জিজ্ঞাসা-৬৪: হুজুর, আপনার এক প্রশ্নের উত্তরে আপনি বলেছিলেন, দুইজন সাক্ষী দিয়ে বিয়ে করলে সেটা শরীয়তের দৃষ্টিতে বিয়ে হয়ে যায়। যদি কথাটা একটু বিশ্লেষণ করতেন তাহলে ভাল হত। আমার আরেকটা জিজ্ঞাসা ছিল, আমার এক মেয়ের সাথে রিলেশন আছে আজ ৭বছরের কাছাকাছি।আমি তাকে পছন্দ করেছি প্রথমত সে অনেক শান্ত একটা মেয়ে,দ্বীতিয়ত আল্লাহর রহমতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে এবং তার বাবা নাই,তার বাবা মায়ের মধ্যে তালাক হয়ে গেছে, পরবর্তিতে তার মায়ের পুনরায় বিয়ে হয়। সে তখন তার মায়ের সাথে এই সংসারে চলে আসে তারপর সে এরপর থেকে অনেক অবহেলিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।তার মায়ের পরে বিয়ে হওয়া স্বামীটাও মারা যায় কিছুদিন আগে। হুজুর, তার এত কষ্টের মধ্যে আমিও যদি কষ্ট দেই তাহলে সে অনেক কষ্ট পাবে।আর আমাদের এই অবস্থায় আমাদের পরিবারকে জানানো অনেক কঠিন।আর আমাদের ইচ্ছা হল যেনা থেকে বাঁচা। হুজুর, তাই আমার প্রশ্ন হল,আমরা কি দুইজন সাক্ষি দিয়ে বিয়ে করতে পারি? এর জন্য কি আমাদের শারীরিক সমস্যা হতে পারে?—নাম না জানাতে ইচ্ছুক।
জবাব:মনে রাখবেন, বিয়ের পূর্বে প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। কারণ ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী কোন পরনারী (বাহ্যিক দৃষ্টিতে সে যত দীনদার হোক না কেন)কোন পরপুরুষের সান্নিধ্যে আসতে পারেনা। দেখা-সাক্ষাৎ বা ফোন, নেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রেমালাপ করা যায়না ।ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে এগুলো একপ্রকার যিনা বা ব্যভিচার। এমনকি মনে মনে কল্পনা করে তৃপ্তি অনূভব করার দ্বারাও অন্তরের যিনা হয়। যা হারাম এবং কবিরা গুনাহ।(মুসলিম ২ /৩৩৬)।
ইবন আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন পুরুষ যেন অপর কোন মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত সফর না করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূল (সাঃ)! অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জে যাবে। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, ‘তবে যাও নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর’।(সহীহ বুখারি;হাদিস নং- ২৭৯৮)।
অপর হাদিসে বলা হয়েছে,
ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, “যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয় । (সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৫৮৬)।
ইসলামি-শরিয়তে ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার একটাই পদ্ধতি–বিয়ে। আর বিয়ের সঠিক সময় এবং সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে উপযুক্ত বয়সে স্ত্রীর ভরণ পোষণের ক্ষমতা অর্জনের পর পিতা-মাতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপযুক্ত পাত্রীকে বিয়ে করা। পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সময়ের পূর্বে অভিবাবকের অজান্তে বিয়ে করা একেবারেই অনুচিত।ইসলামি-শরিয়তে এব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কেননা তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনে। সুতরাং এখন আপনার করণীয় হচ্ছে আপনার অভিবাবকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিয়ে করা এবং সকল প্রকার অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকা।
বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এক্ষেত্রে আপনি আপনার একটি গোপন লালসা ঠিক রাখার জন্য ওই মেয়ের কষ্টের কথা ভাবলেন যার সঙ্গে আপনার নাজায়েয সম্পর্ক সাত বছরের। আর তাদের কষ্টের কথা ভাবলেননা যারা আপনার বাবা-মা, যারা আপনাকে নিস্বাথভাবে ভালোবাসেন,যাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেবল শ্রদ্ধারই নয়,আনুগত্যেরও!
তবে এতদসত্ত্বেও যদি আপনি আপনার নেক সূরতের অন্যায় লালসায় তাড়িত হয়ে কমপক্ষে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করেই ফেলেন, তাহলে যদিও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিশেষ বিবেচনায় বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা সম্পূর্ণ অনুচিত হবে। যা আপনার শারীরিক ও মানসিক ব্যাধির কারণ হতেও পারে।সুতরাং আপনি আখেরাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করে গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন এবং প্রয়োজনে অভিভাবকদের জানিয়ে তাদের পরামর্শক্রমেই বিয়ে করুন। দায় দায়িত্বহীনভাবে গোপনে বিয়ে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয়।
।فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9)
অনুবাদ-বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য স্বকর্ণে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী