শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) ও ইমাম গাযযালী (رحمة الله) এর হাদিস জাল বর্ণনার মিথ্যা অভিযােগ

🖋গ্রন্থনায়ঃ মুফতি মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর

(প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মােচন)


“ প্রচলিত জাল হাদিস ” যা মাওলানা মতিউর রহমান এর লিখিত ৬৮-৭২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী এবং পাকিস্তানের মৌলভী সরফরায খানের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন যে, বড় পীর শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) এর প্রসিদ্ধ কিতাব ‘ গুনিয়াতুত তালিবিন ' এবং ইমাম গাযযালী (رحمة الله) রচিত শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ “ইহইয়াউল উলুমুদ্দীন" এর মধ্যে অসংখ্য জাল হাদিস রয়েছে। লিখেছে, এতগুলাে জাল হাদিস রয়েছে গ্রন্থদ্বয়ে যা গণনা করা অসম্ভব। অপরদিকে আবার প্রচলিত জাল হাদিস গ্রন্থে উভয় বুযুর্গের প্রশংসা করেছেন এবং কারামত বিশিষ্ট বুযুর্গ ওলী আখ্যিায়িত করে। যেমন উক্ত বইয়ের ৬৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ' নিঃসন্দেহে হযরত শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) তার যুগের বড় বুযুর্গ, কারামত বিশিষ্ট ওলী, ইসলাহের পাঠদানকারী এবং একজন সুবক্তা ছিলেন। তবে তিনি রিযাল শাস্ত্রে (হাদীসে) বিজ্ঞ ছিলেন না। হাদীসের সহিহ, দ্বঈফকে মুহাদ্দিসীনে কেরামের ন্যায় পরীক্ষা - নিরীক্ষা করতেন না। 


তথ্যসূত্র-

●আলবানী এ কুফুরী বাক্যটি তার তিনটি গ্রন্থে বলেছেন। 


★আলামা শায়খ সৈয়দ ইউসুফ হাশেম আর - "রেফায়া নসীহত লি ইখওয়ানিনা উলামায়ে নজদ " যা বাংলায় (সনজরী প্রকাশনা আন্দরকিল্লা, চট্রগ্রাম থেকে প্রকাশিত) প্রকাশিত হয়েছে তার বাংলা নাম নজদি উলামা ভাইদের প্রতি নছীহত ' বইয়ের ১৩৯ পৃষ্ঠায় - এ বিষয়ে আলােচনা করেছেন। 

★সে তার “ আহকামুল জানায়েয গ্রন্থেও তাহযিরুল মাজেদ গ্রহে বারবার উল্লেখ করেছেন (তাহযিল মাজিদ - ৬৮ - ৬৯প)

★সে তার হুজ্জাতুন্নবী গ্ৰন্থে আরও অতি বাড়াবাড়ি করেছে (উক্ত বই - ১৩৭পৃষ্ঠা) 

★সে রাসূল (ﷺ) রওযা শরীফের গম্বুজকে মদিনা মনােওয়ারার বিদআত বলে অভিহিত করেছেন। 

●মাওলানা মতিউর রহমানঃ প্রচলিত জাল হাদিস, পৃ - ৬৮। 


ড . আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার হাদিসের নামে জালিয়াতি " বইয়ে উপরের লেখকের কথার সমর্থন করেছে। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ ! আপনারা দেখলেন, তারা তাকিদ দিয়ে লিখেছে গাউছে পাক (رحمة الله) নিঃসন্দেহে বড় বুযুর্গ ও ওলীয়ে কামেল ছিলেন।  তাদের কাছে প্রশ্ন হলাে তারা যদি তাদের কিতাবে জাল হাদিস লিখে থাকে, তাহলে কিভাবে এত বড় বুযুর্গ হয়? অথচ তিনি উক্ত গ্রন্থের ৪৩ পৃষ্ঠায় লিখেছে জাল রেওয়ায়েত বর্ণনা করা কবীরা গুনাহ। কবীরা গুনাহগার সকলের মতে ফাসেক এবং আর এই ব্যক্তি জাহান্নামে শাস্তির উপযুক্ত।  তাহলে গাউছে পাক ও ইমাম গাযযালী (رحمة الله) তারা উভয়ই জাহান্নামী হলেন তাদের ফতােয়ায় ? আবার তারা কিভাবে কারামত বিশিষ্ট ওলী হন। এটা কী একমুখে দু কথা নয়? তারাই হাদিস উল্লেখ করেছে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, “ যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারােপ করবে, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা খুঁজে নেয়।" 


সুতরাং তারা একমুখে দুধরনের ফতােয়া দেয়ার মাধ্যমে জাহান্নামের ঠিকানা বানিয়ে নিলাে। উক্ত পুস্তকে আরও লিখেছে যে, শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) শুধু তার যুগের বড় বুযুর্গ ছিলেন। নাউযুবিল্লাহ ! অথচ বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মােল্লা আলী কারী (رحمة الله) তাঁর উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ “ নুযহাতুল খাওয়াতির ” গ্রন্থে লিখেন -

" নিশ্চয় আকাবির ওলামা থেকে আমার কাছে এ খবর পৌঁছেছে যে, হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) ফিতনা ফ্যাসাদের কারণে যখন খিলাফতের দাবি ছেড়ে দিলেন, তখন আল্লাহ তা'য়ালা এর পরিবর্তে তার ও তার পরবর্তী সন্তানদের মধ্যে কুতুবিয়্যাত - ই - কোবরা (গাউছিয়াত - ই - উযুমা) এর মর্যাদা দান করেছেন। প্রথম কুতুব হলেন সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) মধ্যখানে শুধুমাত্র কুতুব হন, হযরত শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (رحمة الله) আর সর্বশেষ কুতুব হবেন ইমাম মাহদী (আ.)। 


তথ্যসূত্র-

●সহীহ বুখারী, ১/৩৩, হাদিস - ১০৭, এবং ২৮০ পৃ. হাদিস : ১২৯১, হযরত মুগীরা (رضي الله عنه) হতে, মুসলিম ১ / ১০ হাদিস : ৩, হাদিসটি মুতাওয়াতির পর্যায়ের। 

●আল্লামা মােল্লা আলী কারী : নুযহাতুল খাওয়াতির, পৃ - ১৪২। 


অতএব প্রমাণ হয়ে গেল, গাউছে পাক আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) তার যুগে নয় বরং কিয়ামতের পূর্বে ইমাম মাহদী (رحمة الله) আগমনের পূর্ব পর্যন্ত সর্বশ্রেষ্ঠ কুতুবুল আকতাব এবং গাউসুল আযম। শুধু তাই নয়, গাউসে পাক এবং ইমাম গাযযালী (رحمة الله) এর জ্ঞান সম্পর্কে স্বয়ং আশরাফ আলী থানবী এবং পাকিস্তানের সরফরায খান কী পরিমাপ জ্ঞানের বর্ণনা দিবেন, আসুন তাদের মুখে শুনি। 


বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) লিখেন : গাউছে পাক (رحمة الله) বলেন, “ আমার রবের ইজ্জতের শপথ! নিশ্চয় ভাগ্যবান ও হতভাগ্য সকলকে আমার নিকট উপনীত করা হয়। নিশ্চয় আমার চোখের মণি লাওহ-ই-মাহফুযের উপর রয়েছে। আমি তােমাদের সকলের জন্য আল্লাহর দলীল। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর না'ইব বা প্রতিনিধি এবং পৃথিবীতে তাঁর উত্তরাধিকারী। তিনি আরাে বলতেন, মানবজাতি, জ্বীন জাতি এমনকি ফিরিশতাদেরও পীর রয়েছে, আর আমি হলাম সকলেরই পীর (শায়খুল কুল)। 

তথ্যসূত্র-

●আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী : নুযহাতুল খাওয়াতির, পৃ - ১৩২। 


হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গাযযালী (رحمة الله) মিনহাজুল আবেদীনের ভূমিকায় লিখেছেন আল্লাহ তায়ালা এই গ্রন্থ লিখার পূর্বে আমাকে স্বপ্নে (কাশফে) তথ্য এবং নির্দেশনা দিয়েছেন তা অনুসরণ করে আমি যাতে কিতাব লিখি। বান্দাদের ব্যাপারে কিছু বলতে হলে বুঝে শুনে বলা উচিত। আল্লাহর সাথে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে চিন্তা করুন। 


হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত মহান আল্লাহ বলেন, 

“ যে ব্যক্তি আমার ওলীদের সাথে শত্রুতা করলো, সে আমাকে যুদ্ধ ঘােষণার চ্যালেঞ্জ করেছে।" 

●সহিহ বুখারীঃ ৮ / ১০৫ ., হাদিস নং - ৬৫০২। 


তাই এ সমস্ত লােকেরা এ দুই মহান ওলীর পশমের তুল্য নয়, তাই তাদের কথা আমাদের কাছে এক পয়সার মূল্যও নেই। ইমাম তিরমিযী (رحمة الله)  কী জাল হাদিস চিনতেন না ? “ হাদিসের নামে জালিয়াতি " বইয়ের ১৮৪ - ১৮৫পৃষ্ঠায় একটি হাদিস পর্যালােচনা করে প্রমাণ করার জন্য ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন যে, ইমাম তিরমিযী অনেক জাল হাদিসকে নাকি 'হাসান' বা সহিহ বলেছেনন। নাউযুবিল্লাহ অপরদিকে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, "ইমাম তিরমিযীর এগুলাে ঢিলেমীজাত ভূলের উদাহরণ।" নাউযুবিল্লাহ ! 


দেখুন এত বড় একজন ইমাম যিনি কোন হাদিসটি সহিহ হাসান, গরীব হবে তা সাথে সাথে সমাধান দিয়েছেন। তাই তার দ্বারাই বুঝা যায়, তিনি হাদিস শাস্ত্রের উপর কত বেশী পরিশ্রম করেছেন। আর তিনি ইমাম তিরমিযীর সারা জীবনের সাধনার ভুল ধরতে এসেছেন। তাও শতশত বছর পরে তবে হ্যাঁ, ইজতেহাদি দুই একটি হাদিসের ক্ষেত্রে এ রূপ হয়েই থাকে। কোন রাবির কারনে এমনওতাে হতে পারে যে তার নিকট সিকাহ অন্য মুহাদ্দীসের নিকট দ্বঈফ বা পরিত্যাজ্য। তাই বলে তিনি দোষী নন। তাই আমি সর্বশেষ বলতে চাই ইমাম তিরমিযী নিজের গ্রন্থেও মতামত নিজেই পেশ করেন এভাবে, 


“আমি এ কিতাবটি হিযাজ, ইরাক এবং খুরাসানের আলিমগণের নিকট পেশ করি। তারা সকলেই এ গ্রন্থের উপর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং এটিকে উত্তম গ্রন্থ বলে অভিহিত করেন। তারপর বলেন, যার গৃহে আমার এ “আল-জামি" গ্রন্থটি রয়েছে তার গৃহে যেন স্বয়ং নবি করীম (ﷺ) অবস্থান করছেন এবং কথা বলছেন।" 


তথ্যসূত্র-

●ক.আবু ঈসা তিরমিযী, আল - জামে, ১/৩পৃ, দারুল ফিক ইসলামিয়াহরুত লেবানন। 

খ.যাহাবী, সিয়ারু আলামিন আন - নুবালা, ১৩ / ২৭৪। 

গ.ইমাম যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফফায় ২৬৩৪। 

●ইমাম ইবনুল আসির, জামেউল উল ১ / ১৮৯৭। 

●মিফতাহুস সাআদহ ২১২২ - ১২৩। 


ইমাম তিরমিযীর প্রশংসায় মুহাদ্দিসকুল শিরমনি ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেন, 

"আপনি (তিরমিযী) আমার দ্বারা যতটুকু উপকৃত হয়েছেন আমি আপনার দ্বারা তার চাইতেও বেশী উপকৃত হয়েছি।" 

●ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ৭৫৬৫পৃ.


শুধু তাই নয় ইমাম বুখারী (رحمة الله) কিছু হাদিস ইমাম তিরমিযী কিছু এর থেকেও রেওয়ায়েত করেছেন। 


অপরদিকে ইমাম হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) এর সম্পর্কে বলেন,“ হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله) তিনি ওমর ইবনে আলাক (رحمة الله) থেকে শুনে বলেন। ইমাম বুখারী (رحمة الله) তাঁর ইন্তেকালের পর (খুরাসানে) জ্ঞান, পরহেযগারী এবং দুনিয়া বিমুখতার ক্ষেত্রে ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (رحمة الله) - এর অনুরুপ আর কাউকে রেখে যাননি। তিনি অধিক কান্নার জন্য শেষ বয়সে অন্ধ হয়ে গিয়েছেন এবং কয়েক বছর পর্যন্ত অন্ধাবস্থায় জীবন - যাপন করেন।"

●আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযীবুত তাহযীব, ৭ / ৩৬৫পৃ . 


ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) বলেন - “ তিনি ছিলেন হাফিয, আলিম, জামি গ্রন্থের সংকলক সিকাহ এবং বিশ্বস্ততার ব্যাপারে সকলেই একমত।" 

●তথ্যসূত্রঃ

ক. ইমাম যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফফায, ২ / ২৩৪পৃ .      

খ. যাহাৰী, সিয়ারু আলামিন আন্ - নুবালা, ১৩ / ২৭৩। 


কিন্তু আমার বড় আফসোস যে আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর, শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী মত লােকদের জন্য যে সকল ইমাম মুহাদ্দিস তিরমিযির বিশ্বস্ততার উপর একমত হয়েছেন, তাতে তারা সকলে হতে পারেনি। শুধু তাই নয়, 


বিখ্যাত মুহাদ্দীস আবু ই'য়ালা (رحمة الله) বলেন, “ তিনি যে সিকাহ বা বিশ্বস্ত ছিলেন তার উপর ইমাম ও আলেমগণ একমত পােষন করেছেন। তিনি আমানতদারী ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে ছিলেন প্রসিদ্ধ।" 


তথ্যসূত্র-  

●ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই'তিদাল, ৩ / ৬৭৮পৃ।

●ইবনে কাছির, জামিউল মাসানীদ, আল - মুকাদ্দামা, ১ / ১০৯পৃ। 


সম্মানিত পাঠকগণ ! আপনারাই বলুন, আমরা কি গ্রহণযােগ্য ইমামদের অভিমত শুনব নাকি গণ্ড মূর্ণ লেখকদের কথা শুনব ?

Top