সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী

সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ. খতীব, মুসাফির খানা জামে মসজিদ, নন্দন কানন, চট্টগ্রাম

بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين, أما بعد!

চন্দ্র সুর্য গ্রহ তারা, নীল আসমান, গাছপালা, তরুলতা, ফুল-ফল, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর, পাহাড় ঝর্ণা আর হাজরো নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ঘেরা আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী যাঁর উসিলায় সৃজিত, যিনি সৃষ্টি না হলে আসমান যমীনের কিছুই সৃষ্টি হতো না, তিনিই আমাদের প্রিয়নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মহাকালের মানব ইতিহাসে তিনিই সর্বশ্রেষ্ট, সবচেয়ে মহান, সবচেয়ে পবিত্র।



বেলাদত ও জন্মগ্রহণ প্রত্যেক মানুষের জন্যই খুশি ও আনন্দের পরিচায়ক হয়ে থাকে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে জন্মদিনের একটি নির্দিষ্ট গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। আর এই গুরুত্ব সে সময় আরও বেড়ে যায় যখন সেদিনগুলোর সম্পর্ক আম্বিয়া (আলাইহিমুস্সালাম)-এর সাথে হয়। আম্বিয়ায়ে কেরামের জন্ম আসলেই আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালার শ্রেষ্ঠ ও বৃহত্তম নেয়ামতস্বরূপ। প্রত্যেক নবীর জন্ম নেয়ামতের ওসীলায় সংশ্লিষ্ট উম্মতগণ অন্য সকল নেয়ামত লাভের সৌভাগ্য অর্জন করে। হুযুর নবীয়ে আকরাম হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সদকায় উম্মতে মুহাম্মদীর আবির্ভাব ও নব্যুয়তে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আসমানী হেদায়েতের নিয়ামত, ওহীয়ে রাব্বানীর নেয়ামত, নুযুলে কোরআন ও মাহে রমযানের নেয়ামত, জুমা মুবারক ও ঈদাইনের নেয়ামত, শরফ ও ফযিলত মূলত: সুন্নাত ও সীরাতে মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেই নেয়ামত।



মোটকথা, যতসব নেয়ামত ক্রমাগতভাবে দান করা হয়েছে ওই সকল নেয়ামতের মূল প্রতিপাদক এবং রবিউল আউয়ালের মূলকেন্দ্র হচ্ছে আনন্দপূর্ণ ও প্রাণস্পর্শী বসন্তের সমুজ্জ্বল সুবহে সাদেক, যখন হুযুর নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সৌভাগ্যময় বেলাদত হয়েছে এবং সেই বরকতপূর্ণ দিন যখন পিয়ারা নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই পৃথিবীর পানি ও ফুলের পরিবেশে আগমন করেছিলেন। সুতরাং হুযুর নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সৌভাগ্যপূর্ণ বেলাদতের উপর খুশি হওয়া ও আনন্দ প্রকাশ করা ঈমানের আলামত এবং স্বীয় পথপ্রদর্শক নবীয়ে মুকাররাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আত্মিক সম্পর্ক স্থাপনের আয়না বিশেষ।



আল্লাহতায়ালা স্বীয় হাবীবে মুকাররাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বেলাদতের যিকির মোবারক শপথসহকারে বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে,

لَا أُقْسِمُ بِهَٰذَا الْبَلَدِ وَأَنتَ حِلٌّ بِهَٰذَا الْبَلَدِ وَوَالِدٍ وَمَا وَلَدَ

‘আমি এই শহরের (মক্কা) শপথ করছি, (হে হাবীবে মুকাররাম!) এ জন্য যে এই শহরে আপনি তশরীফ আনয়ন করেছেন। হে হাবীবে মুকাররাম! আপনার পিতার [হযরত আদম আলাইহিস সালাম অথবা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের] শপথ এবং (তাদের) শপথ, যারা জন্মগ্রহণ করেছে।’ (সূরা বালাদ : আয়াত ১-৩)।



মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহার গর্ভে থাকাকালের ঘটনাবলী: তিনি গর্ভে থাকাকালে হযরত আমিনা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা স্বপ্নে দেখেন যে, তাঁর উদর মোবারক থেকে এমন একটা আলোকরশ্মি বের হলো যা দিয়ে তিনি সিরীয় ভূখন্ডের বুসরার প্রাসাদসমূহ দেখতে পেলেন।

رُؤْيَا أُمِّي الَّتِي رَأَتْ أَنَّهُ خَرَجَ مِنْهَا نُورٌ أَضَاءَتْ لَهُ قُصُورُ الشَّامِ) أخرجه الدارمي ( ১ / ৮ – ৯ ) و الحاكم ( ২ / ৬১৬ – ৬১৭ ) و أحمد ( ৪ / ১৮৪ )وفي رواية: ্র إِنِّي عَبْدُ اللهِ لَخَاتَمُ النَّبِيِّينَ، وَإِنَّ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ لَمُنْجَدِلٌ فِي طِينَتِهِ ، وَسَأُنَبِّئُكُ مْ بِأَوَّلِ ذَلِكَ دَعْوَةُ أَبِي إِبْرَاهِيمَ ، وَبِشَارَةُ عِيسَى بِي ، وَرُؤْيَا أُمِّي الَّتِي رَأَتْ গ্ধ.أخرجه أحمد فى ” المسند ” (ح১৭১৬৩/২৮/৩৯৫) ط الرسالة من طريق أَبُو الْيَمَانِ الْحَكَمُ بْنُ نَافِعٍ ، والحاكم فى ” المستدرك ” (ح৪১৭৫/২/৬৫৬) ط دار الكتب العلمية ، والبيهقى فى ” الدلائل ” (১/৮৩) ط دار الكتب العلمية ، والدارمى فى ” الرد على الجهمية ” (ح২৬১/ص ১৪৬) ط دار ابن الأثير، وأبي نُعيم الأصبهاني فى ” الحلية ” (৬/৯০) ط دار الكتاب العربى، والبزار فى ” المسند ” (ح৪১৯৯/১০/১৩৫) ط مكتبة العلوم والحكم من طريق أَبُو المغيرة عَبد القدوس بن الحجاج ، والطبرانى فى ” مسند الشاميين ” (১৪৫৫/২/৩৪০) ط الرسالة ، وفى ” المعجم الكبير ” (১৩/১৭২) ، وابن عساكر فى ” تاريخ دمشق ” (১/১৬৮،২১/৯৯) ط دار الفكر من طريق أَبُو المغيرة عَبد القدوس بن الحجاج و أَبُو الْيَمَانِ الْحَكَمُ بْنُ نَافِعٍ ، ومحمد بن عبد الواحد الأصبهاني فى ” مجلس إملاء فى رؤية الله تبارك وتعالى ” (ح৪০/ص২৫) ط مكتبة الرشد من طريق بقية بن الوليد ، وابن أبي عاصم فى ” السنة ” (ح৪০৯/১/১৭৯) ط المكتب الإسلامي من طريق إِسْمَاعِيلُ بْنُ عَيَّاشٍ .

অতঃপর তিনি গর্ভে বড় হতে লাগলেল। আল্লাহর কসম, এত হালকা ও সহজ গর্ভধারণ আমি আর কখনো দেখিনি। যখন তাঁকে প্রসব করলাম তখন মটিতে হাত রাখা ও আকাশের দিকে মাথা উঁচু করা অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মা হযরত আমিনা বিনতে ওয়াহাব বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গর্ভে আসার পর তাঁর কাছে কোন এক অপরিচিত আগন্তুক আসেন এব্ং তাঁকে বলেন, “তুমি যাকে গর্ভে ধারণ করেছ, তিনি এ যুগের মানব জাতির মহানায়ক। তিনি যখন ভূমিষ্ঠ হবেন তখন তুমি বলবেঃ সকল হিংসুকের অনিষ্ট থেকে এই শিশুকে এক ও অদ্বিতীয় প্রভুর আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। অতঃপর তার নাম রাখবে মুহাম্মাদ।“

حَدَّثَنِي عَلِيُّ بْنُ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ وَهْبِ بْنِ زَمْعَةَ ، عَنْ أَبِيهِ ، عَنْ عَمَّتِهِ ، قَالَتْ : ” كُنَّا نَسْمَعُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا حَمَلَتْ بِهِ آمِنَةُ بِنْتُ وَهْبٍ ، كَانَتْ تَقُولُ : مَا شَعَرْتُ أَنِّي حَمَلْتُ بِهِ ، وَلا وَجَدْتُ لَهُ ثُقْلَةً كَمَا تَجِدُ النِّسَاءُ إِلا أَنِّي قَدْ أَنْكَرْتُ رَفْعَ حَيْضَتِي ، وَرُبَّمَا كَانَتْ تَرْفَعُنِي وَتَعُودُ وَأَتَانِي آتٍ وَأَنَا بَيْنَ النَّائِمِ وَالْيَقْظَانِ ، فَقَالَ : هَلْ شَعَرْتِ أَنَّكِ حَمَلْتِ ؟ فَكَأَنِّي أَقُولُ : مَا أَدْرِي ، فَقَالَ : إِنَّكِ قَدْ حَمَلْتِ بِسَيِّدِ هَذِهِ الأُمَّةِ وَنَبِيِّهَا ، وَذَلِكَ يَوْمَ الاثْنَيْنِ ، قَالَتْ : فَكَانَ ذَلِكَ مِمَّا يَقَّنَ عِنْدِي الْحَمْلَ ثُمَّ أَمْهَلَنِي حَتَّى إِذَا دَنَا وِلادَتِي أَتَانِي ذَلِكَ الآتِي فَقَالَ : قُولِي : أُعِيذُهُ بِالْوَاحِدِ الصَّمَدِ مِنْ شَرِّ كُلِّ حَاسِدٍ (الطبقات الكبرى – ابن سعد ذكر حمل آمنة برسول الله صلى الله عليه و سلم كثيرا )

عَنِ ابْنِ إِسْحَاقَ ، قَالَ : فَكَانَتْ آمِنَةُ بِنْتُ وَهْبٍ أُمُّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُحَدِّثُ أَنَّهَا أُتِيَتْ حِينَ حَمَلَتْ بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَقِيلَ لَهَا : إِنَّكِ قَدْ حَمَلْتِ بِسَيِّدِ هَذِهِ الأُمَّةِ ، فَإِذَا وَقَعَ إِلَى الأَرْضِ فَقُولِي : أُعِيذُهُ بِالْوَاحِدْ مِنْ شَرِّ كُلِّ حَاسِدْ مِنْ كُلِّ بِرِّ عَاهِدْ وَكُلِّ عَبْدٍ رَائِدْ يَرُودُ غَيْرَ رَائِدْ فَإِنَّهُ عَبْدُ الْحَمِيدِ الْمَاجِدْ حَتَّى أَرَاهُ قَدْ أَتَى الْمَشَاهِدْ قَالَ : آيَةُ ذَلِكَ أَنْ يَخْرُجَ مَعَهُ نُورٌ يَمْلأُ قُصُورَ بُصْرَى مِنْ أَرْضِ الشَّامِ ، فَإِذَا وَقَعَ ، فَسَمِّيهِ مُحَمَّدًا فَإِنَّ اسْمَهُ فِي التَّوْرَاةِ أَحْمَدُ يَحْمَدُهُ أَهْلُ السَّمَاءِ وَأَهْلُ الأَرْضِ ، وَاسْمَهُ فِي الإِنْجِيلِ أَحْمَدُ يَحْمَدُهُ أَهْلُ السَّمَاءِ وَأَهْلُ الأَرْضِ ، وَاسْمَهُ فِي الْفُرْقَانِ مُحَمَّدٌ فَسَمَّيْتُهُ بِذَلِكَ ” . (دلائل النبوة للبيهقي গ্ধ الْمَدْخَلُ إِلَى دَلائِلِ النُّبُوَّةِ وَمَعْرِفَةِ … গ্ধ جِمَاعُ أَبْوَابِ مَوْلِدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ … رقم الحديث: ৩৩)

হযরত আমিনা আলাইহাস সালামকে ধারাবাহিক ভাবে মোবারকময় স্বপ্নে সুসংবাদ: হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বরকতময় আর্বিভাবের পূর্বেই হযরত হযরত আমিনা আলাইহাস সালামকে ধারাবাহিক ভাবে মোবারক স্বপ্নে সুসংবাদ জ্ঞাপন করা হয়। হযরত আমিনা বলেন,

ولما حملت ءامنة برسول الله صلى الله عليه وسلم ظهر صفاء يقينها، وانطوت الأحشاء على جنبيها، وسطع نور محمد صلى الله عليه وسلم على جبينها، قالت ءامنة بنت وهب: لما كان أول شهر من شهوري شهر الله رجب، فبينما أنا ذات ليلة إذ دخل عليّ رجل حسن الوجه طيب الرائحة وهو يشير بيده إلى فؤادي ويقول: مرحبًا مرحبًا بك يا محمد، فقلت له: سيدي من أنت؟ قال: أنا ءادم، فقلت: ما تريد يا أبا البشر؟ قال: أبشري يا ءامنة بسيد البشر، وفخر ربيعة ومضر، ومن ينشق له القمر، ويسلم عليه الحجر، ويسعى إلى خدمته الشجر.

যখন আমি আমার প্রাণপ্রিয়কে রেহেম শরীফে ধারণ করলাম, ধারণ করার প্রথম মাস হলো রজব, সে মাসে একসময় আমি একরাত্রে স্বপ্নের আবেশে ছিলাম। তখন আমার কক্ষে প্রবেশ করলেন এক ব্যক্তি যিনি ছিলেন লাবন্যময় চেহারা বিশিষ্ট সুঘ্রাণে ভরপুর এবং আলোকোজ্জ্বল। তিনি বলছিলেন, আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইকা ওয়া সাল্লাম! আপনাকে স্বাগতম। আমি প্রশ্ন করলাম: আপনি কে? তিনি বললেন, আমি মানব জাতির পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম । আমি বললাম আপনার অভিপ্রায় কি? তিনি বললেন, হে হযরত আমিনা! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আপনি মূলতঃ রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন তাঁকে যিনি রবিয়া ও মুদার গোত্রের ফখর (গৌরবের কারণ)। যিনি সাইয়্যিদুল বাশার।

فلما كان في الشهر الثاني دخل علي رجل جليل القدر وهو يشير بيده إلى فؤادي ويقول: السلام عليك يا رسول الله، السلام عليك يا خليل الله، السلام عليك يا صفوة الله، قلت له: سيدي من أنت؟ قال: أنا شيث، قلت: وما تريد يا شيث؟ قال: أبشري يا ءامنة فقد حملت بالنبي الكريم، والسيد العظيم، الضب له يكلم، والحجر عليه يسلم، ثم انصرف.

যখন দ্বিতীয় মাস (শাবান) সমাগত হল তখন এক ব্যক্তি আমার নিকট আগমণ করলেন। তিনি বললেন, আমি হযরত শীশ। তিনি বললেন, “হে হযরত আমিনা! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন তাঁকে যিনি হবেন রহস্যের উন্মোচক এবং (জাওয়ামিউল কালাম) সহেবে হাদীস।”

فلما كان في الشهر الثالث دخل علي رجل له سكينة ووقار، وعليه ضياء وأنوار، وهو يشير بيده إلى فؤادي ويقول: السلام عليك يا مزمل، السلام عليك يا مدثر، قلت له: سيدي من أنت؟ قال: أنا النبي إدريس، فقلت: وما تريد يا إدريس؟ قال: أبشري يا ءامنة فقد حملت بالنبي الرئيس، والجوهر النفيس، صاحب التسبيح والتقديس، ثم انصرف.

তৃতীয় মাস (রমযান) যখন আগমণ করল তখন আমার নিকট এলেন হযরত ইদ্রীস আলাইহিস সালাম। তিনি বললেন, “হে হযরত আমিনা! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। নিশ্চয় আপনি আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের সর্দারকে রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন।”

لما كان في الشهر الرابع دخل علي رجل أسمر، مليح المنظر، وهو يشير بيده إلى فؤادي ويقول: السلام عليك يا صادق، السلام عليك يا صفوة الكريم الخالق، فقلت له: سيدي من أنت؟ قال: أنا نوح، فقلت: وما تريد يا نوح؟ قال: أبشري يا ءامنة فقد حملت بالنبي الممنوح، صاحب النصر والفتوح، الذي ذكاؤه في الآفاق يفوح، ثم انصرف.

চতুর্থ মাস (শাওয়াল) যখন আগমণ করল তখন আগমণ করলেন হযরত নূহ আলাইহিস সালাম। তিনি বললেন, “হে হযরত আমিনা! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। নিশ্চয় আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন যিনি সাহায্য ও বিজয়ের সাহিব বা অধিকারী।”

فلما كان في الشهر الخامس دخل علي رجل حسنه مكمل، ووجهه مجمل، وهو يشير بيده إلى فؤادي ويقول: السلام عليك يا زين المرسلين، السلام عليك يا إمام المتقين، قلت له: سيدي من أنت؟ قال: أنا نبي الله هود، قلت وما تريد يا هود؟ قال: أبشري يا ءامنة فقد حملت بالنبي المسعود، والرسول المحمود، صاحب الكرم والجود، واللواء المعقود، ثم انصرف.

পঞ্চম মাস (জিলক্বদ) যখন আগমণ করল তখন আমার নিকট আগমণ করলেন হযরত হুদ আলাইহিস সালাম। তিনি বললেন, “হে হযরত আমিনা! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন প্রতিশ্রুত দিবসের (হাশরের দিনের) শাফায়াতে উযমার (মহান শাফায়াতের) যিনি অধিকারী বা মালিক হবেন তাঁকে।”

فلما كان في الشهر السادس دخل علي رجل جليل المقدار كثير الأنوار وهو يشير بيده إلى فؤادي ويقول: السلام عليك يا حبيب المحبوب، السلام عليك يا بغية المطلوب، فقلت له: سيدي من أنت؟ قال: أنا إبراهيم الخليل، قلت: ما تريد يا إبراهيم؟ قال: أبشري يا ءامنة فقد حملت بالنبي الجليل والرسول الفضيل، ثم انصرف.

ষষ্ঠ মাস (জিলহজ্জ্ব) যখন আগমণ করল তখন আমার নিকট আগমণ করলেন হযরত ইবরাহীম খলীল আলাইহিস সালাম। তিনি বললেন, “হে হযরত আমিনা! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন মহাসম্মানিত নবীকে।”

لما كان في الشهر السابع دخل علي رجل أملح، ووجهه من البدر أصبح، وهو يشير بيده إلى فؤادي ويقول: السلام عليك يا صفوة الإله، السلام عليك يا عظيم الجاه، فقلت له: سيدي من أنت؟ قال: أنا أبوه إسماعيل الذبيح، فقلت له: سيدي وما تريد؟ قال: أبشري يا ءامنة فقد حملت بالنبي المليح، صاحب النسب الصحيح، واللسان الفصيح، ثم انصرف.

সপ্তম মাস (মহররম) যখন আগমণ করল তখন আমার নিকট আগমণ করলেন হযরত ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম। তিনি বললেন, “হে হযরত আমিনা! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন সবিশেষ লাবণ্যময় নবীকে।”

فلما كان في الشهر الثامن دخل علي رجل طويل القامة، مليح الهامة، وهو يشير بيده إلى فؤادي ويقول: السلام عليك يا إمام الأبرار، السلام عليك يا حبيب الملك الجبار، فقلت له: سيدي من أنت؟ قال: أنا موسى بن عمران، فقلت: وما تريد يا موسى؟ قال: أبشري يا ءامنة فقد حملت بمن ينزل عليه القرءان. ويكلمه الرحمن، ويزين به الثقلان، ثم انصرف.

অষ্টম মাস (সফর) যখন আগমণ করল তখন আমার নিকট আগমণ করলেন হযরত মুসা ইবনে ইমরান আলাইহিস সালাম। তিনি বললেন, “হে হযরত আমিনা! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন যার উপর কুরআন শরীফ নাযিল হবে তাঁকে।”

فلما كان في الشهر التاسع دخل علي رجل لابس الصوف، وهو بالعبادة موصوف، فأشار بيده إلى فؤادي وهو يقول: السلام عليك يا زين الخلائق، السلام عليك يا مظهر الحقائق، فقلت له: سيدي من أنت؟ قال: أنا عيسى ابنُ مريم، فقلتُ: ما تريد يا عيسى؟ قال: أبشري يا ءامنة فقد حملت بالنبي الأكرم، والعطوف الأرحم، وفي هذا الشهر تضعين محمدًا صلى الله عليه وسلم…

যখন নবম মাস (রবিউল আওয়াল শরীফ) আগমণ করল তখন আমার নিকট আগমণ করলেন হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম। তিনি বললেন, “হে হযরত আমিনা! আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। কেননা আপনি রেহেম শরীফে ধারণ করেছেন সম্মানিত নবী-মহিমান্বিত রাসূলকে। আপনার থেকে দূর হয়ে গেল দুঃখ, কষ্ট-রোগ-যন্ত্রনা।” (আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম, ইবনে হাজার হায়সামি)

হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মোবারক আবির্ভাব: মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাব রবিউল আওয়াল মাসের সেই বছর হয়েছিল যে বছর আসহাবে ফীল (হস্তী বাহিনী) কাবা ঘর আক্রমণ করেছিল। وُلِدَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ. ابْنِ عَبَّاسٍ، قَال: عَنِআল্লাহ তায়ালা তাদেরকে আবাবীল বা নগণ্য পক্ষিকুলের দ্বারা পরাজিত করেছিল। পবিত্র কোরআনে সূরা ফীলে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আসহাবে ফীলের ঘটনাটিও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বেলাদত সম্পর্কিত বরকতসমূহের সূচনা স্বরূপ। কায়েস ইবনে মাখরামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,

قَيْسَ بْنَ مَخْرَمَةَ ، قَالَ : وُلِدْتُ أَنَا وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الْفِيلِ ، فَنَحْنُ لِدَتَانِ . قَال يونس : كنا لدين ، وَقَالَ : كنا لدان . وفي حديث ابن المقرئ ، قَال ابن إسحاق : ولد رسول اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عام الفيل يوم الاثنين لاثنتي عشرة ليلة مضت من شهر ربيع الأول . . ( تاريخ دمشق لابن عساكر حرف الألف ذكر من اسمه أَحْمَد ومُحَمَّد والحاشر والمقفى والعاقب … ! باب ذكر مولد النبي عليه الصلاة والسلام ومعرفة من كفله رقم الحديث: ১৪৭১…)

“আমি ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবরাহার হামলার বছর জন্মগ্রহণ করি। তাই আমরা সমবয়সী”। হাসসান ইবনে সাবিত বলেন,

عَنْ حَسَّانَ بْنِ ثَابِتٍ ، قَالَ : ” إِنِّي لَغُلامٌ يَفَعَةٌ ابْنُ سَبْعِ سِنِينَ أَوْ ثَمَانٍ ، أَعْقِلُ مَا رَأَيْتُ وَسَمِعْتُ ، إِذَا يَهُودِيٌّ بِيَثْرِبَ يَصْرُخُ ذَاتَ غَدَاةٍ : يَا مَعْشَرَ يَهُودَ ، فَاجْتَمَعُوا إِلَيْهِ وَأَنَا أَسْمَعُ ، قَالُوا : وَيْلَكَ مَا لَكَ ؟ قَالَ : طَلَعَ نَجْمُ أَحْمَدَ الَّذِي وُلِدَ بِهِ فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ ” . وَفِي رِوَايَةِ يُونُسَ بْنِ بُكَيْرٍ الَّذِي يُبْعَثُ فِيهِ ، (دلائل النبوة للبيهقي গ্ধ الْمَدْخَلُ إِلَى دَلائِلِ النُّبُوَّةِ وَمَعْرِفَةِ … গ্ধ جِمَاعُ أَبْوَابِ مَوْلِدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ … رقم الحديث: ৪৬)

“আমি তখন সাত আট বছরের বালক হলেও বেশ শক্তিশালী ও লম্বা হয়ে উঠেছি। যা শুনতাম তা বুঝতে পারার ক্ষমতা তখন হয়েছে। হঠাৎ শুনতে পেলাম জনৈক ইহুদী ইয়াসরিবের (মদীনার) একটা দূর্গের ওপর উঠে উচ্চস্বরে ওহে ইহুদী সমাজ!’ বলে চিৎকার করে উঠলো। লোকেরা তার চারপাশে জমায়েত হয়ে বললো, তোমার কি হয়েছে?”সে বলল, আজ রাতে সেই নক্ষত্র উদিত হয়েছে।”

মোট কথা, যে বছর আসহাবে ফীল কাবা আক্রমণ করে, সে বৎসরের ১২ই রবিউল আওয়াল সোমবার দিনটি দুনিয়ার জীবনে এক অসাধারণ দিবস, وأخبرنا محمد بن عمر قال كان أبو معشر نجيح المدني يقول ولد رسول الله صلى الله عليه و سلم يوم الإثنين لليلتين خلتا من شهر ربيع الأول যে দিবসে পৃথিবী সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য, রাত্র-দিন পরিবর্তনের আসল লক্ষ্য, আদম আলাইহিস সালাম ও বনি আদমের গর্ব, হযরত নুহ্ আলাইহিস সালামের নৌকার হেফাযতের নিগৃঢ় ভেদ, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের দোয়া এবং হযরত মুসা আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের ভবিষ্যৎদ্বানী সমূহের সত্যতা প্রমাণকারী অর্থাৎ আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনীতে শুভাগমণ করেন। (সীরাতে মোগলতাঈ পৃঃ ৫।)

মহান আল্লাহ পাক হযরত ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশধর কিনানা গোত্রকে বাছাই করেন এবং কিনানা গোত্র থেকে কুরাইশ বংশের হাশিমের সবচয়ে প্রভাবশালী ও উত্তম ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ও হযরত মা আমেনা আলাইহিমাস সালামের গর্ভে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জন্ম লাভ করেন।

নবীজির শুভাগমনকালীন অবস্থা: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ভূমিষ্ঠ হন তখন এমন কতিপয় আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছিল যা সচরাচর দেখা যা না। প্রথম ঘটনাটি স্বয়ং বিবি আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন এভাবে-

جعلتُ أنظرُ يمينًا وشمالاً وقد اشتدَّ بِيَ الطَّلقُ، فبينما أنا كذلك فإذا بطائِرٍ عظيم أبيضَ قد دخلَ عليَّ، وأمرَّ بجَانِبَةِ جَنَاحيهِ على بَطنِي

যখন আমার প্রসব ব্যাথা শুরু হয় তখন ঘরে আমি প্রায় একা ছিলাম এবং আমার শশুর হযরত আব্দুল মোত্তালিব ছিলেন কা’বা ঘরে তাওয়াফরত। আমি দেখতে পেলাম, একটি সাদা পাখির ডানা আমার কলিজায় কি যেন মালিশ করে দিচ্ছে।” এতে আমার ভয়ভীতি ও ব্যাথা বেদনা দূরিভূত হয়ে গেল। এরপর দেখেতে পেলাম এক গ্লাস শ্বেতশুভ্র শরবত আমার সামনে। আমি ঐ শরবতটুকু পান করলাম।

قالت أمنة فأحسَسْتُ بالذي في بَطني يُريدُ النُّزولَ فلحقَنِي البُكاء لوحدَتِي، فَنظرت إلى رُكنِ المنزل وقد ظهر منهُ أربعُ نِساء طِوال، كَأنَّهُنَّ الأقمَار، مُتَزِرَاتٍ بِأُزُرٍ بيض، يَفُوحُ الطّيبُ من أعطَافِهنَّ، فقلتُ لهنَّ من أنتنَّ اللاتِي مَنَّ اللهُ عليَّ بِكُنَّ في وَحدتِي، وفَرَّجَ بِكُنَّ كُربَتِي؟ قالت الأولَى أنا مَريمُ بنتُ عِمران، والتي على يَساركِ سَارةُ زوجةُ إبراهيم، والتي تُناديكِ من خَلفِك هَاجرُ أمُّ إسمعِيلَ الذبيح، والتي أمامَكِ ءاسيةُ بنتُ مُزاحِم. قالت أمنةُ فاستبشرتُ بِهنَّ وفَرحتُ فَرحًا عَظيمًا، فأقبلت كلُّ واحدةٍ منهنَّ وبَشرتهَا، ثم أقبلت الرابعة وكانت أكبرهنَّ هَيبةً وأكثرهنَّ بَهجةً وبشرتهَا بحملها برسول الله صلى الله عليه وسلم. تقولُ أمنة ثم جلست بين يديّ وقالت ألقي بنفسكِ عليّ، ومِيلِي بكُلِّيَّتِكِ إليّ، قالت أمنةُ فجعلتُ أنظرُ إلى أشباحٍ يَدخلونَ عليّ أفواجًا يُهنئُونِي وأنا حَيرانة وهم يُخاطبونني بخطابٍ لم أسمع قطُ أحلىُ منهُ ولا أَرَق.

অতঃপর একটি উর্দ্ধগামী নূর আমাকে আচ্ছাদিত করে ফেললো।এ অবস্থা দেখতে পেলাম-আবদে মানাফ (কোরাইশ) বংশের মহিলাদের চেহারা বিশিষ্ট এবং খেজুর বৃক্ষের ন্যায় দীর্ঘাঙ্গিনী অনেক মহিলা আমাকে বেষ্টন করে বসে আছে। আমি সাহায্যের জন্য ‘ওয়া গাওয়াসা’ বলে তাদের উদ্দেশ্যে বললাম, আপনারা কোথা হতে আমার বিষয়ে অবগত হলেন? উত্তরে তাঁদের একজন বললেন-আমি ফেরাউনের স্ত্রী বিবি আছিয়া। আরেকজন বলেন,আমি ইমরান তনয়া বিবি মরিয়ম এবং আমাদের সঙ্গীনীগণ হচ্ছেন বেহেস্তি হুর। আমি আরো দেখতে পেলাম- অনেক পুরুষবেশীলোক শূন্যে দন্ডায়মান রয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে রুপার পাত্র। আরো দেখতে পেলাম- একদল পাখি আমার ঘরের কোঠা ঢেকে ফেলেছে। আল্লাহ তায়ালা আমার চোখের সামনের সকল পর্দা অপসারণ করে দিলেন এবং আমি পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম সব দেখতে পেলাম। আরো দেখতে পেলাম-তিনটি পতাকা। একটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে স্থাপিত, অন্যটি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কাবা ঘরের ছাদে। এমতাবস্থা প্রসব বেদনার চূরান্ত পর্যায় আমার প্রি সন্তান হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ঠ হলেন”-(হযরত ইবনে আব্বাস সূত্রে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া)

قالت أمنة ولم يأخُذنِي ما يَأخُذُ النّساءَ منَ الطَّلق إلا أنِي أعرقُ عَرقًا شَديدًا كالمِسكِ الأذفر، لَم أعهدهُ قبلَ ذلكَ من نفسي، فَشكوتُ العَطشَ، فإذا بِمَلكٍ نَاولنِي شَربةً من الفِضَةِ البيضَاء، فيها شَرابٌ أحلىَ من العَسل، وأبردُ من الثلج، وأذكىَ رائحةً من المِسكِ الأذفَر، فَتناولتها فشربتُهَا فأضَاء عليَّ منهَا نورٌ عظيم، فَحرتُ لذلك، وجعلتُ أنظرُ يمينًا وشمالاً وقد اشتدَّ بِيَ الطَّلقُ، فبينما أنا كذلك فإذا بطائِرٍ عظيم أبيضَ قد دخلَ عليَّ، وأمرَّ بجَانِبَةِ جَنَاحيهِ على بَطنِي وقال، انزِل يا رسول الله، انزِل يا حبيبَ الله، قالت أمنةُ فَأعانَنِي عَالمُ الغيبِ والشهادةِ على تسهيلِ الولادة فوضعتُ الحبيبَ محمَّدًا.

খাসায়েসুল ক্বুবরা ও তারিখুল খামিস গ্রন্থে যথাক্রমে আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও আবু বকর দিয়ারবিকরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিবি আমেনা রাদিয়াল্লাহু আনহার একটি বর্ণনা এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেনঃ বিবি আমেনা বলেন

قالتْ ءامِنَةُ بِنْتُ وَهْبٍ : فَلَمَّا وَضَعْتُ رسولَ اللهِ صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ رأيتُهُ رافِعاً رأسَهُ إلى السماءِ مشيراً بإصبَعِهِ،

“যখন আমার প্রিয় পূত্র ভূমিষ্ঠ হলেন, তখন আমি দেখতে পেলাম-তিনি সিজদায় পড়ে আছেন। তারপর মাথা উর্দ্ধগামী করে শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করে বিশুদ্ধ আরবী ভাষা পাঠ করছেন “আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্নি রাসূলুল্লাহ”(যিকরে জামীল সূত্রে)

অতএব উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মর্যাদা ও বুযুর্গীর সাথে সাথে হযরত আমিনা আলাইহাস সালামের মর্যাদা ও বুযুর্গী ফুটে উঠেছে।

সহীহ্ হাদীস সমূহে বর্ণিত আছে যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের সময় তাঁর সম্মানীতা মাতার উদর মুবারক থেকে এমন একটি নূর প্রকাশিত হয় যার দ্বারা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম আলোকিত হয়ে যায়। এমনকি মা আমেনা মক্কা থেকে সিরিয়ার বুসরা শহরের দালানগুলোও দেখতে পান। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদারত অবস্থায় জন্মগ্রহন করেন এবং তখন তাঁর শাহাদাত আঙ্গুলী মুবারক আসমানের দিকে ছিল। কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে যে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভূমিষ্ট হয়ে উভয় হাতের উপর ভর দেয়া অবস্থায় ছিলেন অতপরঃ তিনি এক মুষ্টি মাটি তুলে আকাশের দিকে তাকালেন। (মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া )

أَنَّ آمِنَةَ بِنْتَ وَهْبٍ ، قَالَتْ : ” لَقَدْ عَلِقْتُ بِهِ تَعْنِي رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا وَجَدْتُ لَهُ مَشَقَّةً حَتَّى وَضَعْتُهُ ، فَلَمَّا فَصَلَ مِنِّي خَرَجَ مَعَهُ نُورٌ أَضَاءَ لَهُ مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ إِلَى الْمَغْرِبِ ، ثُمَّ وَقَعَ عَلَى الأَرْضِ مُعْتَمِدًا عَلَى يَدَيْهِ ، ثُمَّ أَخَذَ قَبْضَةً مِنْ تُرَابٍ فَقَبَضَهَا وَرَفَعَ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ ، وَقَالَ بَعْضُهُمْ : وَقَعَ جَاثِيًا عَلَى رُكْبَتَيْهِ رَافِعًا رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ وَخَرَجَ مَعَهُ نُورٌ أَضَاءَتْ لَهُ قُصُورُ الشَّامِ وَأَسْوَاقُهَا حَتَّى رَأَيْتُ أَعْنَاقَ الإِبِلِ بِبُصْرَى (الطبقات الكبرى – محمد بن سعد – ج ١ – الصفحة ١٠٢)

একদিকে পৃথিবীর অর্চনালয়ে নবুওয়তের সূর্য প্রকাশিত হল, আর অন্য দিকে পারস্য রাজা কিস্রার রাজ প্রাসাদের ১৪টি গুম্বুজ ধ্বসে পড়ে পারস্যের শ্বেত উপসাগর একেবারে শুকিয়ে যায়, পারস্যের অগ্নি ম-পের হাজার বছরের প্রজ্জলিত অগ্নি স্বেচ্ছায় নিভে যায়, যা কখনও নির্বাপিত হয় নাই। (দুরুসুত্ তারীখুল ইসলামী লিল হাইয়াত পৃঃ ১৪, সীরাতে মোগলতাই পৃঃ ৫) মূলতঃ এটি ছিল অগ্নি পূজা ও যাবতীয় গোমরাহীর সমাপ্তির পূর্বঘোষনা এবং পারস্য ও রোম রাজত্বের পতনের ইঙ্গিত।

وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. والحمد لله رب العالمين




Top