মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ফকীহগণের দৃষ্টিতে শবে বরাত
=============
(১) আহলে হাদীসের অন্যতম আলেম মুবারকপুরী তিরমিযী
শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ”তোহফাতুল আহওয়াযীতে” বলেন,
ﺍﻋْﻠَﻢْ ﺃَﻧَّﻪُ ﻗَﺪْ ﻭَﺭَﺩَ ﻓِﻲ ﻓَﻀِﻴﻠَﺔِ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ ﻋِﺪَّﺓُ ﺃَﺣَﺎﺩِﻳﺚَ ﻣَﺠْﻤُﻮﻋُﻬَﺎ ﻳَﺪُﻝُّ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥَّ ﻟَﻬَﺎ ﺃَﺻْﻠًﺎ
——– ﻓَﻬَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺄَﺣَﺎﺩِﻳﺚُ ﺑِﻤَﺠْﻤُﻮﻋِﻬَﺎ ﺣُﺠَّﺔٌ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻦْ ﺯَﻋَﻢَ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻢْ ﻳَﺜْﺒُﺖْ ﻓِﻲ ﻓَﻀِﻴﻠَﺔِ ﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺍﻟﻨِّﺼْﻒِ ﻣِﻦْ ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ
ﺷَﻲْﺀٌ ﻭَﺍَﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺃَﻋْﻠَﻢُ – ( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ, ﺑﺎﺏ : ﻣﺎ ﺟﺎﺀ ﻓﻲ ﻟﻴﻠﺔ
ﻻﻧﺼﻒ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﻌﺒﺎﻥ )
-‘‘জেনে রাখুন, শাবানের মধ্যরাতের (শবে বরাতের) ফযীলত
সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সব হাদিস একত্রিত
করলে প্রমাণিত হয় যে, এ রাতের ফযীলতের ক্ষেত্রে
নির্ভরযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। অনুরূপভাবে এ হাদিসগুলো
সম্মিলিতভাবে তাদের বিপক্ষে প্রমাণ বহন করে যারা
ধারণা করে যে, শবে বরাতের ফযীলতের ক্ষেত্রে কোন
প্রমান মেলে না। আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।’’
(২) আল্লামা ইমাম ইবনে ইসহাক বুরহান উদ্দিন ইবনে
মুফলিহ ওফাত.৮৮৪হি.বলেন,
ﻭَﻳُﺴْﺘَﺤَﺐُّ ﺇِﺣْﻴَﺎﺀُ ﻣَﺎ ﺑَﻴْﻦَ ﺍﻟْﻌِﺸَﺎﺀَﻳْﻦِ ﻟِﻠْﺨَﺒَﺮِ. ﻗَﺎﻝَ ﺟَﻤَﺎﻋَﺔٌ: ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔِ ﻋَﺎﺷُﻮﺭَﺍﺀَ، ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔِ ﺃَﻭَّﻝِ ﺭَﺟَﺐٍ، ﻭَﻟَﻴْﻠَﺔِ ﻧِﺼْﻒِ
ﺷَﻌْﺒَﺎﻥَ، – ﺍﻟﻤﺒﺪﻉ ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻤﻘﻨﻊ: ٢/ ٣٣ ﺑﺎﺏ : ﺻﻠﻮﺓ ﺍﻟﺘﻄﻮﻉ –
-‘‘মুস্তাহাব হলো মাগরিব ও ইশার মাঝখানে এই সমস্ত
রাত্রিগুলোতে জেগে ইবাদত করা। এক জামাত ইমামগণ
বর্ণনা করেছেন, এই সমস্ত রাত্রি হল, আশুরার রাত্রি,
রজবের প্রথম রাত্রি, এবং শাবানের ১৫ তারিখ (শবে বরাত)
রাত্রি। এই সমস্ত রাত্রিতে জাগ্রত থাকা মুস্তাহাব।’’
(৩) অন্যতম মুহাদ্দিস আল্লামা ইমাম যুরকানী ()
ওফাত.১১২২হি. বলেন,
ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻓﻘﻮﻣﻮﺍ ﻟﻴﻠﻬﺎ ﻓﻘﻮﻣﻮﺍ ﻟﻴﻠﻬﺎ ” ﺃﻱ : ﺃﺣﻴﻮﻩ ﺑﺎﻟﻌﺒﺎﺩﺓ ﻭﺍﻧﺼﺒﻮﺍ ﺃﻗﺪﺍﻣﻜﻢ ﻟﻠﻪ
ﻗﺎﻧﺘﻴﻦ، –
-‘‘যখন ১৫ই শাবান আসবে তখন রাতে তোমরা ইবাদতের জন্য
দন্ডায়মান হও। এবং এই ইবাদতের দ্বারা রাত্রকে জীবিত
রাখ।’’
(৪) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী () এক হাদীসের
ব্যাখ্যায় বলেন –
ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺑﺎﻟﺒﺎﺏ ﺍﻻﻳﺬﺍﻥ ﺑﺎﻥ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻟﻤﺎ ﻭﺭﺩ ﻓﻰ ﺃﺣﻴﺎﺋﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺜﻮﺍﺏ – ﺑﺎﺏ : ﻗﻴﺎﻡ
ﺷﻬﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ –
-‘‘এই হাদীসে অধ্যায়ের দ্বারা সংবাদ বা খবর দিয়েছে যে
শাবানের ১৫ই তারিখ রাতে (শবে বরাতে) জেগে ইবাদত
করলে সাওয়াব রয়েছে যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।’’
(৫) আল্লামা তাহতাভী হানাফী () বলেন, ﻭﻧﺪﺏ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ
ﺷﻌﺒﺎﻥ –
-‘‘শবে বরাতে (১৫ই শাবান) রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত
করা মুস্তাহাব।’’
(৬) আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফী () বলেন,
ﻣﻦ ﺍﻟﻤﻨﺪﻭﺑﺎﺕ ﺭﻛﻌﺘﺎ ﺍﻟﺴﻔﺮ ﻭﺍﻟﻘﺪﻭﻡ ﻣﻨﻪ ﻭﺃﺣﻴﺎﺀ ﻟﻴﻠﺘﻰ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﻭﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻭ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﺍﻻﺧﻴﺮ
ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﺍﻻﻭﻝ ﻣﻦ ﺫﻯ ﺍﻟﺤﺠﺔ –
-‘মুস্তাহাব হলো এ সমস্ত রাত্রিগুলোতে ইবাদত করা
কমপক্ষে দুরাকাত নামায হলেও পড়া যেমন ১. সফরের প্রথম
রাত ২. দুই ঈদের রাত ৩. শবেই বরাত (১৫ই শাবানের রাত) ৩.
রমযানের শেষ দশ দিনের রাত জিলহজ্ব এর ১ম তারিখ।’’
(৭) আল্লামা ইবনে নুজাইজ হানাফী মিশরী () বলেন,
ﻭﻣﻦ ﺍﻟﻤﻨﺪﻭﺑﺎﺕ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻟﻴﺎﻟﻰ ﺍﻟﻌﺸﺮ ﻣﻦ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻭﻟﻴﻠﺘﻰ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﻟﻴﺎﻟﻰ ﻋﺸﺮ ﺫﻯ ﺍﻟﺤﺠﺔ ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ
ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻛﻤﺎ ﻭﺭﺩﺕ ﺍﻻﺛﺎﺭ –
-‘‘মুস্তাহাব হলো রমযানের শেষ দশ দিনের রাতে ও দুই
ঈদের রাতে ইবাদত করা। জিলহজ্ব মাসের দশ রজনী এবং
শবে বরাতের রাতে ইবাদত করা যা হাদিস দ্বারা
প্রমাণিত।’
(৮) বিখ্যাত ফকীহ আল্লামা শায়খ মনসূর বিন ইউনূস বাহুতী
(রহ.) বলেন,
ﻭﻓﻰ ﺍﺳﺘﺤﺒﺎﺏ ﻗﻴﺎﻣﻬﺎ ﺃﻯ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻣﻦ ﺷﻌﺒﺎﻥ ﻣﺎ ﻓﻰ ﺃﺣﻴﺎﺀ ﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﻌﻴﺪ – (ﻛﺸﻒ ﺍﻟﻘﻨﺎﻉ : ١/ ٤٢٠ ،
ﺑﺎﺏ : ﻗﺒﻴﻞ ﻓﺼﻞ ﺳﺠﺪﺓ ﺍﻟﺘﻼﻭﺓ ) -‘‘শবে বরাত (১৫ শাবান) এর রাতে, দুই
ঈদের রাতে দাড়িয়ে অর্থাৎ নামাযে লিপ্ত হওয়া
মুস্তাহাব।’’
৯,*ইমাম আহমাদ (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
১০,*ইমাম আওযায়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
১১,*ইবনে তাইমিয়া ।
১২,*ইমাম ইবনে রাজাব আল হাম্বলী (রাহমাতুল্লাহি
আলাইহি)।
১৩,*নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী ।
সুত্র:==========
১,আল্লামা মুবারকপুরী: তোহফাতুল আহওয়াজী শরহে
তিরমিযী : ৩/৪৪১ পৃ. হাদিস : ৭৩৬
২, মুফলিহ : মাবদাউ শরহে মাকানা: ২/৩৩পৃ.দারুল কুতুব
ইলমিয়্যাহ,বয়রুত,লেবানন।
৩,আল্লামা ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া
: ১০/৫৬১ পৃ.
৪,আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী মিরকাত : কিয়ামে
রমযান: ৩/৩৪০ : হাদিস : ১৩০০
৫,আল্লামা ইমাম তাহতাভী : মারাকিল ফালাহ : পৃ-৩২৫
৬,আল্লামা আলাউদ্দিন হাস্কাফী দুররুল মুখতার : ২/২৪-২৫ পৃ
কিতাবুল বিতর এবং নফল অধ্যায়
৭,আল্লামা ইবনে নুজাইম মিশরী : বাহরুর রায়েক : ২/৫২
কিতাবুল বিতর ওয়ান নাওয়াফেল
৮,আল্লামা শায়খ মনসূর বিন ইউনূস বায়হাকী : কাশফুল
কানাঈ : ১/৪২০ : সিজদা ও তেলাওয়াতের ফযীলত অধ্যায়।
৯, [ইবনে তাইমিয়া তার ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীমে
(২/৬২৬) তা উল্লেখ করেছেন]
১০, [ইমাম ইবনে রাজাব তার ‘লাতায়েফুল মা‘আরিফ’ গ্রন্থে
(পৃঃ১৪৪) তার থেকে তা বর্ণনা করেছেন]
১১, [ইকতিদায়ে ছিরাতে মুস্তাকীম ২/৬২৬,৬২৭, মাজমু‘
ফাতাওয়া ২৩/১২৩, ১৩১,১৩৩,১৩৪]।
১২,[তার লাতায়েফুল মা‘আরিফ পৃঃ১৪৪ দ্রষ্টব্য]।
১৩ [ছিলছিলাতুল আহাদীস আস্সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯]