জিজ্ঞাসা–৩১৭: কোন কোন জিনিসের উপস্থিতি থাকলে তাকে পর্দা বা হিজাব বলা যাবে । (পর্দা বা হিজাবের বৈশিষ্ট কী) রেফারেন্সসহ জানালে উপকৃত হব।–রাইয়ান আহমেদ : raiyanibnadam@gmail.com
জবাব: ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়, অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে নারী-পুরুষ উভয়েরই তাদের নিজ নিজ রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্যকে একে অপর থেকে আড়ালে রাখার জন্য ইসলামে যে বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাকে হিজাব বা পর্দা বলা হয়। (আল মু‘জামুল ওয়াসীত ১/১৫৬) সুতরাং এমন হিজাব ব্যবহার করতে হবে, যা এই উদ্দেশ্য পূরণ করে।
নারীর হিজাবের বৈশিষ্ট্যাবলি হচ্ছে:
এক- চেহারা, বক্ষ ও মাথাসহ সারা দেহ ঢেকে রাখা : নারীদের চেহারা, বক্ষ, চুল ও দেহসৌষ্ঠব দর্শনে পুরুষমাত্রই দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এতে তাদের মধ্যে কুচিন্তার উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক। এই শর্তটি আল্লাহ্ তাআলার এ বাণীতে রয়েছে: يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ “তারা যেন তাদের জিলবাবের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়।” (সূরা আল-আহযাব: ৫৯)
দুই- পরিধেয় পোশাক ঢিলেঢালা হওয়া, যেন দেহের মূল কাঠামো প্রকাশ না পায়। কেননা, আঁটসাঁট পোশাক যদিও দেহ ঢেকে রাখে, কিন্তু এর দ্বারা নারী-দেহের স্পর্শকাতর অংশ বোঝা যায় এবং পুরুষের চোখে মোহ জাগায়। আর আল্লাহ্ বলেছেন, وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ“তারা যেন তাদের সজ্জা প্রকাশ না করে”। (সূরা আন-নূর: ৩১)
অন্যত্র বলেছেন, وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى“আর মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সূরা আহযাব: ৩৩)
তিন- পরিধেয় কাপড় এতটা পাতলা ও স্বচ্ছ নাহওয়া, যাতে ভেতরটা দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে নবী ﷺ বলেন,
يكون في آخر أمتي نساء كاسيات عاريات على رؤوسهن كأسنمة البخت العنوهن فإنهن ملعونات ” زاد في حديث آخر :”لا يدخلن الجنة ولا يجدن ريحها وإن ريحها لتوجد من مسيرة كذا وكذا
“আমার উম্মতের শেষ যামানায় এমন কিছু নারী আসবে যারা পোশাক পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ। তাদের মাথার উপরে থাকবে খোরাসানি উটের কুঁজের মত (অর্থাৎ তারা নিজেদের চুলের সাথে অন্য কাপড় বা পাগড়ী বেঁধে মাথাকে বড় করে ফুটাবে)। তোমরা তাদেরকে লানত কর। কেননা তারা লানতের উপযুক্ত।” অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ধিত অংশ হচ্ছে: “তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জান্নাতের সুবাসও পাবে না; যদিও জান্নাতের সুবাস এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে।” [সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিস]
ইবনে আব্দুল বার্র বলেন, নবী ﷺ বুঝাতে চাচ্ছেন, যে সকল নারী এমন হালকা কিছু পরিধান করে যা শরীরকে আচ্ছাদিত না করে ফুটিয়ে তোলে; এমন নারীরা নামেমাত্র পোশাক পরিহিতা, প্রকৃতপক্ষে এরা উলঙ্গ। (সুয়ুতি ‘তানওয়িরুল হাওয়ালিক’ গ্রন্থে (৩/১০৩) ইবনে আব্দুল বার্র থেকে উদ্ধৃত করেছেন)
চার- পোশাক এতটা আকর্ষণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণ এবং সুগন্ধি মাখানো না হওয়া, যাতে পুরুষ আকর্ষিত হয়। কেননা, এজাতীয় পোশাক দ্বারা হিজাবের উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। আবু মুসা আল-আশআরী রাযি. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
قال رسول الله ﷺ :أيما امرأة استعطرت فمرت على قوم ليجدوا من ريحها فهي زانية
রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “যে নারী সুগন্ধি মেখে (পুরুষ) জনসমষ্টির পাশ দিয়ে গমন করে যাতে করে তার সুগন্ধি তাদের নাকে লাগে সে নারী ব্যভিচারী।” (মুসনাদে আহমাদ: ৪/৪১৮)
আসকালনী রহ. বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার কারণ সুস্পষ্ট। যেহেতু সুগন্ধি যৌন কামনাকে চাঙ্গা করে তোলে। আলেমগণ সুন্দর পোশাক, চোখে পড়ে এমন অলংকার, উৎকট সাজগোজ এবং পুরুষদের সাথে অবাধ-মেলামেশাকেও এর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। (ফাতহুল বারী: ২/২৭৯)
পাঁচ- পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া: যেহেতু বেশ কিছু সহিহ হাদিসে পোশাক-আশাকে কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে পুরুষের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারীকে লানত করা হয়েছে। যেমন, একটি হাদিস এরকম–
لعن رسول الله ﷺ الرجل يلبس لبسة المرأة والمرأة تلبس لبسة الرجل
আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ্ ﷺ মহিলার পোশাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীকে লানত করেছেন। (আবু দাউদ: ৪০৯৮)
ছয়- কাফের নারীদের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ না হওয়া:
আমর ইবন শুয়াইব তার বাবা থেকে, আর তার বাবা তার দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, ﷺ বলেছেন,
لَيْسَ مِنَّا مَنْ [ص:تَشَبَّهَ بِغَيْرِنَا، لَا تَشَبَّهُوا بِاليَهُودِ وَلَا بِالنَّصَارَى
“যে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বা মিল রেখে চলে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়, তোমরা ইয়াহূদী ও নাসারাদের সাথে সাদৃশ্য রেখো না।” (চাল-চলন, বেশ-ভূষায় তাদের অনুকরণ করো না)। (তিরমিযী: ২৬৯৫)
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী