হাদিসটি "সহিহ নয়" বলতে মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে কী বুঝায়? 

🖋গ্রন্থনায়ঃ মুফতি মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বাহাদুর

(প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানাের স্বরূপ উন্মােচন)


"হাদিসের নামে জালিয়াতি" বইয়ের ১৭৪ পৃষ্ঠায় লেখক ড.আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কোন প্রমাণ ছাড়াই মুহাদ্দিসদের উক্তি হাদিসটি সহিহ নয়" বলতে জাল হাদিস বুঝায় বলে উল্লেখ করেছে। তার কাছে আমার প্রশ্ন যে, হাদিস শাস্ত্রের ভূয়া এই নীতিমালা কোন মুহাদ্দীসের? অবশ্যই কোন মুহাদ্দিসের নয়। তা না হলে সে কেন একটি দলীলও উল্লেখ করতে পারেনি। এটা দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, এটা কোন হত মুহাদ্দীসের মন্তব্য নয়; বরং তার নিজের মনগড়া বক্তব্য। অপরদিকে মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী লিখিত আরেকটি বিভ্রান্তিকর বই "প্রচলিত জাল হাদিস"এর ৪৯ পৃষ্ঠায় প্রমাণহীনভাবে কোন মুহাদ্দিসদের উক্তি "হাদিসটি সহিহ নয়"বলতে জাল হাদিস বুঝায় বলে বুঝানাের অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তাই আমি উক্ত হাদীসের নীতিমালার জন্য অনেক কষ্ট করে তথ্য সংগ্রহ করলাম এবং নিম্নে উপস্থাপন করলাম। 


হাদিস তিন প্রকার। 

১.সহিহ 

২.হাসান ও 

৩.দ্বঈফ। 

এগুলাে হাদীসেরই অন্তর্ভূক্ত। বর্ণনার সূত্রানুসারে এভাবে হাদিস- বিশারদগণ হাদীসের প্রকারভেদ করেছেন। আমাদের দেশে বা বিভিন্ন অঞ্চলে এক শ্রেণীর নামধারী আলিম মনগড়াভাবে হাদিস শাস্ত্রের মূলনীতিকে সম্পূর্ণরুপে উপেক্ষা করে হাদিস-ই-দ্বঈফকে হাদিস বলেই স্বীকার করতে রাজি নয়। অথবা দলীল হিসেবে এ পর্যায়ের হাদিসকে অগ্রহণযােগ্য বলার অপপ্রয়াস চালায়। অথচ হাদিস বিশারদদের মতে দ্বঈফও হাদিস হিসেবে গণ্য। সনদের দিক দিয়ে দুর্বল হবার কারণে, এ পর্যায়ের হাদিস দিয়ে কোন আমল ওয়াজিব বা সুন্নাত প্রমাণ করা না গেলেও, এমন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বাক্য সাওয়াবদায়ক হওয়াতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। যা সামনে বিস্তারিত আলােকপাত করা হবে। অনুরূপ কোন হাদীসের ব্যাপারে যদি কোন মুহাদ্দিস এ "হাদিস সহিহ নয়" বলে মন্তব্য করেন, তবে এতদভিত্তিতে ওই হাদিসকে অসত্য ও বানােয়াট হাদিস হিসেবে বিবেচনা করার সুযােগ নেই। কারণ সহিহ না হলে হাসান বা দ্বঈফ পর্যায়েরও হতে পারে। হাদিস-ই-সহিহ হল হাদীসের বচন ও সূত্রের মধ্যে কোনরূপ ক্রটিবিচ্যুতির উর্ধ্বে, এমন হাদিস। সুতরাং কোন হাদিস সহিহ নয় বলে মন্তব্যকে পুঁজি করে, ওই হাদিসকে মিথ্যা হাদিস (মাওজু) বলার সুযােগ নেই। জবাবে আমি গ্রহণযােগ্য মুহাদ্দিসদের ভাষ্য নিম্নে তুলে ধরলাম, পাঠকবৃন্দ! আপনারাই বিবেচনা করুন, কাদের বক্তব্য সঠিক। 


দলীল নং-১

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম হাফেয ইবনে হাজর আসকালানীর (رحمة الله) রচিত “আল কুওলুল মুসাদ্দাদ ফি যুব্বি আন মুসনাদি আহমদ" নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, “হাদিসটি সহিহ নয় বললে, সেটা মাওদু বা বানােয়াট হাদিস হওয়া অপরিহার্য নয়।"(১/৩৭ পৃষ্ঠা, মাকতাবায়ে ইবনে তাইমিয়া, কাহেরা, মিশর) 


দলীল নং-২

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস হাফেয আল্লামা ইমাম আবদুর রহমান জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله) তার লিখিত “ তা'কিবাত আলাল মওদুআত" গ্রন্থে বলেন, “ এ হাদিস সম্পর্কে ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) সর্বোপরি এ মন্তব্য করেছেন যে, হাদীসের বচনগুলাে বা (মতন) সহিহ নয়। এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, হাদিসটি দ্বঈফ বা দুর্বল পর্যায়ের (সূত্রের বা বচনের দিক দিয়ে)।"(১)

১. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী: তা'কিবাত আলাল মওদ্বুআত, পৃ - ২৪৫। 


দলীল নং-৩

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ প্রসঙ্গে বলেন, “এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই কোন মুহাদ্দিস ' হাদিসটি সহিহ নয় ' বললে সেটার দ্বারা হাদিসটি বানােওয়াট হওয়া অপরিহার্য হবে।"(২)

২. মােল্লা আলী কারী, অাসরারুল মারফুআত, পৃ- ১/১০৮পৃ. হাদিসঃ৮৫, মুয়াসসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন। 


দলীল নং-৪

উক্ত কিতাবে মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তিনি আশুরার দিন সুরমা লাগানাের বিষয়ে একটি বর্ণিত হাদিস সম্পর্কে হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এর উক্তি (এ হাদিস সহিহ নয়) বলে মন্তব্য করার পর লিখেছেন, “ আমার [মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)] কথা হল এ হাদিসটি সহিহ নয় ' মানে বানােয়াট বা মাওদ্বু নয়। সর্বশেষ দ্বঈফ বলা যায় মাত্র।"(৩)

৩. আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফুআত, ১/৪৭৪পৃ. মুয়াসসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন। 


দলীল নং-৫

বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম হাফেয ইবনে হাজর আসকালানী(رحمة الله) বলেন, “কোন হাদিসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য (এ হাদিসটি সুদৃঢ় নয়) বললে হাদিসটি মাওদ্বু বা বানাওয়াট বলে প্রমাণিত হয় না। কারণ সাবিত বা প্রমাণিত শব্দ দ্বারা শুধু সহিহ হাদিসই বুঝায় এর নিম্ন পর্যায়ের হাদিসের মধ্যে দ্বঈফও রয়েছে। (১)

১. আল্লামা তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওদ্বুআত, ৭৫ পৃষ্ঠা। 


দলীল নং ৬-৭

শুধু তাই নয় দেওবন্দীদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি মাওলানা আব্দুল হাই লাক্ষনৌভি বলেনঃ“ইমাম আহমদের উক্তি ' হাদিসটি সহিহ নয় ' বলার দ্বারা হাদিসটি বাতিল বা জাল হওয়া অপরিহার্য নয়।"(২)

২. আব্দুল হাই লাক্ষনৌভি : আসারুল মারফু'আ, ১/১০১। 


শুধু তাই নয় দেওবন্দের অনুসারী পাকিস্তানের মাওলানা সরফরায খাঁন নূর আওর বাশারের ৫৪ পৃষ্ঠায়ও তার এ ইবারতটি সংকলন করেছেন। 


দলীল নং-৮

একটি হাদিস শরীফ এও রয়েছে যে, “খাওয়ার পূর্বে তরমুজ খেলে তা পেটকে একেবারেই পরিষ্কার করে দেয় এবং রােগ ব্যাধিকে সমূলে দূরীভূত করে দেয়।" এ হাদীসের ব্যাপারে ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) বলেছেন, (এটির শায বিরল পর্যায়ের সহিহ নয়) আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) আলােচ্য হাদিস সম্পর্কে উপরােক্ত মন্তব্য সম্পর্কে লিখেছেন:


"এ কথা স্পষ্ট যে, ইবনে আসাকিরের উল্লিখিত মন্তব্য দ্বারা হাদিসটি মাওদ্বু বা বানােওয়াট নয় বলে বুঝা যায়।"(১)

১.ক. আল্লামা মােল্লা আলী কারী। আসরারুল মারফু'আত ১/৪৮৬ পৃষ্ঠা। 

   খ.আলামা আযলুনী : কাশফুল খাফাঃ ১/২৫৬, হাদিস : ৯০৮। 


দলীল নং-৯

"ইমাম কামালুদ্দীন মুহাম্মদ বিন হুমাম (رحمة الله) বলেন : কোন হাদিস সম্পর্কে কোন মুহাদ্দিস বলেছেন যে এ হাদিসটি সহিহ (বিশুদ্ধ) নয়, তাদের কথা সত্য বলে মান্য করা হলেও কোন অসুবিধা নেই, যেহেতু (শরীয়তের দলীল বা প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শুধু (হাদিস) সহিহ বা বিশুদ্ধ হওয়া নির্ভরশীল নয়। সনদ বা সূত্রের দিক দিয়ে "হাসান" হলেও (হাদিসটি শরীয়তের দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য) যথেষ্ট।"(২)

২.   আল্লামা মােল্লা আলী কারী : মিরকাতঃ ৩/৭৭, হাদিস : ১০৮


দলীল নং-১০

"ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) বলেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের বক্তব্য হাদিসটি বিশুদ্ধ নয় এর অর্থ হবে সহিহ লিজাতিহী তথা জাতি বা প্রকৃত অর্থে সহিহ নয় উক্ত হাদিসটি (সনদের দিক দিয়ে) হাসান লিজাতিহী বা অন্য সনদে হাসান লিগায়রিহী (জাতিগত সহিহ না হওয়া; সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সহিহ'র কারনে নিজে সহিহ হওয়া। ) হওয়াকে মানা (নিষেধ) করে না। আর হাসান লিগায়রিহীও (শরিয়তের) প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। যা ইলমে হাদিস তথা হাদিস শাস্ত্র হতে জানা যায়।" ৩

৩.  ইবনে হাজার মক্কী আস সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, ২য় খন্ড, পৃ-৫৩৬ মুয়াসসাতুর রিসালা, বয়রুত লেবানন। 


দলীল নং-১১

ইমাম ইবন হাজর আসকালানী (رحمة الله) বলেন, "হাদিসে হাসান শরীয়তের দলিল রুপে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সহিহ হাদিসের সাদৃশ্য, যদিও মর্তবায় কিছুটা কম।"(১)

১. ইবনে হাজার আসকালানী : নুযহাতুল নযর ফি তাওদিহে নুখবাতিল ফিকির, ১ম খন্ড, পৃ:৭৮, মাতবাআতে সাফির বিল রিয়াদ, সৌদি আরব। 


দলীল নং-১২

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী(رحمة الله) বলেন, "ইমাম সাখাভী(رحمة الله) এর বক্তব্য হাদিসটি "সহিহ নয়" নিষেধ দ্বারা হাদিসটি হাসান ও দ্বইফ হওয়াকে নিষেধ করে না।"(২)

২. আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী : আসরারূল মারফুআ-১/৩৪৯পৃ:, হাদিস-৫০২। 


দলীল নং-১৩

শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, মুহাদ্দিসীনদের পরিভাষায় সহিহ নয়। বরং প্রাধান্যতার দিক দিয়ে সহিহ বলা হয়েছে। মুহাদ্দিসীনদের  বিস্তারিত বর্ণনায় এই কথাটি দিবালোকের মত স্পষ্ট হয়েছে এই হাদিস সহিহ নয় এই কথা বলার উদ্দেশ্য উচ্চ স্তরের সহিহ নয়। 

তথ্যসূত্র -

ক. আল্লামা আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী, শরহে সিরাতুম মুস্তাকিম, ৫০২ পৃষ্ঠা। 


দলিল নং-১৪ 

একটি হাদিসে রয়েছে, 

"যে দাবা খেলে সে অভিশপ্ত।"


উক্ত হাদীসটিকে -

● ইমাম শাওকানী(رحمة الله) বলেন, উক্ত হাদিসটি সহিহ পর্যায়ের নয়। 

● ইমাম সাখাভী (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি দৃঢ় পর্যায়ের নয়। উক্ত দুই ইমামের রায়কে ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) ব্যাখ্যা করে বলেন যে, পরিশেষে উক্ত রায় দ্বারা সনদে দূর্বলতাই বুঝায়(জাল নয়)। 

তথ্যসূত্র -

ক. আল্লামা আযলূনী: কাশফুল খাফা: ২/২৪৬: হাদিস: ২৫৯৬। 


দলিল নং-১৫

আল্লামা ইমাম ইবনে যাওযী (رحمة الله) একটি হাদিস বর্ণনা করেন সনদে একজন রাবী দূর্বল থাকায় ইমাম যাওযী বলেন, "উক্ত হাদীসটি পূর্ণ সহিহ পর্যায়ের নয়, বা সনদটি শক্তিশালী নয়।"

আল্লামা আযলূনী(رحمة الله) উক্ত হাদিসের রায়ের ইতি টেনে বলেন যে, "পরিশেষে তার রায় দ্বারা এটাই বুঝা যায় যে সনদে দূর্বলতা আছে তাই বলে জাল বা বানোয়াট নয়।"


তথ্যসূত্র -

ক. আল্লামা আযলূনী: কাশফুল খাফা:২/১১০: হাদিস: ১৯৬৬। 


দলীল নং: ১৬-১৭


প্রসিদ্ধ একটি হাদিস আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رحمة الله)  হতে বর্ণিত, 

 “ আমি ইলমের শহর আর আলী তার দরজা।"


উক্ত হাদিসটি সম্পর্কে আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, 

"ইমাম ইবনে হাযার আসকালানী (رحمة الله) কে উক্ত হাদিস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উক্ত হাদিসটি সহিহ নয়, হাসান পর্যায়ের হাদিস। ইমাম হাকিম (رحمة الله) বলেন হাদিসটি জাল বা বানােওয়াট নয়। তাই সুস্পষ্ট বুঝা যায় হাদিসটি সহিহ নয় বলতে “ হাসান ” হওয়াকে বুঝায়।"


তথ্যসূত্র -

● মােল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফুআহ : ১/১১৮ হাদিস : ৭১, মুয়াসসাতুর রিসালা, বয়রুত। 

● মােবারকপুরী : তুহফাতুল আহওয়াজি : ১০/২২৬, হাদিস নং : ৩৭২৩ 

● আযলূনী : কাশফুল খাফা : ১/১৮৪ - ৮৫ : হাদিস : ৬১৮ 

● ইমাম সাথাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ১২১ পৃ . হাদিস নং : ১৮৯। 

●মােল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতিহ : ১১/২৫৩, হাদিস নং : ৬০৯৬। 


শুধু তাই নয়, আহলে হাদীসের কথিত মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দীন আলবানী তার “সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফা ” গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ১০২ পৃষ্ঠার ৭৩ নং হাদীসে রাসূল ﷺ এর নাম মােবারক শুনে চুমু খাওয়া হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিস প্রসঙ্গে বলেন, 

" হাদিসটি সহিহ পর্যায়ের নয়। বুঝা গেল, হাদিসটি জাল বা বানােয়াট নয়। কারণ আলবানী জাল হাদিসকে সরাসরি মাওদ্বু বলে উল্লেখ করে।" কিন্তু এখানে তিনি এই শব্দ ব্যবহার করেছেন, অপরদিকে দলীল পেশ করে, 


"আল্লামা তাহের পাটনী তার “ তাযকিরাতুল মাওদুআত ” এ বলেন, হাদিসটি সহিহ পর্যায়ের নয়, যেমনিভাবে আল্লামা শাওকানী “ ফাওয়াহিদুল মাওদুআত ” এর ৯ পৃষ্ঠায় এবং ইমাম সাখাভী (رحمة الله) “ মাকাসিদুল হাসানা” গ্রন্থে বর্ণনা করেন হাদিসটি সহিহ পর্যায়ের নয়।" 


দলীল নং - ২১ 


আহলে হাদিসদের অন্যতম আলেম মাওলানা মুহাম্মদ শামসুল হক আযীমাবাদী (মৃত্যু ১৩২৯হি .) বলেন, 


হাদিসটি দৃঢ় নয় বা সহিহ নয় বক্তব্য দ্বারা হাদিসটি দুর্বল হওয়া অপরিহার্য নয়


তাই হাদিসটি দৃঢ় এর দ্বারা সহিহ (উচ্চ পর্যায়ের বিশুদ্ধ) বুঝানাে হয়েছে। তাই বলে “হাসান” হওয়াকে নিষেধ করে না। তারপর আর একটু নিচে গেলেও এ নয় শব্দ দ্বারা একক সহিহ অথবা হাসান হওয়াকে নিষেধ করা হয় বলে, সহিহ, হাসান, দ্বঈফ   (সবগুলােকে) নিষেধ করা হয় নি।"


দলীল নং - ২২


দেওবন্দীদের শাইখুল হাদিস তকী উদ্দিন নদভী সাহবে তার ' ফান্ন আসমাউর রিযাল ' গ্রন্থে বলেন, 


“ কোন মুহাদ্দিসের বক্তব্য হাদিসটি সহিহ নয় ’ অথবা দৃঢ় নয় বক্তব্য দ্বারা হাদিসটি মওদ্বু বা জাল অথবা দ্বঈফ হওয়া অপরিহার্য নয়। কমপক্ষে সর্বনিম্ন দুর্বল বলা যেতে পারে। আল্লামা মোল্লা আলী (رحمة الله) বলেন হাদিসটি সহিহ নয় (সহিহ হওয়াকে নিষেধ) বলতে শুধু বা জাল হওয়া অপরিহার্য নয়। আল্লামা ইবনে হাযর আসকালানী (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি সহিহ নয় কারও বক্তব্য দ্বারা মুওদ্বু  বা জাল হওয়া অপরিহার্য নয়। কমপক্ষে " হাসান " লিগাইরিহী হাদিস বলা যেতে পারে।"(৭৬পৃ.)


 দলিল নং - ২৩


আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, 


“ হাদিসটি দৃঢ় নয় দ্বারা দ্বঈফ হওয়া অপরিহার্য নয়। হাদীসটি দৃঢ় নয় শব্দ দ্বারা সহিহ (উচ্চ পর্যায়ের বিশুদ্ধ) নয় বুঝানাে হয়েছে। তাই বলে " হাসান " হওয়াকে নিষেধ বা অসুবিধা করে না।" (সিমউল মওতা, পৃ:- ২৩৪ ২৩৫) 


মােটকথা, হাদিস মাওদ্বু বা বানােয়াট বানানাের জন্য তারা হাদিসটি বাতিল, মিথ্যা, বানােয়াট, সত্যায়নযোগ্য নয় ও মনগড়া বানানাে ইত্যাদি শব্দ বলতেন। সহিহ হওয়াকে অস্বীকার করা মানে বিশুদ্ধ সনদ হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ের নয় বরং কিছুটা ত্রুটিপূর্ণ পন্থায় বর্ণিত হাদীস। 


আলােচ্য বক্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে, হাদিস বুঝতে হলে শুধু বাহ্যিক শব্দ ও অনুবাদ বুঝা যথেষ্ট নয়, এক্ষেত্রে হাদিস বিশারদগণের পরিভাষা, তাদের উপস্থাপনা পদ্ধতি বাচনভঙ্গি, সূত্র বর্ণনার নিয়ম-কানুন, গ্রহণীয়-বর্জনীয় হওয়ার হুকুম ব্যক্তকরন পদ্ধতি ইত্যাদি বুঝাও পূর্বশর্ত। কিতাব থেকে অনুবাদ পড়ে হাদীস বোঝা আদৌ সম্ভব নয়। 


শুধু অনুবাদ বুঝা নয়, হাদীসের মর্মার্থ বুঝাই হল মূল জিনিস। কোন হাদিস সহিহ নয় মানে মাথা গরম করে জাল বলা যাবে না। হাদিস সহীহ নয় মানে হাদিস বিশারদগণের পরিভাষায়, তিন প্রকারের হাদীসের মধ্যে ছহীহ ছাড়া তাে হাসান ও দ্বইফ পর্যায়ের দুটি প্রকারের মধ্যে যে কোন একটিও তো হতে পারে। নুনতম দ্বঈফ বা দুর্বল সনদ বিশিষ্ট হতে পারে। 


মওদ্বু বা বানােয়াট হলে সরাসরি বলা হতাে, " উক্ত হাদিসটি মাওদ্বু বা জাল।" মুহাদ্দীসগণের মন্তব্য কোন হাদিস প্রসঙ্গে -" সহিহ নয় ” বললে, তার অর্থ এটা নয় যে হাদিসটি ভুল বা বাতিল। বরং তাদের পরিভাষা মোতাবেক এর অর্থ হলো, হাদীসটি সহিহ পর্যায়ের হাদিসের মতো সনদ বিশিষ্ট নয়। কারণ সহিহ হাদীসের কতিপয় বৈশিষ্ট্য রয়েছে, ঐ বৈশিষ্ট্য গুলো যাতে বিদ্যমান তা-ই সহিহ ”। সে পর্যায়ে হাদিস খুঁজতে গেলে "সিহাহ সিত্তাহ" বা হাদীসের বিখ্যাত ছয়টি হাদীসের কিতাব থেকে খুঁজতে হয়। তবে ছয়টি ব্যতীত আরাে সহিহ হাদীসের অনেক কিতাব রয়েছে। 


এগুলোর মধ্যে কোন কোন কিতাবে  কিছু কিছু হাদিসকে সহিহ বলার ক্ষেত্রে দ্বিমত দেখা যায়। কারণ, যারা বিরােধীতা করেন তারা কোন কোন হাদিসকে “ হাসান ” পর্যায়ের কিংবা স্থান বিশেষে দ্বঈফ ও বলেছেন। স্বয়ং গ্রন্থাকার ও ঐ মুষ্টিমেয় কিছু হাদিসকে চিহ্নিত করে দিয়েছেন। ঐ কিছু বাদ দিয়ে বাকী সব হাদিস সহিহ হবার কারণে ঐ গ্রন্থগুলোকে সহিহ বলা হয়। তবে এ কথা নিশ্চিত যে, ঐ সব কিতাবে কোন মওদ্বু বা বানোয়াট হাদিস নেই। তাই বলে দ্বইফ বা দুর্বল হাদিসকে হাদিস নয় বলার কোনো নেই। সে অনুসারে আমল করলে নিঃসন্দেহে সাওয়াব পাওয়া যাবে। 

Top