারের শহর দ্বারা ঐ শহরকে বুঝানো হয়েছে, যা হুযুর করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে কায়সারের অধীনে ছিল আর তা ছিল হিম্স বা হাম্স আর ঐ সময়ে সেখানেই কায়সারের শাসনকার্য চলত । [২]
এ বিষয়ক কোন হাদীসেই কুসতুনতুনিয়া শব্দের উল্লেখ হয়নি বরং উল্লেখ হয়েছে কায়সারের শহর এর । আর কায়সার রোমের বাদশাহর উপাধি । সে যেখানে অবস্থান করত সেটাকেই মদীনায় কায়সার বলা হত । আর এ মর্মে হাম্স ছিল সে শহর যেখানে প্রথম বাহিনী প্রেরণ হয় ১৫ হিজরীতে হযরত উমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে । যেখানে বহু শীর্ষস্থানীয় সাহাবা কেরাম অংশ নেন । আল্লামা ইবনে আসীর উল্লেখ করেন –
فَلَمَّا فَرَغَ أَبُو عُبَيْدَةَ مِنْ دِمَشْقَ سَارَ إِلَى حِمْصَ، فَسَلَكَ طَرِيقَ بَعْلَبَكَّ
অর্থাৎ হযরত আবু উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু দামেশক হতে বের বা’লাবাক্ক শহরের রাস্তা হয়ে হিমসের দিকে রওনা হলেন । [৩]
আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীর বর্ণনা করেন –
لَمَّا وَصَلَ أَبُو عُبَيْدَةَ فِي اتِّبَاعِهِ الرُّومَ الْمُنْهَزِمِينَ إِلَى حِمْصَ، نَزَلَ حَوْلَهَا يُحَاصِرُهَا، وَلَحِقَهُ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ فَحَاصَرُوهَا حِصَارًا شَدِيدًا، وَذَلِكَ فِي زَمَنِ الْبَرْدِ الشَّدِيدِ
অর্থাৎ ১৫ হিজরী সনে হযরত উমর ফারূক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হযরত আবু উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন, তারা রোম বিজয় করে হিম্সের দিকে এগিয়ে যায়, পরবর্তীতে হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাতে যোগ দেন । মুসলমানরা সেখানে অবস্থান নেন এবং অবরোধ করেন । সে সময় সেখানে প্রচন্ড শীত পড়ে এবং এ অবস্থায় মুসলমানরা কঠিন ধৈর্যের পরিচয় দেন । তারা হিমস জয় করেন । [৪]
এই ঘটনা তখনের যখন পাপিষ্ঠ ইয়াযিদের জন্মই হয়নি । ইয়াযিদের জন্ম প্রসঙ্গে ইতিহাসভিত্তিক বর্ণনা –
হাফেজ ইবনে কাসীরের মতে-
وُلِدَ سَنَةَ خَمْسٍ أَوْ سِتٍّ أَوْ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ
অর্থাৎ ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়ার জন্ম ২৫/২৬/২৭ হিজরী সনে । [৫]
ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতীর মতে-
২৫/২৬ হিজরীতে , ইবনে হাজর আসকালানীর মতে উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে, ইবনে আসীরের মতে ২৬ হিজরীতে । [৬]
কুসতুনতুনিয়ায় ১ম হামলা
এ বর্ণনা দ্বারা উদ্দেশ্য কুসতুনতুনিয়া হলেও সে বাহিনীতে ইয়াযিদ ছিলনা । সুতরাং সে ক্ষমার সংবাদ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত নয় ।
আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীরের বর্ণনানুসারে –
وَفِيهَا غَزَا مُعَاوِيَةُ بِلَادَ الرُّومِ حَتَّى بَلَغَ الْمَضِيقَ مَضِيقَ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ وَمَعَهُ زَوْجَتُهُ عَاتِكَةُ
অর্থাৎ ৩২ হিজরী সনে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমে আক্রমণ করেন এবং একের পর এক স্থান অতিক্রম করেন এমনকি তার নেতৃত্বাধীন মুসলিম বাহিনী কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায় । তার সাথে তার স্ত্রী আতিকাহও ছিলেন । [৭]
আল্লামা ইবনে আসীর বর্ণনা করেন –
قِيلَ: فِي هَذِهِ السَّنَةِ غَزَا مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ مَضِيقَ الْقُسْطَنْطِينِيَّةِ وَمَعَهُ زَوْجَتُهُ عَاتِكَةُ بِنْتُ قَرَظَةَ
অর্থাৎ বর্ণিত আছে, এ বছরই হযরত আমীর মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত আক্রমণ করেন এবং তার সাথে তার স্ত্রী আতিকাহ বিন্তে কারযাহ ছিল । [৮]
আল্লামা তাবারীর তারিখেও ৩২ হিজরীর ঘটনায় অনুরূপ উল্লেখ হয় ।
এটা ছিল কুসতুনতুনিয়ায় প্রথম হামলার বর্ণনা, যা ৩২ হিজরী সনে হয়েছিল । আর ইয়াযিদের জন্ম ২৫ বা ২৬ হিজরী সনে হয়েছিল । আর এ বর্ণনায় আমীর মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে তার স্ত্রী ছিলেন আর কারো কথা উল্লেখ হয়নি ।
কুসতুনতুনিয়ায় ২য় হামলাঃ
কুসতুনতুনিয়ায় দ্বিতীয়বার অভিযান ৪৩ হিজরী সনে হয় । হাফেজ ইবনে কাসীরের বর্ণনা-
فِيهَا غَزَا بُسْرُ بْنُ أَبِي أَرْطَاةَ بِلَادَ الرُّومِ فَوَغَلَ فِيهَا حَتَّى بَلَغَ مَدِينَةَ قُسْطَنْطِينِيَّةَ
অর্থাৎ এ বছর অর্থাৎ ৪৩ হিজরীতে বসর বিন আবী আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয় আর তা রোম ছড়িয়ে কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায় । [৯]
তারিখে ইবনে খালদুনে উল্লেখ হয়-
ثم دخل بسر بن أرطاة أرضهم سنة ثلاث وأربعين ومشى بها وبلغ القسطنطينيّة
অর্থাৎ অতঃপর হযরত বসর বিন আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী রোমে প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে তারা কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায় । [১০]
ইবনে জারীর তাবারীর তারিখে ৪৩ হিজরীর বর্ণনায় এর উল্লেখ হয় ।
কুসতুনতুনিয়ায় ৩য় হামলাঃ
কুসতুনতুনিয়ায় ৩য় অভিযান ৪৪ অথবা ৪৬ হিজরী সনে পরিচালিত হয় । তারিখে কামিলে ৪৪ হিজরীর বর্ণনায় উল্লেখ হয়-
فِي هَذِهِ السَّنَةِ دَخَلَ الْمُسْلِمُونَ مَعَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ بِلَادَ الرُّومِ وَشَتَوْا بِهَا، وَغَزَا بُسْرُ بْنُ أَبِي أَرْطَأَةَ فِي الْبَحْرِ
অর্থাৎ এ বছর অর্থাৎ ৪৪ হিজরীতে মুসলিম বাহিনী হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে রোমে জিহাদ পরিচালনা করে আর শীতকালীন সময়ে সেখানে অবস্থান করেন । আর হযরত বসর বিন আবী আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সমুদ্রপথে সেখানে আক্রমণ পরিচালনা করেন । [১১]
হাফেজ ইবনে কাসীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতেও অনুরূপ বর্ণনা পাওয়া যায় ।
তারিখে কামিলে ৪৬ হিজরীর বর্ণনায় উল্লেখ হয়-
فِي هَذِهِ السَّنَةِ كَانَ مَشْتَى مَالِكِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بِأَرْضِ الرُّومِ، وَقِيلَ: بَلْ كَانَ ذَلِكَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ، وَقِيلَ: بَلْ كَانَ مَالِكُ بْنُ هُبَيْرَةَ
অর্থাৎ এ বছর অর্থাৎ ৪৬ হিজরীতে হযরত মালিক বিন আব্দুল্লাহ রোমে অবস্থান করেন, আর বলা হয় যে, আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সেখানে ছিলেন । আবার বলা হয়ে থাকে মালিক বিন হুবাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন । [১২]
হাফিজ ইবনে কাসীরের বর্ননাতেও অনুরূপ উল্লেখ হয় ।
হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্ব দানের কথা কেবল ইতিহাসের কিতাবেই নয়, হাদীসের কিতাবেও তা উল্লেখ হয়েছে । আর তা সিহাহ সিত্তাহর কিতাব সুনানে আবী দাউদে-
عَنْ أَسْلَمَ أَبِي عِمْرَانَ قَالَ : غَزَوْنَا مِنَ الْمَدِينَةِ نُرِيدُ الْقُسْطَنْطِينِيَّةَ، وَعَلَى الْجَمَاعَةِ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ، وَالرُّومُ مُلْصِقُو ظُهُورِهِمْ بِحَائِطِ الْمَدِينَةِ، فَحَمَلَ رَجُلٌ عَلَى الْعَدُوِّ، فَقَالَ النَّاسُ: مَهْ مَهْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، يُلْقِي بِيَدَيْهِ إِلَى التَّهْلُكَةِ، فَقَالَ أَبُو أَيُّوبَ: ” إِنَّمَا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ فِينَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ لَمَّا نَصَرَ اللَّهُ نَبِيَّهُ، وَأَظْهَرَ الْإِسْلَامَ قُلْنَا: هَلُمَّ نُقِيمُ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحُهَا “، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى: {وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ} فَالْإِلْقَاءُ بِالْأَيْدِي إِلَى التَّهْلُكَةِ أَنْ نُقِيمَ فِي أَمْوَالِنَا وَنُصْلِحَهَا وَنَدَعَ الْجِهَادَ “، قَالَ أَبُو عِمْرَانَ: فَلَمْ يَزَلْ أَبُو أَيُّوبَ يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَتَّى دُفِنَ بِالْقُسْطَنْطِينِيَّةِ
অর্থাৎ আসলাম আবূ ইমরান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মদীনা মুনাওয়ারাহ হতে কুসতুনতুনিয়া ( ইস্তাস্বুল) অভিমুখে যুদ্ধ যাত্রা করলাম। আমাদের সেনাপতি ছিলেন খালিদ ইবন ওয়ালীদের পুত্র আবদুর রহমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। রোমের সৈন্যদল ইস্তাম্বুল শহরের দেওয়ালে পিঠ লাগিয়ে যুদ্ধের জন্য দন্ডায়মান ছিল। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি শত্রু- সৈন্যের উপর আক্রমণ করে বসল। তখন আমাদের লোকজন বলে উঠল : থাম, থাম, লা ইলাহা ইল্লাহ্, সে তো নিজেই ধ্বংসের দিকে নিজেকে ঠেলে দিচ্ছে। তখন আবূ আইয়ূব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ( অনুচ্ছেদে বর্ণিত) এ আয়াত আমাদের আনসার সম্প্রদায় সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছিল। যখন আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ সাহায্য করলেন এবং ইসলামকে জয়যুক্ত করলেন, তখন আমরা বলেছিলাম, আমরা যুদ্ধে না গিয়ে ঘরে থেকে আমাদের সহায় – সম্পদ দেখাশুনা করব এবং এর সংস্কার সাধন করব। তখন আল্লাহ্ এ আয়াত নাযিল করেনঃ ‘‘ আর তোমরা আল্লাহ রাস্তায় ব্যয় কর এবং নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’’ আমাদের ঘরে থেকে মালামালে রক্ষণাবেক্ষণ করা ও যুদ্ধে না যাওয়াই হল নিজেকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া। আবূ ইমরান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন , এ কারণেই আবূ আইয়ূব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আ্ল্লাহর রাস্তায় সর্বদা জিহাদে লিপ্ত থাকতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে কুসতুনতুনিয়ায় সমাহিত হলেন । [১৩]
তারিখে কামিলে ৪৬ হিজরীর বর্ণনা অনুসারে হযরত আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ৪৬ হিজরীতে হিমসে ওফাত লাভ করেন । বিদায়া নিহায়াতেও একই কথা উল্লেখ হয় ।
৪৭ হিজরী সনে মালিক বিন হুবাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে রোম অঞ্চলে অভিযান পরিচালিত হয় । এ বর্ণনাও তারিখে কামিল ও বিদায়া নিহায়াতে উল্লেখ হয় ।
উপরোক্ত আলোচনা হতে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, কুসতুনতুনিয়াতে প্রথম দিকে যে জিহাদ পরিচালিত হয় তাতে ইয়াযিদের অংশগ্রহণ ছিল না । তাহলে হাদীসের বক্তব্য অনুসারে সে কিভাবে ক্ষমাপ্রাপ্তদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয় ?
কুসতুনতুনিয়ার জিহাদে ইয়াযিদের অন্তর্ভুক্তিঃ
কুসতুনতুনিয়ায় ইয়াযিদের অন্তর্ভুক্তির সাল নিয়ে নানা বর্ণনা উল্লেখ হয়, হাফেজ ইবনে কাসীর বলেন-
فِيهَا غَزَا يَزِيدُ بْنُ مُعَاوِيَةَ بِلَادَ الرُّومِ حتى بلغ قسطنطينية
অর্থাৎ এ বছর ইয়াযিদ বিন মু’আবিয়া রোমে আক্রমণ করে এবং এ বাহিনী কুসতুনতুনিয়া পর্যন্ত পৌছে যায় । [১৪]
তারিখে তাবারীতেও ইবনে জারীর তাবারী একই বর্ণনা উল্লেখ করেন ।
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ উমদাতুল কারীতে উল্লেখ করেন –
أَن يزِيد بن مُعَاوِيَة غزا القسنطينية فِي سنة اثْنَتَيْنِ وَخمسين
অর্থাৎ ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া কুসতুনতুনিয়ায় অভিযানে ৫২ হিজরী সনে অংশ নেন । আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানীও ফাতহুল বারীতে একই বর্ণনা দেন ।
বর্ণিত হয়, এ সময়ে বহু সাহাবী তাতে অংশ নেন । হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদত ও দাফন এখানেই হয় । এরূপ বর্ণনা বুখারী শরীফের হাদীস হতেও পাওয়া যায়। কিন্তু তা হতে ইয়াযিদের ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্তি হয় না । কেননা সুনানে আবু দাউদের বর্ণনা অনুসারে কুসতুনতুনিয়ায় হামলা আব্দুর রহমান বিন খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে হয় । এছাড়াও তারিখের(ইতিহাসের) কিতাবসমূহে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনীকে ৩২ হিজরীতে কুসতুনতুনিয়ায় অভিযানের কথা উল্লেখ হয় । আবার অন্য বর্ণনায় বসর বিন আবী আরতাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বাহিনী ৪৩ হিজরীতে অভিযানের কথা উল্লেখ হয় । প্রথম বাহিনীতে ইয়াযিদ ছিল কই ? ইয়াযিদ কুসতুনতুনিয়ায় হামলাকারী বাহিনীতে ছিল কিন্তু প্রথম আক্রমণকারী বাহিনীতে নয় আর সেটা স্পষ্ট উল্লেখিত দলীলসমূহ হতে ।
ইয়াযিদ কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমণকারী বাহিনীতে ছিল; কিন্তু তা জিহাদের উদ্দেশ্যে নয়, বরং তাকে তো সেখানে শাস্তিস্বরূপ পাঠানো হয়েছিল । আল্লামা ইবনে আসীর বর্ণনা করেন –
فِي هَذِهِ السَّنَةِ، وَقِيلَ:سَنَةَ خَمْسِينَ، سَيَّرَ مُعَاوِيَةُ جَيْشًا كَثِيفًا إِلَى بِلَادِ الرُّومِ لِلْغَزَاةِ وَجَعَلَ عَلَيْهِمْ سُفْيَانَ بْنَ عَوْفٍ وَأَمَرَ ابْنَهُ يَزِيدَ بِالْغَزَاةِ مَعَهُمْ، فَتَثَاقَلَ وَاعْتَلَّ، فَأَمْسَكَ عَنْهُ أَبُوهُ، فَأَصَابَ النَّاسُ فِي غَزَاتِهِمْ جُوعٌ وَمَرَضٌ شَدِيدٌ، فَأَنْشَأَ يَزِيدُ يَقُولُ: مَا إِنْ أُبَالِي بِمَا لَاقَتْ جُمُوعُهُمُ … بِالْغَزْقَذُونَةِ مِنْ حُمَّى وَمِنْ مُومِ
إذا اتكأت على الأنماط مرتفقاً … بدير سمعان عندي أم كلثوموَأُمُّ كُلْثُومٍ امْرَأَتُهُ، وَهِيَ ابْنَةُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَامِرٍ.فَبَلَغَ مُعَاوِيَةَ شِعْرُهُ فَأَقْسَمَ عَلَيْهِ لَيَلْحَقَنَّ بِسُفْيَانَ إِلَى أَرْضِ الرُّومِ لِيُصِيبَهُ مَا أَصَابَ النَّاسَ، فَسَارَ وَمَعَهُ جَمْعٌ كَثِيرٌ أَضَافَهُمْ إِلَيْهِ أَبُوهُ
অর্থাৎ এই বছর, অর্থাৎ, ৪৯ বা ৫০ হিজরী সালে হযরত আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রোমের উদ্দেশ্যে এক বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি এর দায়িত্বভার অর্পণ করেন সুফিয়ান বিন আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর প্রতি এবং তাঁর ছেলে ইয়াযিদকে ওই বাহিনীর সাথে যেতে নির্দেশ দেন। কিন্তু ইয়াযিদ অসুস্থ হওয়ার ভান করে এবং যেতে অস্বীকৃতি জানায়। এ অভিযানে মুসলিম যোদ্ধারা ক্ষুধা ও রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত এবং নানা কঠিন পরিস্থিতির শিকার হন । ইয়াযিদের কাছে যখন এ খবর আসে, তখন সে ব্যঙ্গ করে কবিতায় বলে, ‘ফারকুদওয়ানা-এ মহা গযবে তারা পতিত হয়েছে; তাদের জ্বর বা অন্য যা-ই কিছু হোক, তাতে আমার যায় আসে না। কেননা, আমি বসে আছি উচ্চ ফরাশে (ম্যাট্রেস), আর আমার বাহুবন্ধনে আছে উম্মে কুলসুম ।’ উম্মে কুলসুম ছিলেন ইয়াযিদের স্ত্রীদের একজন আব্দুল্লাহ বিন আমের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর কন্যা । হযরত আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু যখন এই কবিতার শ্লোক সম্পর্কে জানতে পারেন, তখন তিনি এয়াযীদকে শপথ গ্রহণ করতে ও কনস্টানটিনোপোলে সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে যোগ দিতে বাধ্য করেন, যাতে করে ’সেও ইসলামের মুজাহিদদের মোকাবেলাকৃত কঠিন পরীক্ষার অংশীদার হতে পারে’ (এটি ইয়াযিদের প্রতি শাস্তি ছিল)। এমতাবস্থায় ইয়াযিদ অসহায় হয়ে পড়ে এবং তাকে যুদ্ধে যেতে হয়; আর হযরত আমীরে মু’আবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার সাথে আরেকটি বাহিনী প্রেরণ করেন । [১৫]
এ ঘটনা ইবনে খালদুনের তারিখেও উল্লেখ হয় । [১৬]
এ থেকেই বুঝা যায় ইয়াযিদের মুসলিম বাহিনীতে অন্তর্ভূক্তি কিভাবে হয়েছে । সে মুসলিম সৈন্যদের নিয়ে বিদ্রুপ করার দরুন শাস্তিস্বরূপ সেখানে প্রেরিত হয় ।
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর উমদাতুল কারীতে উল্লেখ করেন-
الْأَظْهر أَن هَؤُلَاءِ السادات من الصَّحَابَة كَانُوا مَعَ سُفْيَان هَذَا وَلم يَكُونُوا مَعَ يزِيد بن مُعَاوِيَة، لِأَنَّهُ لم يكن أَهلا أَن يكون هَؤُلَاءِ السادات فِي خدمته
অর্থাৎ অসংখ্য সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হযরত সুফিয়ান ইবনে আউফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর অধীনে যুদ্ধে গিয়েছিলেন এবং ‘ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে যান নি, কেননা সে তাঁদেরকে নেতৃত্বদানে অযোগ্য ছিল ‘। [১৭]
এরপরেও ইয়াযিদ প্রেমীরা তাকে ক্ষমাপ্রাপ্ত বা জান্নাতী দাবী কিভাবে করতে পারে, যেখানে কায়সারের শহর বা কুসতুনতুনিয়ায় আক্রমণকারী প্রথম বাহিনীতে সে ছিলই না । হাদীসে প্রথম বাহিনীর কথা বলা হয়েছিল, সেখানে যারা জিহাদ করবে সকলের কথা বলা হয়নি । এরপরও মেনে নেয়া হল সে ছিল, এর দ্বারা তার পরবর্তী গুনাহের কাজ, অনুমোদন ইত্যাদি যে মাফ হবে তা কিভাবে হয় । হাদীস শরীফে বহু জায়গায় ক্ষমার কথা উল্লেখ আছে এমনকি ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলার কারণে জান্নাতী হবার ঘোষণাও আছে। এর মানে এ নয় যে, এতে করে সব হিসেব নিকেশ মাফ হয়ে যাবে, এমন হলে তো আমলের প্রয়োজনই ছিল না । ক্ষমা তারই হবে যে এর উপযুক্ত থাকবে । আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী বলেন-
فَإِن قلت: قَالَ، صلى الله عَلَيْهِ وَسلم، فِي حق هَذَا الْجَيْش: مغْفُور لَهُم. قلت: لَا يلْزم، من دُخُوله فِي ذَلِك الْعُمُوم أَن لَا يخرج بِدَلِيل خَاص، إِذْ لَا يخْتَلف أهل الْعلم أَن قَوْله، صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: مغْفُور لَهُم، مَشْرُوط بِأَن يَكُونُوا من أهل الْمَغْفِرَة حَتَّى لَو ارْتَدَّ وَاحِد مِمَّن غَزَاهَا بعد ذَلِك لم يدْخل فِي ذَلِك الْعُمُوم، فَدلَّ على أَن المُرَاد مغْفُور لمن وجد شَرط الْمَغْفِرَة فِيهِ مِنْهُم
অর্থাৎ যদিও ইয়াযিদ এই বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়, তবুও সে এই সুসংবাদের হুকুম হতে বের হয়ে যায় তার পরবর্তী কৃতকর্মের কারণে । এ জন্যে যে, উলামা কেরামের এই মাসয়ালায় ঐকমত্য আছে যে হুযুর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ঘোষণা ‘ তাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে’ কাজে দিবে এই শর্তে যে এর পরবর্তীতেও তারা এর উপযুক্ত থাকবে । পরে যদি কেউ ইসলাম হতে বের হয়ে যায়, ফাসিক, মুরতাদ হয়ে যায় তবে তার অন্তর্ভুক্তি হবে না । সুতরাং এ যুদ্ধে অংশ নেয়া লোকেরা ক্ষমা পাবে তখনই যখন এর উপযুক্ততা তদের মধ্যে উপস্থিত পাওয়া যাবে । [১৮]
উলামায়ে আহলে সুন্নাতের মতে ইয়াযিদ একজন পাপিষ্ঠ ও অভিশপ্ত ব্যক্তি । এতে কোন প্রকার সংশয় রাখা যাবে না । আর যে ব্যক্তির নির্দেশে আহলে বায়তের উপর নির্মমভাবে হামলা হয়, শহীদ করা হয় তাদের । শহীদ হন হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। অপদস্থ হন আহলে বায়তের পবিত্র নারীগণ, হামলা হয় পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদীনা শরীফে, শহীদ করা হয় সাহাবা ও তাবেয়ী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমদের, পবিত্রতা নষ্ট করা হয় মক্কা-মদীনা শরীফের, মসজিদে নববীর পবিত্রতা নষ্ট করা হয়, আজান বন্ধ করা হয়, কাবা ঘরের গিলাফ পোড়ানো হয় । এমনকি ইয়াযিদের মৃত্যুও হয় যখন মক্কা মুকাররামায় আগুন জ্বলছিল আর আর তার পাশে ছিল মদের পেয়ালা । একজন বিবেকবান মাত্রই বলতে ও বুঝতে সক্ষম যে, এ প্রকার ব্যক্তি ক্ষমাপ্রাপ্ত হয় কিভাবে । অথচ যে বাহিনীতে তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তাকে বর্তমানে জান্নাতী বানানোর ঘৃণ্য পায়াতারা চালানো হচ্ছে, সে বাহিনীকে নিয়েই সে বিদ্রুপ করেছিল, আর তারই শাস্তি স্বরূপ সে সেখানে যেতে বাধ্য হয় । আল্লাহ আমাদের এসকল ফিতনা হতে হিফাজত করুন এবং তাঁর প্রিয় হাবীব, তাঁর আসহাব ও আহলে বাইতের পথে অটল রাখুন । আমিন, বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন ।
তথ্যসূত্রঃ
১. সহীহ আল বুখারী, কিতাবুল জিহাদ, ৪:৪২ হাদীস নং- ২৯২৪/২৭৬৬ , ৫ম খণ্ড ১৮৩ পৃষ্ঠা হাদীস-২৭২৩ [ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ], তাবরানী আল মু’জামুল কবীর ২৫:১৩৩ হাদীস-৩২৩ মাকতাবা ইবনে তাইয়্যিমাহ কায়রো ।
২. আসকালানী ফাতহুল বারী শরহে সহীহ বুখারী ৬:১০৩ দারুল মা’রেফাহ বৈরুত ।
৩. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ২:৩২২ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত ।
৪. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২৪৮ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৭:৫২ দারুল ফিকর বৈরুত ।
৫. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া,৮:২৪৮ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:২২৬ দারুল ফিকর বৈরুত ।
৬. সুয়ূতী তারিখুল খুলাফা ১৫৬ পৃঃ (ইয়াযিদ বিন মুয়াবিয়া অধ্যায়), ইবনে আসীর তারিখে কামিল ২:৪৬০ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত, তাহযীবুত তাহযীব ১১:৩৬০ ।
৭. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৭:১৭৯ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৭:১৫৯ দারুল ফিকর বৈরুত ।
৮. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ২:৫০৩ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।
৯. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:২৭ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:২৪ দারুল ফিকর বৈরুত ।
১০. তারিখে ইবনে খালদুন ৩:১১ দারুল ফিকর বৈরুত ।
১১. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ৩:৩৮ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।
১২. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ৩:৫১ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।
১৩. সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুল জিহাদ হাদীস নং-২৫১২, হাকেম আল মুস্তাদরিকু আলাস সাহিহাইন, কিতাবুল জিহাদ, হাদীস-২৪৩৪ ।
১৪. ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮:৩৬ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত, ৮:৩২ দারুল ফিকর বৈরুত ।
১৫. ইবনে আসীর তারিখে কামিল ৩:৫৬,৫৭ দারুল কিতাবিল আরাবী বৈরুত।
১৬. তারিখে ইবনে খালদুন ৩:১২ দারুল ফিকর বৈরুত ।
১৭. উমদাতুল ক্বারী শরহে সহীহ বুখারী, বাবু মা ক্বীলা ফি ক্বিতালির রূম, ১৪:১৯৮,১৯৯ দারু ইহয়ায়ুত তুরাসুল আরাবী বৈরুত ।
১৮. প্রাগুপ্ত ১৪:১৯৯ ।