নামাজে তারাবীহের কাযার বিধান কি?

যদি তারাবীহের নামায  ছুটে যায়, তাহলে  ঐ নামাযের কোন  কাযা  নেই।  জামাআতের  সাথে   কিংবা  একাকী  কোনভাবে  এর  কাযা  দিতে  হবে  না।  আর  যদি  কেউ  তারাবীহের   কাযা    আদায়    করে    থাকে    তাহলে    এটা আলাদা    নফল   নামায   রূপে    গণ্য   হবে।    তারাবীহের সাথে     এর    কোন    সম্পর্ক     থাকবে      না।    (তানবিরুল  আবছার ওয়া দুররে মুখতার, ২য় খন্ড, ৫৯৮ পৃষ্ঠা)

নামাযের ফিদিয়া

যাদের  আত্মীয়  স্বজন  মারা  গিয়েছে তারা  অবশ্যই   এ পর্বটি   পড়ে   নিবেনমৃত ব্যক্তির বয়স হিসাব  করে তা  থেকে মহিলার ক্ষেত্রে  ৯  বছর  আর পুরুষের ক্ষেত্রে ১২ বছর নাবালিগ সময় বাদ দিয়ে দিবে। এরপর যত বছর অবশিষ্ট    থাকবে    তা    হিসাব     করে   দেখবে   যে,   কত বৎসর যাবৎ মৃত ব্যক্তি নামায আদায় করেনি বা রোযা রাখেনি,  কিংবা  সর্বাধিক  কতদিনের  নামায  বা  কতটি  রোযা  তার  কাযা   হয়েছিল  তা  ভালভাবে  হিসাব   করে দেখবে।   আর   ইচ্ছে  করলে   মৃত  ব্যক্তির   মোট   বয়স  থেকে না বালিগ কাল  বাদ দিয়ে  অবশিষ্ট  সম্পূর্ণ  বয়স হিসাব  করে    নিবে।   অতঃপর  প্রতি  ওয়াক্ত   নামাযের   জন্য   এক    একটি   (সদকায়ে   ফিতর)   আদায়   করুন।  প্রতিটি সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ হবে আনুমানিক দুই কেজি  থেকে  ৮০  গ্রাম  কম  গম  কিংবা  তার  আটা  বা  তার  সমমূল্য টাকা। দৈনিক  ছয় ওয়াক্ত নামায  হিসাব  করতে   হবে।  তন্মধ্যে   পাঁচ      ওয়াক্ত   ফরয  এবং  এক ওয়াক্ত বিতর যা ওয়াজীব। যেমন ধরুন, দুই কেজি ৮০ গ্রাম    গমের   মূল্য    ১২    টাকা।   তাহলে   এক   দিনের     নামাযের   জন্য ফিদিয়া  আসবে ৭২ টাকা।  ৩০ দিনের নামাযের     জন্য     আসবে       ২১৬০     টাকা।    আর    এক বৎসরের নামাযের জন্য  আসবে  প্রায়  ২৫৯২০ টাকা। এভাবে কোন মৃত ব্যক্তি ৫০ বৎসর যাবৎ কাল নামায না  পড়ে   থাকলে,    তার   নামাযের   জন্য  ১২৯৬০০০  (বার লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার) টাকা ফিদিয়া দিতে হবে। স্পষ্টতঃ প্রত্যেক ব্যক্তি এ বিপুল  পরিমাণ  অর্থ ফিদিয়া স্বরূপ  প্রদান  করার  সামর্থ্য  রাখে  না।  তাই  ওলামায়ে  কিরামগণ    رَحِمَہُمُ   اللہُ   تَعَالٰی    ফিদিয়ার   ক্ষেত্রে    একটি শরীয়াত    সম্মত    হিলা    উদ্ভাবন    করেছেন।    আর    তা  হলো;সে     ৩০    দিনের    নামাযের     কাফ্ফারা    হিসাবে  ফিদিয়ার নিয়্যতে ২১৬০ টাকা কোন ফকীর (ফকীর ও মিসকীনের     সংজ্ঞা     পৃষ্ঠা     নং     ২৮-এ      দেখুন)      এর মালিকানায়   দিয়ে   দিবে।   তাহলে   এতে   ৩০      দিনের নামাযের  ফিদিয়া  আদায়  হয়ে  গেলো।  অতঃপর  উক্ত  ফকীর  ব্যক্তি  ঐ   টাকা   গুলো  দাতাকে  হিবা  (উপহার) স্বরূপ দিয়ে দিবে।  দাতা  টাকাগুলো গ্রহণ করে আবার ৩০  দিনের  নামাযের  ফিদিয়ার  নিয়্যতে  পুনরায়   উক্ত  ফকীরকে দিয়ে দিবে। এভাবে আদান প্রদানের মাধ্যমে সকল নামাযের ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে। ত্রিশ দিনের টাকা দিয়ে যে হিলা করতে  হবে তা বাধ্যতামূলক নয়। ইহা   কেবলমাত্র   বুঝানোর   জন্য   উদাহরণ  স্বরূপ  বলা হয়েছে। সুতরাং কারো হাতে যদি ৫০ বছরের ফিদিয়ার টাকা      নগদ    থাকে,    তাহলে    একবার     প্রদান    করার মাধ্যমেই  ৫০  বছরের  নামাযের  ফিদিয়া  আদায়  হয়ে   যাবে।   আর   ফিতরার   টাকার    হিসাব   গমের   বর্তমান  বাজার দর দ্বারা নির্ধারণ করতে  হবে। এভাবে প্রতিটি  রোযার   জন্যও   একটি   ফিতরা   আদায়   করতে   হবে।  নামাযের   ফিদিয়া আদায় করার পর রোযার ফিদিয়াও একই        পদ্ধতিতে     আদায়     করা     যাবে।      ধনী-গরীব সকলেই    ফিদিয়া    আদায়ের     হিলা      (পন্থা)     অবলম্বন করতে  পারেন।  মৃতের   ওয়ারিশরা   যদি   মৃত    ব্যক্তির পক্ষে ফিদিয়া আদায়ের ক্ষেত্রে উপরোক্ত পন্থা অবলম্বন করে তাহলে তা মৃত ব্যক্তির জন্য বড়ই উপকার হবে। এতে মৃত ব্যক্তিও   اِنْ  شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ  ফরযের বোঝা থেকে   মুক্তি   লাভ   করবে   আর   ওয়ারিশগণও    অধিক  সাওয়াবের    ভাগী    হবে।    কিছু     কিছু    লোক     মসজিদ মাদ্রাসা ইত্যাদিতে  কুরআন শরীফের একটি কপি দান করে    নিজেদের  শান্তনা   দিয়ে   থাকে  যে,   আমরা   মৃত ব্যক্তির সকল   নামাযের ফিদিয়া আদায় করে দিয়েছি।  কিন্তু   এটা  তাদের  ভুল ধারণা মাত্র। (বিস্তারিত  দেখুন: ফতোওয়ায়ে  রযবীয়া  (সংশোধিত)  ,  ৮ম  খন্ড,  ১৬৭  পৃষ্ঠা)   মনে   রাখবেন!   মৃত   ব্যক্তির   নামাযের   ফিদিয়া  ছেলে এবং অন্যান্য ওয়ারিশদের  মতো  কোন সাধারণ মুসলমানও  দিতে  পারবে।   (মিনহাতু   খালিকি  আলাল বাহরির   রায়িক   লিইবনে   আবিদিন,    ২য়    খন্ড,   ১৬০ পৃষ্ঠা)

মৃত মহিলার ফিদিয়া আদায়ের একটি মাসয়ালা

মহিলার হায়িয তথা মাসিক ঋতুস্রাব হওয়ার দিনগুলো যদি জানা থাকে  তাহলে  সে পরিমাণ  দিন,  আর জানা  না    থাকলে  নয় বছরের  পর থেকে প্রত্যেক মাস হতে    তিন দিন করে বাদ দিয়ে অবশিষ্ট দিনগুলোর নামাযের ফিদিয়া  আদায়  করতে হবে। কিন্তু  যতবারই ঐ  মহিলা গর্ভবর্তী  ছিলো  গর্ভকালীন    মাস  সমূহ  হতে  হায়েজের দিনগুলো   বাদ   দেয়া   যাবে    না।   কেননা,   গর্ভকালীন   সময়ে   মহিলার   মাসিক  ঋতুস্রাব  বন্ধ   থাকে।  অনুরূপ মহিলার  নিফাসের দিনগুলো যদি   জানা    থাকে তাহলে প্রত্যেকবার সন্তান  প্রসবের পর সে  পরিমাণ   দিন  বাদ দিয়ে,   আর জানা না   থাকলে  কোন দিন বাদ   না দিয়ে মহিলার     নামাযের      ফিদিয়া      আদায়      করতে     হবে।  নিফাসের দিন  জানা না থাকা    অবস্থায় কোন দিন বাদ না দেয়ার কারণ হলো, নিফাসের সর্ব নি¤œ সময়সীমা শরীয়াত   নির্ধারণ  করেনি।   যেভাবে   হায়েজের  ক্ষেত্রে   তিনদিন  নির্ধারণ  করেছে।  আর নিফাসের  ক্ষেত্রে মাত্র  এক মিনিট নিফাসের রক্ত বের হওয়ার পর পুনরায় তা বন্ধ    হয়ে      পবিত্র     হয়ে     যাওয়ার    সম্ভাবনা    রয়েছে।  (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া  (সংশোধিত)  , ৮ম  খন্ড,  ১৫৪ পৃষ্ঠা)

সায়্যিদ জাদাগণকে নামাযের ফিদিয়া দেয়া যাবে না

আমার   আক্বা   আ’লা    হযরত,   ইমামে   আহলে   সুন্নাত  মাওলানা শাহ্ ইমাম আহমদ রযা খাঁন  رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہِ    কে    সায়্যিদ    জাদাগণ    এবং    অমুসলিমদেরকে  নামাযের ফিদিয়া    দেয়ার  ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা  হলে তিনি   বলেন:  এই   সদকা   (নামাযের  ফিদিয়া)  হযরত  সা‘আদাতে    কিরামের     উপযুক্ত     নয়     এবং     হিন্দু    ও অপরাপর  অমুসলিমরা এই সদকার উপযুক্ত  নয়। এই দু’জনকে দেওয়ার ব্যাপারে প্রকৃতপক্ষে অনুমতি নেই। আর    তাদেরকে    দিলে    আদায়    হবে     না।     মুসলমান মিসকিন নিকটাত্মীয় হাশেমী ব্যতীত  (অর্থাৎ মুসলমান আত্মীয়-স্বজন হাশেমী বংশ ব্যতীত) লোকদেরকে দেয়া দ্বিগুণ সাওয়াব। (ফতোওয়ায়ে  রযবীয়া  (সংশোধিত)  , ৮ম খন্ড, ১৬৬ পৃষ্ঠা)

১০০টি বেতের হিলা

শরয়ী হিলা তথা উপরোক্ত উপায় ও পদ্ধতি অবলম্বনের বৈধতা  কুরআন  হাদীস   ও  হানাফী   মাযহাবের   প্রসিদ্ধ কিতাব    সমূহ     দ্বারা    স্বীকৃত     আছে।    যেমন-     হযরত সায়্যিদুনা আইয়ূব عَلٰی  نَبِیِّنَا وَعَلَیۡہِ الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَامএর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর স্ত্রী  মুহতরমা একদা  তাঁর খিদমতে দেরীতে   উপস্থিত  হলে   তিনি  عَلٰی  نَبِیِّنَا  وَعَلَیۡہِ  الصَّلٰوۃُ وَالسَّلَام  শপথ  করে  বললেন:  “আমি  সুস্থ  হলে  তাঁকে  ১০০টি  চাবুক মারব। সুস্থ হওয়ার পর আল্লাহ্ তাআলা তাঁকে    ১০০টি   বেতযুক্ত     একটি    ঝাড়–   নিয়ে    মাত্র একবার  প্রহার   করার   নির্দেশ   প্রদান   করেন।  যেমন- আল্লাহ্  তাআলা  পবিত্র  কুরআনে  ২৩তম    পারায়  সূরা সোআদ এর ৪৪নং আয়াতে ইরশাদ করেন:

وَ خُذۡ بِیَدِکَ ضِغۡثًا  فَاضۡرِبۡ بِّہٖ وَ لَا تَحۡنَثۡ ؕ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:  তোমার  হাতে  একটি  ঝাড়–     নিয়ে  তা  দ্বারা  প্রহার   কর   আর   শপথ   ভঙ্গ    করিও   না।    (পারা-২৩,  রুকু-১৩)

“ফতোওয়ায়ে    আলমগিরীতে”     হিলার     একটি     স্বতন্ত্র  অধ্যায়ও      রয়েছে,      যার      নাম        “কিতাবুল      হিয়ল”। ফতোওয়ায়ে আলমগীরী এর “কিতাবুল হিয়ল”এ বর্ণিত আছে,  যে হিলা  কারো   হক   নষ্ট  করার জন্য বা  তাতে  সন্দেহ    সৃষ্টি  করার  জন্য  কিংবা  বাতিল    তথা   অসত্য দ্বারা কাউকে ধোঁকা দেয়ার জন্য অবলম্বন করা হয়, সে হিলা মাকরূহ। আর যে হিলা মানুষ হারাম থেকে বাঁচার জন্য কিংবা হালাল বস্তুকে অর্জনের জন্য অবলম্বন করে থাকে তা ভাল  ও বৈধ। এরূপ হিলা (পন্থা) অবলম্বনের বৈধতা  মহান  আল্লাহ্  তাআলার  নিম্নোক্ত  বাণীটি  দ্বারা  প্রমাণিত;

وَ خُذۡ بِیَدِکَ ضِغۡثًا  فَاضۡرِبۡ بِّہٖ وَ لَا تَحۡنَثۡ ؕ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন:  তোমার  হাতে   একটি   ঝাড়–  নিয়ে   তা   দ্বারা প্রহার কর আর শপথ  ভঙ্গ  করিও  না। (পারা-২৩, ৪৪ পৃষ্ঠা) (আলমগিরী, ৬ষ্ঠ খন্ড, ৩৯০ পৃষ্ঠা)

Top