মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী
اَلْحَمْدُ لِلّهِ وَكَفَى وَسَلَامٌ عَلَى عِبَادِهِ الَّذِيْن َاصْطَفَى اَمَّا بَعْدُ! فَاَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ. بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيْمِ. وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا. بارك الله لنا ولكم في القرآن العظيم ونفعني وإياكم بما فيه من الآيات والذكر الحكيم وجعلني وإياكم من الصالحين. أقول قولي هذا وأستغفر الله لي ولكم فاستغفروه إنه هو الغفور الرحيم. اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّعَلَى الِ سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ وَّبَارِكْ وَسَلِّمْ
নিজেদের সংশোধন করার উদ্দেশ্যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তিনি আমাদেরকে এখানে জমায়েত হওয়ার তাওফিক দান করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ।
দীনের অন্যতম সৌন্দর্য্য
সুপ্রিয় শ্রোতা! আমাদের এই দীনের অন্যতম সৌন্দর্য্য হল, পবিত্র জীবন যাপন করা, ব্যভিচারমুক্ত জীবন যাপন করা। আবু সুফিয়ান তখনও মুসলিম হন নি, গিয়েছিলেন তৎকালীন পরাশক্তি হিরাক্লিয়াসের দরবারে। হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করেছিল, আরবের নবী তোমাদেরকে কী শেখায়? আবু সুফিয়ান উত্তর দিয়েছিল,
يَأْمُرُنَا بِالصَّلَاةِ وَالصَّدَقَةِ وَالْعَفَافِ وَالصِّلَةِ
তিনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন নামাযের, সদকার। আর নির্দেশ দেন, পবিত্র জীবন যাপনের, ব্যভিচারমুক্ত জীবন যাপনের এবং আত্নীয়তদের সঙ্গে সদ্ব্যহারের। (বুখারী ৫৫৪৯)
দেখুন, এই দীন যখন এসেছে তখন একজন অমুসলিমও মনে করত যে, ব্যভিচারমুক্ত জীবন যাপন-এই দীনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এজন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ لِكُلِّ دِينٍ خُلُقًا وَخُلُقُ الإِسْلاَمِ الْحَيَاءُ
নিশ্চয় প্রত্যেক ধর্মের আলাদা সভ্যতা রয়েছে। আর ইসলামের সভ্যতা হল, লজ্জা। (ইবনু মাজাহ ৪১৮১)
অপর হাদিসে তিনি বলেন, বরং بَلْ هُوَ الدِّينُ كُلُّهُদীনের পুরাটাই হল, লজ্জা। (মাকারিমুল আখলাক ৮৩)
আপনার প্রতি জিজ্ঞাসা
মা-শা-আল্লাহ, আমরা এখানে যারা এসেছি, প্রায় সকলেই সুলুকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখি। আমার ধারণা মতে আজকের এই মজলিসের প্রায় সকলেই তাহাজ্জুদ, মোরাকাবা, মোশাহাদা, মুজাহাদা, যিকর ও শোগলের সঙ্গে কিছুটা হলেও পরিচিত। তাই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, এই পরিবেশে ব্যভিচার সম্পর্কে ওয়াজের দরকার কী? আমরা তো এই গুনাহয় লিপ্ত নই। তাহলে আপনার প্রতি আমার জিজ্ঞাসা- আপনি কি পরনারীর প্রতি কুদৃষ্টি দানে অভ্যস্ত? ইমো, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদিতে অবৈধ চ্যাটিং করেন কিনা? গান শুনতে ভালো লাগে কিনা? পরনারী দেখলে মন ইতিউতি করে কিনা? সিরিয়াল, হিন্দি ফ্লিম কিংবা আরও বিশ্রী কিছুর প্রতি আপনি আসক্ত কিনা? আপনি গোপন গুনাহ যেমন, মাস্টারবেশন (হস্তমৈথুন) বা পর্ণ মুভি দেখায় অভ্যস্ত কিনা? বন্ধু-বান্ধবের আড্ডায় সেক্স্যুয়াল আলোচনা আপনার ভালো লাগে কিনা? অবৈধ প্রেমে জড়িয়ে আছেন কিনা? মেয়েদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা দিতে আপনার ভাল লাগে কিনা?
আর মাস্তুরাতের মজলিসে যারা আছেন তাঁদের প্রতি অতিরিক্ত আরো কিছু জিজ্ঞাসা- আপনি কি বেপর্দায় অভ্যস্ত? আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা? পরপুরুষ দেখার পর আপনার মনে কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় কিনা? সাজগোজ করে রাস্তায়, মার্কেটে, অফিসে কিংবা বেড়ানোর উদ্দেশে আপনি বের হন কিনা? হিন্দি সিরিয়ালের নেশা আপনার আছে কিনা? দেবর বা কাজিনদের সামনে আপনি নির্বিঘ্নে চলে আসেন কিনা?
উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে…
এসব প্রশ্নের উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে এর অর্থ হল, আপনি ব্যভিচারে লিপ্ত। কেননা আপনার আমার নবী ﷺ বলেছেন,
اَلْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالْاُذُنَانِ زِنَاهُمَا الْاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُمَا الْككَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهُمَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهُمَا الخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوِىْ وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَالِكَ الْفَرْجُ اَوْ يُكَذِّبُه
‘দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, যবানের ব্যভিচার হল অশোভন উক্তি, হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।’ (মেশকাত খন্ড : ১, পৃষ্ঠা : ৩২)
আল্লাহর বান্দারা আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, ইবাদতে মন বসে না, গুনাহ ভালো লাগে ইত্যাদি। আসলে বৃষ্টি শরীরকে ভিজিয়ে দেয়, রোদ শরীর থেকে ঘাম বের করে আনে। অনুরুপভাবে এসব বিচিত্র ব্যভিচারের কিছু অনিবার্য ফলাফল আছে। তাহল, নামাযে মনোযোগ না বসা, জায়নামাযে বেশি সময় থাকতে না পারা, নেক কাজ ভালো না লাগা, অন্যান্য গুনাহর প্রতি উত্যুঙ্গ আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।
যাই হোক, আশা করি, এতক্ষণে আমরা অনুধাবন করতে পেরেছি যে, এ গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত আমরা কেউ নই; বরং কোন না কোনভাবে আমরা গুনাহটির সঙ্গে জড়িত।
গুনাহটির মূল কারণ
আল্লাহর বান্দা! গুনাহটির মূল কারণ তো হল, অন্তরে আল্লাহর ভয় না থাকা, আল্লাহর প্রতি মহব্বত না থাকা। তাঁর সামনে উপস্থিতির লজ্জা অন্তরে না থাকা।
পরনারীকে ‘খালাম্মা’ কিংবা ‘বোন’ বলছি, আর অন্তরে রাখছি ভিন্ন চিন্তা! কাজের মেয়েকে মা বলে ডাক দিচ্ছি অথচ অন্তরে লুকিয়ে আছে ভিন্ন কল্পনা! এমনও দেখা যায়, স্কুল ছুটি হলে বুড়ো মিয়া স্কুলের মেয়েদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে! এক পা কবরে চলে গেছে এখনও খবর শোনার আড়ালে অন্তরে লালন করে পরনারীর প্রতি নেশা! এগুলো কি আল্লাহর সামনে উপস্থিতির লজ্জা অন্তরে না থাকার আলামত নয়? আল্লাহ তো বলেছেন,
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَرَادَ أَنْ يُهْلِكَ عَبْدًا، نَزَعَ مِنْهُ الْحَيَاءَ
আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ধ্বংস করতে চান, তার থেকে লজ্জা তুলে নেন। (ইবনু মাজাহ ৪০৫৪)
এজন্য আল্লাহর এক আরেফ বলেন,
فَاستَـحْيِ مِن نَظرِ الإِلَهِ وَقُل لَـهَا — إِنَّ الَّذِي خَلَقَ الظَّلَامَ يَـرَانِـي
লজ্জা কর রবের দৃষ্টিকে। নফসকে বল, যিনি অন্ধকার সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাকে দেখেন।
যৌবন সকলের আছে
মুহতারাম উপস্থিতি, মূলত যৌবন সকলের আছে। দেখুন, রাসুলুল্লাহ ﷺ যেমনিভাবে যুবকদের ব্যাপারে বলেছেন,
يَا شَبَابَ قُرَيْشٍ ، احْفَظُوا فُرُوجَكُمْ وَلا تَزْنُوا ، أَلا مَنْ حَفِظَ فَرْجَهُ فَلَهُ الْجَنَّةُ
হে কুরাইশের যুবকেরা! তোমরা লজ্জাস্থান হেফাজত কর এবং ব্যভিচার করো না। মনে রেখ, যে ব্যক্তি লজ্জাস্থান হেফাজত করবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। (বাইহাকি ৫০১৫)
অনুরূপভাবে বৃদ্ধদের ব্যাপারেও তিনি বলেছেন,
ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، وَلَا يُزَكِّيهِمْ ، وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ، شَيْخٌ زَانٍ ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ
তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের তিনি পবিত্রও করবেন না। তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছে- ১. বৃদ্ধ ব্যভিচারী ২. মিথ্যাবাদী শাসক এবং ৩. অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি। (মুসলিম ১৫৯)
অন্যথায় বৃদ্ধ লোকটির নাটক-সিনেমার প্রতি এত আসক্তি কেন! কেন সংবাদ দেখার বাহানায় টেলিভিশন থেকে মুখ ফেরাতে চায় না! কেন স্কুল ছুটি হলে দোকানের ব্যাঞ্চে বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে! তাছাড়া বুড়ার জন্য বুড়িও তো আছে!
উম্মতের প্রতি রাসুলুল্লাহ ﷺ-এর উইশ
এজন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ উম্মতের প্রতি উইশ ব্যক্ত করেছেন, তিনি উম্মতের সকলের কামনা করেছেন তারা যেন ব্যভিচার থেকে দূরে থাকে। তিনি বলেন,
مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنُ لَهُ الْجَنَّةَ
কে এই অঙ্গীকার করবে যে, সে তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্ত্তর এবং তার দু’পায়ের মধ্যস্থিত বস্ত্তর জিম্মাদার হবে? তবে আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব। (বুখারী ৬১৩৬ )
যৌবন সম্পর্কে পুরুষদের চাইতে নারীরা বেশি সতর্ক থাকতে হয় কেন?
পবিত্র জীবন তথা ব্যভিচারমুক্ত জীবন যাপনের প্রচেষ্টা পুরুষদের চাইতে নারীদের মাঝে এক্টু বেশি থাকতে হয়। কেননা, নারী সাধারণত এক্টু সহজ-সরল হয়। মনে করে, অমুক আমাকে তো মেয়ে হিসেবে দেখে। ছেলেটা তো আমাকে খালা ডাকে। লোকটি তো আমাকে বোন ভাবে। এই জাতীয় ভাবনার কারণে পরপুরুষের সামনে অনায়াসে চলে যায়। কিন্তু সে তো জানেনা, ওই পুরুষটি যে তাকে এই পবিত্র শব্দগুলোর আড়ালে মনে মনে ভোগ করে যায়। দুনিয়ার চোখে সে সাদা মানুষ থাকে, কিন্তু অন্তরে লুকিয়ে রাখে ব্যভিচার। আমাদের শায়খের ভাষায়; বাহ্যিক দৃষ্টিতে ‘বান্দা’,কিন্তু অন্তর অনেক ‘গান্দা’। গান্দা মানে দুর্গন্ধময়।
তাছাড়া একজন নারী বেপর্দায় চললে বহু পুরুষের গুনাহর ‘কারণ’ সে হয়। যেমন ধ্রুন, একজন নারী বাসা থেকে বের হল। গেল আধা মাইল। যাওয়ার পথে তার প্রতি একশ’ পুরুষ কুদৃষ্টি দিল। তাহলে এর অর্থ হল, সে একজন। তবে তার কারণে চোখের ব্যভিচার ও মনের ব্যভিচারে লিপ্ত হল একশ’ জন। এভাবে একশ’ পুরুষ গোপন গুনাহ করে নিল শুধু তার কারণে।
এই জন্য যে নারী বেপর্দায় চলে তার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ ﷺ দুই বার বলেছেন, সে এমন, সে এমন অর্থাৎ সে ব্যভিচারিণী। রাসুলুল্লাহ ﷺ -এর ভাষায়-
كُلُّ عَيْنٍ زَانِيَةٌ ، وَالْمَرْأَةُ إِذَا اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ بِالْمَجْلِسِ فَهِيَ كَذَا وَكَذَا
প্রতিটি চোখ ব্যভিচারী। কোন মহিলা যদি পারফিউম লাগিয়ে কোন মজলিসের পাশ দিয়ে যায় তবে সে এমন, সে এমন অর্থাৎ ব্যভিচারিণী।(তিরমিযী ২৭৮৬)
তাহলে বুঝা গেল, ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি থেকে সতর্ক থাকার গুরুত্ব পুরুষদের চাইতে নারীদের জন্য বেশি জরুরি।
নারীদের কাছ থেকে আলাদা বাইয়াত
আর এই জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে আল্লাহ তাআলা আলাদাভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি নারীদের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করুন, তারা যেন ব্যভিচার না করে। এমনিতে তো রাসুলুল্লাহ নারীপুরুষ সকলের কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করতেন। বাইয়াত মানে কমিটম্যান্ট বা অঙ্গীকার। তিনি কখনও বাইয়াত নিতেন এ মর্মে যে, শিরক করা যাবে না, নামায কায়েম করবে ইত্যাদি। এভাবে তিনি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বাইয়াত নিতেন। পুরুষদের কাছ থেকে নিতেন আর পর্দার আড়াল থেকে নারীদের কাছ থেকেও নিতেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনি স্বতন্ত্রভাবে নারীদের কাছ থেকে বাইয়াত নিন যে, তারা যেন ব্যভিচার না করে। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا جَاءَكَ الْمُؤْمِنَاتُ يُبَايِعْنَكَ عَلَىٰ أَن لَّا يُشْرِكْنَ بِاللَّهِ شَيْئًا وَلَا يَسْرِقْنَ وَلَا يَزْنِينَ وَلَا يَقْتُلْنَ أَوْلَادَهُنَّ
হে নবী, ঈমানদার নারীরা যেন আপনার কাছে এসে আনুগত্যের বাইয়াত নেয় যে, তারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, চুরি করবে না, ব্যভিচার করবে না। (সূরা মুমতাহিনা ১২)
লজ্জাবতী নারীর প্রশংসা আল্লাহ নিজে করেছেন
লজ্জা তো থাকবে নারীপুরুষ সকলের মাঝে। কিন্তু নারীর মাঝে এটা থাকতে হয় আরো বেশি পরিমাণে। এজন্যই তো বলা হয়, লজ্জা নারীর ভূষণ। যার কারণে এক লজ্জাবতী নারীর প্রশংসা আল্লাহ কোরআন মজিদে করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ পুরুষদের জন্য এরকম স্বতন্ত্র প্রশংসা করেন নি। হযরত শোয়াইব আ. এর দুই মেয়ে ছিল। তাদের একজনকে তিনি মুসা আ. এর নিকট কোনো এক কাজে পাঠিয়েছিলেন। তখন আসা-যাওয়ার মধ্যে তার লজ্জা এতটাই ছিল যে, আল্লাহ প্রশংসা করে বলেন,
فَجَاءَتْهُ إِحْدَاهُمَا تَمْشِي عَلَى اسْتِحْيَاءٍ قَالَتْ إِنَّ أَبِي يَدْعُوكَ
বালিকাদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত পা ফেলে ফেলে তার কাছে আগমন করল। বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন। (সূরা কাসাস ২৫)
মুফাসসিরে কেরাম লিখেছেন, যে নারী পর্দার সাথে চলবে, আপাদমস্তক লজ্জাবতী হবে তার জন্যও এ প্রশংসা প্রযোজ্য হবে। মা-বোনেরা, একটু ভাবুন তো, আপনার প্রশংসা যদি আরশ থেকে হয়, তখন না জানি আল্লাহ আপনার মাকাম কোথায় রেখেছেন!
ব্যভিচারের অন্যতম কারণসমূহ
সম্মানিত দীনি ভাই ও বোনেরা, ব্যভিচার সাধারণত তিনটি কারণে হয়। আমরা এখন সেই কারণগুলো জানব এবং পাশাপাশি সেগুলোর প্রতিকার ও চিকিৎসা হিসেবে আমাদের মাশায়েখগণ যা বলেছেন, তা সম্পর্কেও কিছুটা শুনব। যাতে করে আমল করতে পারি। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন।
এক. কুদৃষ্টি এবং পর্দাহীনতা
ব্যভিচারের অন্যতম কারণ পুরুষদের কুদৃষ্টি এবং নারীদের পর্দাহীনতা। আল্লাহ পুরুষদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন দৃষ্টির হেফাজত করে। আর নারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন পর্দার সঙ্গে চলে। ‘পর্দা’ মানে নিজেকে লুকিয়ে রাখা। রাসুলুল্লাহ বলেছেন, المرأة عوْرةٌ নারী গোপন জিনিস। (তাবরানী ৩০৩৬) কোনো কোনো মুহাদ্দিস এর ব্যাখ্যায় বলেন, أي وجه المرأة عورة অর্থাৎ, নারীদের চেহারা গোপন জিনিস।
আমাদের এজাতীয় মিথ্যা দাবী
আপনি বলতে পারেন, অমুক ব্যক্তি পরনারীর সঙ্গে কথা বললে কী হবে, তার মন ভাল। আমার মেয়ে বেপর্দায় চললে কী হবে, তার মন পবিত্র। গুনাহর চিন্তা তাদের মাথায় আসে না। অথচ কোরআন ও হাদিস সামনে আনলে বুঝা যায়, আমাদের এজাতীয় দাবী মিথ্যা। কেননা, কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন,
অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন। (সূরা শামস 8)
এ আয়াতের তাফসিরে মুফাসসিরে কেরাম লিখেন, যেহেতু মানুষকে অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করা হয়েছে, সেহেতু মানুষ নেক পরিবেশে নেক আমলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। গুনাহর পরিবেশে গুনাহর প্রতি আগ্রহবোধ করে। আর কুদৃষ্টি ও পর্দাহীনতা ধীরে ধীরে দুর্ঘটনার পরিবেশ তৈরি করে। মানুষকে ধীরে ধীরে ব্যভিচারের কাছে নিয়ে যায়। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেছেন, وَلاَ تَقْرَبُواْ الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاء سَبِيلاً তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা বনী ইসরাইল ৩২)
এজন্যই রাসুলুল্লাহ পুরুষদের কুদৃষ্টি সম্পর্কে বলেছেন, اَلنَّظْرَةُ سَهْمٌ مَسْمُوْمٌ مِنْ سِهَامِ اِبْلِيْسَ কুদৃষ্টি ইবলিসের বিষমিশ্রিত তীর। (মুসনাদুশ শিহাব ২৭৯)
আর পর্দাহীন-নারী সম্পর্কে বলেছেন, فَاِذَا خَرَجَتْ اِسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ এরা যখন বের হয় শয়তান চুপিসারে এদেরকে দেখে। (তাবরানী ৩০৩৬) যাতে পরপুরুষকে এদের মায়াজালে বন্দি করে নিতে পারে।
কুদৃষ্টি এবং পর্দাহীনতার চিকিৎসা
চিকিৎসা অনেক। আমাদের মাশায়েখগণ খুলে খুলে বলেছেন। তন্মধ্য থেকে আজ আপাতত তিনটি চিকিৎসার কথা বলছি। আল্লাহ বক্তা-শ্রোতা সকলকে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন। হিম্মত করুন। আমরা হিম্মত করলে আল্লাহর তাওফিক আমাদের সঙ্গী হবে। মনে রাখবেন, হিম্মত ছাড়া কোনো কাজ হয় না; দুনিয়ারও না, আখেরাতেরও না। হিম্মত করে চেষ্টা শুরু করলে কাজ হবে-এটা আল্লাহ তাআলার ওয়াদা। তিনি তো আমাদেরকে প্রতিশ্রিতি দিয়ে বলেছেন, وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। (সূরা আ’নকাবুত ৬৯)
১. দৃষ্টির হেফাজত করুন
দৃষ্টির হেফাজত করুন। এটি পবিত্র জীবন যাপনের জন্য কোরআনি-ব্যবস্থাপত্র। এই ব্যবস্থাপত্র কেবল পুরুষের জন্য এমনটি নয়। বরং পুরুষ-নারী উভয়ের জন্য এটি প্রযোজ্য। দেখুন, আল্লাহ তাআলা পুরুষদেরকে যেমনিভাবে বলেছেন,
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। অর্থাৎ, ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাকে। (সূরা নূর ৩০)
এর পরের আয়াতেই তিনি অনুরূপ নির্দেশ নারিদেরকেও দিয়েছেন।
وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। অর্থাৎ, ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাকে। (সূরা নূর ৩১)
সুতরাং বুঝা গেল, ব্যভিচার থেকে নিজেকে রক্ষা করলে দৃষ্টির হেফাজত করতে হবে। এমন নয় যে, এটা কেবল পুরুষরা করবে; বরং নারীদের জন্য এই ব্যবস্থাপত্র সমভাবে প্রযোজ্য।
২. কয়েক মিনিট মোরাকাবা করুন
আমাদের শায়েখ মাহবুবুল ওলামা হযরত মাওলানা পীর যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী মুজাদ্দেদী দা. বা. বলেন, প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন- هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’
এরপর নিজের নফসকে বুঝাবেন যে, দেখো, তুমি আল্লাহর দৃষ্টি থেকে কোনোভাবেই ভাগতে পারবে না। তুমি যখন পরনারীর প্রতি তাকাও তখনও তোমার প্রভু তোমাকে দেখেন। আর আপনি যদি নারী হন, তাহলে নফসকে বুঝাবেন যে, দেখো, তুমি আল্লাহর দৃষ্টি থেকে কোনোভাবেই পালাতে পারবে না। যখন তুমি পরপুরুষের সামনে যাও তখনও তোমার মালিক তোমাকে দেখেন। এটা তো তার মহান ধৈর্যের পরিচয় যে, তিনি তোমাকে পাকড়াও করেন না। কিন্তু তুমি যদি এভাবে চলতে থাক তবে তিনি কতকাল ধৈর্য ধরবেন! এভাবে নিয়মিত কিছুদিন করতে পারলে -ইনশা আল্লাহ- ধীরে ধীরে আল্লাহর সান্নিধ্যের সার্বক্ষণিক অনুভূতি অন্তরে বসে যাবে এবং এই রোগ থেকে বের হওয়া সহজ হয়ে যাবে।
৩. নিজেকে সাজা দিন
পুরুষ কুদৃষ্টি থেকে এবং নারী বেপর্দা থেকে বাঁচার জন্য আরেকটি চিকিৎসা হল, নিজেই নিজের জন্য সাজা নির্ধারণ করা যে, কুদৃষ্টি হয়ে গেলে আমি নিজেকে এই শাস্তি দিব এবং পরপুরুষের সামনে গেলে এই শাস্তি দিব। যেমন, নির্জনে গামছা বা ওড়না পেঁচিয়ে চাবুকের মত বানাবেন। তার তা দিয়ে নিজের পেটে বা পিঠে কয়েকটি আঘাত করুন। তারপর ভাবুন, যখন কেয়ামতের দিন ফেরেশতারা চাবুক মারবে তখন কী অবস্থা হবে? এ পদ্ধতিতে কয়েকদিনের মধ্যেই কুদৃষ্টির চিন্তা এবং বেপর্দার অভ্যাস খতম হয়ে যাবে-ইনশা আল্লাহ।
শাইখুল হাদিস জাকারিয়া রহ. তো কঠিন কথা বলেছেন। তিনি বলেন, যে পুরুষ পরনারীর প্রতি কুদৃষ্টি দানে অভ্যস্ত, যে নারী বেপর্দায় অভ্যস্ত তার ব্যাপারে আমাদের মাশায়েখগণের অভিজ্ঞতা হল, সে ঈমান নিয়ে মরতে পারে না।
আমাদের মাশায়েখগণ আরো বলেন, যে পুরুষ নিজেকে কুদৃষ্টি থেকে হেফাযত করতে চায়, যে নারী চায় যে, সে পর্দায় চলবে সে নিউইয়র্ক শহরেও তা পারবে। পক্ষান্তরে যে তা চায় না, সে হারাম শরীফের ভেতরেও তা পারে না। এজন্য যারা হজে গিয়েছেন, তারা দেখে থাকবেন, হারাম শরীফের মত পবিত্র স্থানেও কত নারী বেপর্দায় চলে এবং কত যুবক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদেরকে দেখে এবং সকলের সামনে মনে মনে গোপন গুনাহ করে!
দুই. নির্জন অবস্থান
প্রিয় উপস্থিতি, ব্যভিচারের দ্বিতীয় কারণ হল, নির্জন অবস্থান। কারণ, নির্জনতার সুযোগ নিয়ে শয়তান নানা ধরণের চিন্তা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে থাকে। হ্যাঁ, ইবাদতের উদ্দেশ্যে নির্জনতা অবলম্বনে অসুবিধা নেই। কিন্তু বিনা কাজে নির্জনতা অবলম্বন মানে শয়তানকে সুযোগ করে দেয়া। এজন্য আমাদের মাশায়েখগণ বিশেষত যুবকদেরকে উপদেশ দিয়ে থাকেন, তোমরা নির্জনে অবস্থান করবে না। এমনকি তাঁরা বলে থাকেন, অবিবাহিতরা বাথরুমেও বেশি সময় কাটাবে না। গাইরে মাহরাম কারো সঙ্গে নির্জনে সময় অতিবাহিত করবে না। গাইরে মাহরামের সঙ্গে একাকী সফর করবে না।
পরিতাপের বিষয় হল, অথচ এ ব্যাপারে এমনকি দীনদার ফ্যামিলিতেও শীথিলতা দেখা দেয়। বিশেষত দেবর-ভাবী, শালী-দুলাভাই এবং কাজিনদের ক্ষেত্রে। দেবরের সঙ্গে বাবার বাড়িতে যাওয়া, ডাক্তারের কাছে যাওয়া, দুলা ভাইয়ের সঙ্গে ঘুরতে বের হওয়া, বাড়ির কাজের লোক বা মহিলা রেখে স্ত্রী স্বামীকে রেখে স্বামী স্ত্রীকে রেখে বাইরে চলে যাওয়া, টিউটর ও ছাত্রীর একান্তে নির্জনবাস ও পড়াশোনা– এসব তো এখন সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। যার কারণে এদের মাঝেই বিপর্যয় বেশি ঘটে। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ
কোনো পুরুষ যখন কোন স্ত্রীলোকের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করে তখন এদের সঙ্গে অবশ্যই তৃতীয় জন থাকে শয়তান। (তিরমিযী ১১৭২)
এ রোগের চিকিৎসা
নির্জনতার মুহূর্তে ব্যভিচারের চিন্তা আসলে তার চিকিৎসা কী? আসলে ইতিপূর্বে যে চিকিৎসাগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো এখানেও প্রযোজ্য। তবুও আমাদের মাশায়েখগণ এজাতীয় রোগের আরো কিছু চিকিৎসার কথা বলেছেন। সেখান থেকে আরো তিনটি বলে দিচ্ছি। আল্লাহ বক্তা-শ্রোতা সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
১. চিন্তা করুন
আল্লাহ তাআলা বলেন,
اَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِيْنَ آمَنُوْا اَنْ تَخْشَعَ قُلُوْبُهُمْ لِذِكْرِ اللهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ
‘যারা ঈমান আনে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে ও যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে বিগলিত হওয়ার সময় কি আসে নি?’ (সূরা হাদীদ ১৬)
আমাদের শায়েখ ও মুর্শিদ মাহবুবুল ওলামা মাওলানা পীর যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী মুজাদ্দেদী দা. বা. বলেন, নির্জনতার মুহূর্তে যখনই গুনাহ করতে মনে চাইবে তখনই সঙ্গে সঙ্গে আয়াতটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা করবে। এরপর নিজেকে সম্বোধন করে বলবে, ‘ঈমানদারের কি এখনও আল্লাহকে ভয় করার সময় হয় নি?’ পাশাপাশি মনে মনে আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করতে থাকো। এতে আল্লাহতাআলা নিজের ভয় তোমার অন্তরে তৈরি করে দিবেন এবং সত্যিকারের তাওবা আপনার নসিব হবে।
২. সময়ের মূল্য দিন
শাইখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী দা. বা. বলেন, সময়কে গুনাহর মধ্য দিয়ে কাটানোর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কখনও অবসর সময় কাটাবে না। যখনই নির্জনে থাকবে, অবসর থাকবে তখনই নিজেকে কোনো কাজে ব্যস্ত করে নিবে। কাজটি দুনিয়ার বৈধ কাজ হলেও অসুবিধা নেই। তবুও আল্লাহর নাফরমানির ভেতর সময় নষ্ট করো না। আর যদি কাজটি হয় ভাল বই পড়া, জিকির-মোরাকাবা করা, তেলাওয়াত করা তাহলে তো সবচে’ ভাল। তিনি বলেন, আমাদের শায়েখ ও মুর্শিদ ডা. আব্দুল হাই আরেফী রহ. বলতেন, ‘কাজের ভেতরে কাজ ঢুকিয়ে দাও। অবসর আছো তো কোনো কাজের প্রোগ্রাম করে নাও। হাতে একটি কাজ আছে তো আরেকটি কাজের প্রোগ্রাম বানিয়ে নাও।’
দেখুন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغُ
দুটো নিয়ামত এমন যে দুটোর বিষয়ে বহু লোক ধোঁকায় নিপতিত- স্বাস্থ্য এবং অবসর। (তিরমিযী ২৩০৭)
অতএব, সময় নষ্ট করবেন না। জীবনের খণ্ড খণ্ড অংশগুলোর নামই তো সময়। সুতরাং সময় নষ্ট করা মানে জীবন নষ্ট করা। আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দিন। আমীন।
৩.পরিবেশ বেছে চলুন
এটাই সবচেয়ে বড় সতর্কতা যে, যেসব পরিবেশে ব্যভিচারের কল্পনা আসে, সেসব পরিবেশ থেকে দূরে থাকা। আমাদের শায়েখ বলেন, সবসময় মনে রাখবে, নারীরা আমাদের সাথে পর্দা করবে না, আমাদেরকেই তাদের সঙ্গে পর্দা করতে হবে। সুতরাং নিজের বাসায়ও ঢোকার সময় গলা খাঁকারি দিয়ে বা আওয়াজ করে ঢুকবেন। আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের ঈমান বাঁচানোর বিনীত প্রার্থনা করবেন। । কবির ভাষায়-
ميں امتحان كے قابل نہيں مرے مولى
مجهے گناه كا موقع نصيب نہ كرنا
‘মাওলা আমার! আমি পরীক্ষার যোগ্য নই,
আমাকে গুনাহ করার সুযোগ দিবেন না।’
তিন. ইন্টারনেটের অপব্যবহার
মুহতারাম উপস্থিতি, আজ আমাদের নিয়ন্ত্রক আমরা নই। আমরা আজ মনস্তাত্বিকভাবে ইহুদি-খ্রিষ্টানদের হাতে বন্দি। আমাদের যুবকদের হাতে তারা স্মার্ট ফোন তুলে দিয়েছে। আমাদের শায়খের ভাষায়, ‘এটা সেল ফোন নয়; হেল ফোন (hell phone)। hell অর্থ জাহান্নাম। এটা ইন্টারনেট নয়; enter net মানে জালে প্রবেশ করানো। এটা চ্যাটিং নয়; চিটিং (cheating) বা প্রতারণা।’ আমি এগুলোর সঠিক ব্যবহারের সমালোচনা করছি না। আর না এগুলোর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছি। তবে আমি বুঝাতে চাচ্ছি, এগুলোর অপব্যবহারের ভয়াবহতা। যুবকরা আজ রাত কাটায় এসবের সঙ্গে। কখন যে রাত কেটে যায়, টেরই পায় না। ফেসবুক নিয়ে বসে, ম্যাসেঞ্জারে পরনারীর সঙ্গে চ্যাট করে, চিন্তা করে, একটু পরে ঘুমিয়ে পড়ব, এই আর অল্প কিছুক্ষণ…কিন্তু পারে না। এভাবে কখন যে রাত পলপল করে শেষ হয়ে যায়…১০ টা থেকে ১১ টা, ১১ টা থেকে ১২ টা ০১ টা ০২ টা ০৩ টা… তারপর ফজরের আযানের ডাক শুনে ঘুম থেকে উঠে না; বরং আযানের ডাক শুনে ঘুমাতে যায়। কিন্তু ঈমানদার তো, তাই মাঝে মাঝে মন খচখচও করে। কিন্তু কী করবে! পারে না। কারণ, হাতে যে শেকল। সে যে এই শিকলে বন্দী হয়ে আছে। আর এই শিকলের নাম হল, ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন। আর এটাই তারুণ্যকে, যুবসমাজকে ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে। আল্লাহর কাছে পানাহ চাই, এমনও শুনেছি, এখনকার যুবক-যুবতীরা নাকি এখন ইমো, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদির মাধ্যমেও সেক্স করে, ব্যভিচার করে!
অভিবাকদের বলছি…
এজন্য অভিবাকদের উদ্দেশ্য বলছি। আপনার সন্তান কী করে, তা একটু তদারকি করবেন। মাঝে মাঝে তার দরজার নীচে দেখবেন, গভীর রাতে তার রুম থেকে কম্পিউটারের স্ক্রিনের আলো আসে কিনা! ল্যাপটপ, মোবাইল এসবের পেছনে মাত্রারিক্ত সময় দেয় কিনা? প্রয়োজনে স্মার্ট ফোন কিনে দিতে বললে শর্ত জুড়ে দিবেন যে, ঠিক আছে, কিনে দিব তবে সেটে পাসওয়ার্ড দিতে পারবা না। তাকে বলবেন, আমি মাঝে মধ্যে তোমার সেটে কী আছে- দেখব। মনে রাখবেন, এটা গোয়েন্দাগিরি নয়। বরং এটা তরবিয়তেরই অংশ। আপনি এমনটি করবেন, আপনার সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য, তার জীবন পবিত্র হিসেবে তৈরি করার জন্য।
এ রোগের চিকিৎসা
মুহতারাম উপস্থিতি, যারা ইন্টারনেটে আসক্ত। গান, সিনেমা, সিরিয়াল ও এজাতীয় নোংরা বিষয়ের নেশায় নেশাগ্রস্থ, তাদের জন্য চিকিৎসা কী হতে পারে- আমাদের মাশায়েখগণ তাও বলে দিয়েছেন। তাছাড়া ইতিপূর্বে আমরা দুই রোগের জন্য যে ছয়টি চিকিৎসার কথা শুনেছি, সেগুলোও এখানে প্রযোজ্য। তবুও এ রোগের জন্য আরো তিনটি ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দিচ্ছি। আল্লাহ আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
১. মাঝে মাঝে জ্বলন্ত আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাববেন…
মাঝে মাঝে গ্যাসের চুলার সামনে দাঁড়াবেন। আগুন দেখবেন। আল্লাহ বলেছেন, أَفَرَأَيْتُمُ النَّارَ الَّتِي تُورُونَ‘তোমরা যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি?’ (সূরা ওয়াকিয়া ৭১)
সুতরাং আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে ভাববেন, এই দুনিয়ার আগুনের ইন্ধন তো লাকড়ি, গ্যাস ইত্যাদি। এর উত্তাপ যদি এত বেশি হয় যে, আমি এক মিনিটও সইতে পারব না। তাহলে এই গোপন গুনাহর কারণে আমি যে নিজেকে ওই জাহান্নামের উপযুক্ত করে নিচ্ছি, وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُযে আগুনের ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, সেই আগুন আমি সৈহ্য করব কিভাবে! এভাবে চিন্তা করলে গোপন গুনাহর ভূত ধীরে ধীরে নেমে যাবে, ইনশা আল্লাহ।
২.মাঝে মাঝে কবর জেয়ারত করবেন
মাঝে মাঝে কবর জেয়ারত করবেন। এর দ্বারা দিল নরম হবে। গুনাহর প্রতি আকর্ষণ কমে যাবে। আমলের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যাবে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
فَإِنَّهَا تُرِقُّ الْقَلْبَ ، وَتُدْمِعُ الْعَيْنَ ، وَتُذَكِّرُ الآخِرَةَ
কবর জিয়ারত অন্তরকে নরম করে, চোখের পানি বের করে এবং আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (মুসতাদরাক হাকিম ১৫৩২)
৩. পরিবেশ পাল্টান
গুনাহর পরিবেশ থেকে দূরে থাকুন। গুনাহর পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে রাখা এটা নবীগণের একটি তরিকা। দেখুন, হযরত ইউসুফ আ. জুলাইখার কাছে ছিলেন। জুলাইখা তাঁকে গুনাহর প্রতি আহবান করেছিল। গোপন গুনাহর পরিবেশও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ইউসুফ আ. এই পরিবেশকে পছন্দ করলেন না। তিনি গুনাহর পরিবেশ -যদিও তা ছিল আরাম-আয়েশের- বর্জন করে জেলখানার পরিবেশ বেছে নিলেন। তবুও গুনাহর পরিবেশে থাকাটাকে তিনি পসন্দ করেন নি। বরং তিনি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করেছিলেন,
رَبِّ السِّجْنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِي إِلَيْهِ
হে আমার রব! তারা আমাকে যে কাজের দিকে আহবান করে, তার চাইতে আমি কারাগারই পছন্দ করি। (সূরা ইউসুফ ৩৩)
সুতরাং আমরাও এটা করব। গুনাহর পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে রাখব। বাসায় টিভি ভিসিআরের পরিবেশ পাল্টিয়ে সেখানে তালিমের পরিবেশ, আমলের পরিবেশ, তেলাওয়াতের পরিবেশ, জিকির-মুরাকাবা, দোয়ার পরিবেশ গড়ে তুলব। এর কারণে দুনিয়ার কিছু মজা তো ছাড়তে হবে। কিন্তু ছাড়বেন কার জন্য? আল্লাহর জন্য। আল্লাহর জন্য গুনাহর মজা ছাড়তে পাড়লে এর পরিবর্তে তিনি ঈমানের মজা দান করবেন। আর ঈমানের মজা তো এমন মজা যার জন্য কত মানুষ তাদের জানও দিয়ে দিয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের ইতিহাসে যার প্রমাণ হাজার হাজার আছে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَنْ تَرَكَهَا مِنْ مَخَافَتِىْ اَبْدَلْتُهُ إِيْمَاناً يَجِدُ حَلَاوَتَه فِىْ قَلْبِه
যে আমার ভয়ে এগুলো ত্যাগ করবে, আমি তার অন্তরে এমন ঈমান সৃষ্টি করব যে, সে তার স্বাদ পাবে। (আততারগীব ওয়াততারহীব ২/৩৭)
অভিবাবকদের উদ্দেশ্যে আরেকটি কথা…
আমাদের সমাজের একটা নতুন ট্র্যান্ড হল, ছেলে মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যাওয়ার পরেও অভিবাবকরা যথা সময়ে তাদেরকে বিয়ে-শাদি দেয় না। ফলে অবৈধ প্রেমসহ নানা ধরণের গোপন গুনাহয় তারা জড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে বয়সও বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে দেখা যায়, আর পাত্র বা পাত্রী খুঁজে পায় না। তখন মনে করে বসে, অমুক তাবিজ করেছে, অমুক বিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। এভাবে গীবত, অপবাদ, বদধারণাসহ আরো কত গুনাহ তৈরি হতে থাকে। এজন্য আমার সঙ্গে যারা মহব্বত রাখেন, বিশেষত তাদের প্রতি জোরালো তাগিদ দিচ্ছি যে, ছেলে মেয়ে বিশেষ করে মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে বিয়ে দিয়ে দিতে দেরি করবেন না। মনে রাখবেন, আপনার এ জাতীয় উদাসীনতার কারণে যদি আপনার মেয়ে কিংবা ছেলে গোপন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তাহলে এই গুনাহর ভার আপনার উপরও পড়বে। এর জন্য আপনাকেও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
গোপন গুনাহর সবচেয়ে বড় ভয়াবহতা
শাইখুল হাদিস মাওলানা যাকারিয়া রহ. শাইখ আবু আব্দুল্লাহ উন্দুলুসী রহ. সম্পর্কে লিখেছেন। তিনি ছিলেন সমকালীন বিখ্যাত ওলী, মুহাদ্দিস ও কালের জগদ্বিখ্যাত মনীষীদের অন্যতম। তার সহজ পরিচয়ের জন্য এতটুকু বলাই যথেষ্ট। পৃথিবীখ্যাত ওলী হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহ. ও হযরত শিবলী রহ.-ও ছিলেন তাঁর শিষ্য। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে এক খ্রিস্টান সুন্দরী মেয়ের প্রতি তিনি কুদৃষ্টি দিয়েছিলেন। যার সুত্র ধরে তাঁর বেলায়েত চলে গিয়েছিল। এমন কি -আল্লাহর কাছে পানাহ চাই- তাঁর ঈমানের উত্তাপও নিভে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তাঁর হাজার হাজার মুরিদানের দোয়া ও কান্নাকাটির উসিলায় আল্লাহ তাঁকে আবার কবুল করেছিলেন। হারানো মর্যাদা ফিরে পেয়েছিলেন। বোঝা গেল, কুদৃষ্টি, বেপর্দা, গোপন গুনাহ এমন এক গুনাহ যার কারণে -আবারো আল্লাহর কাছে পানাহ চাই- ঈমান পর্যন্ত চলে যায়।
দোয়া করুন
গোপন গুনাহর কারণে ধীরে ধীরে ঈমান পর্যন্ত চলে যায়- কথাটা একজন ইমানদারের কলিজায় আগুন ধরে যাওয়ার মত কথা। এজন্য আমরা আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করব–
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الصِّحَّةَ وَالْعِفَّةَ وَالأَمَانَةَ وَحُسْنَ الْخُلُقِ وَالرِّضَا بِالْقَدَرِ
হে আল্লাহ! আপনার কাছে সুস্থতা, গুনাহমুক্ত জীবন, আমানতদারিতা, উত্তম চরিত্র ও তাকদিরের উপর সন্তুষ্টি প্রার্থনা করছি। (বাহ্রুল ফাওয়াইদ ১৫)
اللهُمَّ اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تُحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ ، وَمَنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ
হে আল্লাহ! আপনার প্রতি এমন ভীতি আমাদেরকে দান করুন, যা আমাদের মাঝে এবং আমাদের গুনাহর মাঝে প্রতিবন্ধক হবে এবং এমন আনুগত্য দান করুন, যা আমাদেরকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছাবে। (তিরমিযী ৩৫০২)
গোপন গুনাহর চিন্তা আসলে ভাবুন…
ডা. আব্দুল হাই আরেফী রহ. বলতেন, যখন গুনাহর চিন্তা মাথায় আসবে, তখন এটা চিন্তা করবে যে, গুনাহটি তুমি তোমার প্রিয়জন যেমন, তোমার মা-বাবা, উস্তাদ, শায়েখ, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে এদের সামনে করতে পারবে কিনা? যদি না পার তাহলে তারা তো এখানে উপস্থিত নেই, কিন্তু আল্লাহ তো আছেন। সুতরাং তার সামনে কিভাবে গুনাহটি করবে? তাছাড়া আল্লাহ তো বলেছেন, সুতরাং কেয়ামতের দিন আমার প্রিয়জনদের সামনে আমার গুনাহটি প্রকাশ পেয়ে গেলে তখন আমার অবস্থা কেমন হবে?
কিছু কিছু গুনাহর ক্ষেত্রে এই ভাবনাটাও বেশ কাজে আসে।
মা-বোনদের জন্য বিশেষ উপদেশ
এজন্য পরিশেষে মা-বোনদেরকে বিশেষভাবে বলছি, দয়া করে বেপর্দায় চলে আপনি একজন শত শত পুরুষের গুনাহর কারণ হবেন না। শয়তানের রশি হবেন না। হাদিসে বেপর্দা নারীকেحَبَائِلُ الشَّيْطَانِ তথাশয়তানের রশি বলা হয়েছে। সব নারীকে শয়তানের রশি বলা হয় নি। বরং নেককার নারী সম্পর্কে বলা হয়েছে,
إِنَّمَا الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَلَيْسَ مِنْ مَتَاعِ الدُّنْيَا شَيْءٌ أَفْضَلَ مِنْ الْمَرْأَةِ الصَّالِحَةِ
‘দুনিয়ার সব কিছু সম্পদ।’ মানবসম্পদ (Manpower ) তো শ্রেষ্ঠ সম্পদ। আর মানবসম্পদের মধ্যেও ‘শ্রেষ্ঠ সম্পদ হল, নেককার নারী। ‘নেককার নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ সম্পদ পৃথিবীতে দ্বিতীয় টি নেই। (ইবন মাজাহ ১৮৫৫)
দয়া করে আপনারা পুরুষের জন্য ফেতনার কারণ হবেন না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ
আমার পরবর্তীতে পুরুষের জন্য নারীর ফিতনার চেয়ে কঠিন কোন ফিতনা আমি রেখে যায় নি। (সহীহ বোখারী ৪৮০৮ )
যাই হোক, আলোচনা একটু দীর্ঘ হয়ে গেছে। আল্লাহ আমাদের এই সময়গুলোকে কবুল করুন। এ পর্যন্ত যা বলা হয়েছে, তার উপর আমাদের প্রত্যেককে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
وَآخِرُ دَعْوَانَا اَنِ الْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ