এই  পৃথিবীতে   আমরাও আল্লাহ  কর্তৃক প্রেরিত  হয়েছি এবং  রাসূলও  আল্লাহ   কর্তৃক   প্রেরিত    হয়েছেন।  কিন্তু  আমাদের প্রেরণকে বলা হয়েছে  “খালক” বা সৃষ্টি এবং রাসূলের  প্রেরণকে বলা  হয়েছে   ”ইরছাল” ও  ”বাআছ” বা প্রেরণ। এই দুইয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। সৃষ্টির উদ্দেশ্য হচ্ছে ইবাদত করা এবং রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য  হচ্ছে   ইবাদত   শিক্ষা    দেয়া    ও   অন্যান্য  ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করা।

বুঝা    গেল-    আমরা   হলোম    সাধারণ   মাখলুক-    কিন্তু  রাসূল   হলেন    খোদাপ্রদত্ত   দায়িত্ব    পালনকারী    মহান  মাখলুক।    আমরা   আগমন     করি   নিজ     দায়িত্বে    কিন্তু রাসূলের আগমন হয় আল্লাহর দায়িত্বে ও জিম্মায়।

উদাহরণ স্বরূপ- বিদেশে কেউ যায় নিজ খরচে, আবার কেউ যায় সরকারী খরচে সরকারী প্রতিনিধি হয়ে। এই দুই   গমনের মধ্যে  আকাশ  পাতাল  ব্যবধান। সরকারী প্রতিনিধির  সমস্ত  কার্যকলাপ  রাষ্ট্রের   কার্যকলাপ    বলে গণ্য হয়-  কিন্তু নিজ খরচে ভ্রমণকারীর  বেলায় তা গণ্য হয় না।

আমরা   এসেছি    মো’মিন   হওয়ার    জন্য-    কিন্তু   রাসূল  এসেছেন       মু’মিন     বানানোর     জন্য।       মানব     সমাজ  রাসূলের  মাধ্যমেই  মো’মেন  ও  মোত্তাকী  হয়।  আমরা  জাহাজে   চড়ি   যাত্রী    হিসাবে-     কিন্তু   রাসূল    সাল্লাল্লাহু  আলাইহি    ওয়া    সাল্লাম   চড়েন    কাপ্তান   বা   পরিচালক হিসাবে। আমরা  এক বন্দর হতে   অন্য বন্দরে পৌঁছি। কিন্তু     রাসূল       আমাদেরকে      তথায়     পৌঁছিয়ে      দেন। একারণেই    যাত্রীরা  ভাড়া  দেয়  এবং   কাপ্তান  সরকারী ভাতা  নেয়।    রাসূল   সাল্লাল্লাহু  আলাইহি    ওয়া   সাল্লাম কান্ডারীর    দায়িত্ব পালন করেছেন বলেই  আল্লাহ পাক তাঁর   জন্য  রেখেছেন  বেশুমার    প্রতিদান  (সূরা  নুন,  ৪ আয়াত)।   আমরা    জন্ম   গ্রহণ   করার   অনেকদিন     পর শিক্ষা গ্রহণ করি এবং অপরজন হতে শিখি- কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু    আলাইহি     ওয়া   সাল্লাম   জন্ম   গ্রহণ    করেই কালেমা      এবং       নামায       শিক্ষা      দিয়েছেন।       আমরা সামাজিক কালিমাযুক্ত- কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ কালিমামুক্ত। পরিবেশ   আমাদেরকে   পরিবর্তন     করে-    কিন্তু   রাসূল  পরিবেশকে   পরিবর্তন   করেন।  এজন্যই   হযরত  ঈছা   عليه السلام ভূমিষ্ট হয়ে বলেছিলেন –

قَالَ إِنِّي عَبْدُ  اللَّهِ    آتَانِيَ الْكِتَابَ  وَجَعَلَنِي  نَبِيًّا وَجَعَلَنِي  مُبَارَكًا أَيْنَ  مَا كُنتُ وَأَوْصَانِي بِالصَّلَاةِ  وَالزَّكَاةِ مَا  دُمْتُ حَيًّا وَبَرًّا بِوَالِدَتِي

অর্থাৎ-  “আমি  আল্লাহর   মহান   বান্দা!    আমাকে   তিনি (ইঞ্জিল)     কিতাব     দিয়েছেন।    আমাকে    নবুয়ত      দান করেছেন।    আমাকে    বরকতময়      করেছেন    যেখানেই থাকিনা  কেন।  আমাকে   নামায   ও  যাকাতের     নির্দেশ দিয়েছেন  যতদিন   জীবিত   থাকি   এবং   আমার  মায়ের সাথে  সদ্ব্যবহারের  নির্দেশ  দিয়েছেন।”  (সূরা  মরিয়ম,  ৩০-৩২ আয়াত)

-উক্ত আয়াতে সবগুলি ক্রিয়াই  অতীতকালের-  অর্থাৎ- সব   কিছু  শিখে   এবং  জেনে   শুনেই  ঈছা  عليه  السلام এখানে এসেছেন।

এটাই  হচ্ছে   রাসূলের  প্রকৃত  শান    ও    মর্যাদা।   রাসূল জন্মসূত্রেই      ”আরিফ      বিল্লাহ”     হয়ে      আসেন।       আর আমাদের  প্রিয়  নবী   সাল্লাল্লাহু   আলাইহি   ওয়া  সাল্লাম  ভূমিষ্ট    হয়েই    তাওহীদ    ও      নিজ   রিসালাতের   সাক্ষ্য দিয়েছিলেন এবং সিজদা করে দুনিয়াতে এসেছিলেন - যা নামাযের মগজ।  শিশুকালেই  তিনি ইনসাফ কায়েম করেছিলেন।  তিনি  দুধ-মাতা  হালিমার একদিকের স্তন হতে  দুধ  পান  করতেন  এবং  অন্যস্তন  দুধশরিক  ভাই  আবদুল্লাহর জন্য   রেখে  দিতেন।  দু'বৎসর  পূর্ণ হতেই  তিনি  দুধপান  ছেড়েছিলেন।  এই  শিক্ষা  তিনি  কোথায়  শিখেছিলেন?    এই  হলো  আমাদের  ও  রাসূলের  মধ্যে পার্থক্য।

যেসব লোক  রাসূলগণকে নিজেদের মত সাধারণ  মনে করে   এবং   মন্তব্য  করে-    নবুয়ত  ব্যাপারে   তারা  পূর্বে অবগত  ছিলেন না  কিংবা নবুয়তের দায়িত্ব লাভ করার পূর্বে     তাঁরা   অজ্ঞ,   পথভ্রষ্ট    ছিলেন-    তারা     পশুতুল্য। আমরা       শিক্ষা      দীক্ষা     ও      সভ্যতার      জন্য      অন্যের মুখাপেক্ষী-  কিন্তু রাসূলগণ কারো  মুখাপেক্ষী   নন- বরং খোদাপ্রদত্ত    জ্ঞান    নিয়েই     তাঁরা    দুনিয়াতে    আসেন।  এটাই রাসূলগণের শান ও মর্যাদা।

পবিত্র      কোরআনে       বলা      হয়েছে-      ”পবিত্র       জীবন   যাপনকারী     ব্যক্তিই     সফলকাম”।     প্রশ্ন     হলো-     এই  পবিত্রতা শিক্ষা দেন কে? পবিত্রতা দানকারী কে? তার উত্তর স্বয়ং কোরআনেই পাওয়া যায়-  “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি     ওয়া      সাল্লাম      তাদেরকে     পবিত্র      করেন” (وَيُزَكِّيهِمْ)।

-বুঝা গোল- পবিত্রতা অর্জনকারী হলোম আমরা-  আর পবিত্রতা দানকারী হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এটাই রাসূলের শান ও মর্যাদা।

Top